ব্যবস্থাপনাকে সর্বজনীন বলা হয় কেন?

উদ্দীপকঃ-

ব্যবস্থাপনাকে সর্বজনীন বলা হয় কেন?

চিত্রে P হচ্ছে লিমা লি.-এর শীর্ষ কর্মকর্তা। S এবং V হচ্ছে নিম্ন স্তরের কর্মী। T হচ্ছে নিরাপত্তা বিভাগের ব্যবস্থাপক।

ক. ব্যবস্থাপনা কী?

খ. ব্যবস্থাপনাকে সর্বজনীন বলা হয় কেন?

গ. চিত্রে Q এবং R একই সাথে S কে ভিন্ন ভিন্ন কার্য সম্পাদনের নির্দেশ প্রদান করলে ব্যবস্থাপনার কোন নীতির লঙ্ঘন হবে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত লিমা লি.-এর গুদামে আগুন লাগলে V সরাসরি T কে আগুন লাগার সংবাদ দিতে পারবে কিনা? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

 

প্রশ্নের উত্তরঃ-

ক) লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠিতকরণ, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগানোকে ব্যবস্থাপনা বলে।

 

খ) ব্যবস্থাপনার সর্বজনীনতা বলতে সর্বত্র বা সব ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ ও গ্রহণযোগ্যতাকে বোঝায়।পরিবার, রাষ্ট্র এবং ব্যবসায় সংগঠনের সব ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি (পরিকল্পনা, সংগঠন, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণ) প্রয়োগ করা হয়। স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতি, সামাজিক রীতি-নীতি ইত্যাদির কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। তবে এর কার্যাবলি প্রয়োগের ক্ষেত্রে তেমন পার্থক্য হয় না। তাই ব্যবস্থাপনাকে সর্বজনীন বলা হয়।

 

গ) উদ্দীপকের চিত্রে Q এবং R একই সাথে ১ কে ভিন্ন ভিন্ন কার্যসম্পাদনের নির্দেশ প্রদান করলে ব্যবস্থাপনার আদেশের ঐক্য নীতির লঙ্ঘন হবে।এই নীতিতে কোনো অধস্তন কর্মী একজন ঊর্ধ্বতন (BOSS) এর নিকট থেকেই সরাসরি আদেশ পেয়ে থাকে। ফলে উক্ত কাজের জন্য ঐ ঊর্ধ্বতনের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এতে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা থাকে না। এ নীতির ব্যত্যয় ঘটলে কাজ করতে ঝামেলা হয়।উদ্দীপকের চিত্রে ১ এবং V হচ্ছে নিম্ন স্তরের কর্মী। আর 1 হচ্ছে নিরাপত্তা বিভাগের ব্যবস্থাপক। I এর সমপর্যায়ভুক্ত হলো। আবার (২) এবং T এর অধীনস্থ হলো R এবং U। এখানে সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থিত ১ কে যদি Q এবং R একই সাথে কাজের নির্দেশ দেয় ও সমস্যায় পড়বে। কারণ কার কাজ আগে করতে হবে তা নিয়ে ১ দ্বিধায় পড়বে। এতে কোনো কাজই সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে না। বৈশিষ্ট্যানুযায়ী এটি আদেশের নীতির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে।

 

ঘ) ব্যবস্থাপনার জোড়া মই শিকল (Scalar chain) অনুযায়ী উদ্দীপকের লিমা লি.-এর গুদামে আগুন্ লাগলে V সরাসরি । কে সংবাদ দিতে পারবে না।এ নীতি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত প্রতিটি কর্মী, বিভাগ ও উপবিভাগকে একই সূত্রে আবদ্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে কর্তৃত্ব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে ধাপে ধাপে অধস্তনদের কাছে নেমে আসে। কিন্তু জবাবদিহিতা নিচের স্তর থেকে ধাপে ধাপে উপরের দিকে চলে আসে। এটি কর্মীদের কর্তৃত্বের প্রবাহ ও যোগাযোগের পথ নির্দেশ করে।উদ্দীপকে লিমা লি.-এ T. হচ্ছে নিরাপত্তা বিভাগের ব্যবস্থাপক। তার নিচে ঐ বিভাগের কর্মী হলে U এবং সর্বনিম্ন স্তরের কর্মী V। গুদামে আগুন লাগলে পদমর্যাদা অনুযায়ী V, U কে জানাবে। এক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে । পদক্ষেপ নিবে। আবার, U এ সংবাদ তার বস (Boss) T কে জানাবে। এভাবই নির্দিষ্ট নিয়মে যে যার দায়িত্ব পালন করবে। এতে কর্মীদের মধ্যে সংঘবদ্ধতা জোরদার হবে। ফলে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যাবে। এজন্য লিমা লি.-এর গুদামে আগুন লাগলে V সরাসরি T কে আগুন লাগার সংবাদ দিতে পারবে না।

 

উদ্দীপকঃ-

মি. সুমন ও মি. আরিফ দুজন বন্ধু ও দুই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। মি. সুমনের নিচের দিকের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা কম থাকায় প্রতিটি উপবিভাগের কর্মী নির্দিষ্ট করা যায়নি। ফলে একজন কর্মী একাধিক বিভাগের কাজ করতে গিয়ে ‘নানা জনের নানান নির্দেশ’ মানতে প্রায়শই বিপদে পড়ে। অন্যদিকে মি. আরিফ নীতি মেনে কাজ করার বিষয়ে খুবই সতর্ক। কোনো আদেশ দেয়ার পূর্বে তিনি আগের আদেশ, কার্যফল ইত্যাদি মূল্যায়ন করেন। তার অধীন কাজ করতে অধস্তন নির্বাহীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

ক. কারিগরি দক্ষতা কী?

খ. ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার নীতি বলতে কী বোঝায়?

গ. মি. সুমনের প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনার কোন নীতি মান্য না করায় কর্মীদের বিপদে পড়তে হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. মি. আরিফ ব্যবস্থাপনার নির্দেশনার ঐক্য নীতি মেনে চলায় অধস্তন নির্বাহীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তুমি কি এ মত সমর্থন কর? মতের সপক্ষে যুক্তি দাও।

 

উত্তরঃ-

ক) প্রতিষ্ঠানের প্রতিটা কাজ সম্পাদনে যে পদ্ধতি, কৌশল বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারাকে কারিগরি দক্ষতা (Technical Skill) বলে।সহায়ক তথ্যঃ- যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জ্ঞান, হিসাব সংরক্ষণ ও নিরীক্ষার জ্ঞান ইত্যাদি কারিগরি দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত।

 

খ) যোগ্য ব্যক্তিকে উপযুক্ত পদে নিয়োগ এবং সঠিক বস্তুকে সঠিক জায়গায় স্থাপনের নীতিকেই ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলার নীতি (Principle of order) বলে। এ নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মানবীয় (শ্রমিক-কর্মী) ও অমানবীয় (যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, অর্থ ইত্যাদি) উপাদানসমূহের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব হয়। এতে কর্মীদের কর্মদক্ষতা বাড়ে। ফলে কাজ করতে কম সময় লাগে। এ নীতির অনুসরণে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জন সহজ হয়।

 

গ) উদ্দীপকের মি. সুমনের প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনার আদেশের ঐক্য নীতি মান্য না করায় কর্মীদের বিপদে পড়তে হয়েছে। এ নীতিতে কোনো অধস্তন কর্মী একজন ঊর্ধ্বতন (Boss)-এর কাছ থেকেই সরাসরি আদেশ পেয়ে থাকে। তার কাজের জন্যও ঐ উর্ধ্বতনের কাছেই জবাবদিহি করতে হয়। এতে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা থাকে না। এ নীতি না মানলে কর্মীদের কাজ করতে ঝামেলা হয়। উদ্দীপকে মি, সুমন একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার প্রতিষ্ঠানে নিচের দিকের তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারীর সংখ্যা কম। ফলে প্রতিটি উপবিভাগের জন্য কর্মী নির্দিষ্ট করা যায়নি। এতে দেখা যায়, একজন কর্মী একাধিক বিভাগ থেকে কাজ করার আদেশ পায়। ফলে কর্মীরা কোন কাজটি আগে বা পরে করবে তা নিয়ে সমস্যায় পড়ে। কাজের ক্ষেত্রে তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে বলে ভুল বোঝাবুঝি হয়। তাই বলা যায়, আদেশের ঐক্য নীতি অনুসরণ না করায় কর্মীদের দায়িত্ব পালনে সমস্যা হচ্ছে।

 

ঘ) উদ্দীপকের মি. আরিফ ব্যবস্থাপনার নির্দেশনার ঐক্য নীতি মেনে চলায় অধস্তন নির্বাহীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আমি এ বক্তব্যটি সমর্থন করি। এ নীতিতে কর্মীদের সবসময় একই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।এক্ষেত্রে আগের কাজের সাথে মিল রেখে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে কর্মীরা সহজে কাজ করতে পারে। প্রতিষ্ঠানও দ্রুত সাফল্য লাভ করতে পারে। উদ্দীপকে মি. আরিফ একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি ব্যবস্থাপনায় নীতি মেনে চলার বিষয়ে খুবই সতর্ক। কর্মীদের কোনো আদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি আগের আদেশ ও এর কার্যফল মূল্যায়ন করেন। এটি নির্দেশনার ঐক্যের কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ নীতি অনুসরণের মাধ্যমে আগের দিকনির্দেশনার সাথে পরবর্তী নির্দেশের মিল থাকে। এতে কর্মীরা একই ধরনের কাজ বারবার করে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পায়। নির্দেশনায় ভিন্নতা না থাকার কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটে না। এতে কর্মীরা স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। তাই বলা যায়, নির্দেশনার ঐক্য নীতি মেনে চলার কারণে অধস্তন নির্বাহীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

 

উদ্দীপকঃ-

উৎপাদন ব্যবস্থাপক কর্মীদের সমভাবে মূল্যায়ন না করায় কর্মীরাও তার আদেশ পালনে তেমন আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষমতা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

ক. নীতি কী?

খ. আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক সম্পর্কে লেখো।

গ. উদ্দীপকে উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কোন নীতি লঙ্ঘিত হওয়ায় উৎপাদন কাজ ব্যাহত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কর্তৃত্ব বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ? মতামত দাও

 

 উত্তরঃ-

ক) কোনো কাজের নির্দিষ্ট পরীক্ষিত নিয়মকানুন বা নির্দেশিকাকে ঐ কাজের নীতি বলে।

 

খ) আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হচ্ছেন তুরস্কের খ্যাতিমান পণ্ডিত হেনরি ফেয়ল (Henri Fayol)।১৮৪১ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৬০ সালে তিনি এস.এ কমেনট্রি ফোরচ্যামবোল্ট-এর খনিতে প্রকৌশলী হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ব্যবস্থাপনাকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও সবর্জনীনভাবে প্রয়োগযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই তাকে আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয়।

 

গ) উদ্দীপকে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সাম্যের নীতি লঙ্ঘিত হওয়ায় উৎপাদন কাজ ব্যাহত হয়েছে।সাম্যের (equity) নীতিতে অধস্তনদের সবার প্রতি সমান আচরণ বা স্নেহ প্রদর্শন করা হয়। এটি ন্যায়পরায়ণতার সাথেও সম্পর্কিত। এর মাধ্যমে অধস্তনদের সাথে ঊর্ধ্বতনের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। আর এ নীতির অভাবে ঊর্ধ্বতনের প্রতি অধস্তনদের খারাপ ধারণা তৈরি হয়। তার প্রতি শ্রদ্ধাও কমে যায়। ফলে এটি প্রতিষ্ঠানে কাজের বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি করে।উদ্দীপকে উল্লেখ্য, উৎপাদন ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সমভাবে মূল্যায়ন করেন না। এতে কর্মীরাও তার আদেশ পালনে আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের কাজে অনিয়ম হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী উৎপাদন কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না। কারণ, প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা তাদের নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না পেয়ে অসন্তুষ্ট। এজন্য কাজও ধীরগতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। এসব বৈশিষ্ট্য সাম্যের নীতি লঙ্ঘনের সাথে সম্পর্কিত। তাই বলা যায়, সাম্যের নীতি লঙ্ঘিত হওয়ায় উদ্দীপকের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কাজে সমস্যা হচ্ছে।

 

ঘ) উদ্দীপকে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কর্তৃত্ব বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের সমতার নীতি অনুযায়ী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যথার্থ।কর্তৃত্ব (authority) হলো কাজের আদেশদানের অধিকার। দায়িত্ব হলো কাজের জবাবদিহি করার বাধ্যবাধকতা। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে কোনো কাজের দায়িত্ব দিলে এর জন্য প্রয়োজনীয় কর্তৃত্বও (ক্ষমতা) দিতে হয়। এতে কর্মীদের কাজ সম্পাদনে বাধ্য করার ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায়। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করানো সম্ভব হয়। প্রতিষ্ঠানের কাজের মধ্যে শৃঙ্খলাও বজায় থাকে।উদ্দীপকের উৎপাদন ব্যবস্থাপক কর্মীদের সমভাবে মূল্যায়ন করেন না। তাই কর্মীরা আদেশ পালনে আগ্রহী হয় না। এতে উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিতে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষমতা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি কর্তৃত্ব ও দায়িত্বে সমতা নীতির সাথে সম্পর্কিত। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা প্রণয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই তাকে দায়িত্বের সাথে যথাযথ ক্ষমতা বা কর্তৃত্বও দিতে হয়। এতে তিনি কর্মীদের কাজের আদেশ ও কাজে বাধ্য করার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। এছাড়া কাজে কোনো সমস্যা হলে তা সমাধানে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এতে কাজের অগ্রগতি হবে। ফলে কর্মীদের মাধ্যমে যথাসময়ে কাজ শেষ করানোও সম্ভব হবে। কারণ এখানে জবাবদিহিতার বিষয়টি মেনে চলা হয়। সুতরাং, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কর্তৃত্ব বাড়ালে প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্যার্জনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উদ্দীপকঃ-

মি. ফরহাদ সিলভার এগ্রো ফুড লিমিটেড-এর একজন কর্মকর্তা। তিনি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য নির্ধারণ ও নীতি প্রণয়নের কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্জনের জন্য তিনি শ্রমিকদের প্রতিদিন এক ঘন্টা করে অতিরিক্ত কাজ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এজন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক দিবেন না বলে ঘোষণা দেন। এতে মালিক পক্ষ সন্তুষ্ট হলেও শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ তৈরি হতে শুরু করে।

ক. নির্দেশনার ঐক্য কী?

খ. জোড়া মই শিকল নীতি বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকের মি. ফরহাদ কি প্রশাসক নাকি ব্যবস্থাপক? বুঝিয়ে লেখো।

ঘ. উদ্দীপকের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক অসন্তোষের জন্য ব্যবস্থাপনার কোন নীতির ব্যত্যয় দায়ী বলে তুমি মনে করো?

 

প্রশ্নের উত্তরঃ-

ক) উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পূর্ব নির্দেশনার সাথে মিল রেখে পরবর্তী নির্দেশ দেয়ার কাজকে নির্দেশনার ঐক্য (Unity of direction) বলে।

 

খ) প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তি, বিভাগ ও উপবিভাগকে একে অন্যের সাথে যুক্ত করাই জোড়া মই শিকল (Scalar chain) নীতি।এ নীতি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে কর্তৃত্ব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে ধাপে ধাপে অধস্তনের কাছে নেমে আসে। ফলে প্রতিটি বিভাগ, উপবিভাগ ও কর্মীরা একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে। এটি কর্মীদের কর্তৃত্ব প্রবাহ ও যোগাযোগের পথ নির্দেশ করে।

 

গ) উদ্দীপকের মি. ফরহাদ একজন প্রশাসক।প্রশাসক কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার উচ্চস্তরের ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ স্তরের কর্মকর্তাগণ মানসিক শ্রমের কাজ বেশি করেন। প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করেন। আর প্রসাশকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সাধারণ ব্যবস্থাপকরা নিম্নস্তরের কর্মীদের নির্দেশ দেন।উদ্দীপকের মি. ফরহাদ সিলভার এগ্রো ফুড লিমিটেড-এর একজন কর্মকর্তা। তিনি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য নির্ধারণ ও নীতি প্রণয়নের কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্জনের জন্য সাধারণ ব্যবস্থাপকদের মাধ্যমে শ্রমিকদের নির্দেশনা দেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপর্যায়ে অবস্থান করছেন। আর লক্ষ্যার্জনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজও তিনি পালন করেন। এসব বৈশিষ্ট্য একজন প্রশাসকের কাজের সাথে সম্পর্কিত। তাই বলা যায়, মি. ফরহাদ ব্যবস্থাপক নন। তিনি একজন প্রশাসক হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছেন।

 

ঘ) উদ্দীপকের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক অসন্তোষের জন্য ব্যবস্থাপনার ন্যায্য পারিশ্রমিকের নীতির ব্যত্যয় দায়ী বলে আমি মনে করি।এ নীতিতে প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মীর কাজের ধরন ও তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত বেতন নির্ধারণ করা হয়। কর্মীরা নিজেদের শ্রম ও কাজের বিনিময়ে উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রত্যাশা করে। তাই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সবাইকে যোগ্যতা অনুযায়ীই পারিশ্রমিক দেয়া উচিত।উদ্দীপকের মি. ফরহাদ এগ্রো ফুড লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা। তিনি প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্জন করতে চান। এজন্য তিনি শ্রমিকদের প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে অতিরিক্ত কাজ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এর বিনিময়ে তিনি কোনো অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিবেন না বলে ঘোষণা দেন। এতে মালিক পক্ষ সন্তুষ্ট হলেও শ্রমিকরা অসন্তুষ্ট হয়। এখানে পারিশ্রমিকের নীতি যথার্থভাবে অনুসরণ করা হয়নি।এ নীতি অনুযায়ী সাধারণত কর্মীরা অতিরিক্ত কাজের বিনিময়ে অতিরিক্ত মজুরি প্রত্যাশা করে। উদ্দীপকের মি. ফরহাদ শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে কোনো মজুরি দেননি। এতে শ্রমিকরা সেই কাজের প্রতি আগ্রহ হারাবে। ফলে কাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। এছাড়া মতোবিরোধ ও ভুল বোঝাবুঝিরও সৃষ্টি হবে। সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা মালিকপক্ষের প্রতি অসন্তুষ্ট হবে। সুতরাং, উপযুক্ত পারিশ্রমিকের নীতি লঙ্ঘিত হওয়ায় উদ্দীপকের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা অসন্তুষ্ট হয়েছে।

 

উদ্দীপকঃ-

জনাব রায়হান একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। তিনি শিল্প প্রতিষ্ঠানে যে সকল কাজ হবে তা চিহ্নিত করে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করে তার অধীনে উপরিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর যেখানে যে মানের জনশক্তি প্রয়োজন তা নিয়োগ প্রদান করে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। শুধু ব্যক্তি নিয়োগই নয় উপায় উপকরণও স্থাপন করেন। এতে কাজ চলাকালে তিনি সুবিধা পাচ্ছেন।

ক. বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক কে?

খ. ব্যবস্থাপনার জোড়া মই শিকল নীতি বলতে কী বোঝায়?

গ. উদ্দীপকে জনাব রায়হান প্রথমত হেনরি ফেয়লের কোন নীতি অনুসরণ করেছেন? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয়ত যে নীতির অনুসরণ করা হয়েছে তা প্রতিষ্ঠানকে গতিময় করে তুলেছে-বিশ্লেষণ করো।

 

প্রশ্নের উত্তরঃ-

ক) বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক হলেন আমেরিকান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ফ্রেডারিক উইন্সলো টেলর (Frederick Winslow Taylor) |

 

খ) প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত প্রতিটি কর্মী, বিভাগ ও উপবিভাগকে একই সূত্রে আবদ্ধ করাকে জোড়া মই শিকল (Scalar Chain) নীতি বলে।এ নীতি অনুযায়ী কর্তৃত্ব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে ধাপে ধাপে অধস্তনের কাছে নেমে আসে। ফলে প্রতিটি বিভাগ, উপবিভাগ ও ব্যক্তি কর্তৃত্বের শিকলে পারম্পরিক সম্পর্কযুক্ত থাকে। এটি কর্মীদের কর্তৃত্বের প্রবাহ ও যোগাযোগের পথ নির্দেশ করে।

 

গ) উদ্দীপকে জনাব রায়হান প্রথমত হেনরি ফেয়লের কার্যবিভাজন নীতি অনুসরণ করেছেন।এ নীতিতে প্রতিষ্ঠানের কাজকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। এরপর প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করা হয়। এতে কর্মীরা তাদের কাজ, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বুঝে নিয়ে সেভাবে কাজ করতে পারে। ফলে তাদের কর্মদক্ষতাও বাড়ে।উদ্দীপকের জনাব রায়হান একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। তিনি প্রতিষ্ঠানে যেসব কাজ হবে তা প্রথমে চিহ্নিত করেন। এগুলো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে তার অধীনে উপবিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। কাজ ভাগ করে দেয়ার ফলে কর্মীরা নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবগত থাকে। প্রত্যেকের কাজ নির্দিষ্ট থাকায় জবাবদিহিতা নেওয়া সহজ হয়। এসব বৈশিষ্ট্য কর্ম বিভাজন নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, জনাব রায়হান প্রথমে কার্য বিভাজন নীতিই অনুসরণ করেছেন।

নিয়ন্ত্রণকে পরবর্তী পরিকল্পনার ভিত্তি বলা হয় কেন?

ঘ) উদ্দীপকের প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয়ত শৃঙ্খলার নীতি অনুসরণ করা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানকে গতিশীল করে তুলেছে।শৃঙ্খলার নীতিতে (Principle of order) যোগ্য ব্যক্তিকে সঠিক স্থানে নিয়োগ করা হয়। তাছাড়া সঠিক বস্তুকে সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বলতে উপায়-উপকরণাদির শৃঙ্খলাকে বোঝানো হয়। উদ্দীপকের জনাব রায়হান একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। তিনি তার প্রতিষ্ঠানে যেখানে যে মানের জনশক্তি প্রয়োজন তা নিয়োগ দেন। এরপর তাদের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্দিষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন। প্রতিষ্ঠানের অন্য উপায়-উপকরণও তিনি সঠিকস্থানে স্থাপন করেন। এটি শৃঙ্খলার নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।এই নীতি অনুসরণের ফলে জনাব রায়হানের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাজের দক্ষতা বাড়ে। কাজ সম্বন্ধে কর্মীর ভালো ধারণা থাকায় দ্রুত কাজ সম্পন্ন হয়। এতে নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন চলতে থাকে। আবার অন্যান্য (যন্ত্রপাতি, মেশিন, কাঁচামাল) উপকরণ সঠিকস্থানে রাখা হচ্ছে। এতে উপায়-উপকরণ সঠিকভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানের সম্পদের সদ্ব্যবহার ঘটছে। সুতরাং, শৃঙ্খলার নীতিটি অনুসরণের ফলেই উদ্দীপকের প্রতিষ্ঠানের কাজ গতিশীল হয়েছে।

কম্পিউটারের কয়েকটি ব্যবহার লিখ?