সুলতান রাজিয়া কে ছিলেন?

প্রশ্ন-

বিদেশ থাকা বন্ধু জিম তার বন্ধু সিমুদের বাড়িতে এসে তার সাথে পাইকারি বাজারে যায়। বাজারে প্রবেশ মুখেই তার চোখে পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সম্বলিত একটি তালিকা বোর্ড। তালিকা অনুযায়ী চালের মূল্য ৩০ টাকা কেজি হওয়াসত্ত্বেও বাজারে চালের মূল্য ৪০ টাকা। বিস্মিত হয়ে জিম খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সরকারের সার, বীজ ইত্যাদিতে ভর্তুকির পরিমাণ কম হওয়ায় চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম তালিকা থেকে অনেক বেশি।

ক. লাখবক্স কার উপাধি ছিল?

খ. সুলতান রাজিয়া কে ছিলেন?

গ. জিমের দেখা মূল্য তালিকার সাথে তোমার পঠিত কোন শাসকের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. সিমুদের দেশের সরকার কীভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তর-

ক) সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক এর উপাধি ছিল লাখ বক্স।

খ) সুলতান রাজিয়া ছিলেন ইলতুৎমিশের কন্যা।ইলতুৎমিশের পুত্রদের কেউই সুলতান পদের যোগ্য ছিলেন না এজন্য সুলতান তাঁর কন্যা রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু তুর্কি আমিরদের এটা পছন্দ ছিল না। তাই তারা ইলতুৎমিশের পুত্র ফিরোজকে সিংহাসনে বসায়। কিন্তু দিল্লির অধিবাসীদের সমর্থনে রাজিয়া ১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসন দখল করে ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তিনি বাহরামের সৈন্যবাহিনীর নিকট পরাজিত হয়ে পলায়নকালে জনৈক হিন্দু আততায়ী কর্তৃক ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে নিহত হন।

 

গ) উদ্দীপকের ঘটনার সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের দিল্লি সালতানাতের সুলতান আলাউদ্দিন খলজির কর্মকাণ্ডের মিল রয়েছে।সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১২৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষমতারোহণ করেই নানামুখী সংস্কার ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। সুলতানের এ সংস্কার কার্যগুলোর মধ্যে মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অন্যতম। মূলত আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্যের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিধান, জনসাধারণের সুবিধা, মুদ্রাস্ফীতি রোধ, বিশাল সৈন্যবাহিনীর ভরণ-পোষণ এবং সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ও সংহতি বিধানের জন্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।উদ্দীপকে একটি বাজারের দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীল অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয় করছে না। এ রকম অবস্থার প্রেক্ষিতেই সুলতান আলাউদ্দিন খলজি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। আলাউদ্দিন খলজি খাদ্যশস্য সুলভমূল্যে ক্রয়- বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন- গম, বার্লি, চাল, চিনি, আটা, ডাল, তৈল, সোডা ইত্যাদির মূল্য নির্ধারণ করে দেন। এছাড়া তিনি বস্ত্র, পশু ও অন্যান্য দ্রব্যাদির মূল্যের তালিকা করে দেন। আলাউদ্দিন খলজি কেবল দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি দ্রব্যাদির চাহিদা অনুসারে সরবরাহের ব্যবস্থাও গ্রহণ করেন। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে খাদ্যঘাটতি পূরণ করার উদ্দেশ্যে তিনি দিল্লির উপকণ্ঠে এবং রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি শস্যভাণ্ডার গড়ে তোলেন। তিনি লোভী ব্যবসায়ীদের মজুদদারি নিরোধে তাদের নামের তালিকা করে জরিমানা ও পণ্য বাজেয়াপ্ত করাসহ নানা ধরনের শাস্তিপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি বস্ত্র, পশু ও অন্যান্য দ্রব্যাদির মূল্যের তালিকা করে দেন। উদ্দীপকে এরকমই একটি মূল্য তালিকার কথা বলা হয়েছে, যা আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত বহন করছে।

ঘ) উদ্দীপকে সিমূদের সরকারকে আলাউদ্দিন খলজির মতো মুদ্রাস্ফীতি রোধ, গুদামঘর নির্মাণ এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের দমনের মাধ্যমে মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারেন।ভারতবর্ষের ইতিহাসে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কার্যকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তিনি মূল্য নিয়ন্ত্রণে পণ্য বাজার স্থাপন, বাজার পরিদর্শন ব্যবস্থা, নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করা, মজুত নিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। উদ্দীপকের সিমুদের সরকারও এরূপ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে সফল হতে পারেন। মূল্য নিয়ন্ত্রণে সিমুদের সরকারকে প্রথমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া খাদ্যঘাটতি পূরণ করার জন্য শস্যাগার বা গুদামঘর নির্মাণ করার মাধ্যমে তিনি মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারেন। ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো অসদুপায় অবলম্বন করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তারা লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধের মাধ্যমেও এ ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারে। পণ্যদ্রব্য যাতে সময়মতো ক্রেতার নিকট সরবরাহ করা যায় সেজন্য পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া বাজারের ফটকা ব্যবসায়ীদের দমন করে সিমূদের সরকার এ নীতি ষ্কার্যকর করতে পারেন। পণ্যদ্রব্য মজুত করে মজুতদাররা যাতে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্যও তারা কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে।উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করতে সিমুর দেশের সরকারকে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মতোই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সুলতান রাজিয়া কে ছিলেন?

প্রশ্ন-

শ্যামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই ফায়িম সাহেব সমাজ উন্নয়ন ও তাকে সহযোগিতার জন্য নিজ বংশ ও দলের যোগ্য কতিপয় ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ‘আত্মীয় সভা’ নামক সংগঠন তৈরি করেন। উক্ত সংগঠনটি তার আমলে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সংগঠনটির সদস্যদের ব্যক্তিগত লোড ও অভ্যন্তরীণ কলহের কারণে তারা উগ্র হয়ে ওঠে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য পরবর্তী চেয়ারম্যান রেজাউল হক অতি নিষ্ঠুর ও কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের দমনসহ উত্ত সংগঠনটির বিলুপ্তি ঘটান। ফলে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শান্তি ও উন্নতি অব্যাহত থাকে।

ক. কুতুব মিনার কার নামে নির্মিত হয়?

খ. বন্দেগান-চেহেলগান বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপকের আত্মীয় সভার সাথে ইলতুৎমিশের যে সংগঠনের মিল আছে তার স্বরূপ তুলে ধর।

ঘ. রেজাউল সাহেবের পদক্ষেপ সুলতান বলবনের কঠোর নীতিরই প্রতিচ্ছবি- মূল্যায়ন কর।

প্রশ্নের উত্তর-

ক) কুতুব মিনার প্রখ্যাত সাধক কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকীর নামে নির্মিত হয়।

খ) ‘বন্দেগান-ই-চেহেলগান’ অর্থ চল্লিশ আমির দল।সুলতান ইলতুৎমিশ দিল্লি সালতানাতের যোগ্য শাসকদের ধারাবাহিক আগমন নিশ্চিতকরণের জন্য ৪০ জন সাহসী, যোগ্য ও দূরদর্শী ক্রীতদাসকে নিয়ে একটি দল গঠন করেন, যা ‘বন্দেগান-ই-চেহেলগান’ নামে পরিচিত। গিয়াসউদ্দিন বলবন এর সদস্য ছিলেন।

 

প্রশ্ন-

আমাদের দেশে সামাজিক অপরাধের ধারা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। যেমন- শিশু ও নারী নির্যাতন, গৃহপরিচারিকা নির্যাতন, মাদকসক্ত, মাদক ব্যবসা ইত্যাদি দেশে আইন রয়েছে তা প্রয়োগে সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। অথচ দিল্লির এক সুলতান এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন যে, তার সামনে কেউ চাকরের গায়েও হাত তোলার সাহস পেতনা। উক্ত সুলতান রাজ দরবারের অমাত্য কর্মচারীদের প্রভাব বিনষ্ট করেছিলেন। তাদের গতিবিধির উপর কড়া নজরদারি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তার Blood & Iron Policy ইতিহাস খ্যাত নীতি ছিল।

ক. চল্লিশ চক্র কে গঠন করেন?

খ. Blood & Iron Policy কী? ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে দিল্লির কোন সুলতানের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. অপরাধ দমন ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় উত্ত সুলতানের গৃহীত পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার- উক্তিটির পক্ষে মতামত দাও।

 প্রশ্নের উত্তর-

ক) সুলতান ইলতুৎমিশ ‘চল্লিশ চক্র’ গঠন করেন।

খ) অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বহিরাক্রমণ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন Blood & Iron Policy গ্রহণ করেন।গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময়ে তুর্কি অভিজাতদের ষড়যন্ত্র এবং বহিরাক্রমণ মারাত্মক রূপ ধারণ করে। সুলতান বলবন ষড়যন্ত্রপরায়ণ অভিজাতদের দমনের জন্য কঠোর শাসন নীতি গ্রহণ করেন। তাছাড়া মোঙ্গলদের আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্যও তিনি কঠিন দৃঢ়তার পরিচয় দেন। সুতরাং অভ্যন্তরীণ কলহ ও শত্রু দমনের জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন রক্তপাত ও কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।

 

গ) উদ্দীপকে আলোচ্য বিষয়ে দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক শাসকের অস্তিত্ব রয়েছে। যারা ক্ষুদ্র অবস্থা থেকে নিজের যোগ্যতায় রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। তারা শাসন ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্রের প্রভাবশালীদের প্রভাব প্রতিপত্তি হ্রাস করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম দূর করে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করেছেন। এমনই একজন শাসক ছিলেন গিয়াসউদ্দিন বলবন। উদ্দীপকেও তার এ বিষয়গুলোর প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।উদ্দীপকে বলবনের কথা বলা হয়েছে যিনি রাজদরবারের অমাত্য কর্মচারীদের প্রভাব প্রতিপত্তি খর্ব করে তাদের গতিবিধির ওপরও কড়া নজরদারী ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। কেননা তিনিই অভিজাতদের চক্র অর্থাৎ চল্লিশ চক্র কে দমন করেন। ইলতুৎমিশের দুর্বল। উত্তরাধিকারীদের যুগে রাজ্য প্রশাসন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এরা সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। বলবন তাদের দমন করার উদ্দেশ্যে তাদের বিশেষ সুবিধা বাতিল, অবাধ মেলামেশা বন্ধ, রাজদরবারে হাসি-ঠাট্টার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুলতান তাদের জায়গিরদারি বাতিল করে এবং সামান্য অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে তাদের ক্ষমতা খর্ব করেন। উদ্দীপকেও এ বিষয়গুলোর ইঙ্গিত রয়েছে।

 

ঘ) অপরাধ দমন ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় উক্ত সুলতান অর্থাৎ সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ প্রশংসার দাবিদার- উক্তিটি যথার্থ।উদ্দীপকে দিল্লির একজন শাসকের কথা বলা হয়েছে, যার সমানে কেউ চাকরের গায়েও হাত তোলার সাহস পেত না। এখানে দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিয়ষটি ফুটে উঠেছে। এখানে সুলতানের ন্যায়বিচারের দিকটিই ফুটে উঠেছে। কেননা তার ন্যায়বিচারের জন্য লোকে এত ভীত ও সন্ত্রস্ত থাকত যে, ভৃত্য ও ক্রীতদাসের প্রতিও কেউ দুর্ব্যবহার করতে সাহস পেত না। এ বিষয়টি ছাড়াও তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।সুলতান বলবন সাম্রাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান সকল প্রকার অরাজকতা ও বিদ্রোহ দমনে তৎপর ছিলেন। তার শাসনামলের প্রথম দিকে মেওয়াটি নামক রাজপুত দস্যুগণ পথিকদের সর্বস্ব অপহরণ, পাইকারিভাবে নরহত্যা, লুটতরাজ এবং অত্যাচার কার্য চালিয়ে জনজীবন বিপন্ন করে তোলে। এ কারণে সুলতান শত-সহস্র মেওয়াটিদের হত্যা করে রাজধানী দিল্লি এবং তার উপকণ্ঠে শান্তি স্থাপন করেন। এ সময় দোয়াবের হিন্দুরাও দোয়াব অঞ্চলে বেআইনি কার্যকলাপ পরিচালনা করে জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছিল। এ অবস্থার নিরসনে বলবন কাম্পিল, পাতিওয়ালা ও ভোজপুরে অবস্থিত তাদের শক্তিশালী ঘাঁটিগুলো দখল করে সেখানে দুর্গ তৈরি করে জনগণের নিরাপত্তা বিধান করেন। এছাড়াও তিনি উপজাতীয়দের বিদ্রোহ দমনসহ অন্যান্য ছোটখাটো বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলাও যথাসময়ে দমন করেন।উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের অপরাধ দমন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহ প্রশংসার দাবিদার। জন্য গৃহীত

প্রশ্ন-

শাসক ইসমাইল গাজী আদর্শবাদী, সৎচরিত্রের অধিকারী ছিলেন। সেই সাথে তিনি ছিলেন দার্শনিক, ন্যায়বিচারক, দয়ালু, উদার, বিদ্যোৎসাহী ও শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব রক্ষা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিধান ও সম্প্রসারণ এবং সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে তিনি রাষ্ট্রের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতার মর্যাদা লাভ করেন।

ক. ভারতে স্বাধীন মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন কে?

খ. ‘চল্লিশ চক্র’ বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শাসক ইসমাইল গাজীর শাসনব্যবস্থায় সুলতানি আমলের একজন শাসকের যে বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রতিফলিত হয়েছে তা মূল্যায়ন কর।

ঘ. উক্ত শাসকের শাসনকালে তাঁর রাষ্ট্র সভ্যতা ও সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ পাদপীঠে পরিণত হয়েছে- পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

 প্রশ্নের উত্তর-

ক) ভারতে স্বাধীন মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন কুতুবউদ্দিন আইবেক।

খ) সুলতান ইলতুৎমিশের সময়কার (১২১১-১২৩৬ খ্রি.) ক্রীতদাসদের মধ্যে যে চল্লিশজন বিশ্বস্ত ও সুযোগ্য ক্রীতদাস ছিল তাদের নিয়ে গঠিত চক্রকে চল্লিশ চক্র বলা হয়।ইলতুৎমিশের সময় এ চল্লিশ জনকে নিয়ে গঠিত হয় ‘বন্দেগান-ই- চেহেলগান’। ইলতুৎমিশের সময় তারা শাসনকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইলতুৎমিশ পরবর্তী দুর্বল সুলতানদের (রুকন উদ্দিন ফিরোজ শাহ, মইজউদ্দিন বাহরাম প্রমুখ) শাসনামলে তারা সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করেন।

গ) উদ্দীপকে বর্ণিত ইসমাইল গাজীর শাসনব্যবস্থায় সুলতানি আমলের শাসক শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রতিফলিত হয়েছে।উদ্দীপকের ইসমাইল গাজী এমন একজন শাসক যিনি ধার্মিক, ন্যায়বিচারক, দয়ালু, উদার, বিদ্যোৎসাহী ও শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। নব প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব রক্ষা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিধান ও সম্প্রসারণ ছাড়াও তিনি তার রাজ্যে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। সুলতানি আমলের শাসক ইলতুৎমিশও এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন।ইলতুৎমিশ এক অরাজকতাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় আরোহণ করেছিলেন। তবে সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতিতেও তিনি বিচলিত হননি। তিনি আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে দুর্ধর্ষ মোঙ্গল দলনেতা চেঙ্গিস খানের আক্রমণ থেকে ভারতবর্ষকে রক্ষা করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে দিল্লি সুলতানদের মধ্যে ইলতুৎমিশই সর্বপ্রথম খাঁটি আরবি রৌপ্যমুদ্রার প্রচলন করেন। তিনি বিদ্রোহ দমন ও সামরিক অভিযান নিয়ে অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকলেও শিল্প ও ললিতকলার প্রতি তার প্রবল অনুরাগ ছিল। তিনি সমগ্র রাষ্ট্রে সুষ্ঠু, নির্ভীক ও ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের ন্যায় ইলতুৎমিশও একটি কার্যকর শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন।

ঘ) উক্ত শাসক অর্থাৎ সুলতান ইলতুৎমিশকে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ নৃপতি’ বলাকে আমি সম্পূর্ণরূপে যৌক্তিক বলে মনে করি।১২১১ খ্রিষ্টাব্দে ইলতুৎমিশ ‘শামসুদ্দিন’ উপাধি ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। কুতুবউদ্দিন আইবেক দিল্লি সালতানাতের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করলেও ইলতুৎমিশকে নিঃসন্দেহে প্রাথমিক তুর্কি সাম্রাজ্যের ‘সর্বশ্রেষ্ঠ নৃপতি’ বলা যেতে পারে।উক্ত শাসক তথা সুলতান শামসউদ্দিন ইলতুৎমিশের শাসনকালে তার রাষ্ট্র সভ্যতা-সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ পাদপীঠে পরিণত হয়েছিল।ইলতুৎমিশ শিল্পসাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। তিনি সামরিক অভিযান ও বিদ্রোহ দমনে অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করলেও শিক্ষাদীক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা ও জ্ঞানী-গুণীদের সমাদর এবং দরবারে আশ্রয়দান করতে কখনও কুণ্ঠাবোধ করেননি।সুলতান ইলতুৎমিশের রাজসভায় বহু কবি, সাহিত্যিক, বিদ্বান ও সাধক- তাপসেরা সমবেত হতেন। জমিউল হিকায়েতের রচয়িতা নূর উদ্দীন মাহমুদ উফী এ সময়ে দিল্লিতে ছিলেন। মিনহাজ উস সিরাজের বর্ণনায় জানা যায় যে, সুলতান ধার্মিক, দয়াবান ও জ্ঞানীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ঐতিহাসিক আল বেরুনির মতে, তার রাজত্বকাল সমৃদ্ধিশালী ও গৌরবময় ছিল। তার সময় একটি কলেজসহ অসংখ্য মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মিত হয়েছিল। তিনি একজন উদার সাহিত্যানুরাগী ছিলেন এবং তার শাসনামলে রাজধানী দিল্লি সভ্যতা ও সংস্কৃতির একটি শ্রেষ্ঠ পাদপীঠে পরিণত হয়। মুসলিম ও ভারতীয় শিল্পকলার সংমিশ্রণে তার সময় এক নতুন যুগের সূচনা হয়। তিনি কুতুব মিনার নির্মাণসহ অনেক মসজিদ নির্মাণ ও সংস্কার করেন। প্রকৃত প্রস্তাবে তিনি একজন উদার সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। বস্তুত দিল্লি সালতানাতের চরম সংকটকালে ইলতুৎমিশের ন্যায় সুযোগ্য শাসকের আবির্ভাব না হলে দিল্লি সালতানাত টিকত কি না সন্দেহ ছিল।উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, ইলতুৎমিশ সংস্কৃতিমনা শাসক হিসেবে সফলতার পরিচয় দিয়েছিলেন, যা ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

আহ্বান গল্পের পাঠ বিশ্লেষণ