সামাজিক মূল্যবোধ বলতে কী বোঝায়?

উদ্দীপকঃ-

আকমল সাহেব ছেলেমেয়েদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বড় করে তুলেছেন। পড়াশুনা, জীবনসংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত তিনি তাদের উপরই ছেড়ে দিয়েছেন। তার সন্তানরাও বাবা-মাকে অত্যন্ত ভক্তি করে। সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও আকমল সাহেবের সন্তানরা যথোচিত আচরণ প্রদর্শন করে থাকে।

ক. মূল্যবোধ কোন ধরণের প্রত্যয়?

খ. সামাজিক মূল্যবোধ বলতে কী বোঝায়?

গ. আকমল সাহেবের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের কোন মূল্যবোধের ইঙ্গিত

প্রকাশ পায়? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকটির পারস্পরিক মূল্যবোধের ফলে সমাজে সংগতি বৃদ্ধি পায়- তোমার মতামত দাও।

প্রশ্নের উত্তরঃ-

ক) মূল্যবোধ একটি আপেক্ষিক প্রত্যয়।

খ) সামাজিক মূল্যবোধ বলতে সেসব নীতিমালা, বিশ্বাস, দর্শন, ধ্যান- ধারণা, সংকল্প প্রভৃতিকে বোঝায়, যা মানুষের সামাজিক সম্পর্ক এবং আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।সামাজিক মূল্যবোধ হলো একটি বিচারবোধ, যা ব্যক্তিগত বা দলগত কল্যাণে প্রয়োজন হয়। সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি, মনোভাব, কার্যক্রম প্রভৃতির সমন্বয়ে সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে। সামাজিক মূল্যবোধ সমাজের মানুষের আচরণের মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে।

 

গ) আকমল সাহেবের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের ব্যক্তির সহজাত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি মূল্যবোধের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।ব্যক্তির সহজাত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি সমাজকর্মের সাধারণ মূল্যবোধগুলোর একটি অন্যতম দিক। সমাজকর্ম জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পৃথক সত্তা ও মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। সমাজকর্মে বিশ্বাস করা হয়, সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিই বিশেষ মর্যাদা ও মূল্যের অধিকারী। ব্যক্তির মর্যাদা ও পৃথক সত্তার স্বীকৃতি দান ছাড়া যেমন মানুষের কল্যাণ আনয়ন সম্ভব নয়, তেমনি সমাজের কল্যাণসাধনও সম্ভব নয়। এজন্য সমাজকর্মে সাহায্যার্থীকে তার অন্তর্নিহিত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি দানের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। উদ্দীপকেও এ দিকটির চর্চা লক্ষ করা যায়।আকমল সাহেব তার সন্তানদের সিদ্ধান্তের মর্যাদা দিয়েছেন বলেই তারা সফল হয়েছে। ব্যক্তির মর্যাদার স্বীকৃতি সাহায্যার্থীর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। এতে ব্যক্তি সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সক্রিয় সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূত অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা লাভ করে এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এছাড়া এর ফলে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং স্বাবলম্বন অর্জনের স্পৃহা জাগ্রত হয়।

 

ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ মূল্যবোধের ফলে সমাজে সংহতি বৃদ্ধি পায়’- ধারণাটির সাথে আমি একমত।সমাজকর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেশাগত মূল্যবোধ হলো পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ। এ ধরনের মূল্যবোধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন এবং পরিচালনার অপরিহার্য শর্ত। যে সমাজের মানুষের মধ্যে সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধের গুণ থাকে না, সেই সমাজ সুশৃঙ্খল হতে পারে না। তাছাড়া এটা মানুষের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, কলহ ও বিদ্বেষ দূর করে সৌহার্দ্যপূণ্য সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলে। উদ্দীপকে আকমল সাহেব তার সন্তানদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বড় করেছেন। তার সন্তানরাও বাবা-মাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে। সমাজের নানা ক্ষেত্রেও তারা যথোচিত আচরণ প্রদর্শণ করে। তাদের এ মূল্যবোধটি সমাজকর্মের পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধকে নির্দেশ করে।আধুনিক সমাজকর্ম পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন, সামাজিক সুসম্পর্কের বন্ধন এবং সৌহার্দ্যমূলক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে।সমাজকর্ম বিশ্বাস করে যে, সমাজের প্রতিটি সদস্যই বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। সমাজকর্ম অনুশীলনে সমাজকর্মীরা এ মূল্যবোধের যথাযথ অনুসরণ করে সুন্দর ও কাঙ্ক্ষিত সমাজ গঠনে নিবেদিত হয়।এই মূল্যবোধ অনুশীলনের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণ এমনকি সমাজকর্মী এবং সাহায্যার্থীর মধ্যকার সম্পর্ক আন্তরিক হয়। আকমল সাহেবের সন্তানরা এই মূল্যবোধটি যথাযথভাবে অনুসরণ করে। যা সুন্দর সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ মূল্যবোধটি সমাজে শান্তি ও সংহতি বৃদ্ধি করে।

 

উদ্দীপকঃ-

নিশি ও ঐশি সমাজকর্মে মাস্টার্স করছে। তারা ফিল্ড ওয়ার্কের জন্য ঢাকা শহরের একটি বস্তিতে পর্যবেক্ষণে যায়। কিন্তু সেখানে বস্তির এক মহিলার সাথে নিশির তর্কাতর্কি শুরু হয়। তখন ঐশি নিশিকে শান্ত করে এবং পর্যায়ক্রমে একটি সুষ্ঠু ও আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

ক. পেশা কী?

খ. পেশা ও বৃত্তির মধ্যে পার্থক্য লেখ।

গ. নিশি সমাজকর্মের কোন নীতিমালার পরিপন্থি আচরণ প্রদর্শন করেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ঐশির ভূমিকায় সমাজকর্মের যে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ কর।

 

প্রশ্নের উত্তর-

ক) সাধারণত জীবিকা নির্বাহের জন্য তত্ত্বনির্ভর সুশৃঙ্খল জ্ঞান, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং ব্যবহারিক জ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হলো পেশা।

খ) প্রতিটি পেশারই কতকগুলো বৈশিষ্ট্য ও মূল্যবোধ থাকে, যা পেশাকে বৃত্তি থেকে আলাদা করে।প্রতিটি পেশার ক্ষেত্রে নিজস্ব সুসংগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বৃত্তির জন্য কোনো বিশেষ জ্ঞানার্জনের আবশ্যকতা নেই। প্রত্যেক পেশাদার ব্যক্তিকে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে পেশাগত কাজ সম্পর্কে বিশেষ নৈপুণ্য ও দক্ষতার অধিকারী হতে হয়। বৃত্তির ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক শিক্ষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা ও নৈপুণ্য অর্জনের তেমন কোনো প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি পেশারই স্বতন্ত্র কিছু মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদণ্ড থাকে। বৃত্তির ক্ষেত্রে তেমন কোনো মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদণ্ডের প্রয়োজন হয় না।

 

গ) নিশি সমাজকর্মের ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি নীতিমালার পরিপন্থি আচরণ প্রদর্শন করেছে।সমাজকর্মের অন্যতম মূল্যবোধ হচ্ছে ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি। সমাজকর্ম বিশ্বাস করে সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি ব্যক্তি বিশেষ যোগ্যতা ও মর্যাদার অধিকারী। হয়তো সুযোগ বা স্বীকৃতির অভাবে মানুষ তার যোগ্যতা কাজে লাগাতে পারে না। তাছাড়া ব্যক্তিত্ত চায় সে যে পরিবেশে বাস করে, সেখানে তার যথার্থ মূল্যায়ন হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি না দেয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ সাধন করে স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব নয়।নিশি ও ঐশি সমাজকর্মে মাস্টার্স করেছে। তারা ফিল্ড ওয়ার্কের জন্য ঢাকা শহরের একটি বস্তি পর্যবেক্ষণে যায়। সেখানে গিয়ে নিশি বস্তির এক মহিলার সাথে তর্ক করে। এতে সমাজকর্মের ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার নীতিটি লঙ্ঘিত হয়। কারণ সমাজকর্মের শিক্ষার্থী হিসেবে নিশির উচিত ছিল বস্তির মহিলাটিকে তার নিজস্ব মর্যাদা দানের মাধ্যমে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করা। কিন্তু তা না করে সে মহিলাটির সাথে তর্ক শুরু করে। ফলে বস্তির মহিলাটির ব্যক্তিগত মর্যাদা ও আত্মসম্মানবোধ লঙ্ঘিত হয়, যা সমাজকর্ম মূল্যবোধের পরিপন্থি।

 

ঘ) ঐশির আচরণে সমাজকর্মের পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ মূল্যবোধটি প্রকাশ পেয়েছে। সমাজকর্মে এ মূল্যবোধটির তাৎপর্য বিশেষভাবে স্বীকৃত।পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ সমাজকর্মের অন্যতম মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচিত। এ ধরনের মূল্যবোধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক সমাজকর্ম পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন, সামাজিক সুসম্পর্কের বন্ধন এবং সৌহার্দ্যমূলক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়াসী। তাছাড়া সমাজকর্ম বিশ্বাস করে যে, সমাজের প্রতিটি সদস্যই বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। সমাজকর্ম অনুশীলনে সমাজকর্মীরা এ মূল্যবোধের যথাযথ অনুসরণ করে সুন্দর ও কাঙ্ক্ষিত সমাজ গঠনে কাজ করে। এ মূল্যবোধ অনুশীলনের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এমনকি সমাজকর্মী এবং সাহায্যার্থীর মধ্যেও আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।ঐশি ও নিশি তাদের ফিল্ড ওয়ার্কের জন্য একটি বস্তিতে যায়। সেখানে নিশি বস্তির একজন মহিলার সাথে তর্ক করে। তখন ঐশি নিশিকে শান্ত করে আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে ঐশি পারস্পরিক সহনশীলতা এবং শ্রদ্ধাবোধ মূল্যবোধটি প্রয়োগ করে। এ মূল্যবোধ মানুষের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, কলহ ও বিদ্বেষ দূর করে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ মূল্যবোধ প্রয়োগ করে ঐশি নিশিকে শান্ত করতে সক্ষম হয়।উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজকর্মী পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ মূল্যবোধটি অনুশীলন না করলে যথাযথভাবে তার পেশাগত ভূমিকা পালন করতে পারবেন না। এ ধরণের মূল্যবোধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত।

 

উদ্দীপকঃ-

রাজিব ও সজিব গ্রামের পাঠশালায় পড়ত। দরিদ্রতার কারণে রাজিব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করার পর বাবার কৃষিকাজে সাহায্য করে। মাঝে মাঝে গ্রামের বাজারে তাদের মুদির দোকানে বসে। অপরপক্ষে, সজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করে জেলা শহরে ওকালতি করে এবং তার সন্তানরা ভালো স্কুলে পড়াশোনা করে।

ক. সামাজিক মূল্যবোধের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?

খ. শিল্পবিপ্লব বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপকে রাজিবের জীবনধারণের অবলম্বনকে সমাজকর্মের ভাষায় কী বলা হয়? তার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

ঘ. সজিবের জীবিকা পেশার বৈশিষ্ট্যের আলোকে মূল্যায়ন কর।

 

উত্তর-

ক) সামাজিক মূল্যবোধের ইংরেজি প্রতিশব্দ Social Values.

 

গ) উদ্দীপকে রাজিবের জীবনধারণের অবলম্বনকে সমাজকর্মের ভাষায় বৃত্তি বলা হয়।বৈশিষ্ট্যগতভাবে জীবনধারণের জন্য যেকোনো রকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বৃত্তি বলা হয়। যেমন- দিনমজুর, রিকশাচালক, কুলি প্রভৃতি। বৃত্তির জন্য কোনো বিশেষ জ্ঞানার্জনের আবশ্যকতা নেই। এমনকি বৃত্তির জন্য পেশাগত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তাও আবশ্যক নয়। আবার বৃত্তির ক্ষেত্রে নৈতিক মানদণ্ড ও মূল্যবোধের উপস্থিতির প্রয়োজন হয় না। বৃত্তির ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা বিশেষভাবে অনুপস্থিত। রাজিব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করে তার বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করে এবং মাঝে মাঝে তাদের মুদি দোকানে বসে। এরূপ কাজের জন্য রাজিবের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নেই। তাই তার কাজ বৃত্তির অন্তর্ভুক্ত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রাজিবের জীবনধারণের যে অবলম্বন তাকে বৃত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।পেশার বৈশিষ্ট্যের আলোকে সজিবের জীবিকাকে পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।

 

ঘ) নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা, নৈপুণ্য, তত্ত্বনির্ভর সুশৃঙ্খল জ্ঞান, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং ব্যবহারিক জ্ঞানভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পন্থাকে পেশা বলে। এদিক বিচারে ওকালতি একটি পেশা।সজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করে ওকালতি করছে। পেশার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সজিব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বিষয়ে সুশৃঙ্খল জ্ঞান অর্জন করেছে। এছাড়া এ পেশায় রয়েছে বিশেষ দক্ষতা ও কৌশল যা বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে। সেই সাথে তার পেশাগত দায়িত্ব রয়েছে, বিভিন্ন কাজের জন্য রয়েছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা। সামাজিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা তার পেশার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এছাড়া সজিবের পেশায় রয়েছে পেশাগত নৈতিক বিধিমালা ও পেশাগত সংগঠন। পাশাপাশি পেশায় অন্তর্ভুক্তির জন্য তাকে ব্যক্তিগত যোগ্যতা অর্জন করতে হয়েছে। পেশাগত সেবার ফলাফলের পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপযোগ্যতাও তার পেশার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়।উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, জীবিকা হিসেবে ওকালতি কাজের মধ্যে পেশার বৈশিষ্ট্যাবলি রয়েছে। তাই সজিবের জীবিকা ওকালতি পেশার অন্তর্ভুক্ত।

সামাজিক মূল্যবোধ বলতে কী বোঝায়?

উদ্দীপকঃ-

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের একটি দেশ। তথাপি জনগণ অনেক ক্ষেত্রে অজ্ঞতা ও অসচেতনতার মধ্যে বসবাস করছে। রয়েছে তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে পেশাদার সমাজকর্ম প্রয়োগের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও একটা সংগঠনের অভাবে সমাজকর্ম পেশার মর্যাদা অর্জনে সক্ষম হয়নি। অনেক সময় সাধারণ ধারণা অনুযায়ী সমাজের জন্য কল্যাণমূলক কোনো কার্যক্রমে কেউ অংশগ্রহণ করলেই গণমাধ্যমগুলো তাকে সমাজকর্মী হিসেবে প্রচার করে।

ক. গ্রহণনীতি অর্থ কী?

খ. পেশাগত মূল্যবোধ বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপকে কোন সংগঠনের অভাবের কথা বলা হয়েছে এবং কেন? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত সংগঠনের অভাবে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার মর্যাদা অর্জনে সফল হয়নি- তুমি কি একমত? যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দাও।

প্রশ্নের উত্তর-

ক) গ্রহণনীতি হলো সমাজকর্মী সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি বা সাহায্যার্থীকে কীভাবে গ্রহণ করবে সেই নীতি।

খ) যেসব নীতিমালা, বিশ্বাস, দর্শন, ধ্যান-ধারণা, সংকল্প প্রভৃতি বিভিন্ন পেশাগত আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলোর সমষ্টিকে পেশাগত মূল্যবোধ বলে।প্রতিটি পেশারই নিজস্ব মূল্যবোধ রয়েছে। এ সকল মূল্যবোধের প্রেক্ষিতেই পেশাদার কর্মীদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে।

গ) উদ্দীপকে পেশাগত সংগঠনের অভাবের কথা বলা হয়েছে। যেকোনো পেশার মানোন্নয়ন, পেশাদার কর্মীদের স্বার্থ-সংরক্ষণ, কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন প্রভৃতির জন্য প্রত্যেক পেশারই নিজস্ব সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান থাকে। এর মাধ্যমে পেশার উন্নতি, পেশাদার ব্যক্তির স্বার্থ সংরক্ষণ, বিপদসংকুল অবস্থার মোকাবিলা, অনুশীলনের ক্ষেত্র সৃষ্টি, পেশাজীবীদের নিয়ন্ত্রণ, পেশা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ ধরনের সংগঠন না থাকলে কোনো পেশা পেশাগত মর্যাদা অর্জন করতে পারে না। উদ্দীপকের ক্ষেত্রে এ ধরনের সংগঠনের অভাব পরিলক্ষিত হয়।উদ্দীপকে বলা হয়েছে বাংলাদেশ বিপুল জনসংখ্যার দেশ হওয়ায় পেশাদার সমাজকর্ম প্রয়োগের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও একটি সংগঠনের অভাবে সমাজকর্ম পেশাগত মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি। উদ্দীপকের এই তথ্যটি সমাজকর্মের পেশাগত সংগঠনের অভাবকেই ইঙ্গিত করে।

ঘ) হ্যাঁ, উক্ত সংগঠন অর্থাৎ পেশাগত সংগঠনের অভাবেই বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার মর্যাদা অর্জনে সক্ষম হয়নি বক্তব্যটির সাথে আমি একমত।পেশাগত সংগঠন পেশার সময় উপযোগী মান উন্নয়ন, ব্যাপক প্রচার, অনুশীলনের ক্ষেত্র সৃষ্টি এবং পেশাজীবীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি প্রতিষ্ঠান। অথচ বাংলাদেশে সুদীর্ঘ ৫০ বছরেও সমাজকর্ম পেশার ক্ষেত্রে তেমন কোনো শক্তিশালী সংগঠন গড়ে ওঠেনি। পেশাগত মর্যাদার লড়াইয়ে শক্তিশালী ও পেশার উন্নয়নে আত্মনিয়োগকারী সংগঠনের কোনো বিকল্প নেই। সংগঠনের মাধ্যমে পেশাজীবীদের নিয়ন্ত্রণ, নৈতিক মানদণ্ড ভঙ্গকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা এবং পেশার সময়োপযোগী ব্যবস্থা না থাকলে স্বীকৃত পেশাও পতনের সম্মুখীন হতে পারে। উদ্দীপকে এ ধরনের সংগঠনের অভাবকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।উদ্দীপকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ অনেক ক্ষেত্রে অজ্ঞতা ও অসচেতনতার মধ্যে বাস করছে। বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার এই দেশে পেশাদার সমাজকর্ম প্রয়োগের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সংগঠনের অভাবে সমাজকর্ম এখনো পেশার মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে উপরে বর্ণিত পেশাগত সংগঠনের অভাবকেই দায়ী করা যায়। কেননা, বাংলাদেশে অন্যান্য পেশা যেমন চিকিৎসা, আইন, সাংবাদিকতাসহ সকল পেশার পেশাগত সংগঠন থাকায় সেগুলো পেশার মর্যাদা অর্জন করতে পেরেছে।উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত পেশাগত সংগঠনের অভাবেই সমাজকর্ম বাংলাদেশে পেশার মর্যাদা লাভে ব্যর্থ হয়েছে।

 

উদ্দীপকঃ-

সুমনা হক একটি সরকারি শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক। সালমা নামে অতি দরিদ্র পরিবারের পিতৃহীন একটি মেয়েকে তার প্রতিষ্ঠানে আনা হলে তিনি মেয়েটিকে সাদরে গ্রহণ করলেন। মেয়েটির মতামত নিয়ে তার ঝোঁক বুঝে অঙ্কন ও সংগীত শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করলেন।

ক. CSWE-এর পূর্ণরূপ লেখো।

খ. সমাজকর্ম মূল্যবোধ বলতে কী বোঝ?

গ. সুমনা হকের কর্মতৎপরতার মধ্যে সমাজকর্মের যেসব মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটেছে তার বিবরণ দাও।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সালমার জীবনের স্থায়ী উন্নয়নে সুমনা সমাজকর্মের আর কোন কোন মূল্যবোধ অনুসরণ করতে পারে? বুঝিয়ে লোখা।

প্রশ্নের উত্তর-

ক) CSWE-এর পূর্ণরূপ হলো ‘Council on Social Work Education.

খ) সমাজকর্ম মূল্যবোধ বলতে সমাজকর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে অনুসৃত মূল্যবোধগুলোকে বোঝানো হয়, যা মানুষের কল্যাণে প্রয়োগ করা হয়।বর্তমান যুগে সমাজকর্ম একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সাহায্যকারী পেশা হিসেবে স্বীকৃত। অন্যান্য পেশার ন্যায় এই পেশাতেও কিছু স্বীকৃত মূল্যবোধ আছে। সাধারণত যেসব আদর্শ, বিশ্বাস, ধারণা, মৌলিক নীতিমালা ও স্বীকার্য সত্যের ওপর পেশাদার সমাজকর্মের সামগ্রিক সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলোর সমষ্টিকেই সমাজকর্মের মূল্যবোধ বলে।

গ) উদ্দীপকে সুমনা হকের কর্মতৎপরতার মধ্যে সমাজকর্মের যেসব মূল্যবোধের প্রতিফলন দেখা যায় তা হলো ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি এবং ব্যক্তির স্বাধীনতা নীতি।উদ্দীপকে দেখা যায়, সুমনা হক শিশু পরিবারে সদ্য আগত সালমা নামের মেয়েটিকে সাদরে গ্রহণ করেন যা ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতিকে চিহ্নিত করে। সমাজকর্মী মাত্রই বিশ্বাস করেন, ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মূল্য ও মর্যাদার যথাযথ স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে তাকে যদি যথাযথ মূল্য ও মর্যাদা সহকারে গ্রহণ করা হয়, তাহলে সে আত্মবিশ্বাসী হবে এবং সমস্যা সমাধানে সক্ষমতা লাভ করবে। এই মূল্যবোধের মাধ্যমে সমাজকর্মী সাহায্যাথীকে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেন। এই ব্যাপারটি উদ্দীপকের সুমনা হকের কাজে দেখা যায়।আবার সালমার মতামত গ্রহণ করে তার পছন্দানুযায়ী বিষয় শেখার দিকে গুরুত্বারোপ করেন সুমনা হক, যা সমাজকর্মের ব্যক্তি স্বাধীনতা নীতিকে প্রতিফলিত করে। সমাজকর্ম বিশ্বাস করে, প্রত্যেক ব্যক্তিই তার নিজস্ব ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে চায় এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারলেই তার ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয়। সমাজকর্মের এই মূল্যবোধটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেয়। ফলে সে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় এবং সাবলম্বী হয়। উদ্দীপকে সুমনা হককে দেখা যায়, সালমার মতামত ও আগ্রহের ভিত্তিতে তাকে অঙ্কন ও সংগীত শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন। তাই বলা যায়, সুমনা হকের কর্মতৎপরতার মধ্যে সমাজকর্মের ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার নীতি এ দুটি মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত সালমার জীবনের স্থায়ী উন্নয়নে সুমনা সমাজকর্মের আরো কিছু মূল্যবোধ অনুসরণ করতে পারেন। একজন সমাজকর্মী সব সময়ই চেষ্টা করেন সাহায্যার্থীকে এমনভাবে সাহায্য করতে যাতে সে নিজ সমস্যা মোকাবিলা ও পুনরাবৃত্তি রোধে সক্ষম হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে উদ্দীপকে সুমনা হককে দেখা যায়, শিশু পরিবারে নতুন আগত সালমাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে তার সমস্যা মোকাবিলার মাধ্যমে সক্ষম করে তুলতে। এক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার নীতি অনুসরণ করলেও তা একটি সাময়িক সমাধান আনতে পারে। তাই সালমার জীবনের স্থায়ী উন্নয়নে সমাজকর্মের অন্যান্য মূল্যবোধগুলো অনুসরণ করা উচিত।প্রতিটি পেশার পেশাগত অনুশীলনে কতিপয় মূল্যবোধ অনুসৃত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার জাতীয় সমাজকর্ম সমিতি সমাজকর্মের ১৪টি মূল্যবোধের উল্লেখ করেন যার ভিতর থেকে দুটির প্রয়োগ উদ্দীপকে দেখা যায়। তবে সালমা নামের অতি দরিদ্র পরিবারের পিতৃহীন মেয়েটির স্থায়ী সমস্যা সমাধানে আরো যে মূল্যবোধ অনুসরণ করা যায় সেগুলো হলো- মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, পরিবর্তনের জন্য ব্যক্তির সামর্থ্যের মূল্যায়ন, গোপনীয়তা, ব্যক্তি মানুষকে তার প্রতিভা উপলব্ধির সুযোগ প্রদান, সাহায্যার্থীদের ক্ষমতায়ন, সমান সুযোগ- সুবিধা প্রদান, বৈষম্য না করা প্রভৃতি। আপাতত শিশু পরিবারে বাস করলেও এক সময় সালমা নামের মেয়েটি আরো বৃহৎ পরিসরে যাবে। তাই শিশু পরিবারে থাকা অবস্থাতে যদি তার পারিবারিক পরিচয় কিংবা আর্থিক অবস্থান বিবেচনায় না এনে তাকে মানুষ হিসেবে যথাযথ মূল্যায়ন প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজ প্রতিভা উপলব্ধির সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তার পক্ষে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা সম্ভব। এছাড়াও স্বনির্ভরতা নীতি ও সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান নীতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিচালনায় তাকে দক্ষ করে তোলা সম্ভব। সার্বিক আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, একজন সমাজকর্মীর মূল লক্ষ্য হলো সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির জীবনের স্থায়ী উন্নয়ন ঘটানো। এক্ষেত্রে শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক এবং সমাজকর্মী হিসেবে সুমনা হক উদ্দীপকে উল্লিখিত মূল্যবোধের পাশাপাশি সমাজকর্মের আরো কিছু মূল্যবোধ অনুসরণের মাধ্যমে সালমার জীবনে স্থায়ী উন্নয়ন ঘটাতে পারেন।

উদ্দীপকঃ-

আবেদিন কাদের একজন পেশাদার সমাজকর্মী। তিনি তার সমস্যাগ্রস্ত ক্লায়েন্টদের সাথে পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন করে, সুশৃঙ্খল জ্ঞান ও নীতিমালার ভিত্তিতে, পেশাগত সংগঠনের আওতায় থেকে সেবা প্রদান করে থাকেন।

ক. মূল্যবোধ কী?

খ. পেশা ও পেশাগত বৃত্তির সম্পর্ক কোথায়?

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আবেদিন কাদের এর মূল্যবোধগুলো প্রয়োজন কেন?- ব্যাখ্যা দাও।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আবেদিন কাদের এর- “পেশা হিসেবে সমাজকর্ম কতটা যৌক্তিক”?-উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

প্রশ্নের উত্তর-

ক) মূল্যবোধ হলো একটি মানদণ্ড, যা মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

 

খ) পেশা ও বৃত্তি একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। পেশা ও বৃত্তি উভয়ই জীবিকা অর্জনের পন্থা। অর্থ উপার্জন তাদের মূল লক্ষ্য। পেশা ও বৃত্তি উভয়ই সেবাকাজ।একজন পেশাজীবী মানুষকে যেমন সেবা দিয়ে থাকেন, তেমনি একজন বৃত্তিজীবীও মানুষকে সেবা দিয়ে থাকেন। পেশা ও বৃত্তি উভয়েরই কাজের প্রকৃতি অনুসারে পরিচিতি হয়। যেমন- আইনজীবী, ডাক্তার, কৃষক, মাঝি ইত্যাদি। সমাজে পেশাজীবীর পাশাপাশি বৃত্তিজবী ব্যক্তিও বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। যেমন-শিক্ষাবিস্তার, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান প্রভৃতি। পেশা ও বৃত্তির জন্য শ্রম অত্যাবশ্যক। পেশার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম, আর বৃত্তির জন্য শারীরিক শ্রম দিতে হয়। অনেক সময় পেশার জন্য শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উভয় শ্রমই দিতে হয়।

 

গ) সমাজকর্ম পেশার কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য এর পেশাগত মূল্যবোধের প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিটি পেশার পেশাগত অনুশীলনে বেশ কিছু মূল্যবোধ অনুসরণ করা হয়। অন্যান্য পেশার মতো সমাজকর্মেরও কতগুলো পেশাগত মূল্যবোধ রয়েছে। এগুলো সমাজকর্ম পেশা এবং সমাজকর্মীর জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি সমাজকর্ম পেশার অন্যতম মূল্যবোধ। ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মূল্য ও মর্যাদার যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করা হলে ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে। যা ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে। এর ফলে ব্যক্তি নিজের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয়ে ওঠে। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মূল্যবোধটি ব্যক্তিকে তার সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে সে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিজের সমস্যাগুলো নিজেই সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করতে পারে। সবার জন্য সমান সুযোগ এ মূল্যবোধের আলোকে সমাজকর্ম প্রতিটি মানুষের স্বার্থ এবং সুযোগকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সমাজকর্মে সম্পদের সদ্ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচিত। কেননা সমাজকর্ম সর্বদাই নিজস্ব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলায় বিশ্বাসী। সমাজকর্ম ব্যক্তির স্বনির্ভরতা অর্জনে বিশ্বাসী। স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজের কল্যাণে গতিশীল ভূমিকা রাখতে পারে।সমাজকর্ম ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী কারণ ব্যক্তি স্বাধীনতার বিকাশ ঘটলে ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মর্যাদার স্বীকৃতি ঘটে। তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। এর ফলে সে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে। সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজকর্মের পেশাগত মূল্যবোধগুলোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

ঘ) পেশার সকল বৈশিষ্ট্য সমাজকর্মে বিদ্যমান। এ কারণে আবেদিন কাদেরের সমাজকর্ম পেশাকে পেশা হিসেবে অভিহিত করা যায়।সমাজকর্ম একটি সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ নির্দেশিত পেশা। প্রতিটি পেশার মতো সমাজকর্মেরও কতগুলো মূল্যবোধ রয়েছে। পেশাগত অনুশীলনের সময় সমাজকর্মীগণ এ সকল মূল্যবোধ যথাযথভাবে মেনে চলেন।সমাজকর্ম পেশায় রয়েছে বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এই বিশেষ শিক্ষা অর্জিত হয় বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে। এছাড়া বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। সমাজকর্ম পেশায় রয়েছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা সমাজকর্মীর ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতাও বৃদ্ধি পায়। সমাজকর্ম পেশায় পেশাগত সংগঠনের উপস্থিতিও বিদ্যমান। এ ধরনের সংগঠন কর্মীদের মাঝে ইতিবাচক চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটায়। সমাজকর্ম সমাজের উন্নতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমাজকর্মীরা সমাজের উন্নয়ন এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে। সমাজকর্ম ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতা ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করে সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত। সমাজকর্ম একটি উপার্জনক্ষম পেশা। সমাজকর্মীরা তাদের জ্ঞান, দক্ষতা, নৈপুণ্য ও অভিজ্ঞতার প্রয়োগ ঘটিয়ে এ পেশাকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। পাশাপাশি তারা নিজেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য অর্থনৈতিক কার্যাবলি হিসেবে সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেছে।সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, পেশার বৈশিষ্ট্যসমূহ সমাজকর্মে বিদ্যমান। এ সকল বৈশিষ্ট্যই সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।

কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের ভারসাম্য বিধান করতে হয় কেন?