মাংস উৎপাদনকারী গরুর সম্ভাবনা ও সমস্যা
মাংস উৎপাদনকারী গরুর সম্ভাবনা ও সমস্যাঃ-
সম্ভাবনাঃ-
১. অধিক মাংস উৎপাদনের মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটানো যাবে।
২. অল্প সময়ে স্বল্প মূলধন খাটিয়ে অধিক লাভ করা যাবে।
৩. গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা যাবে।
৪. হৃষ্টপুষ্টকরণ কাজের জন্য বিশেষ কোনো দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। তাই যে কেউ এ কাজ করতে পারে।
৫. বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না।
৬. মাংস ও মাংসজাত পন্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
৭. মাংস উৎপাদনকারী গরু থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য সমূহ থেকে অনেক উপযোগ লাভ করা যায়।
সমস্যাঃ
ক) উপযুক্ত মাংসল জাতের অভাব: বাংলাদেশে মাংসল জাতের কোনো গরু নেই। এদেশে যে সমস্ত গরু জবাই হয় সেগুলো সব দেশি গরু অথবা বাতিলকৃত দুধাল গরু। এসব জাতের গরুর মাংস উৎপাদন ক্ষমতা মাংসল জাতের গরুর উৎপাদন ক্ষমতা থেকে কম, যেমন- মাংসল জাতের একটি গরুর ওজন ৮০০-১২০০ কেজি; অপরদিকে আমাদের দেশে জবাইকৃত গরুর ওজন ২০০-৩৫০ কেজি। বর্তমান সরকার বিদেশ থেকে ব্রাহমা জাতের গরুর বীজ আমদানি করছে এবং তা দ্বারা দেশীয় গরু সমূহকে সংকর করা হচ্ছে।
খ) পশু খাদ্যের অভাব: বাংলাদেশের জমির স্বল্পতার জন্য গরু উৎপাদনের জন্য তৃণভূমিতে মুক্ত ব্যবস্থাপনায় গরু পালন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, এ ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশে “বাথান” নামে পরিচিত। অতীতে এদেশে গরুর অনেক বাথান থাকলেও এখন সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে এদেশে অর্ধ আবদ্ধ বা আবদ্ধ ব্যবস্থায় গরু পালন করা হয়। খড় ও দানাদার খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাস চাষের দিকে আমাদের নজর দেয়া উচিত।
গ) অপর্যাপ্ত চিকিৎসা: আমাদের দেশে গরু নানা রকম রোগ ও কৃমির দ্বারা আক্রান্ত হয়; কিন্তু খামারীরা নিয়মিত টিকা প্রদান করে না ও কৃমির ওষুধ খাওয়ায় না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জনবল কম থাকার কারণে তাদেরকে গ্রাম্য চিকিৎসকের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে অনেক সময় গরু মারা যায়।
ঘ) বাজারজাতকরণ: এদেশে গরু মোটাতাজা করা হয় কোরবানি উপলক্ষে। সব খামারি একসাথে কোরবানি উপলক্ষে গরু বাজারে আনার ফলে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। কাজেই খামারীদের উৎসাহ প্রদান করতে হবে তারা যেন সারা বছরই স্থায়ীভাবে মাংসের জন্য গরু সরবরাহ করে।
ঙ) পর্যাপ্ত জমির অভাব: বাংলাদেশ একটি ছোট ও অত্যন্ত জনবহুল দেশ। এদেশে জনসংখ্যার তুলনায় কৃষি জমির পরিমাণ খুবই কম। তাই একটি খামার স্থাপনের জন্য যেরকম বা যে পরিমাণ জমির প্রয়োজন তা আমাদের নেই। তাই অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও খামার স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে ন।
গরু মোটাতাজাকরণ গুরুত্বপূর্ণঃ-
১. আমাদের দেশে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের মাংসের চাহিদা প্রচুর কিন্তু উৎপাদন কম।
২. বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে যার ফলে অনেক মানুষের এসব বাণিজ্যিক খামারে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।
৩. শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার যুবক কিংবা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারীরা গরু মোটাতাজাকরণ করে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে।
৪. আমাদের দেশে প্রতিবছর কোরবানির সময় প্রচুর গরু জবাই করা হয়, জবাইকৃত গরু গুলো বেশিরভাগই কোরবানির উদ্দেশ্যে মোটাতাজাকরণ করা হয়ে থাকে।
৫. মাংসের মধ্যে রয়েছে।
৬. গরু মোটাতাজাকরণের সময় প্রাপ্ত গোবর জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৭. গরু জবাই করার পর প্রধান পশুজাত দ্রব্য চামড়া সংগ্রহ করা হয় এবং তা প্রক্রিয়াকরণের পর বিভিন্ন জাত দ্রব্য তৈরি করা হয়।
৮. গরু মোটাতাজাকরণের জন্য বাণিজ্যিকভাবে বড় বড় ফিড কোম্পানি গড়ে উঠেছে যারা এসব গরুর খাদ্য তৈরি করে।
৯. মাংস ও মাংসজাত দ্রব্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করার সুযোগ আছে।
১০. এসব গরু জবাই করার পর এদের উপজাত দ্রব্য গুলো বিভিন্ন কাজে লাগে।
মাংস উৎপাদনকারী গরু নির্বাচনের নির্ণায়কঃ-
বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যঃ-
১. স্বাভাবিকভাবে দাড়ানো অবস্থায় গরুর আকৃতি আয়তাকার।
২. মাথা ও গলা খাটো এবং চওড়া।
৩. কাঁধ খুব পুরু ও মসৃণ।
৪. পিঠ চ্যাপ্টা, অনেকটা সমতল।
৫. কোমরের দুই পার্শ প্রশস্ত ও পুরু।
৬. বুক প্রশস্ত ও বিস্তৃত।
৭. সামনের পা দুটো খাটো ও শক্ত সামর্থ, গায়ের চামড়া ঢিলা এবং গায়ের রং আকর্ষণীয় হবে।
৮. গরুটি শারীরিকভাবে রোগ ও ত্রুটিমুক্ত হবে।
৯. গরুটি শান্ত স্বভাবের হবে।
জাত বাছাইঃ-
সঠিক জাতের গরু নির্বাচন ও ক্রয় বীফ ফ্যাটেনিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাংসল জাতের গরু ক্রয়ের জন্য নিম্নে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যসমূহের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।স্থানীয়ভাবে প্রাপ্য খাদ্য ও খাদ্যের রূপান্তর ক্ষমতা।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও স্থানীয় আবহাওয়ার সাথে খাপখাওয়ানোর ক্ষমতা। তাছাড়া মাংসল গরুর বাহ্যিক জাত বৈশিষ্ট্য, বয়স ও লিঙ্গেও প্রতি খেয়াল রাখা উচিত।
১• দৈনিক বৃদ্ধির হার।
২• মাংস উৎপাদন ক্ষমতা ও মাংসের গুণাগুণ।
হৃষ্টপুষ্টকরণের জন্য আমাদের দেশে বিশেষ কোনো মাংসল জাত নেই। দেশীয় জাত হিসেবে রেড চিটাগাং নির্বাচন করা যেতে পারে। বর্তমানে দেশে সংকর জাতের গরু মোটাতাজাকরণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
লিঙ্গ- ষাঁড়ের অথবা বলদের দৈহিক প্রবৃদ্ধি গাভীর চেয়ে বেশি; কাজেই হৃষ্টপুষ্টকরণের জন্য ষাঁড় অথবা বলদ নির্বাচন করা উচিত। চর্বিযুক্ত মাংস উৎপাদনের জন্য বলদ উত্তম, চর্বি বিহীন মাংস উৎপাদনের জন্য ষাঁড় উত্তম।
পশুর বয়সঃ-
হৃষ্টপুষ্টকরণের জন্য ১.৫-২.০ বছর বয়সের ষাড় বা বলদ নির্বাচন করা উচিত। ফার্ম থেকে ক্রয় করলে গরুর বয়স ফার্মের রেজিস্টার হতে পাওয়া যায় এবং বাজার থেকে ক্রয় করলে বয়স নির্ণয়ের জন্য ডেন্টিশন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
বিফ ক্যাটলের কৃমিনাশকরণ পদ্ধতিঃ-
গাভী থেকে সর্বোচ্চ মাংস পাওয়ার জন্য গাভীকে সুষম খাদ্য দেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। গাভী কৃমিতে আক্রান্ত হলে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়-
১. খাবারে অরুচি;
২. ঘন ঘন পেট ফাপা ও বদ হজম;
৩. পায়খানা নরম;
৪. গাভী হিটে আসেনা বা গরম হয় নাঃ
৫. গাভী দূর্বল হয়ে পড়ে।
গরুকে কৃমির ওষুধ বা ট্যাবলেজ খাওয়ানোর সময় যেসব নিয়ম মানা জরুরী সেগুলো আমাদের দেশের অনেক খামারীই জানেন না। গরুর রোগ সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো পরজীবী তথা কৃমি রোগ। গরুর কৃমি হলে ওষুধ প্রদানের সময়ে যা মেনে চলতে হবে তা নিচে দেওয়া হলো-
১০. সকালে খালি পেটে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। সকালে গরুকে কৃমিনাশক খাওয়ালে তা বেশি কার্যকর হয়।
১১. অত্যন্ত গরমের সময় না খাওয়ানোই ভাল। যদি খাওয়াতেই হয় তাহলে খাওয়ানোর সাথে সাথে গরুকে ১০/১৫ মিনিটের মত সময় ধরে ভালোভাবে গোসল করাতে হবে ও ফ্যানের নিচে বা ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে।
১২. ট্যাবলেট গুড়া করে চিটাগুড় বা কলার পাতার সাথে মুড়িয়ে খালি পেটে খাওয়ানো যেতে পারে। ইনজেকশনের মাধ্যমেও কৃমিনাশক ওষুধ শরীরে দেয়া যায়।
১৩. গরুকে কোনোভাবেই দানাদার খাদ্যের সাথে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। দানাদার খাদ্যের সাথে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ালে তা কার্যকর হয় না।
১৪. প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ডোজে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো ঠিক নয়, যদিও বেশি ডোজে গরুর তেমন ক্ষতি হয় না।
১৫. গরুকে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর কমপক্ষে ১ ঘন্টা কোন ধরনের খাদ্য প্রদান না করা ভালো।
১৬. কোনভাবেই মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণে বা ডোজে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। মাত্রার চেয়ে কম খাওয়ালে কৃমিতো মরবেই না বরং আরও সক্রিয় হয়ে উঠে।
গাভীকে কৃমি থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে-
১০. খুব সকালে বা বিকালে মাঠে গরুকে ঘাস না খাওয়ানো।
১১. ময়লা ও স্যাতস্যাতে জায়গায় পশু না চরানো।
১২. গরুর ঘর শুষ্ক রাখা।
১৩. খুব বেশি রসালো রসালো ঘাস ছাগল গরুকে না খাওয়ানো।
১৪. নিচু জায়গা ও জলভূমিতে পশুকে না চরানো।
১৫. গোবর ও ময়লা মিশ্রিত খড়, দানাদার খাদ্য ও ঘাস না খাওয়ানো।
১৬. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে পালন করা।
১৭. জন্মের প্রথম ৭ দিন বয়সে কৃমিনাশক ওষুধ (পাইপারজিন গ্রুপ) খাওয়াতে হবে। প্রথম তিন মাস প্রতি মাসে (অ্যালবেন্ডাজল গ্রুপ) খাওয়াতে হবে। তিন মাস থেকে গাভীর মৃত্যু পর্যন্ত তিন মাস পর পর খাওয়াতে হবে।
১৮. প্রতিবার কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর পর অবশ্যই মাত্রানুযায়ী লিভার টনিক খাওয়াতে হবে। কৃমিনাশক ওষধ খাওয়ানোর পর যদি খাওয়ার রুচি কম হয় তাহলে রুচিবর্ধক পাউডার ট্যাবলেট খাওয়ালে দ্রুত রুচি ফিরে আসে।
বিফ ক্যাটলের টিকাদান কর্মসূচি (Vaccination schedule of beef cattle) ও বিফ ক্যাটলের বাসস্থান ব্যবস্থাপনা (Housing method of beef cattle)।
খামার স্থাপনের স্থান নির্বাচন ও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানের ব্যবস্থাকরণ-
গরুর বাসস্থান (গোয়ালঘর) নির্মানে যে সকল বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবেঃ
গোয়লঘর সাধারণত দক্ষিণমুখী হওয়া ভালঃ- গোয়ালঘর সমতল ভূমি থেকে এক ফুট উঁচুতে শুকনা স্থানে হতে হবে।
মেঝে হালকা ঢালু থাকবে যাতে সহজেই গরুর প্রস্রাব কিনারে চলে যায় এবং ঘর শুকনো থাকে;
এক চালা ঘরের উচ্চতা সধারণত ৮-১০ ফুট এবং দু’চালা ঘরে মধ্যবর্তী উভয় চালের শীর্ষদেশ ১৪ ফুট এবং ঢালু অংশের উচ্চতা ৭ ফুট হওয়া প্রয়োজন;
ঘরের চাল এবেস্টস দ্বারা নির্মাণ করা হলে ভাল হয়, এতে ঘর শীত/গরম উভয় ক্ষেত্র গরুর বসবাসের জন্য আরামদায়ক হবে।
ঘরের ভিতরে একটি বয়স্ক গরুর জন্য অন্তত ৩ ফুট প্রস্ত ও ৫ ফুট দৈর্ঘ্য জায়গা প্রয়োজন। তার সাথে ম্যানজারের জন্য ২ ফুট এবং ড্রেনের জন্য ১ ফুট প্রশস্ত জায়গা লাগবে:
৪/৫ টি গরু হলে এক সারিতে রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এজন্য একচালা একটি ঘরই যথেষ্ট।- ৮/১০ বা অধিক গরু হলে দু’চালা ঘর নির্মাণ করতে হবে এবং গরুকে ঘরে দুই সারিতে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে;
উভয় সারির গরুর সম্মুখে খাদ্য দেয়ার জন্য কমন খাবার পাত্র/ম্যানজার থাকবে। এ ক্ষেত্রে উভয় সারির গরুর পিছনের ভাগ বহির্মুখী এবং সামনের ভাগ অন্তর্মুখী হবে;
সংকর জাতের গরু অধিক গরমে কাতর, তাই গোয়ালঘর শীতল রাখার জন্য ঘরে সিলিং, উত্তর- দক্ষিনে খোলা, আলো-বাতাস পূর্ণ এবং প্রয়োজনে ফ্যান এর ব্যবস্থা করতে হবে;
শীতকালে প্রয়োজনে গরুর গায়ে ছালার ব্যবস্থা ও মেঝেতে শুকনো খরের বিছানা করতে হবে।
গরুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাবার প্রাত্র (Manger) ব্যবহার ও তা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করতে হবে:
গোয়ালঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ও সময়মত গোবরসহ অন্যান্য বর্জ্য অপসারণ করতে হবে, গরুর জন্য সঠিক বাসস্থান না হলে গরু স্বস্থিবোধ করে না এবং গরু স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠে না। শুধু ভালো জাতের গরু কিনলেই চলবে না, ভালো জাতের গরুর জন্য চাই ভালো থাকার ব্যবস্থা। তাই গরুর জন্য সঠিক বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বাসস্থান যে পর্যায়ের হোক না কেন ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ কওে এবং ঘরের মেঝে শুকনা ও পরিষ্কার থাকে সে বিষয়টির দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
বিফ ক্যাটলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ-
আমাদের দেশীয় গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনার প্রত সাধারণত তেমন কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফলে এদেও নিকট থেকে আশানুরূপ উৎপাদনও পাওয়া যায় না। অথচ গরুকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস, পরিমিত প্রক্রিয়াজাত খড়, দানাদার খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমানে পরিষ্কার পানি সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন ব্যবস্থা, নিয়মিত কৃমিনাশক চিকিৎসা ও টিকা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হলে এদের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব। বর্তমানে খড়কে ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করলে তার খাদ্যমান বহুগুণে বেড়ে যায়।
প্রাণির খাদ্যকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যেমনঃআঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্যঃ খড়, সবুজ ঘাস ইত্যাদি।
দানাদার জাতীয় খাদ্য: চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, খেসারি ভাঙ্গা, তিল বা বাদাম খৈল ইত্যাদি।
অন্যান্য খাদ্যঃ খনিজ উপাদান, ভিটামিন ইত্যাদি।
সতর্কতাঃ-
গরু মোটাতাজা করার জন্য গ্রোথ হরমোনের ইনজেকসন দেয়া হয়। এতে গরুর দেহের কোষ খুব দ্রুত বড় ও বৃদ্ধি হয়। ফলে গরু খুব তাড়াতাড়ি মোটা হয়। কিন্তু ওজন খুব বাড়ে না। পশু দূর্বল হয়। এই গরুর মাংসে গ্রোথ হরমোনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এই রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে চিকিৎসকরা বলেন।অপরদিকে, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। এই অ্যান্টিবায়োটিকের রাসায়নিক পদার্থও জীবানু প্রতিরোধের জন্য দীর্ঘদিন মাংসে থাকে। এই মাংস ভক্ষণের সাথে রাসায়নিক পদার্থ মানুষের পেটে যায়। গ্রোথ হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিকক উভয়ের রাসায়নিনক পদার্থ রান্নার তাপেও নষ্ট হয় না বলে মানবদেহে ফুসফুস, কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন স্থানের কোষ নষ্ট করে ক্যান্সারের সৃষ্টি করে।
কৃমিমুক্তকরণঃ- গরু ক্রয় করার পরই গরুর পেট থেকে কৃমিমুক্ত করতে হবে। অন্যথায় গরুর খাদ্যের বিরাট অংশ খেয়ে গরুকে পুষ্টিহীন ও রক্ত শূণ্য করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ- গরু রোগাক্রান্ত কিনা ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। গরুর রক্ত, মল, জিহ্বা, পায়ের ক্ষুর, নাড়ীল স্পন্দন ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে হবে। বিভিন্ন রোগের টিকা দিতে হবে।
সময়ঃ- গরু মোটাতাজা করার উপযুক্ত সময় ডিসেম্বর বা জানুয়ারি অথবা জুন-জুলাই। এসময় আবহাওয়া একটু ঠান্ডা থাকে বলে রোগব্যাধি কম হয়। তবে বর্ষাকাল ছাড়া যেকোন সময়ই করা যায়। ঈদুল আজহার ৩-৪ মাস আগে গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করলে লাভবান হওয়া যায়।গরু মোটাতাজা করার জন্য বিশেষ কোনো ওষুধ প্রয়োগ না করে গরুর স্বাভাবিক পরিচর্যা করতে হবে। অনেকে বিশেষ ধরনের হরমোন ও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষুধ খাইয়ে থাকে যা কখনোই উচিত নয় এতে গরু হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা যেতে পারে বা গরুর যকৃৎ স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং তলপেটে পানি জমতে পারে। এছাড়া জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।