বিশ্ব সভ্যতা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

বিশ্ব সভ্যতা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-

তামীম রাজধানী শহর ঢাকায় বেড়াতে গেল। সেখানে বড় রাস্তা, সুন্দর দালান, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য নর্দমা ব্যবস্থা ইত্যাদি দেখে মুগ্ধ হলো এবং ভাবলো এখানে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা রয়েছে। [সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী এন্ড কলেজ, গাজীপুর]

ক. কোন নদীর তীরে মিশরীয় সভ্যতা গড়ে ওঠে?

খ. মিশরীয় সভ্যতার লিখন পদ্দতি কেমন ছিল?

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নগর জীবন কোন সভ্যতার নগর জীবনের সাদৃশ্য স্বরূপ? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. তুমি কি মনে কর যে, ভাস্কর্য শিল্পে ও উক্ত সভ্যতার অনেক অবদান আছে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

প্রশ্নের উত্তর

ক) নীল নদীর তীরে মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

খ) মিশরীয় সভ্যতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল লিপি বা অক্ষর আবিষ্কার। পাঁচ হাজার বছরপূর্বে তারা সর্বপ্রথম ২৪টি ব্যঞ্জনবর্ণের বর্ণমালা আবিষ্কার করে। প্রথমদিকে ছবি এঁকে তারা মনের ভাব প্রকাশ করত। এ লিখন পদ্ধতির নাম ছিল চিত্রলিপি। এ চিত্রলিপিকে বলা হয় হায়ারোগ্লিফিক বা পবিত্র অক্ষর। মিশরীয়রা নলখাগড়া জাতীয় গাছের কাণ্ড থেকে কাগজ বানাতে শেখে। সেই কাগজের উপর তারা লিখত। গ্রিকরা এ কাগজের নাম দিয়েছিল ‘প্যাপিরাস’। এ শব্দ থেকে ইংরেজ পেপার শব্দ এসেছে। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মিশর জয়ের সময় একটি পাথর আবিষ্কৃত হয় যা রসেটা স্টোন নামে পরিচিত। যাতে হায়ারোগ্লিফিক ভাষায় লেখা ছিল।

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত নগরজীবন সিন্ধু সভ্যতার নগরজীবনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।তামীম রাজধানী শহর ঢাকায় বেড়াতে যায় এবং সেখানে বড় রাস্তা, সুন্দর দালান, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে জন্য নর্দমা ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়। তামীমের দেখা এসব ব্যবস্থার সাথে সিন্ধু সভ্যতার মিল রয়েছে। সিন্ধু সভ্যতা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতা। এ সভ্যতার প্রধান দুটি শহর ছিল হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো ছিল নগর সভ্যতা। এখানে নাগরিকজীবনের সকল সুব্যবস্থা ছিল। ঘরবাড়ি ছিল পোড়ামাটির ইট দিয়ে তৈরি। নগরীর ভেতর দিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা। রাস্তাগুলো ছিল সোজা। প্রত্যেকটি বাড়িতে খোলা জায়গা, কূপ ও স্নানাগার ছিল। পানি নিষ্কাশনের জন্য ছোট ছোট নর্দমাগুলো মূল নর্দমার সাথে সংযুক্ত ছিল। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হতো। পথের ধারে সারিবদ্ধ ল্যাম্পপোস্ট ছিল।পরিশেষে বলা যায় সিন্ধু সভ্যতায় ছিল উন্নত দুটি শহর। এ শহরে নাগরিকজীবনের সকল সুব্যবস্থা ছিল।-

ঘ) হ্যাঁ, আমি মনে করি ভাস্কর্যশিল্পে সিন্ধু সভ্যতার অনেক অবদান রয়েছে।সিন্ধু সভ্যতা ছিল একটি নগর সভ্যতা। এ সভ্যতার মানুষ আধুনিক নগরজীবনের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। সিন্ধু সভ্যতা ছিল সমৃদ্ধময়। তাই এ সভ্যার মানুষ শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করত। সিন্ধু সভ্যতাযুগের অধিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন রেখে গেছেন। সেখানে দুই কক্ষ থেকে পাঁচিশ কক্ষের বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। আবার কোথাও দুই তিন তলা ঘরের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে। মহেঞ্জোদারোতে ৮০ ফুট জায়গাজুড়ে বিস্তৃত সুবিশাল মিলনায়তনের সন্ধান পাওয়া গেছে। সিন্ধু সভ্যতায় মোট ১৩টি ভাষ্কর্য পাওয়া গেছে। চুনাপাথরে তৈরি একটি মূর্তির মাথা পাওয়া গেছে। মহেঞ্জোদারোতে পাওয়া গেছে নৃত্যরত একটি নারীর মূর্তি। এছাড়া মাটির তৈরি ছোট ছোট মানুষ আর পশুমূর্তি ও পাওয়া গেছে। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোতে প্রায় ২৫০০ সীলমোহর পাওয়া গেছে।উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সিন্ধু সভ্যতা ভাস্কর্য শিল্পে যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিল।

প্রশ্ন-

দৃশ্যপট-১ : হাশিম পাকিস্তানের নাগরিক। তিনি বিদেশি পর্যটকদের গাইড হিসাবে কাজ করেন। একদল বৃটিশ পর্যটকদের তিনি তার দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরিয়ে দেখান। তারা দুইটি প্রাচীন নগরীতে গেল এবং পর্যটক তা দেখে বিস্মিত হলো। এর আগে এমন সভ্যতা তারা দেখেনি।

দৃশ্যপট-২: রাবির সাহেব একজন শিল্পপতি। তার প্রতিষ্ঠান চালানোর ক্ষেত্রে নিয়মকানুন পালনে তিনি কঠোর ছিলেন। এই জন্য সব নিয়ম একটি চার্টে লিখে দরজায় ঝুলিয়ে দেন। তিনি সকলের মৌলিক অধিকার রক্ষায় বিষয়টি গুরুত্ব দেন এবং সকলকে সমান অধিকার দেন। [মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর]

ক. নোম কী?

খ. স্পার্টানদেরকে যোদ্ধা জাতি বলা হয় কেন?

গ. দৃশ্যপট-১ এ পর্যটকদের দেখানো নগর সভ্যতাগুলোর নাম কী? এই সভ্যতার নগর পরিকল্পনা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. দৃশ্যপট-২ এ রাবির সাহেবের প্রতিষ্ঠানে যে নিয়ম ১০ প্রচলিত তা তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন সভ্যতার > সাথে মিল রয়েছে? বিশ্লেষণ কর।

 প্রশ্নের উত্তর

ক) প্রাক-রাজবংশীয় যুগে মিশর কতগুলো ছোট ছোট নগররাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল, সেগুলোকে বলা হতো ‘নোম’।

খ) স্পার্টানদের জীবন সমরতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত ছিল বলে তাদেরকে যোদ্ধা জাতি বলা হতো। স্পার্টানদের জীবন স্পার্টা রক্ষার জন্যই নিয়োজিত ছিল। স্পার্টার সমাজ তৈরি হয়েছিল যুদ্ধের প্রয়োজনকে ঘিরে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের জন্য নাগরিকদের প্রস্তুত করা ও যুদ্ধ পরিচালনা করা। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা আর বিদ্রোহ দমন- ছাড়া স্পার্টার রাজাদের মাথায় আর কোনো চিন্তা ছিল না। এসব কারণে স্পার্টানদের যোদ্ধা জাতি বলা হয়।

গ) দৃশ্যপট-১: এ দেখানো নগর সভ্যতাগুলো হলো মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পা সভ্যতা, যা মূলত সিন্ধুসভ্যতা নামে পরিচিত।উদ্দীপকে দৃশ্যপট-১: এ আমরা দেখি পাকিস্তানের নাগরিক হাশিম বিদেশি পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করেন। তিনি ব্রিটিশ পর্যটকদের তার দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরিয়ে দেখান। তারা দুইটি প্রাচীন নগরী দেখে বিস্মিত হলেন। কেননা তারা পূর্বে এমন সভ্যতা দেখেনি। এখানে আমরা বুঝতে পারি যে, তারা সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নামক প্রাচীন দুটি নগরী দেখেছিল। কেননা পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে মহেঞ্জোদারো এবং পাঞ্জাবের হরপ্পা নামক স্থান দুটিতে দুটি নগর সভ্যতার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যা সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত।সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা ছিল অসাধারণ। সিন্ধু সভ্যতার সবচেয়ে বড় শহর হলো হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো। এখানকার ঘরবাড়ি সবই পোড়ামাটি বা রোদে পোড়ানো ইট দিয়ে তৈরি ছিল। শহরগুলোর বাড়িঘরের নকশা থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, সিন্ধু সভ্যতা যুগের অধিবাসীরা উন্নত নগরকেন্দ্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্থ। ছিল। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারের নগর পরিকল্পনা একই রকম ছিল। নগরীর ভিতর দিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা। রাস্তাগুলো ছিল সোজা, প্রতিটি বাড়িতে খোলা জায়গা, কূপ ও স্নানাগার ছিল। জল নিষ্কাশনের জন্য ছোট ছোট নর্দমাগুলো মূল নর্দমার সাথে সংযুক্ত ছিল। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হতো। রাস্তার পাশে ছিল সারিবদ্ধ ল্যাম্পপোস্ট।

ঘ) দৃশ্যপট-২: এ রাবির সাহেবের প্রতিষ্ঠানে যে নিয়ম প্রচলিত তা আমার পাঠ্যবইয়ের রোমান সভ্যতার সাথে মিল রয়েছে। উদ্দীপকে দৃশ্যপট-২: এ আমরা দেখি শিল্পপতি রাবির সাহেব তার প্রতিষ্ঠান চালানোর ক্ষেত্রে নিয়মকানুন পালনে কঠোর ছিলেন। এজন্য সব নিয়ম একটি চার্টে লিখে দরজায় ঝুলিয়ে দেন। তিনি সকলের মৌলিক অধিকার রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেন এবং সকলকে সমান অধিকার দেন। উদ্দীপকের রাবির সাহেবের প্রতিষ্ঠানের প্রচলিত নিয়মের সাথে পাঠ্যপুস্তকের রোমান সভ্যতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রোমানরা ফৌজদারি ও দেওয়ানি আইনগুলো সুষ্ঠুভাবে একসঙ্গে সাজাতে সক্ষম হন। জাস্টিনিয়ান খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪০ অব্দে ১২টি ব্রোঞ্জপাতে সর্বপ্রথম আইনগুলো খোদাই করে লিখিত হয় এবং জনগণকে দেখাবার জন্য প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়। রোমীয় এই আইনের দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান। রোমীয় এই আইনে নাগরিকদের। মৌলিক অধিকার রক্ষার কথাও বলা হয়েছে। এই আইন ছিল সকলের জন্য প্রযোজ্য এবং আইন মান্য করা রোমান নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল।উদ্দীপকের, রাবির সাহেবও রোমানদের মতো তার প্রতিষ্ঠানে আইন-কানুন একটি চার্টে লিখে ঝুলিয়ে দিতেন এবং তিনিও রোমানদের মতোই সকলের মৌলিক অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দিতেন। রোমন আইনের মতো তিনিও সকলকে সমান অধিকার দেন। সুতরাং উদ্দীপকের রাবির সাহবের প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত নিয়ম পাঠ্যবইয়ের রোমান সভ্যতার সদৃশ।

বিশ্ব সভ্যতা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-

ইতিহাসে ‘ক’ সভ্যতার মানুষ তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশ বিদেশে এমন এক ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিল যা পৃথিবীর – ইতিহাসে চিরস্মরণীয় এক অধ্যায়। তাদের রয়েছে উদারতার মহান দৃষ্টান্ত, হিংস্রতার সাথে আছে মহৎ সৃষ্টি; ন্যায়ের জন্য অন্যায়ের | বিরুদ্ধে প্রতিরোধ স্পৃহা এবং সত্যের জন্য অসত্যের কাছে। আত্মবলিদানের ইতিহাস। কি পদার্থ বিদ্যা, কি দর্শন, কি ভূগোল, কি সাহিত্য; জ্ঞানের প্রতিটি শাখায়ই রয়েছে তাদের উর্বর মননের সুস্পষ্ট ছাপ। [ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়]

ক. কোথায় অলিম্পিক খেলা শুরু হয়?

খ. নগররাষ্ট্র স্পার্টা ছিল সামরিক ছাউনি-ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে ‘ক’ দ্বারা কোন সভ্যতার অবদান বোঝানোহয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ধর্ম ও দর্শনে উক্ত সভ্যতার অবদান বিশ্লেষণ কর।

প্রশ্নের উত্তর

ক) অলিম্পিক খেলা গ্রিসে শুরু হয়।

খ) প্রাচীন গ্রিসে অসংখ্য নগর রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল যার মধ্যে স্পার্টা অন্যতম। এ নগর রাষ্ট্রে মানুষের মানবিক উন্নতির দিকে নজর না দিয়ে সামরিক শক্তি সঞ্চয়ের দিকে দৃষ্টি বেশি ছিল।স্পার্টার সমাজ যুদ্ধের প্রয়োজনকে ঘিরেই তৈরি হয়েছিল। সামরিক ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগ এবং সমরতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে স্পার্টা ছিল সামরিক ছাউনি।

গ) উদ্দীপকে ‘ক’ দ্বারা গ্রিক সভ্যতাকে বোঝানো হয়েছে। কেননা, উদ্দীপকে বলা হয়েছে, ‘ক’ সভ্যতার লোকদের রয়েছে উদারতার মহান দৃষ্টান্ত, হিংস্রতার সাথে আছে মহৎ সৃষ্টি; ন্যায়ের জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের স্পৃহা এবং সত্যের জন্য অসত্যের কাছে আত্মবলিদানের ইতিহাস। তেমনিভাবে, গ্রিক সভ্যতায়ও রয়েছে উদারতার মহান দৃষ্টান্ত। যা আমরা নগররাষ্ট্র এথেন্সে দেখতে পাই। এথেন্সের শাসন ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক এবং নগরের জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে অর্থাৎ স্পার্টানদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের স্পৃহা। অপরদিকে নগর রাষ্ট্র স্পার্টা ছিল একটি সামরিক ছাউনি। তাদের মধ্যে হিংস্রতা ছিল অনেক বেশি। স্পার্টানদের এই হিংস্রতার মধ্যেও সত্যের সংগ্রামে হেলট বা ভূমিদাসরা সদা জাগ্রত থাকত। সুযোগ পেলেই তারা বিদ্রোহ করে বসত। যা ছিল জনগণের অধিকার রক্ষার অন্যতম প্রচেষ্টা। গ্রিক – জাতির এই উদারতা ও হিংস্রতার সমন্বয়েই গ্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এই সভ্যতারই দুটি ভদ্র ও মার্জিত ধারা হলো হেলেনিক – ও হেলেনিস্টিক সংস্কৃতি। যার ফলে বলা যায় গ্রিক সভ্যতার কিছু মহান সৃষ্টি ছিল। যা তাদেরকে আজও স্মরণীয় করে রেখেছে। অতএব, আমরা নিঃদ্বিধায় বলতে পারি উদ্দীপকে ‘ক’ দ্বারা গ্রিক সভ্যতাকে বোঝানো হয়েছিল।

ঘ) উক্ত সভ্যতা অর্থাৎ গ্রিক সভ্যতার ধর্ম ও দর্শনে অবিস্মরণীয় অবদান ছিল। ধর্ম: গ্রিকদের বারটি দেব-দেবী ছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি পূজা ছাড়াও তারা বীর যেদ্ধাদের পূজা করত। জিউস ছিল দেবতাদের রাজা। অ্যাপোলো ছিলেন। সূর্য দেবতা, পোসিডন ছিলেন সাগরের দেবতা। এথেনা ছিলেন জ্ঞানের দেবী। বারজনের মধ্যে এই চারজন ছিলেন শ্রেষ্ঠ। রাষ্ট্রের নির্দেশে পুরোহিতরা ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতেন। ডেলোস দ্বীপে অবস্থিত ডেলফির মন্দিরে বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের মানুষ সমবেত হয়ে এক সঙ্গে অ্যাপোলো দেবতার পূজা করত। দর্শন: দার্শনিক চিন্তার ক্ষেত্রে গ্রিসে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছিল। পৃথিবী কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, প্রতিদিন কীভাবে এর পরিবর্তন ঘটছে-এসব ভাবতে গিয়ে গ্রিসে দর্শনচর্চার সূত্রপাত।থালেস ছিলেন প্রথম দিককার দার্শনিক। তিনিই প্রথম সূর্যগ্রহণের প্রাকৃতিক কারণ ব্যাখ্যা করেন। এরপর গ্রিসের যুক্তিবাদী দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে। এদের বলা হতো সফিস্ট। এরা বিশ্বাস করতেন যে চূড়ান্ত সত্য বলে কিছু নেই। সক্রেটিস ছিলেন এ দার্শনিকদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান। তার শিক্ষার মূল দিক ছিল আদর্শ রাষ্ট্র ও সৎ নাগরিক গড়ে তোলা। অন্যায় শাসনের প্রতিবাদ করার শিক্ষাও তিনি দেন। সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো গ্রিক দর্শনকে চরম উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। প্লেটোর শিষ্য এরিস্টটলও একজন বড় দার্শনিক ছিলেন।অতএব, প্রতীয়মান হয় যে, গ্রিক সভ্যতার ধর্ম ও দর্শনে অবিস্মরণীয় অবদান ছিল।

প্রশ্ন-

অবন্তী প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস পাঠ করে জানতে পারে, সম্রাট ‘A’ সাম্রাজ্যের সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কয়েকটি ধারা সংবলিত একটি ডিক্রি জারি করেন, যা ইতিহাসে ‘Code of A’ নামে পরিচিত। এ ডিক্রিতে মানুষের প্রতি সমানাধিকার, দুর্বল, বিধবা ও এতিমদের অধিকার সংরক্ষণ এবং আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান প্রভৃতি শর্তাদি উল্লেখ করা হয়। ডিক্রি জারি ছাড়াও সম্রাট বিজ্ঞান, সাহিত্য ও দর্শনের ক্ষেত্রে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন। (ব্লুি বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ, সিলেট)

বিশ্ব সভ্যতা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

ক. গ্রিক সাহিত্য বিয়োগান্তক নাটকের জনক কাকে বলা হয়?

গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোন সভ্যতার আইনের মিল আছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. তুমি কি মনে কর, সম্রাট ‘A’ সাম্রাজ্যের ন্যায় উক্ত সভ্যতায়ও বিজ্ঞান, সাহিত্য ও দর্শনে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছিল? তোমার উত্তরে যুক্তি দাও।

প্রশ্নের উত্তর

ক) গ্রিক সাহিত্য বিয়োগান্তক নাটকের জনক বলা হয় এসকাইলাসকে।

গ) উদ্দীপকের ‘A’ দেশের আইনের সাথে রোমান সভ্যতার আইনের মিল আছে।সম্রাট ‘A’ সাম্রাজ্যের সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কয়েকটি ধারা সম্বলিত একটি ডিক্রি জারি করেন, যা ইতিহাসে ‘Code of A’ নামে পরিচিতি। এ ডিক্রিতে মানুষের প্রতি সমানাধিকার, দুর্বল, বিধবা ও এতিমদের অধিকার শর্তাদি উল্লেখ করা হয়। রোমান সম্রাট প্রথম জ্যাস্টিনিয়ান সাম্রাজ্যের সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১২টি ব্রোঞ্জপাতে সর্বপ্রথম আইনগুলো খোদাই করে লেখেন এবং জনগণকে দেখবার জন্য প্রকাশ্য ঝুলিয়ে রাখা হয়। সম্রাট প্রথম জ্যাস্টিনিয়ানের এই আইনের ধারাগুলোকে ‘Code of Jastinien’ নামে পরিচিতি। এই আইনের দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান। রোমান আইনের সৃষ্টি মূলত প্রচলিত প্রথা প্রযুক্তি সমন্বয়ে। রোমান আইন প্রায় এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে। পাঁচ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রোমানরা।সেজয়ার সেকয়ার গেওয়ার সেন্দমার লেখামার কেপড়তে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আইনগুলো সুষ্ঠুভাবে একসঙ্গে সাজাতে সক্ষম হয়। মানব সভ্যতার ইতিহাসে রোমানদের সবচেয়ে বেশি অবদান আইনের ক্ষেত্রে। রোমান আইনকে তিনটি শাখায় ভাগ করা হয়েছে। তাই বলা যায় প্রাচীন ‘A’ সাম্রাজ্যে আমরা যে আইন দেখতে পাই তা রোমান সভ্যতার আইনের প্রতিচ্ছবি।

ঘ) হ্যাঁ, আমি মনে করি ‘A’ সাম্রাজ্যে ন্যায় রোমান সভ্যতায়ও বিজ্ঞান, সাহিত্য ও দর্শনে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছিল।রোমান বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্লিনি। প্লিনি বিজ্ঞান সম্পর্কে বিশ্বকোষ প্রণয়ন করেন। এতে প্রায় পাঁচশত বিজ্ঞানীর গবেষণাকর্ম স্থান পেয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানেও রোমানদের বিশেষ অবদান ছিল।এ যুগে সাহিত্যে অবদানের জন্য প্লুটাস ও টেরেন্সর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এড়া দুইজন মিলনাত্মক নাটক রচনার ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জন করেছিল। হোরাস, ভার্জিল, ওভিদ ও লিভি, ট্যাসিটাস এ যুগের খ্যাতনামা কবি ও ঐতিহাসিক ছিলেন। অনেকে মনে করেন যে রোমীয় দর্শন গ্রিক দর্শনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। তবুও রোমীয় দর্শনে সিসেরো, লুক্রেটিয়াস তাদের সুচিন্তিত দার্শনিক মতবাদ দ্বারা অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। রোমে স্টোইকবাদী দর্শন যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল।

প্রশ্ন-

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনার সূত্রপাত ঘটানোর লক্ষ্যে ইতিহাসের শিক্ষক হাকিম সাহেব বললেন, “মিশরকে বলা হয় নীলনদের দান।” প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে খরস্রোতা নীলনদের করালগ্রাস থেকে মুক্তির লক্ষ্যে উদ্ভাবন করেছে বাঁধ দেওয়ার পদ্ধতি। জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় । মিশরীয়রা এত অগ্রসর হয়েছিল যে, পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে মিশরীয় পিরামিড ও মৃতদেহ মমি অন্যতম নিদর্শন হয়ে আছে। এজন্য মিশরীয়দের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ নির্মাতা হিসেবে অভিহিত করা হয়।

[বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সিলেট]

ক. কে রোম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন?

খ. সিন্ধু সভ্যতাকে নগর সভ্যতা বলা হয় কেন?

গ. মিশরকে নীলনদের দান বলার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘মিশরীয়রা ছিল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা’- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

 প্রশ্নের উত্তর

ক) লাতিন রাজা রো-মিউলাস রোম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন।

খ) ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতা হচ্ছে সিন্ধু সভ্যতা। সিন্ধুদের অববাহিকা অঞ্চলে এ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বলে এ সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত পায়। সিন্ধু সভ্যতা ছিল একটি নগর সভ্যতা। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগরকে কেন্দ্র করেই এ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগর ছিল পরিকল্পিত শহর। নগরের সকল সুযোগ সুবিধা এখানে ছিল। গরীর ভেতর দিয়ে সোজা পাকা রাস্তা ছিল। রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ ল্যাম্পপোস্ট ছিল। রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হতো। প্রত্যেক বাড়িতে খোলা জায়গা, কূপ ও স্নানাগার ছিল। জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল। এ সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকার কারণে সিন্ধু সভ্যতাকে নগর সভ্যতা বলা হয়।

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত শ্রেণিশিক্ষক হাকিম সাহেব ‘মিশরকে নীলনদের দান’ বলে অভিহিত করেছেন।আফ্রিকার প্রাণ নীলনদ আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এ নদী দশটি দেশের মধ্য | দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিশরের বুক চিরে ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়েছে। মিশর নীলনদের ভাটির দিকে অবস্থিত। নীল নদে প্রতিবছর জুলাই-অক্টোবর মাসে বন্যা দেখা দেয়। এ বন্যা উজান থেকে প্রচুর পানি বয়ে আনত। বন্যায় মিশরের দুই কূল ভেসে গিয়ে প্লাবিত হতো। বন্যায় বয়ে নিয়ে আসা পলি মিশরকে উর্বর করত। ফলে বন্যার পরে মিশরে প্রচুর ফসল উৎপন্ন হতো। আর একারণে নীলনদকে কেন্দ্র করে মিশরে সভ্যতা গড়ে উঠে। তাই গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস মিশরকে নীলনদের দান বলেছেন। পরিশেষে বলা যায়, নীলনদ মিশরকে সুজলা-সুফলা করে এখানে সভ্যতা গড়ে উঠতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।

ঘ) “মিশরীয়রা ছিল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা।” উক্তিটি যথার্থ। মিশরীয়দের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধর্মের প্রভাব ছিল অপরিসীম। পুনর্জন্মে বিশ্বাস তাদেরকে শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। মিশরীয় ফারাওরা মনে করত মৃত ব্যক্তি আবার একদিন বেঁচে উঠবে। সে কারণে দেহকে তাজা রাখার জন্য তারা মমি করে রাখত। এই মমিকে সংরক্ষণ করার জন্য তারা ত্রিভুজাকৃতির বিশাল পিরামিড গড়ে তুলেছিল। এ পিরামিড কালের সাক্ষী হয়ে আজও মিশরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে। মিশরীয়দের পূর্বে অন্য কোনো সভ্যতার লোক স্থাপত্যশিল্পে এত বেশি কৃতিত্ব দেখাতে পারেনি। চিত্রশিল্পেও মিশরীয়রা অসাধারণ পারদর্শী ছিল। সমাধি, পিরামিড, মন্দির, প্রাসাদ, সাধারণ ঘরবাড়ির দেয়ালে মিশরীয় চিত্রশিল্পীরা অসাধারণ ছকি এঁকেছেন। ভাস্কর্য শিল্পেও মিশরীয়দের মতো প্রতিভার ছাপ অন্য কোনো সভ্যতার মানুষ পারেনি। প্রতিটি ভাস্কর্য ধর্মীয় ভাবধারা, আচার-অনুষ্ঠান, মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। মিশরীয়দের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য হচ্ছে গিজার অতুলনীয় স্ফিংকস। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত ‘মিশরীয়রাই ছিল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা’ যথাযথভাবেই সত্য।

প্রশ্ন-

রেশমা একটি সাপ্তাহিক ইংরেজি ম্যাগাজিন পড়ার সময় এক পৃষ্ঠায় বড় করে একটি মানুষের ছবির নিচে ‘পেরিক্লিস ও পেলোপনেসীয় ওয়ার’ লেখা দেখে মা সেতারা বেগমের কাছে জানতে চায় এর ইতিহাস। সেতারা বেগম তখন সম্রাট পেরিক্লিস ও পেলোপনেসীয় যুদ্ধের ঘটনা বলেন। তিনি পেরিক্লিসের সময়কে স্বর্ণযুগ বলে মন্তব্য করেন। আর পেলোপনেসীয় যুদ্ধের জন্য গ্রিসে যে বিপর্যয় নেমে আসে তা ব্যাখ্যা করেন।

[কে. এম লতিফ ইনস্টিটিউশন, পিরোজপুর]

ক. মিশরে প্রথম সাম্রাজ্যের উদ্ভব ঘটে কখন?

গ. রেশমার কৌতূহল মেটাতে সেতারা বেগমর উল্লিখিত যুদ্ধ ছিল আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পরিণতি”- তোমার পঠিত ইতিহাসের আলোকে ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত যুদ্ধ গ্রিসের অবক্ষয়ে প্রধান ভূমিকা রাখে বিশ্লেষণ কর।

প্রশ্নের উত্তর

ক) মিশরে প্রথম সাম্রাজ্যের উত্তর ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে।

গ)রেশমার কৌতূহল মেটাতে সেতারা বেগম উদ্দীপকে পেলোপনেসিয়ার যুদ্ধের সামান্য বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। এ পেলোপনেসিয়া যুদ্ধে নগররাষ্ট্র এথেন্সের পরাজয় ছিল অধিপত্য প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পরিণতি। এ যুদ্ধের ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য ও রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে বিশ্ব সভ্যতায় অবিস্মরণীয় অবদান রাখা নগর-রাষ্ট্র এথেন্সের পতন হয় সামরিক নগররাষ্ট্র স্পার্টার । কাছে। উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত এ পেলোপনেসিয়ার যুদ্ধ খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০৪ পর্যন্ত মোট তিনবার সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে দুই নগররাষ্ট্র পরস্পরের মিত্রদের নিয়ে জোট গঠন করে। এথেন্সের মিত্র রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত জোটের নাম ছিল ‘ডেলিয়ান। লীগ’ এবং স্পার্টার মিত্র রাষ্ট্রদের নিয়ে গঠিত জোটের নাম ছিল ‘পেলোপনেসিয়া লীগ’। এ মরণপণ যুদ্ধে স্পার্টার নিকট এথেন্সের মান-মর্যাদা সব বিলীন হয়ে যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৬৯ অব্দে এথেন্স চলে যায় স্পার্টার অধীনে।তাই বলা হয়ে থাকে, এ যুদ্ধ ছিল আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পরিণতি।

ঘ) উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত পেলোপনেসিয়ার যুদ্ধ গ্রিসের অবক্ষয়ে প্রধান ভূমিকা রাখে।কারণ, ভৌগোলিক কারণে গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলো একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলেও তাদের সংস্কৃতি ছিল অভিন্ন। রাজনৈতিক অনৈক্য থাকা সত্ত্বেও তারা একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী বলে মনে করত। তাদের ভাষা, ধর্ম, সাহিত্য, খেলাধুলা সবকিছু একই সংস্কৃতির বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছিল এবং এ সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল অবদান ছিল এথেন্সের যার নাম ছিল হেলেনীয় সংস্কৃতি। কিন্তু খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০ থেকে ৪০৪ অব্দ পর্যন্ত সংঘটিত তিনটি পেলোপনেসিয়ার যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে এথেন্সের পূর্ব অর্জিত মান-মর্যাদা, স্বাধীনতা সব বিলীন হয়ে যায়। জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে বিশ্ব সভ্যতায় এগিয়ে থাকা এ নগররাষ্ট্রের পতনের মাধ্যমে গ্রিক সভ্যতার গৌরব বিনষ্ট হয়ে পড়ে। কারণ এথেন্স ছিল গ্রিক সভ্যতার প্রাণ। তাই এথেন্সের পতনকে কেন্দ্র করে অনেক সময় বলা হয়, পেলোপনেসিয়ার যুদ্ধ ছিল গ্রিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পরিণতি। তাই বলা যায়, এ যুদ্ধের জয়-পরাজয়ই গ্রিসের অবক্ষয়ের প্রধান ভূমিকা রেখেছিল।

সৌরজগত ও ভূমণ্ডল অধ্যায়ের অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর