বায়ান্নর দিনগুলো রচনার পাঠ বিশ্লেষণ

বায়ান্নর দিনগুলো রচনার পাঠ বিশ্লেষণঃ-

“সরকার আমাদের বৎসরের পর বৎসর বিনা বিচারে আটক রাখছে, তারই প্রতিবাদ করার জন্য অনশন ধর্মঘট করছি।”

তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এদেশের রাজনীতিবিদদের বছরের পর বছর বিনাবিচারে আটক করে রাখত। তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হতো না। রাজবন্দিদের পরিবারের কাউকে তাঁদের অবস্থানের ঠিকানা জানতে দেওয়া হতো না। তাদের এ অনাচার ও মানসিক নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন আহমদ ফরিদপুর জেলখানায় আমরণ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন।

“ইয়ে কেয়া বাত হ্যায়, আপ জেলখানা মে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদ যাতে অনশন ধর্মঘট করতে না পারেন, সেজন্য তাদেরকে দ্রুত অন্য জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।এ কাজের দায়িত্ব পান আর্মড পুলিশের একজন সুবেদার ও কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মচারী। সুবেদার সাহেব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুব ভালোবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন। তাই তাঁকে কারাগারে দেখে বিস্মিত হন এবং আলোচ্য উক্তিটি করেন।

“একদিন মরতেই হবে, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যদি মরতে পারি, সে মরাতেও শান্তি আছে।”

প্রথম থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষকে নানাভাবে শোষণ করতে থাকে। এদেশের ছাত্র-জনতা- বুদ্ধিজীবী-রাজনীতিবিদরা সেই শোষণের প্রতিবাদ করেন। তাঁদের ওপর সরকার নির্মমভাবে দমননীতি, জেল-জুলুম ও নির্যাতন শুরু করে। সেই অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি মরণ হয়, তাহলে সেই মৃত্যু হবে দেশের জন্য, দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। সেই মৃত্যুতেও শান্তি আছে। এ বিবেচনায় ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলে নেওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ জাহাজঘাটে উপস্থিত সহকর্মীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলোচ্য কথাগুলো বলেন।

“জায়গাও ঠিক করে রেখেছেন, তবে রাজবন্দিদের সাথে নয়, অন্য জায়গায়।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন আহমদ ফরিদপুর জেলগেটে পৌছে দেখলেন যে, জেলার ও ডেপুটি জেলার সাহেব সেখানে পৌঁছে গেছেন। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন আহমদকে তাড়াতাড়ি ভেতরে নিয়ে যেতে বলা হলো। তাঁদের কোথায় রাখা হবে সেই স্থান আগে থেকেই ঠিক করা আছে। তবে তা রাজবন্দিদের সঙ্গে নয়। কারণ তাতে তাঁদের অনশন ধর্মঘটের ব্যাপারটা দ্রুত ফাঁস হয়ে যাবে। যদি তা হয় তবে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাছাড়া নানা বিষয়ে খবরাখবর করা সহজ হবে। এ জন্যই তাঁদেরকে স্বতন্ত্র জায়গায় রাখার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে আলোচ্য কথাটি বলা হয়।

“এদের কথা হলো, “মরতে দেব না।”

জেলখানায় অনশন ধর্মঘট শুরু করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন আহমদের স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হলে তাঁদেরকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কারাকর্তৃপক্ষ জোর করে নাক দিয়ে তাঁদের খাওয়াতে আরম্ভ করে। নাকের ভিতর নল দিয়ে পেটে তরল খাবার দেওয়া হয়। নলের মুখে কাপ বসিয়ে, কাপের মাধ্যমে দুধের মতো পাতলা খাবার পেটের মধ্যে ঢেলে দেয়। তাদের এ ধরনের কলাকৌশল আর জবরদস্তি দেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মনে হয় যে, তারা মরতেও দেবে না। এ প্রসঙ্গেই তিনি এ কথা বলেন।

“মাতৃভাষা আন্দোলনে পৃথিবীতে এই প্রথম বাঙালিরাই রক্ত দিল।”

পাকিস্তানি শাসকদের উর্দু ভাষার পরিবর্তে বাংলা ভাষাকে রক্ষা ও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালিরাই প্রথম আন্দোলন করেছে। বাঙালিরাই প্রথম ১৪৪ ধারা ভেঙে মাতৃভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে। এর আগে পৃথিবীর আর কোথাও কোনো ভাষার জন্য মানুষ এভাবে আন্দোলন করেনি, জীবনও দেয়নি। আলোচ্য কথাটির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ কথাই প্রকাশ করেছেন।

“আমি ভাবলাম, দেখব কি না জানি না, তবে রক্ত যখন আমাদের ছেলেরা দিয়েছে তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে আর উপায় নাই।”

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এ দেশের ছাত্র- জনতা শাসকদের ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে মিছিল বের করেন। সেই মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে অনেকেই শহিদ হন। ফলে সারা দেশ জেগে ওঠে। বিদেশেও এর প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা অব্যাহত থাকে। এসব দিক বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, “রক্ত যখন আমাদের ছেলেরা দিয়েছে তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে তাদের আর উপায় নেই।”

“মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।” ভুল থেকেই মানুষের পতনের শুরু হয়। আর প্রতি পদক্ষেপেই যখন ভুল হতে থাকে তখন পতন নিশ্চিত হয়ে যায়। ন্যায্য দাবিতে ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা করে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভুল করেছে। সেই প্রসঙ্গেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন এসব ভুলের খেসারত ষড়যন্ত্রকারী শাসকগোষ্ঠীকে অবশ্যই দিতে হবে। এটা ছিল তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। তিনি বুঝেছিলেন যে তারা নিজেদের পতন ঠেকাতে পারবে না।

“বাংলাদেশ যে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে।” সিভিল সার্জন সাহেব দিনে পাঁচ-সাতবার আমরণ অনশনকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদকে দেখতে আসেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর তিনি মুখ গম্ভীর করে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্দেশ করে বলেন- “এভাবে মৃত্যুবরণ করে কি কোনো লাভ হবে? বাংলাদেশ যে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে।” তার এসব কথার মধ্য দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেঁচে থাকার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন এবং তাঁকে বাংলার জনমানুষের মুক্তির দূত মনে করেছেন।

“মুক্তি দিলে খাব, না দিলে খাব না।”

যে দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় আমরণ অনশন শুরু করছেন সেই দাবি শাসকরা মেনে নিয়ে তাঁকে মুক্তি দিলে খাবেন, না দিলে খাবেন না- একথা তিনি ডেপুটি জেলারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায় ডেপুটি জেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে গিয়ে বললেন, আপনাকে যদি মুক্তি দেওয়া হয়, তবে খাবেন তো? তখন শর্তের কথা তিনি জানান এবং মুক্তি দিলে তিনি খাবেন বলে সাফ জানিয়ে দিলেন, তা না হলে তাঁর লাশ মুক্তি পেয়ে যাবে। এ কথার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালির অধিকার আদায়ে তাঁর দৃঢ়তা প্রকাশ করেছেন।

“মনের কথা প্রকাশ করতে পারলে ব্যথাটা কিছু কমে যায়।”

প্রিয়জন দূরে থাকলে, সমস্যায় থাকলে স্বাভাবিকভাবেই কাছের মানুষদের দুশ্চিন্তা হয়। মনে একধরনের ভয় বা সন্দেহ কাজ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন জেলে থাকতেন তখন তিনি প্রিয়জনদের কথা ভাবতেন। মুক্তি পেয়ে বাড়ি আসার পর তাঁর স্ত্রীর জমানো কথার বাঁধ ভেঙে যায়। সেসব কথায় তাঁর দুঃখ, অভিমান প্রকাশ পায়। মনের মধ্যে চেপে রাখা কথাগুলো বলার সুযোগও দেন তিনি। কারণ তিনি জানেন, মনের কথা প্রকাশ করতে পারলে ব্যথাটা কিছু কমে যায়।

“জনমত সৃষ্টি হয়েছে, জনমতের বিরুদ্ধে যেতে শোষকরাও ভয় পায়।”

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পক্ষে এ দেশে বিশাল জনমত গড়ে ওঠে, দেশজুড়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু হয় এবং দেশবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শহিদ হওয়ার পর আন্দোলনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। তখন স্বেচ্ছাচারী সরকার ভয় পেয়ে নেতাকর্মীদের ধরতে শুরু করে। ফলে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে শোষকগোষ্ঠী জনমতকে উপেক্ষা করতে না পেরে ভয় পেয়ে যায়। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে তাদের আর উপায় থাকবে না জেনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব কথা বলেন।

বায়ান্নর দিনগুলো রচনার পাঠ বিশ্লেষণ

মানব-কল্যাণ প্রবন্ধের পাঠ বিশ্লেষণ-

“মানব-কল্যাণ- এ শিরোনাম আমার দেওয়া নয়।”

মানবকল্যাণ বলতে মানুষের জীবনের উৎকর্ষের জন্য মানুষের উপকার করাকে বোঝায়। মানবকল্যাণ কথাটা সস্তা ও মামুলি অর্থেই আমরা প্রচলিত ধারণায় ব্যবহার করে থাকি। যে কারণে এটি প্রবন্ধকারের দেওয়া শিরোনাম নয়।

“ওপরের হাত সব সময় নিচের হাত থেকে শ্রেষ্ঠ।”

ওপরের হাত বলতে দাতার হাতকে বোঝায়। এই হাত থেকে অনুগ্রহ বর্ষণ করা হয়। অন্যদিকে নিচের হাত বলতে গ্রহীতার হাতকে বোঝায়, মানুষ যে হাত পেতে কারও দান গ্রহণ করে।

“রাষ্ট্র জাতির যৌথ জীবন আর যৌথ চেতনারই প্রতীক।”

জাতীয় জীবনের জন্য জাতীয় চেতনার প্রতিফলন এবং তার বিকাশ সাধনই রাষ্ট্রের কাজ। রাষ্ট্রের দায়িত্ব কেবল প্রশাসন চালানোই নয়, জাতিকে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন করে তোলাও রাষ্ট্রের কাজ। সেক্ষেত্রে নিচের হাত পাতা যথাসম্ভব কমিয়ে রাষ্ট্রকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

“মানব-কল্যাণের উৎস মানুষের মর্যাদাবোধ বৃদ্ধি আর মানবিক চেতনা বিকাশের মধ্যেই নিহিত।”

মানবকল্যাণ বলতে লেখক দয়া বা করুণার বশবর্তী হয়ে দান- খয়রাত করাকে মনে করেন না। এসবের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের অবমাননা হয়, এজন্য এটিকে মানবকল্যাণ বলা যায় না। মানবিক চেতনার বিকাশের মাধ্যমে মানুষের মর্যাদাবোধ বৃদ্ধির কার্যকর উপায়কেই লেখক মানবকল্যাণ মনে করেন।

” সে সোপান রচনাই সমাজ আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”

মানবকল্যাণের প্রাথমিক সোপান রচনা সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা সমান। মানুষ যাতে মানবিক বৃত্তি বিকাশের পথ অনুসরণ করে বেড়ে উঠতে পারে, সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়াই মানবকল্যাণের প্রাথমিক কাজ।

“মানব-কল্যাণ স্বয়ম্ভূ, বিচ্ছিন্ন, সম্পর্ক রহিত হতে পারে না।” ‘মানবকল্যাণ’ নিজে নিজেকে তৈরি করে না। কারণ তা মানুষ ও সমাজ উভয়ের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এটি মানুষ ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বা সম্পর্কহীন নয়। প্রত্যেক মানুষ যেমন সমাজের সঙ্গে সম্পর্কিত, তেমনই মানুষের কল্যাণও সামগ্রিকভাবে সমাজের ভালো-মন্দের সঙ্গে সংযুক্ত।

“বিভক্তিকরণের মনোভাব নিয়ে কারো কল্যাণ করা যায় না।” মানবকল্যাণের প্রধানতম অন্তরায় রাষ্ট্র, জাতি, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগত চেতনা। ভিন্ন ভিন্ন প্রতিকূল চেতনাই মানুষকে বিভক্ত করে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব জাতি, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগুলোকে অভিন্ন এক জাতীয়তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা, যাতে কোনো বিভক্তির সৃষ্টি না হয়। কখনো কখনো রাষ্ট্রীয়ভাবেও বিভক্তিকে উসকে দেওয়া হয়। কিন্তু বিভক্তিকরণের মনোভাব কারও জন্য কল্যাণ আনয়ন করে না।

“সত্যিকার মানব-কল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনারই ফসল।”

কালে কালে জগতের মহৎ ব্যক্তিরা মানবকল্যাণের জন্য চিন্তা- ভাবনা করেছেন এবং বাস্তবে প্রতিফলন ঘটিয়ে তার আদর্শ রেখে গেছেন। বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, লালন থেকে আধুনিককালের রবীন্দ্রনাথ, নজরুল সবাই মানবিক চেতনার উদাত্ত কণ্ঠস্বর। সত্যিকার মানবকল্যাণ তাঁদেরই মহৎ চিন্তা-ভাবনার ফসল।

“এর সাথে মানব মর্যাদার তথা human dignity’র সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।”

মানবকল্যাণ সাধন মানুষের কাছে এক জাগতিক মানবধর্ম। যে কারণে মানব মর্যাদার সঙ্গে এর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও গভীর। পৃথিবীর দিকে তাকালে মানবকল্যাণের নামে দুস্থ, বাস্তহারা, স্বদেশ বিতাড়িত মানুষের রিলিফ ও রিহেবিলিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করে। এটি মানব মর্যাদার অপমান। কারণ human dignity বলতে এক্ষেত্রে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।

“সেটা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কিংবা কোনো রকম অপমান-অবমাননার পথে হতে পারে না।”

মানুষের ভেতরে রয়েছে এক অসীম ও অনন্ত সম্ভাবনার বীজ। সেই সম্ভাবনার স্ফুরণ ও বিকাশের জন্য সুযোগ দেওয়া এবং ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে উপযুক্ত সাহায্য করাই শ্রেষ্ঠতম মানবকল্যাণ। সহযোগিতা ও সহানুভূতির হাত বাড়িয়েই সেটি সম্ভব- তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা অপমান-অবমাননা করে নয়।

“স্রেফ সদিচ্ছা দ্বারা মানব-কল্যাণ সাধিত হয় না।”

মানবকল্যাণের জন্য সদিচ্ছা প্রয়োজন। তবে মনের মধ্যে শুধু সদিচ্ছা লালন করে তা কার্যকর না করলে মানবকল্যাণ সাধন করা যায় না। তাই মানবকল্যাণের জন্য প্রয়োজন উদ্যোগ, সঠিক পরিকল্পনা, অর্থ জোগান ও কর্মনিষ্ঠা। তাহলেই সদিচ্ছা সফলতা লাভ করে।

“অতএব আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে।”

ধর্মের অমিয় বাণী মানবজাতির ভাগ্যে নিরবচ্ছিন্ন সুখ আনার সহায়ক শক্তি। কিন্তু মানুষের সুখ-শান্তি নিরাপত্তা ক্রমেই মানুষের জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কোথায় এর গলদ রয়েছে তা নির্ণয় করে সেই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, যা হবে বিজ্ঞানসম্মত, সুবুদ্ধি-নিয়ন্ত্রিত ও যুক্তিসংগত।

বায়ান্নর দিনগুলো রচনার সৃজনশীল প্রশ্ন