বাংলা নববর্ষ উদযাপন আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকে অগ্রসর করে

Table of Contents

উদ্দীপকঃ-

বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক উৎসব। গ্রাম ও শহরে এ উৎসব পালিত হয় ভিন্ন আঙ্গিকে। প্রতিবছর এই দিনে গ্রামে ও শহরে পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ বেশ খায় বাঙালিরা। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামে বসে মেলা। মেলায় বিভিন্ন খেলা- মোরগের লড়াই, বানর খেলা, ষাঁড়ের লড়াই, পাতা খেলা ও লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়। কোথাও কোথাও রাতে যাত্রাপালা হয়। সবকিছু মিলে এ উৎসবটি হয়ে ওঠে সর্বস্তরের বাঙালির এক মিলনমেলা। এটি আমাদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ক. কবীর চৌধুরী কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?

খ. “বাংলা নববর্ষ উদযাপন আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকে অপরাজেয় শক্তি ও মহিমায় পূর্ণ করুক”- প্রাবন্ধিক কেন এ কামনা করেছেন?

গ. উদ্দীপকের পয়লা বৈশাখের সাংস্কৃতিক উৎসব ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের কোন দিকটি নির্দেশ করে, তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘বাংলা নববর্ষ উৎসব আমাদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ’- উদ্দীপক ও ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

উত্তরঃ-

ক. কবীর চৌধুরী ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

খ. বাঙালি জাতিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রাবন্ধিক প্রশ্নোক্ত কামনা করেছেন।পয়লা বৈশাখ বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব। এ উৎসবে বাঙালিরা শ্রেণিবৈষম্য ভুলে উৎসাহ সহকারে অংশগ্রহণ করে, যা বাঙালি জাতির মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি করে। তাই প্রাবন্ধিক প্রশ্নোক্ত প্রত্যাশা কামনা করেছেন।

গ. উদ্দীপকের পয়লা বৈশাখ সাংস্কৃতিক উৎসব, ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের বৈশাখী উৎসবের দিকটিকে নির্দেশ করে।’পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষের কথা বর্ণিত হয়েছে। নববর্ষ উপলক্ষে বাঙালি জাতির মধ্যে নানা উৎসব-উদ্দীপনা দেখা দেয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো পুণ্যাহ, হালখাতা, মেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রভৃতি। এ উৎসবগুলো বাঙালি জাতির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে চোখে পড়ার মতো।উদ্দীপকে বাংলা নববর্ষের উৎসবের কথা বর্ণিত হয়েছে। নববর্ষকে উপলক্ষে করে বাঙালি জাতি নানা আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো,মোরগলড়াই, বানরখেলা, ষাঁড়ের লড়াই, লাঠিখেলা, যাত্রাপালা প্রভৃতি। এভাবেই বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি বাঙালি জাতির কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রবন্ধেও পয়লা বৈশাখের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের পয়লা বৈশাখের সাংস্কৃতিক উৎসব প্রবন্ধে বর্ণিত নবর্ষের উৎসবকে তুলে ধরে।

 

ঘ. বাংলা নববর্ষের উৎসবগুলো সুপ্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে উদ্যাপিত হয়ে আসছে, যা আমাদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এটি বাঙালির জাতীয় উৎসব। এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। এ দিনটিকে উপলক্ষ করে বাঙালি জাতির মধ্যে নানা উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। বৈশাখের দিনে নানা আচার-অনুষ্ঠানও পালন করা হয়। এর মাধ্যমে সবার মধ্যে সৃষ্টি হয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব। গড়ে ওঠে ঐক্যের মেলবন্ধন।উদ্দীপকেও বাংলা নববর্ষের উৎসবের কথা বর্ণিত হয়েছে। নতুন বছরকে বরণ করতে বাঙালি জাতি নানা উৎসবের আয়োজন করে। এ দিনটিকে কেন্দ্র করে সবাই মেতে ওঠে মহা উৎসবে। বাংলা নববর্ষের উৎসবগুলো যেন আমাদেরই জাতীয় ঐতিহ্যের পরিচায়ক।বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতীয় উৎসব। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির মধ্যে যে আনন্দ-উৎসাহ সৃষ্টি হয়, তা যেন আমাদের ঐতিহ্যেরই অংশ হিসেবে স্বীকৃত। পঠিত প্রবন্ধের বর্ণিত নববর্ষ অনুষ্ঠানের নানা আনুষ্ঠানিকতা ও বিচিত্র উৎসবের কথা উদ্দীপকেও উপস্থাপিত হয়েছে, যা মূলত আবহমানকাল ধরে আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। এ বিচারেই বলা যায়, বাংলা নববর্ষ উৎসব আমাদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ- প্রশ্নোক্ত মন্তব্যের সত্যতা নিরূপিত হয়।

বাংলা নববর্ষ উদযাপন আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকে অগ্রসর করে

উদ্দীপকঃ-

বাঙালির মনোবলকে দুর্বল করার জন্য পাকিস্তানিরা আঘাত হানে বাঙালির সংস্কৃতির ওপর। বাংলার স্থলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু বীর বাঙালির প্রতিবাদের কাছে সফল হয় না তাদের ষড়যন্ত্র। বাঙালির অটল মনোভাবের কাছে পরাজিত হয়ে বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষা বহাল রাখতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী।

ক. পাকিস্তান সৃষ্টি হয় কোন সালে?

খ. পয়লা বৈশাখকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করা প্রয়োজন কেন?

গ. পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও বাঙালির মাঝে দূরত্বের স্বরূপ উদ্দীপক ও ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের আলোকে তুলে ধর।

ঘ. “উদ্দীপকটি সম্পূর্ণরূপে ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের মূল ভাবটিরই প্রতিফলন কি? তোমার মতামত দাও।

উত্তরঃ-

ক. পাকিস্তান সৃষ্টি হয় ১৯৪৭ সালে।

খ. মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত নাগরিকের বুর্জোয়া বিলাস ও ফ্যাশনে পরিণত হচ্ছে বলে পয়লা বৈশাখকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করা প্রয়োজন।সুদূর অতীতকাল থেকে পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর শাসকবর্গ বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন সম্পর্কে যে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে, তা ন্যাক্কারজনক। স্বাধীন বাংলাদেশেও পয়লা বৈশাখ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত নাগরিকের বুর্জোয়া বিলাস এবং ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। পয়লা বৈশাখকে তার যথার্থ মর্যাদা দানের জন্য এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করা প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপক ও ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের আলোকে বাংলা ভাষা ও বাঙালির সংস্কৃতির ওপর আঘাতই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও বাঙালির মাঝে দূরত্বের স্বরূপ।পয়লা বৈশাখ প্রবন্ধে বাঙালির জাতীয় জীবনে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর ধর্মান্ধ শাসকগোষ্ঠীর কাছে বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষ পয়লা বৈশাখ ছিল গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো। এটি তাদের নিজেদের সংস্কৃতির অংশ ছিল না বলে এর প্রতি তাদের মনোভাব ছিল ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন। বাঙালির সংস্কৃতির প্রতি এই ন্যক্কারজনক আচরণের কারণে তাদের সাথে বাঙালির দূরত্ব সৃষ্টি হয়।উদ্দীপকে দেখা যায়, বাঙালির মনোবলকে দুর্বল করার জন্য পাকিস্তানিরা আঘাত হানে বাঙালির সংস্কৃতির ওপর। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে তারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাঙালি তা মেনে না নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং প্রতিহত হয় তাদের ষড়যন্ত্র। উদ্দীপক ও ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের আলোকে এখানেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও বাঙালির মাঝে দূরত্বের স্বরূপ ধরা পড়ে।

ঘ. উদ্দীপকটি সম্পূর্ণরূপে ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের মূল ভাবটির প্রতিফলন বলে আমি মনে করি না।’পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের মূল বিষয় বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক উৎসব। এ উৎসব একার হিন্দুর বা মুসলমানের কিংবা বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানের নয়- এ উৎসব সমগ্র বাঙালির। এ উৎসব শুধু বিত্তবান, মধ্যবিত্ত বা দীন-দরিদ্র কৃষকের নয়, এ উৎসব বাংলা ভাষাভাষী এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী সব মানুষের। ধর্মীয় সংকীর্ণতার বৃত্ত অতিক্রম করে বাংলা নববর্ষ উৎসব আজ আমাদের জাতীয় চেতনার ধারক- এ অভিমত ব্যক্ত করে লেখক প্রবন্ধটিতে পয়লা বৈশাখের জয়গান গেয়েছেন।উদ্দীপকে বাঙালি সংস্কৃতির ওপর পাকিস্তানিদের আঘাত হানার কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষার অস্তিত্ব বিলোপের ষড়যন্ত্র হিসেবে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষার ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাঙালি এর প্রতিবাদে রাজপথে নামে এবং বাঙালির অটল মনোভাবের কাছে শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র বিফল হয়।উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায়, ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে বাঙালি সংস্কৃতির নানা দিক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। আর উদ্দীপকে শুধু বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আঘাতের কথা বলা হয়েছে। কাজেই আমার মতে, উদ্দীপকটি সম্পূর্ণরূপে নয়, আংশিকভাবে ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের মূলভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।

নিয়ন্ত্রণকে পরবর্তী পরিকল্পনার ভিত্তি বলা হয় কেন?