|

নিমগাছের ছাল সিদ্ধ করার কারণ

উদ্দীপকঃ-নিমগাছের ছাল সিদ্ধ করার কারণ

চার ছেলে ও দুই মেয়ের জননী রহিমা খাতুনের বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। চার ছেলে, তাদের স্ত্রী ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে তার সুখের সংসার। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি অনেক কষ্টে সন্তানদের মানুষ করেছেন। সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়ার পর হঠাৎ করেই যেন তার সন্তানদের আচরণ পাল্টে যায়। সন্তানরা তাকে সংসারের বোঝা হিসেবে মনে করতে থাকে। যে সংসার তিনি এত দিন আগলে রেখেছেন, সেই সংসারের মায়া ত্যাগ করে তিনি অন্যত্র যেতে পারলেন না। সকল অপমান মুখ বুজে সহ্য করে সংসারেই পড়ে রইলেন।

Table of Contents

ক) নিমগাছ কী ধরনের রচনা?

খ) নিমগাছের ছাল সিদ্ধ করার কারণ ব্যাখ্যা কর।

গ) উদ্দীপকের রহিমা খাতুন চরিত্রটি ‘নিমগাছ’ গল্পের যে চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ) উদ্দীপকে ‘নিমগাছ’ গল্পের সামগ্রিক বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে কি? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

 

উত্তরঃ-

ক) ‘নিমগাছ’ বনফুল রচিত একটি প্রতীকী ছোটগল্প।

 

খ) নিমগাছের ছাল সিদ্ধ করার কারণ হচ্ছে, সেই ছাল দিয়ে ও চর্মরোগের মহৌষধ তৈরি করা।নিমগাছ ঔষধি গাছ। কবিরাজ তার চিকিৎসার কাজে ও সাধারণ মানুষ প্রাত্যহিক প্রয়োজনে নিমগাছকে অনবরত ব্যবহার করে থাকে। নিমগাছের ছাল সিদ্ধ করে চুলকানিতে লেপন করা হলে উপকার পাওয়া যায়। এ জন্যই নিমগাছের ছাল সিদ্ধ করা হয়।মূলকথাঃ- চুলকানিতে লাগানোর জন্য।

 

গ) উদ্দীপকের রহিমা খাতুন চরিত্রটি ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছের রূপকার্থে গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। ‘নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের বর্ণনা, এর পাতা, বাকল, ডাল ইত্যাদির বাহ্যিক উপকারিতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কবিরাজ তার চিকিৎসার কাজে আর সাধারণ মানুষ প্রাত্যহিক প্রয়োজনে নিমগাছকে অনবরত ব্যবহার করলেও কেউ এই গাছের সামান্যও যত্ন নেয় না। কবি একদিন নিমগাছের গুণ ও রূপের প্রশংসা করলে নিমগাছটি তার সঙ্গে চলে যেতে চায়। কিন্তু নিমগাছের শিকড় চারদিকে বিস্তৃত থাকার কারণে সে যেতে পারে না। ওদের বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটাও বাড়ির সবার কাজে সেবা প্রদান করলেও কেউ তাকে প্রকৃত মূল্যায়ন করেনি। আবার নিমগাছের শিকড়ের মতো বউয়ের সংসারের জালে আবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় বউটি কোথাও যেতেও পারছে না।উদ্দীপকে রহিমা খাতুনকে দেখা যায়, অনেক কষ্টে স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানদের মানুষ করতে। কিন্তু যখন সন্তানদের মাঝে সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া হয়, তখনই এক ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। সন্তানরা তাকে সংসারের বোঝা হিসেবে মনে করতে থাকে। রহিমা খাতুন সব বুঝতে পেরেও সংসারের বন্ধন ছিন্ন করে অন্যত্র যেতে পারছিলেন না। তিনি সব সহ্য করে সংসারেই পড়ে রইলেন, যা গল্পের গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়। তাই বলা যায়, রহিমা খাতুন চরিত্রটি ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছ এবং রূপকার্থে লক্ষ্মীবউয়ের চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে।মূলকথাঃ- গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটির সঙ্গে।

 

ঘ) উদ্দীপকে ‘নিমগাছ’ গল্পটির সামগ্রিক বিষয় প্রতিফলিত হয়নি।’নিমগাছ’ গল্পে লেখক নিমগাছের বিভিন্ন উপকারী দিক সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। কবিরাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও নিমগাছকে অনবরত ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু কেউ গাছটির সামান্য যত্নও নেয় না। গাছটির শিকড় অনেক দূর চলে যাওয়ায় গাছটি যেমন স্থির, তেমনি বাড়ির লক্ষ্মীবউটা সংসারের জালে আবদ্ধ হয়ে সংসার ছাড়তে পারে না।উদ্দীপকে দেখা যায়, রহিমা খাতুন তার সন্তানদের দিয়ে সুখের সংসার গড়ে তোলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি অনেক কষ্টে তার সন্তানদের মানুষ করেন। কিন্তু যখন সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া হয়, তখন সন্তানদের অবহেলা শুরু হয়। সন্তানরা তাকে বোঝা মনে করে। রহিমা খাতুন সব বুঝলেও সংসারের বন্ধন ছিঁড়ে কোথাও যেতে পারেন না।উদ্দীপকে রহিমা খাতুনের যে পরিণতি গল্পের লক্ষ্মীবউয়েরও একই পরিণতি লক্ষ করা যায়। তাদের কেউই সংসারের জাল ছিন্ন করে বের হয়ে আসতে পারে না। কিন্তু উভয়কেই সংসারে অপদস্থ হতে হয়। এই বিষয়টি ছাড়াও গল্পে ঔষধি গাছ হিসেবে নিমগাছের বিভিন্ন উপকারী দিকের বর্ণনা রয়েছে, যা উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটিতে ‘নিমগাছ’ গল্পের সামগ্রিক দিক প্রতিফলিত হয়নি।

মূলকথাঃ- গল্পে নিমগাছের সৌন্দর্য ও উপকারী দিক বর্ণিত হলেও উদ্দীপকে তা না থাকায় ‘নিমগাছ’ গল্পের সমগ্রতা প্রকাশ পায়নি।

 

উদ্দীপকঃ-

ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখ কথা নিতান্তই সহজ সরল। সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি তারি দু’চারিটি অশ্রুজল। নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ। (বর্ষাযাপন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

ক) নিমগাছটির দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল কে?

খ) ‘মাটির ভিতরে শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে’- ব্যাখ্যা কর।

গ) উদ্দীপকে ছোটগল্পের যে বৈশিষ্ট্যটি পাওয়া যায়, তার সঙ্গে ‘নিমগাছ’ গল্পের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।

ঘ) ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’-পঙ্ক্তিটির আলোকে ছোটগল্প হিসেবে ‘নিমগাছ’ গল্পের সার্থকতা বিচার কর।

 

উত্তরঃ-

ক) নিমগাছটির দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল কবি।

 

গ) জীবনের খণ্ডাংশকে রসনিবিড় করে তুলে ধরাই ছোটগল্পের ধর্ম। এদিক থেকে ‘নিমগাছ’ গল্পের সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য বিদ্যমান।উদ্দীপকে ছোটগল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ পাওয়া যায়। জীবনে ঘটে যাওয়া হাজারো ঘটনার মধ্য থেকে ছোট ছোট দুঃখ- বেদনাকে নিয়ে সহজ-সরল ভাষায় ছোটগল্প রচিত হয়। এতে ঘটনার ঘনঘটা যেমন থাকে না, তেমনি থাকে না পূর্ণাঙ্গ জীবনের পরিচয়। ছোটগল্পের শুরু হয় আকস্মিকভাবে এবং শেষও হয় অতৃপ্তি রেখে।বনফুলের ‘নিমগাছ’ গল্পে উদ্দীপকে বর্ণিত ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যগুলোর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এতে নিমগাছের প্রতীকে বাড়ির লক্ষ্মীবউটির কথা বলা হয়েছে। গল্পটি এমনভাবে শুরু হয়েছে, যেন আগে আরো অনেক কিছু রয়েছে। শেষও হয়েছে একইভাবে যেন ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’। মাঝখানে নিমগাছের সঙ্গে তুলনা করে লক্ষ্মীবউয়ের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। কাজেই উদ্দীপকে ছোটগল্পের যে বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, তার সঙ্গে ‘নিমগাছ’ গল্পের সাদৃশ্য রয়েছে।মূলকথাঃ- উদ্দীপকে বর্ণিত ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ‘নিমগাছ’ গল্পের সাদৃশ্য রয়েছে।

 

ঘ) উদ্দীপক থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটির আলোকে বনফুলের ‘নিমগাছ’ গল্পটিকে একটি সার্থক ছোটগল্প বলা যায়।ছোটগল্প হচ্ছে লেখকের আত্মসচেতন সৃষ্টি। এতে বিশেষ প্রকারের গঠনরীতি, বিষয়বস্তু-চয়ন, চরিত্রসৃষ্টি, কথোপকথন, পরিবেশসৃষ্টি, বাণীভঙ্গি প্রভৃতির প্রতি লক্ষ রাখা হয়। এর বিষয়বস্তু বিচিত্র এবং পরিবেশনও ততোধিক বিচিত্র হতে পারে।উদ্দীপকে ছোটগল্পের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আধুনিক ছোটগল্প এক প্রকার নতুন সাহিত্য শিল্পরূপ। জীবনের অসংখ্য ঘটনার মধ্যে বিশেষ কোনো ঘটনাই ছোটগল্পের উপাদান। ছোটগল্পে কোনো উপদেশ বা তত্ত্বকথা থাকবে না এবং শুরু ও শেষ নাটকীয় হওয়া চাই। সহজ-সরল ভাষায় ছোট ছোট দুঃখ-বেদনা নিয়ে গড়ে ওঠে ছোটগল্পের অবয়ব। > বনফুলের ‘নিমগাছ’ গল্পে উদ্ধৃতাংশের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে। গল্পটি আকৃতিতে ছোট। এটি শুরু হয়েছে নাটকীয়ভাবে এবং শেষও হয়েছে নাটকীয়ভাবে। গল্পের মূল আকর্ষণ নিমগাছ ও লক্ষ্মীবউ। একজন কবির মুখে নিমগাছের গুণ ও রূপের প্রশংসার মধ্য দিয়ে প্রতীকের আশ্রয়ে গড়ে উঠেছে গল্পটির কাঠামো। এ গল্পের জাদুকরী বাক্য হলো শেষ বাক্যটি, যার মধ্যে গল্পকার প্রকাশ করেছেন সীমাহীন কথার আখ্যান ও অতৃপ্তির আকর্ষণ। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’ পঙ্ক্তিটির আলোকে সার্বিক অর্থেই নিমগাছ একটি সার্থক ছোটগল্প।মূলকথাঃ- ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’ পঙ্ক্তিটির আলোকে সার্বিক অর্থেই ‘নিমগাছ’ একটি সার্থক ছোটগল্প।

 

উদ্দীপকঃ-

একজন ক্যাডেট ছয় বছর ক্যাডেট কলেজে থাকে। সেই ক্লাস সেভেনে ছোট্ট কিশোর আসে রাজ্যের স্বপ্ন আর অজ্ঞতা নিয়ে! প্রথম প্রথম মন খারাপ থাকে। মা-বাবার আদর আর বাসার আহ্লাদ তাকে টানে…। দিন যায়, ভালো লাগে কলেজ আর তার সবকিছু। নিয়মের কড়াকড়ি মানতে কষ্টও হয়! উচ্চমাধ্যমিক শেষে কলেজ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। কারণ, নোনা জলে রচিত হয় নতুন কাব্য…।

ক. বনফুলের প্রকৃত নাম কী?

খ. কবিরাজ নয়, কবি। কী বোঝাচ্ছেন লেখক?

গ. ‘নিমগাছ’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের সংযোগ কোথায়?

ঘ. শেকড়ের বন্ধন না যায় খণ্ডন। উদ্দীপক আর ‘নিমগাছ’ আলোকে বিশ্লেষণ কর।

 

উত্তরঃ-

ক) বনফুলের প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়।

 

খ) কবিরাজরা মূলত চিকিৎসার কাজে নিমগাছকে ব্যবহার করেন কিন্তু কবি নিমগাছের গুণ ও রূপের প্রশংসায় মুগ্ধ।নিমগাছ একটি ঔষধি উদ্ভিদ। সাধারণ মানুষ প্রাত্যহিক প্রয়োজনে নিমগাছকে অনরবত ব্যবহার করে থাকে; তেমনি কবিরাজ তার চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করে; কিন্তু কেউ এই গাছের সামান্যও যত্ন নেয় না। তবে শুধু কবির চোখেই গাছটি গুণ আর রূপে মনোমুগ্ধকর, যা নিমগাছের আত্মোপলদ্ধিতে উঠে এসেছে।

 

গ) বাস্তব জীবন সত্যের দিক থেকে ‘নিমগাছ’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের সংযোগ রয়েছে।’নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের পাতা, বাকল, ডাল, পাতা ইত্যাদির উপকারিতা কবিতার ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কবিরাজ তার চিকিৎসার কাজে, সাধারণ মানুষ প্রাত্যহিক প্রয়োজনে নিমগাছকে অনবরত ব্যবহার করে; কিন্তু নিমগাছের কষ্টের কথা ভাবে না এবং তার যত্ন নেয় না। তার শিকড় মাটির সাথে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে, ইচ্ছে হলেও তার সরে যাওয়ার উপায় নেই।পরিবারে বাড়ির গৃহকর্মনিপুণা লক্ষ্মী বউটির অবস্থাও একই রকম। বাস্তব কারণেই সংসার ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে তার থাকে না।উদ্দীপকে একজন ক্যাডেটের বাস্তব জীবনের কথা বলা হয়েছে। সে যখন কিশোর বয়সে কাজের স্বপ্ন নিয়ে এসে ক্লাস সেভেন ভর্তি হয়, তখন প্রথম প্রথম তার ভালো লাগেনি। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, কারও আদর-যত্ন না পেয়ে তার মন খারাপ হয়। কিন্তু দিন যতই গড়িয়ে যায়, ততই সে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়ে এবং একসময় কলেজ ছেড়ে যেতে তার মন চায় না। এখানেই ‘নিমগাছ’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের সংযোগ।

ঘ) শেকড়ের বন্ধন যায় না খণ্ডন। উদ্দীপক আর ‘নিমগাছ’ গল্পের আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ।’নিমগাছ’ গল্পে দেখা যায়, সবাই নিমগাছের পাতা, ডাল, বাকল ইত্যাদি নিয়ে নানা কাজে ব্যবহার করে, কিন্তু কেউ তার কষ্ট ও যত্নের কথা ভাবে না। একজন কবি একদিন নিমগাছের গুণ ও রূপের প্রশংসা করলে তার সাথে গাছটির যাওয়ার ইচ্ছে জাগলেও যেতে পারে না। কারণ তার শেকড় বহুদূর পর্যন্ত মাটির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। তাদের বাড়ির গৃহকর্মনিপুণা বউটিরও একই অবস্থা। শত দুঃখ-কষ্টের ভেতর দিয়ে সংসারের সাথে সে এমনভাবে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে গেছে, তার পক্ষে আর সংসার ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। উদ্দীপকের ছোট কিশোর ক্যাডেট কলেজে ক্লাস সেভেন ভর্তি হওয়ার পর মা-বাবার আদর না পেয়ে মনে তার কষ্ট হয়। কিন্তু ছয় বছর পর উচ্চমাধ্যমিক শেষে কলেজ ছেড়ে আর যেতে ইচ্ছে হয় না। এ সময়ের মধ্যে কলেজের সাথে তার একটা অদৃশ্য মায়ার বাঁধন সৃষ্টি হয়ে গেছে।উপর্যুক্ত বিচার-বিশ্লেষণের আলোকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, মানুষ যে পরিবেশে অবস্থান করে, সেখানকার সাথে তার শেকড়ের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে যায়। যেমনটা দেখা যায় ‘নিমগাছ’ গল্পের গৃহকর্মনিপুণা বউ এবং উদ্দীপকের কিশোর ক্যাডেটের ক্ষেত্রে। তাদের পক্ষে সম্পর্কের বন্ধন অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, ‘শেকড়ের বন্ধন যায় না খণ্ডন’- উদ্দীপক আর ‘নিমগাছ’ গল্পের আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ।

 

উদ্দীপকঃ-

তপন চৌধুরী সরকারি কর্মকর্তা, প্রায় ২০ বছর হলো চাকরির। মাইনে খারাপ না, নিশ্চয়তাও আছে। সম্মান-প্রতিপত্তিও কম না। কিন্তু মাঝে মাঝেই সব ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে নীতিগত কারণে।সম্ভব হয় না জীবনবাস্তবতার কারণে, পরিবারের অর্থনৈতিক কারণে।

ক. ‘নিমগাছ’ গল্পটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত?

খ. ‘কবিরাজ নয়, কবি’ বুঝিয়ে লেখ।

গ. উদ্দীপকের তপন চৌধুরীর সাথে নিমগাছের কোনো সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. তপন চৌধুরীর এবং নিমগাছের বাস্তবতা অনেক দূরবর্তী- তোমার মতামত দাও।

 

উত্তরঃ-

ক) নিমগাছ গল্পটি ‘অদৃশ্যলোক’ গ্রন্থের অন্তর্গত।

 

গ) উদ্দীপকের তপন চৌধুরীর সাথে নিমগাছের সাদৃশ্য হলো কেউ জীবনবাস্তবতাকে অতিক্রম করতে পারে না।’নিমগাছ’ গল্পটি একটি প্রতীকী গল্প। এখানে নিমগাছের আড়ালে বাড়ির গৃহকর্মনিপুণা লক্ষ্মী বউটার জীবনবাস্তবতা আলোচিত হয়েছে। বাড়ির পেছনে আবর্জনার স্তূপে অযত্ন-অবহেলায় দাঁড়িয়ে থাকা গাছটিকে সবাই কাজের সময় ব্যবহার করে গৃহকর্মনিপুণা লক্ষ্মী বউটার মতো, কিন্তু বউয়ের যথাযথ মূল্যায়নের বিষয়টি কেউ চিন্তা করে না। তবু দায়িত্ববোধের শিকড়ে আবদ্ধ হয়ে সংসারেই পড়ে থাকে।উদ্দীপকের তপন চৌধুরীও একজন সরকারি কর্মকর্তা। অর্থ, সম্মান ও নিশ্চয়তার দিক থেকে চাকরিটি বেশ ভালো। বিশ বছর তিনি এই চাকরির সাথে যুক্ত। কিন্তু মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে করে চাকরিটি ছেড়ে দিতে। কারণ তাকে অনেক অনৈতিক কর্মকাণ্ড মেনে নিতে হয়, যা তিনি ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করেন। কিন্তু পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ও জীবনবাস্তবতার কারণে তাকে চাকরিটি করতেই হয়। তাই বলা যায়, সাংসারিক দায়িত্ববোধ থেকে লক্ষ্মীবউটি যেমন সংসার ছাড়তে পারেনি তেমনি তপন চৌধুরীও সাংসারিক দায়িত্ববোধ থেকেই চাকরিটি ছাড়তে পারেনি। আর এ ক্ষেত্রেই তপন চৌধুরীর সাথে নিমগাছের সাদৃশ্য বর্তমান।

 

ঘ) বাস্তব জীবনচেতনায় উদ্দীপক এবং নিমগাছের বাস্তবতা অনেক দূরবর্তী।উদ্দীপকের তপন চৌধুরী বিশ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চাকরিতে মাইনে ভালো। সম্মান ও নিশ্চয়তার দিক থেকেও তপন সাহেব বেশ সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু নৈতিকতার কথা চিন্তা করলে তার আর চাকরি করতে ইচ্ছে করে না। তবে চাকরির প্রয়োজনে তাকে অনেক অনৈতিক কর্মকাণ্ড সহ্য করতে হয়। সাংসারিক দায়িত্ব, আর্থিক নিশ্চয়তা ও জীবনবাস্তবতার কারণে ইচ্ছা থাকলেও চাকরি ছাড়ার কোনো উপায় তার নেই। ‘নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের প্রতীকে লেখক বাড়ির গৃহকর্মনিপুণা লক্ষ্মী বউটার পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থানকে তুলে ধরেছেন। নিমগাছকে যেমন কেউ যত্ন করে না, কিন্তু প্রয়োজনমতো ব্যবহার করে তেমনি বাড়ির বধূটিও শুধু সবার জন্য নিবেদিতপ্রাণ; কিন্তু বিনিময়ে অবজ্ঞা আর অবহেলা ছাড়া তার কপালে কিছুই জোটে না। মন চাইলেও সে সংসারের দীর্ঘদিনের মায়া ও দায়িত্ববোধ ত্যাগ করে চলে যেতে পারে না।উদ্দীপকের তপন সাহেব চাকরি করতে চান না; কারণ তিনি অনৈতিকতাকে মেনে নিতে পারেননি, তবুও জীবনবাস্তবতার কাছে তাকে হার মানতে হয়। অন্যদিকে বধূটি সংসারের স্নেহ, মায়া, মমতার টান অতিক্রম করতে পারেনি। নিজের সংসারের সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে জড়িত হওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও কোথাও যেতে পারে না। তাই স্পষ্টই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যের যথার্থ বাস্তব ও সত্য।

 

উদ্দীপকঃ-

ষাট বছরের মকবুল বুড়োর সাথে তেরো বছর বয়সের টুনির বিয়ে হয়। ধান ভানা থেকে শুরু করে খেতখামারের সব কাজ করায় টুনিকে দিয়ে। টুনির কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ মকবুলের চাচাতো ভাই মন্টু। টুনি মাঝে মাঝে মন্টুকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু মন্টুর সঙ্গে চলে যেতে পারে না।

ক. বনফুলের প্রকৃত নাম কী?

খ. নতুন লোকটা মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিমগাছের দিকে চেয়ে রইল কেন?

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে নিমগাছ গল্পের লক্ষ্মী বউয়ের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের মকবুল বুড়ো ‘নিমগাছ’ গল্পের কবিরাজের প্রতিনিধি- মন্তব্যের যথার্থতা নিরূপণ কর।

 

উত্তরঃ-

ক) বনফুলের প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়।

 

গ) সংসারজীবনে অবমূল্যায়নের বিষয়টিতে ‘নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মী বউয়ের সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে।নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের আচরণে এক গৃহবধূর জীবন তুলে ধরা হয়েছে। এখানে নিমগাছ তার সবকিছু দিয়ে মানুষের সেবা দিয়ে যায়, কিন্তু তার কপালে জোটে শুধু অবহেলা। ঠিক একইভাবে গৃহবধূ তার স্বামীর সংসারকে পরম যত্নে আগলে রাখে, কিন্তু সংসারের কেউ তার যত্ন নেয় না। এতে গৃহবধূর মাঝে মাঝে গৃহত্যাগের সাধ জাগে কিন্তু সম্পর্কের বন্ধন সে ছিন্ন করতে পারে না।উদ্দীপকের টুনি একটি কিশোরী। তার সাথে বিয়ে হয় বুড়ো মকবুলের। টুনি অনেক পরিশ্রমী। পরিশ্রম করে স্বামীর সংসারকে আগলে রাখে কিন্তু তার যত্ন যেন কেউ করে না। গল্পের বধূর, যেন ঠিক একই দশা। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ও গল্পের মধ্যে গৃহবধূর অবহেলা শিকার হওয়া ও সংসার ছিন্ন করতে না পারার দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে।

 

ঘ) উদ্দীপকের মকবুল বুড়ো ও ‘নিমগাছ’ গল্পের কবিরাজের প্রতিনিধি- মন্তব্যটি যথার্থ।’নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের বন্দনা করা হয়েছে। কবিরাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ নিমগাছের ছাল, পাতা, বাকল, ছায়া থেকে উপকার পেয়ে থাকে। কবিরাজরা চিকিৎসার জন্য প্রতিনিয়ত নিমগাছের নানা অংশ ব্যবহার করে থাকে, কিন্তু কেউ এর যত্ন করে না। অযত্ন- অবহেলায় সারাক্ষণ বাড়ির পাশে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে নিমগাছ।উদ্দীপকে দেখা যায়, মকবুল বুড়ো কিশোরী টুনিকে বিয়ে করে। বিয়ের পর টুনিকে দিয়ে ঘরের কাজ থেকে চাষাবাদ সবকিছু করিয়ে নেয়, কিন্তু কর্মদক্ষ টুনির কোনো মূল্যায়ন সে করে না। অনাদার, অযত্ন-অবহেলায় কাটে টুনির জীবন।উদ্দীপকের মকবুল বুড়ো টুনিকে অবহেলা করেছে। আর গল্পে কবিরাজরা নিমগাছের উপকারিতা গ্রহণ করলেও তার কোনো যত্ন নেয়নি। ঠিক গৃহলক্ষ্মী বউটির মতো সবার কাছেই সে উপেক্ষিত হয়েছে। তাই বলা যায়, স্বার্থ আদায়ে মকবুল বুড়ো ও কবিরাজরা : যেন একে অন্যের প্রতিনিধি।

 

উদ্দীপকঃ-

এই সংসারে এসেছিল নয় বছরের মেয়ে। তারপরে এই পরিবারের দীর্ঘ গলি বেয়ে দশের ইচ্ছা-বোঝাই করা এই জীবনটা টেনে টেনে শেষে পৌঁছিনু আজ পথের প্রান্তে এসে। সুখের দুখের কথা একটু খানি ভাবব এমন সময় ছিল কোথা!

ক. যকৃতের পক্ষে কোনটি খুব উপকারী?

খ. কবিরাজরা নিমগাছের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কেন?

গ. ‘নিমগাছ’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।

ঘ. “উদ্দীপকের গৃহবধূর জীবন আর ‘নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মী বউটার জীবন একই সূত্রে গাঁথা”- মন্তব্যটির সত্যতা নিরূপণ কর।

 

উত্তরঃ-

ক) নিমের কচি পাতা যকৃতের পক্ষে খুব উপকারী।

 

গ) ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছের প্রতীকে উপস্থাপিত লক্ষ্মী বউয়ের চরিত্রের সাথে উদ্দীপকের গৃহবধূ হয়ে আসা নয় বছরের মেয়ের চরিত্রটি সাদৃশ্যপূর্ণ।নিমগাছ গল্পটি একটি প্রতীকী গল্প। এখানে নিমগাছের আড়ালে বাড়ির গৃহকর্মনিপুণা লক্ষ্মী বউটার বাস্তব জীবন-পরিণতি আলোচনা করা হয়েছে। নিমগাছকে যেমন শুধু প্রয়োজন ব্যবহার করে সবাই। গাছের যত্নের কথা কেউ চিন্তা করে না, ঠিক তেমনি যে বধূটি সারা জীবন সংসারের জন্য খেটে যায়, তার সুখ শান্তির কথা কেউ চিন্তা করে না। সংসারের সবাই তার থেকে কেবল নিয়েই যায়। কিন্তু তাকে কিছু দেওয়ার কথা কেউ চিন্তাও করে না। উদ্দীপকের গৃহবধূর অবস্থাও লক্ষ্মী বউটার মতো। নয় বছর বয়সে বউ হয়ে সে শ্বশুরবাড়ি আসে। সেই থেকেই সে সংসারের দায়-দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করে আসছে। সব সময় পরিবারের সব সদস্যের ভালো-মন্দ চিন্তা করতে করতেই আজ জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। নিজের সুখ-দুঃখের কথা ভাবার সময়ই সে পায়নি। গৃহবধূর এ চিরায়ত সেবাব্রতের দিকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মী বউটির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আর এ বিচারেই নিমগাছ গল্পের সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য বর্তমান।

 

ঘ) জীবনবাস্তবতার নিরিখে উদ্দীপকের গৃহবধূ ও ‘নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মী বউটার জীবন একসূত্রে গাঁথা।নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের প্রতীকে লেখক বাড়ির গৃহকর্মনিপুণা লক্ষ্মী বউটার জীবনবাস্তবতা অত্যন্ত মমতার সাথে তুলে ধরেছেন। বাড়ির পেছনে আবর্জনার স্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা নিমগাছটির কেউ যত্ন নেয় না। কিন্তু গাছের পাতা, বাকল, ছায়া ইত্যাদি প্রায় সবকিছুর মানুষ প্রাত্যহিক প্রয়োজনে ব্যবহার করে। ঠিক তেমনি বাড়ির বধূটি পুরো সংসারের জন্য আজীবন কেটে যায়, বিনিময়ে অবজ্ঞা ছাড়া সে কিছুই পায় না। আবার সংসারের মায়া ছিন্ন করে সে শুধু নিজের কথাও চিন্তা করতে পারে না। নিমগাছের মতো সংসারের শিকড়েই আবদ্ধ হয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। উদ্দীপকের বধূটিও বাংলার চিরায়ত গৃহবধূর প্রতিনিধি। নয় বছর বয়স থেকে তার সংসারজীবনের যাত্রা শুরু হয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও তাকে পরিবারের ঘানি টানতে হয়। সংসারের সবার ভালো-মন্দ বিবেচনা করতে করতে নিজের জীবনের সুখ-দুঃখ অনুভব করার সময় পর্যন্ত তার হয়ে ওঠেনি। বোঝা বইতে বইতে তার জীবনের সাধ-আহ্লাদ ডানা খুঁজে পায়নি। জীবনবাস্তবতার কশাঘাতে উদ্দীপকের গৃহবধূটি যেমন নিজের ভালো-মন্দ চিন্তা করতে পারেনি, তেমনি ‘নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মী বউটিও সারা জীবন উপেক্ষিত হয়েছে। পরিবারের সবাইকে ভালো রাখতে গিয়ে নিজের কথা ভাবার অবকাশও তার ছিল না। আবার সংসারের প্রতি দায়িত্ববোধ ও স্বজনদের প্রতি মায়া-মমতার কারণে ছিন্ন করতে পারেনি সংসারের বন্ধন। তাই বলা যায়, চেতনাগত বিচারে উদ্দীপকের গৃহবধূর জীবন আর ‘নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মী বউটার জীবন একই সূত্রে গাঁথা- মন্তব্যটি যথার্থ ও যৌক্তিক।

নিমগাছ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন