থানকুনি পাতার উপকার কি?

থানকুনি পাতাটির উপকারিতা কি অথবা এর অপকারিতাই কি?

চলুন জেনে নেওয়া যাক, খুব কম লোকই আছে যারা থানকুনি পাতা চেনেন না।তবে গ্রামাঞ্চলে প্রায় সকল মানুষ এই গাছের সঙ্গে পরিচিত।এর পাতাটি ভেষজ ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে।খোলা বা পতিত পড়ে থাকা জমিতে, যেখানে কোনো কিছু দীর্ঘ দিন চাষ করা হয় না।সেখানে ঘাসের সাথে সাথে এই পাতা জন্মে উঠে।কোনো প্রকার যত্ন কিংবা পরিচর্চা ছাড়াই ঘাসের মতো এটা বৃদ্ধি পেয়ে শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে দেয়।এছাড়া বাড়ির আঙিনাতেও থানকুনির গাছ বেড়ে উঠতে পারে।একে ওষুধি গাছ মনে করে অনেক বৈদ ও বিজ্ঞরা।এতে যে ধরণের গুণাগণ বিদ্যমান তা হয়তো আপনার একটু হলেও অজানা।তাই তো আজকের এই আর্টিকেলে থানকুনি পাতাকে আপনার স্বাস্থ্য উন্নতির কাজে কিভাবে সহায়তা করে সেটা জানাবো।সুস্বাস্থ্য গঠন করতে কিংবা দেহের বিশেষ কি রোগে থানকুনি পাতা সাহায্য করে সেটাও জেনে নিতে পারবেন।

থানকুনি পাতা বা এর রস খাওয়ার উপকারিতাঃ

প্রাচীন যুগ হতে গ্রাম বাংলায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা প্রচলিত।আর এক্ষেত্রে এই গাছটি বৈদ্যরা ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে বর্ষজীবী ঔষধি গাছ মনে করে থাকেন।এখনো আমাদের দেশে এই পাতা প্রকৃতির দান ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।কারণ বিজ্ঞরা মনে করে, খনিজ ও ভিটামিনে পরিপূর্ণ থানকুনির পাতাগুলো।তাছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক গুণ ও নানা রোগের সমাধান।তাই তো কেউ সিদ্ধ করে কিংবা রস করে নিয়মিত খায়।এটি স্বাস্থ্যের জন্য কি কি উপকার করে ও কোন রোগের নিরাময় ঘটায়, তা বিস্তারিত বলা হচ্ছেঃ

থানকুনি পাতার উপকার কি?

. হজম শক্তি বাড়াতেঃ আমাদের সঠিকভাবে খাবার হজম না হলে, পেটে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা প্রভৃতি দূর করার জন্য এর রস পেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।তাই আপনার হজমের সমস্যা থাকলে বা বাড়াতে চাইলে প্রতিদিন একটু তেঁতু স্বাদের থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।যার ফলস্বরূপ অতি তাড়াতাড়ি হজম হবে পেটে যাওয়া খাবারগুলো।

2. পেটে এসিডিটির ভাবঃ হঠাৎ বাজে ঠেকুর উঠা অথবা পেটা ফাপা হওয়া কিংবা এসিডিটি হচ্ছে এমন প্রায়ই ঘটে আমাদের।অনেকেরই এরকম এসিডিটি হয়, এজন্য আপনার এই পাতার রস চাইলেই নিয়মিত খেতে পারেন।আবার এর অনেক পাতা এক সাথে করে ভেজেও খাওয়া যাবে।ফলে আপনার দীর্ঘ দিনের পেটের সমস্যার মুক্তি ঘটতে পারে কিছুদিনের মধ্যে।

3. জ্বর বা সর্দি কাশি দূর করেঃ শুকনো কাশ আসা অথবা শরীরে হালকা জ্বর থাকা, দীর্ঘদিন শুষ্ক ও কুশ কুশে কাশির জন্য দুই চা চামচ থানকুনির রস পরিমাণ মতো চিনি মিশিয়ে সাত দিন খাওয়াই যথেষ্ট।দেখবেন সপ্তাহখানের পরেই সব আপনার দেহে ছেড়ে পালিয়ে গেছে।শিউলি গাছের পাতা রস করে তারা সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন কয়েক চামচ থানকুনির রস, এরপর তা খেয়ে নিলেন প্রতিদিন সকালে।দেখবেন হঠাৎ করে শরীর দুর্বল হওয়ার মতো রোগ কিংবা জ্বর আসা আপনার থেকে বিরত থাকবে।তবে চেষ্টা করবেন খালি পেটে এগুলো সকালবেলাতে খাওয়ার।তাহলেই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো উপকার লক্ষ্য করবেন।

4. শরীর ক্ষতস্থান নিরাময় ঘটানোঃ সাপোনিন্স নামের প্রকৃতির দেওয়া এক উপাদান আছে থানকুনির পাতাতে।যার কারণে আমাদের দেহে কোথাও কেটে গেলে, ক্ষত হলে এটা সেই স্থানে রক্ত পড়া কমাতে সহায়তা করে।কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে হাত পায়ে ক্ষতস্থান হলে, সেখানে এই ভেষজ পাতা ছেচে বা থেঁতো করে লাগানো থাকলে দ্রুত রক্তক্ষরণ কমে যাবে।উপরোক্ত প্রাকৃতিক উপাদানটি কেঁটে যাওয়া জায়গায় রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দিবে।

5. মাথার চুল পড়া কমাতেঃ মহিলা বা পুরুষ কিংবা কম বয়সী যেকারোর চুল পড়তে পারে।তাই এর সমাধানও আমাদের জানা থাকলে ভালো হবে নিশ্চয়।দুই দিন পর পর নিয়মিত এই পাতার রস খাওয়ার ফলাফল মাথার চুলে যে স্ক্যাল্প থাকে তাতে পুষ্টি জমতে থাকে।এজন্য চুল পড়তে বাধা পায়।এতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন যার জন্যে চুল পড়া কমে যাবে।

ফডার সংরক্ষণ

6. হঠাৎ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ থানকুনিতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের রক্তে কোলেস্টেরল জমাট দিতে চায় না।যারা প্রেসার অথবা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না, তারা এর রস খেতে পারবেন।এজন্য রক্তচাপ আপনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী থাকবে।

7. আপনার ত্বক ও রূপ সুন্দর করতেঃ মুখে ব্রণ, মেছতা অথবা ত্বকে কালো দাগ থাকলে তা উজ্জ্বল্য করার জন্য ত্বকে প্রতিদিন চাইলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যতীত এর রস ব্যবহার করতে পারবেন।দেহের বা ত্বকের, মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্যে খুব চমৎকারভাবে কর্ম করে থানকুনি।আপনার ত্বকে কোনো প্রকার ক্ষত বা ক্ষতিকর উপাদান জিনিস ছাড়াও সুন্দর করে তুলতে পারেন নিজের ত্বক থানকুনি পাতা দিয়েই।

থানকুনি পাতার উপকার কি?

এখন অপকারিতা জানুনঃ-

জোর করে কোন কিছুই খাওয়ার দরকার নেই।এই পাতার রসটা একটু তেতু প্রকৃতির তাই আপনার মুখে ভালো না লাগলে একটু চিনি সহকারে খাওয়ার চেষ্টা রাখবেন।তাও যদি না পারেন, তবে না খাওয়াই শ্রেয়।আবার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই খাবেন।বেশি খেলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা হতে পারে।আপনার যদি এলার্জির প্রভলেম থাকে, তাহলে খুব সাবধানে খাবেন।প্রথমে টেস্ট করে দেখবেন, এছাড়া অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে খোস পাচরার মতো সমস্যা হয় কিনা পরীক্ষা করে দেখবেন।তারপর খাবেন, নাহলে হঠাৎ করেই ত্বকে ঝামেলা হতে পারে।

থানকুনির পাতার আকার-আকৃতি কেমনঃ

শহরাঞ্চলের অনেকেই এই পাতাটি চিনে থাকবে না।তারা শুধু নামটাই শুনেছে, সরাসরি কখনো দেখেনি থানকুনি গাছ।এর পাতা ছোট ঘাসের মতো বা গুল্ম জাতীয় গাছের পাতার মতো দেখতে।পাতর আকৃতি গোলাকার বা কয়েনের মতো।উইকিপিডিয়ার তথ্যেঃ থানকুনি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম ” Centella asiatica “।আবার ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান পেনিওর্থ।সাধারণত ছোটখাট পুকুর, খালবিল বা অল্প জলাশৎএর পাশে ঘাস পাতা পড়ে থাকে সেইখানে পাওয়া যেতে পারে এই গাছগুলো।একসাথে অনেক গাছে শিকড় ধরে গুচ্ছ আকারে পাতাগুলো থাকে।ভারত, বাংলাদেশসহ নানান দেশে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে এটা।তবে যাদের লিভারে সমস্যা আছে, তারা এর রস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

কিভাবে খাবেন থানকুনি পাতাঃ

নিয়ম কানুন মেনে এর পাতা খেতে হবে, এমন শর্ত কোনো বিজ্ঞরা বেধে দেয়নি।তাই আপনার ইচ্ছা অনুসারে থানকুনি গাছের পাতা খেতে পারবেন।বিভিন্নভাবেই আপনি এই পাতটি খেতে পারেন, চলুন জেনে নিনঃ- পাতা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে কিংবা থেঁতো করে রস বানিয়েও খাওয়া যায়।ভোরবেলা খালি পেটে খেলে এর উপকার বেশি পাবেন।এছাড়া এগুলো পেছিয়ে বড়ি আকারে বানিয়েও খেয়ে থাকেন অনেকে।আর যদি চান ভাত দিয়ে খাবেন, তাহলে ঝট করে ভর্তা করে ফেলুন আর খেয়ে নিন আলু ভর্তার মতো ভাত মিশিয়ে।এর রসে সামান্য মধু যোগ করে থান কেউ কেউ।এছাড়া নতুন রেসিপি তৈরি করে অথবা বড়া বানিয়ে থানকুনি পাতা তৈলে ভেজে খাওয়া যায় অনায়াসে।

তাহলে বন্ধুরা এবার জেনে ফেলেছেন এর উপকারিতা সম্পর্কে।আজ আর কিছু লেখবো না।আগামীতে নতুন একটি বিষয়ে নিয়ে আলোচনায় আনবো।

আদা খাওয়ার ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা