জয় পয়লা বৈশাখ বলার কারণ ব্যাখ্যা কর?

Table of Contents

উদ্দীপকঃ-

(বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়কে প্রধান প্রতিপাদ্য করে এবারের নববর্ষে সুসজ্জিত সাম্পান নিয়ে বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে।)

ক) ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ’- চরণটির রচয়িতা কে?

খ) জয় পয়লা বৈশাখ বলার কারণ ব্যাখ্যা কর।

গ) উদ্দীপকে ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের কোন বিষয়টি চিত্রিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ) ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের আলোকে বর্তমানে শহুরে জীবনে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের একটি বিবরণ দাও।

 

উত্তরঃ-

ক) ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ’ চরণটির রচয়িতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

খ) পয়লা বৈশাখ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সর্বজনীন এক উৎসব হওয়ায় লেখক এর জয় ঘোষণা করেছেন।পয়লা বৈশাখ বাঙালি জাতিসত্তার প্রাণের উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলা বছরের প্রথম দিন অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে এই উৎসব পালন করা হয়। বর্তমানে বাঙালি জাতির প্রাণের এই উৎসবকে কেন্দ্র করে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন ঘটে থাকে। পয়লা বৈশাখের উৎসবের মাধ্যমে সমগ্র জাতি একত্রিত হয়ে মহা আনন্দে মেতে ওঠে, যা অন্য কোনো উৎসবের মাধ্যমে হয়ে উঠে না। তাই লেখক এই পয়লা বৈশাখের জয় ঘোষণা করেছেন। মূলকথাঃ- এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশে সম্প্রীতির মহামিলন হয় বলে লেখক পয়লা বৈশাখের জয় ঘোষণা করেছেন।

 

গ) কালের বিবর্তনে নানা পালাবদলের মাধ্যমে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের বিষয়টি উদ্দীপকে চিত্রিত হয়েছে।আবহমান কাল থেকে বাংলায় পয়লা বৈশাখ উৎসবটি পালিত হয়ে আসছে। একসময় পয়লা বৈশাখ ছিল গ্রাম ও কৃষিকেন্দ্রিক। তবে কালের বিবর্তনে পয়লা বৈশাখে আজ নানামুখী মাত্রা সংযোজিত হয়েছে। নতুন মাত্রার সঙ্গে সঙ্গে পয়লা বৈশাখের আনন্দও বৃদ্ধি পেয়েছে।উদ্দীপকে পয়লা বৈশাখ কেন্দ্রিক একটি শোভাযাত্রা লক্ষ করা যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে এই শোভাযাত্রা হয়ে উঠেছে প্রাণময় ও উচ্ছ্বাসপূর্ণ। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রা পয়লা বৈশাখের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে আজ। বর্তমানে পয়লা বৈশাখ আর মঙ্গল শোভাযাত্রা যেন একই মুদ্রার এপিঠ- ওপিঠ। ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, কালের যাত্রাপথে পয়লা বৈশাখের উদ্যাপন রীতিতে নানা পালাবদল ঘটেছে। পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের পালাবদলের কথাই উদ্দীপকের চিত্রে চিত্রিত হয়েছে। কারণ, এই মঙ্গল শোভাযাত্রা আগে পয়লা বৈশাখের অংশ বা উপাদান ছিল না।মূলকথাঃ- প্রবন্ধের উল্লিখিত পয়লা বৈশাখের পালাবদলের উদ্দীপকে চিত্রিত হয়েছে।

 

ঘ) বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বর্তমানে শহুরে জীবনে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়ে থাকে।কালের যাত্রাপথে সবকিছুতেই পরিবর্তন আসে। পয়লা বৈশাখেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বর্তমানে যেভাবে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়, অতীতে তার অবয়ব এই রকম ছিল না।বর্তমানে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। উদ্দীপকের চিত্রটি তার প্রমাণ, শোভাযাত্রায় হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পয়লা বৈশাখের নতুন সূর্যকে সবাই বরণ করে নেয়।পয়লা বৈশাখকে বরণ করার জন্য ‘ছায়ানট’ প্রতিবছর রমনার বটমূলে বন্দনা সংগীতের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ‘এসো হে বৈশাখ এসো, এসো’-এর মাধ্যমে শুরু হয় পয়লা বৈশাখের বন্দনাগীতি। শহরের বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করা হয়। পান্তা-ইলিশ বর্তমানে পয়লা বৈশাখের অবিচ্ছেদ্য উপাদান। শহরের বিভিন্ন জায়গাতে পান্তা-ইলিশের দোকানও লক্ষ করা যায়। পয়লা বৈশাখে হাজার হাজার তরুণ-তরুণীদের প্রাণের উচ্ছ্বাস শহুরে বদ্ধ জীবনে সজীবতা এনে দেয়। বিভিন্ন জায়গাতে অবশ্য বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনও লক্ষ করা যায়। সভা- সেমিনার, মেলা-প্রদর্শনী, কনসার্ট, খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শহরে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করা হয়।মূলকথাঃ- বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান যেমন- সভা-সেমিনার, মেলা-প্রদর্শন, বিতর্ক, খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শোভাযাত্রা, সংগীতানুষ্ঠান প্রভৃতির মাধ্যমে শহরে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করা হয়।

জয় পয়লা বৈশাখ বলার কারণ ব্যাখ্যা কর?

উদ্দীপকঃ-

ব্যবসায়ীদের কাছে ‘পয়লা বৈশাখ’ অত্যন্ত তাৎপর্যময় উৎসব। পুরনো ঢাকার বিখ্যাত সুতা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘মামুন স্টোর’। মামুন সাহেব প্রতিবছর চৈত্র মাসের শেষ দিন পুরনো বছরের সব হিসাব- এ নিকাশ এবং দেনা-পাওনার পাঠ চুকিয়ে ফেলেন। পয়লা বৈশাখে তিনি নতুন খাতায় হিসাব শুরু করেন। এদিন তিনি তার গ্রাহক ও অন্য – ব্যবসায়ীদের মিষ্টি বিতরণ করেন।

ক) হালখাতা অনুষ্ঠানটি কারা পালন করেন?

খ) ‘পয়লা বৈশাখ’ উৎসব সম্পর্কে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের মনোভাব ন্যক্কারজনক কেন?

গ) উদ্দীপকের ব্যবসায়ী মামুন সাহেবের কার্যক্রম ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে কোন বিষয়টির কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়?

ঘ) ‘পয়লা বৈশাখ’ ব্যবসায়ীদের প্রাণে নতুন উদ্যমের সঞ্চার ঘটায়-উদ্দীপক ও ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিচার কর।

 

উত্তরঃ-

ক) হালখাতা অনুষ্ঠানটি ব্যবসায়ী মহল পালন করে থাকে।

 

খ) পাকিস্তানি ধর্মান্ধ শাসকদের কাছে বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষ পয়লা বৈশাখ ছিল গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো।পাকিস্তানিরা ছিল ধর্মান্ধ ও ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন নয়া উপনিবেশবাদী শাসক। পয়লা বৈশাখের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব নিয়ে তাদের তেমন কোনো ‘উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল না। তাছাড়া এটি তাদের নিজেদের সংস্কৃতির অংশ ছিল না বলে এর প্রতি তাদের মনোভাব ছিল ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন। এ কারণেই পয়লা বৈশাখ সম্পর্কে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের মনোভাব ছিল ন্যক্কারজনক।মূলকথাঃ- পয়লা বৈশাখের উৎসবটি ধর্মনিরপেক্ষ একটি উৎসব ছিল বলে পাকিস্তানি শাসকরা এর প্রতি উদাসীন ছিল, যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।

 

গ) উদ্দীপকের মামুন সাহেবের কার্যক্রম ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের ব্যবসায়ী মহলের ‘হালখাতা ও মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানের’ কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।পয়লা বৈশাখ উৎসবটির রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। ব্যবসায়ীদের কাছে এই দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আগের দিনে ব্যবসায়ীরা বাংলা মাসের হিসাব অনুযায়ী তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করত। পয়লা বৈশাখ যেহেতু নতুন বছরের প্রথম দিন, তাই এই দিনে তারা হালখাতা ও মিষ্টি বিতরণের অনুষ্ঠান করত।পয়লা বৈশাখের সেই ধারা এখনো ব্যবসায়ীরা পালন করতে কার্পণ্যবোধ করেন না। বিশেষ করে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা এদিন ব্যাপক আনন্দ-ফুর্তির মধ্য দিয়ে, ঢোল পিটিয়ে এই উৎসব পালন করে থাকেন। ব্যবসায়ী মামুনও এর ব্যতিক্রম নন। তিনিও পয়লা বৈশাখের দিন নতুন খাতায় হিসাব শুরু করেন। এদিন তিনি গ্রাহক ও অন্যান্য ব্যবসায়ীকে মিষ্টিমুখ করান। এভাবে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের কথা ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে লক্ষ করা যায়। তাই বলা যায়, ব্যবসায়ী মামুন সাহেবের কার্যক্রম ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের হালখাতা ও মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।মূলকথাঃ- ব্যবসায়ী মামুন সাহেবের পয়লা বৈশাখের কার্যক্রম আমাদের ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের হালখাতা ও মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

 

ঘ) পয়লা বৈশাখ বাঙালি জাতির প্রাণে নতুন উদ্যমের সৃষ্টি করে। এই নতুন উদ্যানের ঢেউ ব্যবসায়ীদের মনেও দোলা দিয়ে যায়।পয়লা বৈশাখ বাংলার সুপ্রাচীন গৌরবান্বিত একটি উৎসব। প্রাচীনকালে কৃষির সঙ্গে এর ছিল অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। কৃষিকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরাও এই উৎসব ব্যাপক আনন্দ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করতেন। সেই থেকে ব্যবসায়ীদের কাছে এই উৎসব একটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।পয়লা বৈশাখ ব্যবসায়ীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিন তারা নতুন হিসাবের খাতা খোলেন। পুরনো সব দেনা-পাওনা তারা নববর্ষ শুরুর আগের দিন মিটিয়ে ফেলেন। চৈত্র মাসের শেষ দিন। ব্যবসায়ীরা তাদের পুরনো দেনা-পাওনার হিসাব চুকিয়ে ফেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। তাই নতুন বছর আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।নতুন বছরে ব্যবসায়ীরা নতুনভাবে তাদের ব্যবসা শুরু করেন। তারা সকলেই নতুন বছরে তাদের সমৃদ্ধি কামনা করেন। এ কারণে নতুন বছরকে তারা বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে বরণ করে নেন। এসব কথা বিবেচনা করে বলা যায়, পয়লা বৈশাখ ব্যবসায়ীদের প্রাণে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায়।মূলকথাঃ- নতুন বছরে ব্যবসায়ীরা নিজেদের সমৃদ্ধি কামনা করে নতুনভাবে ব্যবসার হিসাব শুরু করেন বলেই বলা যায়, পয়লা বৈশাখ ব্যবসায়ীদের প্রাণে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায়।

 

উদ্দীপকঃ-

কালের পরিক্রমায় বর্তমানে পয়লা বৈশাখ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। বছরের এই একটা দিনই তারা নিজেদের বাঙালি করার প্রচেষ্টা চালায়। পান্তা-ইলিশ আর মেলায় যোগ দিয়ে তারা ভাবে এটাই প্রকৃত বাঙালিপনা। প্রকৃত অর্থে বাঙালি হতে হবে বাইরে নয় অন্তরে, পয়লা বৈশাখের তাৎপর্যকে প্রতিস্থাপিত করতে হবে অন্তরে।

ক) ‘পয়লা বৈশাখ’ রচনাটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?

খ) সামাজিক প্রকৌশলী বলতে লেখক কাদের বোঝাতে চেয়েছেন?

গ) উদ্দীপকের উচ্চবিত্তদের বাঙালিপনার বিষয়টি ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের কোন বিষয়টিতে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ) ‘প্রকৃত বাঙালি হতে হলে পয়লা বৈশাখকে অন্তরে ধারণ করতে হবে’ -মন্তব্যটির সঙ্গে কি তুমি একমত? ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের আলোকে তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

 

উত্তরঃ-

ক) ‘পয়লা বৈশাখ’ রচনাটি ‘বাংলাদেশের উৎসব: নববর্ষ’ নামক গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।

 

খ) সামাজিক প্রকৌশলী বলতে লেখক নতুন সমাজ বিনির্মাতাদেরকে বুঝিয়েছেন।সাধারণত প্রকৌশলী বলতে প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শীদের বোঝানো হয়। কিন্তু লেখক সামাজিক প্রকৌশলী শব্দটিতে ভিন্ন ব্যঞ্জনাদান করেছেন। নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে আজ আমাদের সমাজের ঐতিহ্যগুলো হারাতে বসেছে। এই ঐতিহ্যগুলো সমাজে যারা প্রতিস্থাপিত করে সমাজ বিনির্মাণে অংশ নেবে, সামাজিক প্রকৌশলী বলতে লেখক তাদেরকেই বুঝিয়েছেন। মূলকথাঃ- সমাজ বিনির্মাণে যারা অংশ নেবে, লেখক সামাজিক প্রকৌশলী বলতে তাদেরকে বুঝিয়েছেন।

 

গ) পয়লা বৈশাখকে আজ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা বুর্জোয়া বিলাস ও ফ্যাশনের একটি বিষয়ে পরিণত করে তোলার চেষ্টা করছে, যা পয়লা বৈশাখের মূল চেতনার পরিপন্থী।পয়লা বৈশাখ একসময় ছিল গ্রামকেন্দ্রিক, তবে কালের পরিক্রমায় এটি আজ শহরকেন্দ্রিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে শহরে যে চাঞ্চল্য দেখা যায়, সেটাকে একেবারে মেকি বলা যায় না। তবে এখানে কৃত্রিমতা নতুন করে ভর করেছে।আজকাল পয়লা বৈশাখে উচ্চবিত্তদের এক ধরনের কার্যক্রম লক্ষ করা যায়। এদিন তারা সম্পূর্ণ বাঙালি সেজে নিজেদের প্রকাশ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের এই মনোভাব সারা বছর লক্ষ করা যায় না। এ থেকে বোঝা যায়, পয়লা বৈশাখকে তারা অন্তরে নয় সাজ-পোশাকে ধারণ করেছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং দুঃখজনক। উচ্চবিত্তদের বাঙালিপনার এই বিষয়টিকেই লেখক ‘নাগরিকের বুর্জোয়া বিলাস ও ফ্যাশন’ নামে অভিহিত করেছেন। তাই বলা যায়, উচ্চবিত্তদের বাঙালিপনার বিষয়টি ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের বুর্জোয়া বিলাস ও ফ্যাশন বিষয়টিতে প্রতিফলিত হয়েছে।মূলকথাঃ- উচ্চবিত্তদের বাঙালিয়ানার বিষয়টি ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের বুর্জোয়া বিলাস ও ফ্যাশন বিষয়টিতে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ) সাজ-পোশাকে নয়, পয়লা বৈশাখের তাৎপর্যকে অন্তরে ধারণ করতে পারলে প্রকৃত বাঙালি হওয়া যাবে।কালের বিবর্তনে পয়লা বৈশাখের কলেবর পাল্টে গেছে। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে আজকাল যেভাবে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়, তা পয়লা বৈশাখের মূলচেতনার পরিপন্থী। উচ্চবিত্তদের পয়লা বৈশাখের উন্মাদনা আজ অনেকাংশেই কৃত্রিম। তারা নিজেদের একদিনের জন্য বাঙালি হিসেবে জাহির করেন।উচ্চবিত্তের পয়লা বৈশাখ সম্পর্কিত ‘বুর্জোয়া বিলাস ও ফ্যাশন’ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পয়লা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। এটি সম্পূর্ণ দেশি একটি উৎসব। দেশীয় কৃষ্টি-কালচারের মাধ্যমেই এই অনুষ্ঠানটি পালন করা উচিত।পয়লা বৈশাখে অনেক উচ্চবিত্ত শুধু পান্তা-ইলিশ আর বাঙালি সাজ-পোশাক পরে বাঙালি সাজেন। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পয়লা বৈশাখে তারা বিদেশি সংস্কৃতিকে ঢুকিয়ে দিয়ে এর ধরনই পাল্টে দিচ্ছেন। তারা ভাবেন এসবের মাধ্যমেই প্রকৃত বাঙালি হওয়া যাবে কিন্তু এসব করে কখনোই বাঙালির মর্যাদা পাওয়া যাবে না। বাঙালি হতে হলে পয়লা বৈশাখকে বুঝতে হবে, তার তাৎপর্যকে হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দিতে হবে। তাই ‘আমাদের প্রকৃত বাঙালি হতে হলে পয়লা বৈশাখকে অন্তরে ধারণ করতে হবে’- এই মন্তব্যের সঙ্গে আমি একমত।মূলকথাঃ- প্রকৃত বাঙালি হতে হলে পয়লা বৈশাখকে অন্তরে ধারণ করতে হবে এই মন্তব্যের সঙ্গে আমি একমত।

 

উদ্দীপকঃ-

বাংলা নববর্ষ এখন আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব। পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার বাঙালিকে এ উৎসব পালন করতে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, এটি পাকাস্তিানি আদেশের পরিপন্থি। সে বক্তব্য ছিল বাঙালির সংস্কৃতির ওপর এক চরম আঘাত। বাঙালি তার সংস্কৃতির ওপর এ আঘাত সহ্য করেনি। তারা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। সোচ্চার হয়ে উঠেছে প্রতিবাদে। এভাবেই পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালি জাতিসত্তা গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় বাংলা নববর্ষ এবং তার উদ্যাপনের আয়োজন।

ক. বাংলা নববর্ষকে এ দেশের নওরোজ বলেছেন কে?

খ. ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালি জাতিসত্তা গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় বাংলা নববর্ষ।’ ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

 

উত্তরঃ-

ক. বাংলা নববর্ষকে এ দেশের নওরোজ বলেছেন আবুল ফজল।

 

গ. বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার সাথে একীভূত, যা উদ্দীপকের সাথে ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের সাদৃশ্যপূর্ণ দিক।”পয়লা বৈশাখ” প্রবন্ধে লেখক এই দিনের মাহাত্ম্যকে বিশ্লেষণ করেছেন। বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক উৎসব। বাঙালির শেকড়ের সাথে পয়লা বৈশাখ গভীরভাবে মিশে আছে। কিন্তু বর্তমানে নববর্ষের আয়োজন অনেক ক্ষেত্রেই শাহরভিত্তিক মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত ও নাগিরকের বুর্জোয়া বিলাস ও ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে, যা কখনই কাম্য নয়। এ উৎসব বাংলা ভাষাভাষী এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী সব মানুষের এক অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধের গ্রোথিত অনুষ্ঠান।উদ্দীপকে বলা হয়েছে, বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। অথচ পাকিস্তান আমলে এ উৎসব পালনেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু বাঙালি তার নিজস্ব সংস্কৃতির ওপর এত বড় আঘাত সহ্য করতে পারেনি। ফলে ধীরে ধীরে বাঙালিরা জাতীয়তাবাদী ও বাঙালি জাতিসত্তার গঠনে সোচ্চার হয়। তাই বলা যায়, বাংলা নববর্ষ এবং ‘পয়লা বৈশাখ’ যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম অনুষ্ঠান, সে বিষয়টিই উদ্দীপক এবং ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে ফুটে উঠেছে, যা পরস্পরের সাদৃশ্য নির্ণয় করে।

 

ঘ) পয়লা বৈশাখ বাঙালি জাতির অস্তিত্বের সাথে গভীরভাবে মিশে আছে বলে প্রবন্ধটির আলোকে প্রতিভাত হয় যে পয়লা বৈশাখ পূ ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালি জাতিসত্তা গঠনের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত।’পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে লেখক বলতে চেয়েছেন, যেহেতু বাংলা নববর্ষে আমাদের জাতীয় চৈতন্যের ধারক, তাই পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের বিষয়টি নির্দিষ্ট শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য নয়, বাংলা ভাষাভাষী এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী সব মানুষের। ধর্মীয় সংকীর্ণতার বৃত্ত অতিক্রম করে বাঙালি চেতনাকে ঊর্ধ্বে রেখে সব বাঙালির সম্মিলিত আন্তরিকতায় পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করতে হবে। এখানে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠক মুখ্য নয়।উদ্দীপকে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানিরা এ দেশের সংস্কৃতির ওপর প্রথম আঘাত হানে। এ ক্ষেত্রে তারা পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে।কিন্তু বাঙালি তাদের প্রাণের উৎসবের ওপর নিষেধাজ্ঞা মেনে হাজার বছরের রাখতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় সোচ্চার ও প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে।পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষার ওপর আঘাত হানার আগেই বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনেও বিরোধিতা করে। কিন্তু বাঙালি তার এই সংস্কৃতির ওপর আঘাত সহ্য করতে পারেনি। তাই পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালি জাতিসত্তা গঠনের প্রক্রিয়ায় সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় বাংলা নববর্ষ এবং তার উদ্যাপনের আয়োজন। ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের লেখক এ উৎসবের ভাবমূর্তি যেন সব সময় অক্ষুণ্ণ থাকে, সেদিকে মনোযোগী হতে বলেছেন। তই উৎসবের আয়োজনে মূলধারা বজায় থাকতে হবে। ধর্মীয় ও পেশাগত সংকীর্ণতা ভেদ করে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করতে সচেষ্ট থাকতে অভিমত দিয়েছেন প্রবন্ধকার।

 

উদ্দীপকঃ-

মিয়ানমারের নির্যাতিত মানুষদের মধ্যে কে হিন্দু কে মুসলিম সে পার্থক্য বাংলাদেশ করেনি। সকলের জন্যই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যেন কবির ভাষায়-

মোরা এক বৃন্তে দুটি ফুল/হিন্দু-মুসলমান

মুসলিম তার নয়নমণি/হিন্দু তার প্রাণ।

ক. ‘শভিনিস্টিক’ কথাটির মানে কী?

খ. ‘কেন্দ্রীয় ভাবটি উভয় ক্ষেত্রেই এক।’ কোন কেন্দ্রীয় ভাবটি?বাক্যটি বুঝিয়ে লেখ।

গ. উদ্দীপকের ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের কোন দিক প্রতিফলিত ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত দিকের কারণেই কী বাংলা নববর্ষ উৎসব আজ আমাদের জাতীয় চৈতন্যের ধারক- প্রবন্ধ অনুসরণে ব্যাখ্যা কর।

 

উত্তরঃ-

ক) ‘শভিনিস্টিক’ কথাটির মানে ‘রুশ রাজনৈতিক মতবাদী’।

খ) কেন্দ্রীয় ভাবটি হলো আনন্দ ও কল্যাণ।পৃথিবীর সব দেশেই নববর্ষ উদ্যাপনের প্রথা প্রচলিত আছে। ইংরেজরা নববর্ষ উদ্যাপন করে ১ জানুয়ারিকে উদ্দেশ্য করে, আর বাঙালিরা পালন করে পয়লা বৈশাখকে মনের মধ্যে রেখে। সবারই উদ্দেশ্য কল্যাণ ও আনন্দ উপভোগ। এই কেন্দ্রীয় ভাবটি ‘উভয় ক্ষেত্রেই এক।

 

গ) উদ্দীপকে ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে অসাম্প্রদায়িক দিক প্রতিফলিত হয়েছে।উদ্দীপকের মিয়ানমার শাসকগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক মানসিকতার দিকটি ফুটে উঠেছে। তারা ভাষা ও ধর্মকে সামনে রেখে মুসলমান ও হিন্দুদের প্রতি নির্যাতন চালাচ্ছে। ফলে তারা নিজেদের জন্মভূমি রাখাইন রাজ্য ছেড়ে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হিন্দু-মুসলিম পার্থক্য করেনি।’পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে বাংলাদেশের জনগণের অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক উৎসব। এ উৎসব মানুষকে ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে তুলে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে। উদ্দীপকে ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের এদিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

 

ঘ) উক্ত দিকের কারণেই বাংলা নববর্ষ উৎসব আজ আমাদের জাতীয় চৈতন্যের ধারক- ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধ অনুসরণে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক উৎসব। এ উৎসব একার হিন্দুর বা মুসলমানের কিংবা বৌদ্ধ- খ্রিষ্টানদের নয়- এ উৎসব সমগ্র বাঙালির। ধর্মীয় সংকীর্ণতার বৃত্ত অতিক্রম করে বাংলা নববর্ষ উৎসব আজ আমাদের জাতীয় চৈতন্যের ধারক হয়ে উঠেছে।উদ্দীপকে মিয়ানমার সরকার ও স্থানীয় বৌদ্ধদের ধর্মীয় সংকীর্ণতার পরিচয় পাওয়া যায়। তারা রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত অন্য ধর্মের লোকদের ওপর চালাচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। নির্যাতিত লোকেরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। কে, মুসলমান, কে হিন্দু তা না দেখে বাংলাদেশ তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ মনে করে, হিন্দু-মুসলিম আমরা একই বৃন্তে দুটি ফুল।উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে যে অসাম্প্রদায়িক মানবিক বোধসম্পন্ন চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়, উদ্দীপকে তার বিপরীত চেতনা দেখা যায়। কাজেই উক্ত দিকের কারণে বাংলা নববর্ষ উৎসব আমাদের জাতীয় চৈতন্যের ধারক এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

পয়লা বৈশাখ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন