কুতুবউদ্দিনকে আইবেক বলা হয় কেন?

প্রশ্ন-

মাহিম খুব ভাগ্যবান। বাল্যকালে তাকে ইসফান সাহেব এতিমখানা থেকে ক্রয় করে নিয়ে আসেন। নিজের সন্তানদের সাথে তাকে সব রকম শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলেন। মাহিম স্বীয় মেধা ও অধ্যবসায়ের বলে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।

ক. কুতুবমিনার কোথায় অবস্থিত?

খ. কুতুবউদ্দিনকে আইবেক বলা হয় কেন?

গ. মাহিমের সাথে দাস বংশের কোন শাসকের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত দাস বংশের উক্ত শাসকের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।

প্রশ্নের উত্তরঃ-

ক) কুতুবমিনার দিল্লিতে অবস্থিত।

খ) কুতুবউদ্দিন জাতিতে তুর্কি এবং তিনি তুর্কিস্থানের অধিবাসী ছিলেন। তুর্কি ভাষায় ‘আইবেক’ শব্দের অর্থ চন্দ্র দেবতা। স্যার ডব্লিউ হেগ এর মতে, চন্দ্রগ্রহণকালে জন্মগ্রহণ করায় সম্ভবত তিনি এ নামে অভিহিত হয়েছেন। ঐতিহাসিক ফিরিশতার মতে, কুতুবউদ্দিনের বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলটি ভাঙা ছিল বলে তাঁকে আইবেক বলা হয়। তবে তাঁর জীবনী পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি তুর্কিস্থানের আইবেক পরিবারের লোক ছিলেন বলে আইবেক নামে পরিচিত হন।

প্রশ্ন-

অটোমান সুলতান বায়েজিদ অত্যন্ত জনপ্রিয় শাসক ছিলেন। তিনি জনকল্যাণকর কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি রাজ্যের বিধবা, এতিম, বয়স্কদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেন। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ধাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেন।

ক. ভারতের ‘তোতা পাখি’ কাকে বলা হয়?

খ. ‘কিতাব-উল-হিন্দ’ পুস্তকটি বর্ণনা দাও।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শাসকের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের শাসকের কার্যক্রমের যে মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকে শাসকের কর্মকাণ্ডের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের শাসকের কর্মকাণ্ডের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যসমূহ ব্যাখ্যা কর।

কুতুবউদ্দিনকে আইবেক বলা হয় কেন?

 উত্তরঃ-

ক) আমীর খসরুকে ভারতের ‘তোতা পাখি’ বলা হয়।

খ) আল বিরুনির সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো কিতাবুল হিন্দ।কিতাবুল হিন্দ প্রাচীনকালের ভারতবর্ষের ইতিহাস জানার জন্য অতি মূলবান একটি গ্রন্থ। আল বিরুনি ভারতবর্ষে অবস্থানকালে এ দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, সমাজব্যবস্থা, সভ্যতা, কৃষি ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করেন। তার এ গবেষণালব্ধ তথ্যাদি কিতাবুল হিন্দে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

গ) উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের দিক থেকে উদ্দীপকে বর্ণিত শাসকের কর্মকাণ্ড সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসকের কর্মকাণ্ডের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কোনো এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম অপরিহার্য। দিল্লি সালতানাতের সুলতানগণ এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ফিরোজ শাহ তুঘলক এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ছিলেন। উদ্দীপকে বর্ণিত অটোমান সুলতান বায়েজিদের গৃহীত পদক্ষেপে সুলতান ফিরোজ শাহের কাজেরই প্রতিফলন রয়েছে।সুলতান বায়েজিদ রাজ্যের বিধবা, এতিম ও বয়স্কদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেন। তিনি একটি দাতব্য চিকিৎসালয়ও স্থাপন করেন। সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকও অনুরূপ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনদরদি শাসক হিসেবে খ্যাত হয়েছিলেন। প্রজাদের জন্য তিনি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তিনি দুস্থ, দরিদ্র ও অনাথদের বিনা মূল্যে চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে ‘দারুস শিফা’ নামক একটি বিখ্যাত দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। এ হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান ছাড়াও ওষুধ সরবরাহ করা হতো। এছাড়া প্রজাদের কল্যাণের জন্য তিনি বেশকিছু জনকল্যাণকর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তিনি দরিদ্র প্রজাদের সাহায্যে ও তাদের কন্যাদের বিবাহদান এবং অনাথ ও বিধবাদের ভরণপোষণের জন্য দেওয়ান-ই-খয়রাত বিভাগ স্থাপন করেন। তিনি বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য চাকরি দপ্তর স্থাপন করেন। তাছাড়াও তিনি প্রজাদের কল্যাণে সরাইখানা এবং নলকূপ স্থাপন করে পানীয় জলের ব্যবস্থা করেন। তার এসব জনদরদি কর্মকাণ্ড ইতিহাসে ‘মাতামহীসুলভ ব্যবস্থা’ নামে পরিচিত। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, জনগণের কল্যাণ নিশ্চিতকরণে উদ্দীপকের সুলতান এবং ফিরোজ শাহ তুঘলক একই ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পাদন করেছেন। যা উদ্দীপকের শাসকের কর্মকাণ্ডের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের সুলতান ফিরোজশাহ তুঘলকের কর্মকাণ্ডের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উভয়ই বিদ্যমান। জনগণের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা প্রত্যেক শাসকেরই কর্তব্য। ফিরোজ শাহ তুঘলক এক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মানবদরদি শাসক হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি প্রজাদের স্বার্থে যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা ছিল প্রকৃতপক্ষে কল্যাণকর। উদ্দীপকের শাসকও জনহিতকর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। তবে কিছু কিছু কর্মকাণ্ডে দুজন শাসকের মধ্যে বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

 

ঘ) উদ্দীপকের অটোমান সুলতান বায়েজিদ রাজ্যের বিধবা, এতিম, বয়স্কদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেন। ফিরোজশাহ তুঘলকও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। সুলতান বায়েজিদ বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও সুলতান ফিরোজশাহ তুঘলক শিক্ষা ক্ষেত্রে সেরকম কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। যেটি উভয় শাসকের মধ্যে বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি করেছে। ফিরোজ শাহ তুঘলক উদ্দীপকের শাসকের থেকে আরো বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য চাকরি দফতর স্থাপন করেন। তিনি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যসুলভ করার উদ্দেশ্যে ৩৬টি শিল্পকারখানা গড়ে তোলেন। ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সাহায্যার্থে দিওয়ান-ই- ইস্তহক প্রতিষ্ঠা করেন। সিংহাসনে আরোহণ করার পূর্ববর্তী সময়ের সুলতানদের দেওয়া ঋণ মওকুফ করে দেন। কৃষির উন্নতির জন্য তিনি বহু সংখ্যক সেচখাল খনন করেন। কৃষি ব্যবস্থায় ও বাণিজ্যে উন্নতি সাধনের জন্য আন্তঃপ্রাদেশিক শুল্ক উঠিয়ে দেন। এর ফলে সাম্রাজ্যের সর্বত্র অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হয়।উপর্যুক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকের শাসকের কর্মকাণ্ডের সাথে ফিরোজশাহ তুঘলকের কর্মকাণ্ডের যেমন সাদৃশ্য রয়েছে তেমনি বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

প্রশ্ন-

রাজা শামসির সিংহাসনে আরোহণ করে সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা, উন্নততর শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং শূন্য অর্থভাণ্ডার পূরণের উদ্দেশ্যে কতিপয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শুভ উদ্দেশ্য ও উচ্চাদর্শ থাকা সত্ত্বেও নিজের ধৈর্য ও মাত্রাবোধের অভাবে শামসিরের জীবন চরম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

ক. তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?

খ. মালিক কাফুর সম্পর্কে ধারণা দাও।

. উদ্দীপকে বর্ণিত শামসিরের পরিকল্পনার সাথে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের কোন দুটি পরিকল্পনার সামঞ্জস্য আছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত পরিকল্পনা ব্যর্থতার কারণ পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ-

ক) তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন গিয়াসউদ্দিন তুঘলক।

খ) মালিক কাফুর ছিলেন আলাউদ্দিনে খলজির দক্ষিণাত্য অভিযানের সেনাপতি।আলাউদ্দিন খলজির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও নির্ভীক সেনাপতি মালিক কাফুর ছিলেন একজন খোঁজা হিন্দু। সুলতান তার গুণাবলিতে মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘মালিক-তাজ-উল-মালিক কাফুরি’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এক হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে ক্রয় করা হয়েছিল বলে তাকে হাজার দিনারি বলা হয়।

গ) উদ্দীপকে বর্ণিত রাজা শামসিরের পরিকল্পনার সাথে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা ও উন্নততর শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দিল্লিতে রাজধানী স্থাপন ও দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির সাদৃশ্য রয়েছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত রাজা শামসির সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা, উন্নতর শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং শূন্য অর্থভাণ্ডার পূরণের উদ্দেশ্যে কতিপয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলকও এমন প্রেক্ষাপটে কিছু উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। রাজধানী স্থানান্তর ও দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি এমনই দুটি পরিকল্পনা।সহজতর নজরদারি, বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহতকরণ ও ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মুহাম্মদ বিন তুঘলক দিল্লি থেকে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন। পরবর্তীকালে রাজধানীর নাম রাখেন দৌলতাবাদ। কিন্তু তার এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। রাজভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি দোয়াবে কর বৃদ্ধি করেন। কারণ দোয়াব ছিল দিল্লি সালতানাতের সর্বাপেক্ষা উর্বর ভূমি। গঙ্গা-যমুনার মধ্যবর্তী এ ভূভাগে পানির অভাব না থাকায় এখানে শস্যের ফলন সর্বদা ভালো হতো। দিল্লির সুলতানরা সুযোগ বুঝে সর্বদা দোয়াবে কর বৃদ্ধি করতেন। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি দোয়াবে উৎপন্ন শস্যের শতকরা ৫০ ভাগ বা অর্ধেক কর ধার্য করেন। ঐতিহাসিকদের মতে, এতেও দোয়াবের রায়তদের কোনো অসুবিধা হতো না, কারণ দোয়াব সত্যিই উর্বর ছিল। তবে তুঘলকের এ পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়। অতিরিক্ত করদানে কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে আর্থিক ক্লেশ বৃদ্ধি এবং সংকট সৃষ্টি হয়। এর ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। উদ্দীপকে উত্ত পরিকল্পনা দুটিরই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

মাংস উৎপাদনকারী গরুর সম্ভাবনা ও সমস্যা