স্বাধীন বাংলাদেশ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন

Table of Contents

স্বাধীন বাংলাদেশ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন

১. রফিক, আশরাফ, রনি, বুলবুল এরা সবাই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের জীবনের পণ ছিল হয় বিজয় না হয় মৃত্যু। এদের মতো শিক্ষার্থীরা ১৯৪৮ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বিভিন্ন দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়। এর মাঝামাঝি তারা অন্য কিছু কল্পনা করতে পারেনি। অন্যদিকে, তাদের সহায়তা করার জন্য ছিল এক বিশাল কার্যক্রম যারা দেশের ভিতরে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনাসহ বিশ্বজনমত গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল।

ক. গণযুদ্ধ কী?

খ. পররাষ্ট্র নীতি বলতে কী বোঝায়?

গ. উদ্দীপকের প্রথম অংশে যে শ্রেণির লোকের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভূমিকা কী ছিল? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের শেষাংশে যাদের কার্যক্রমের উল্লেখ রয়েছে তাদেরকে কি মুক্তিযুদ্ধের প্রাণ বলা যায়? যৌক্তিক বিশ্লেষণ কর।

২. শ্রেণিশিক্ষক একদিন তার ছাত্রদেরকে একজন মহান নেতার গল্প শোনালেন। গল্পে তিনি উল্লেখ করলেন, এ মহান নেতা দীর্ঘদিন কারাগারে কাটিয়েছেন। তিনি তার দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কী সংসদ! কী রাজপথ! এ নেতার কণ্ঠ ছিল সর্বদা সোচ্চার। ঐতিহাসিক এক ভাষণ দিয়ে তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।

ক. কখন মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়?

খ. মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত নেতার সাথে মিল রয়েছে পাঠ্যপুস্তকের এমন একজন নেতার নেতৃত্ব ব্যাখ্যা কর।

ঘ. তুমি কি মনে কর এ নেতার ভূমিকার কারণেই আজ বাংলাদেশ স্বাধীন? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৩. মোঃ শামসুদ্দীন বীর প্রতীক। বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। ১৯৭১ সালে আসামের ইন্দিরানগরে ট্রেনিং নিয়ে ৪নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। তারিনদের স্কুলের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি তার বক্তৃতার সময়ে ধরা গলায় বলেছিলেন, শেখ সাহেবের ভাষণ শোনার পরদিনই সিদ্ধান্ত নেই দেশকে মুক্ত করতে হবে এবং যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

ক. বাংলাদেশ সরকার কত সালে ‘জাতীয় শিশু নীতি’ প্রণয়ন করেছে?

খ. মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।

গ. শামসুদ্দীন সাহেবের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের উক্ত ভাষণটি কীভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত ভাষণটিই ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা- বক্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

৪. স্বৈরশাসক দ্বারা পরিচালিত একটি দেশের জনগণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে মিছিল করছে। মিছিলের অগ্রভাগে রয়েছে খালি গায়ে এক যুবক; যার পিঠে লেখা ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে যুবকটি।

ক. ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিলেন কে?

খ. গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ গণপরিষদের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের কোন ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. গণতন্ত্রের পুনঃযাত্রায় উক্ত ঘটনাটি কি একমাত্র নিয়ামক ছিল? মতামত দাও।

৫. পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি ১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে কতকগুলো দাবি উত্থাপন করেন। শাসকগোষ্ঠীর এই বৈষম্যমূলক আচরণ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমতাবস্থায় পূর্ব বাংলার জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে উক্ত সভাপতি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তিনি বলেন, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

ক. বাংলাদেশ কত সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে?

খ. পাকিস্তান শাসনামলে বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা কীরূপ ছিল?

গ. উদ্দীপকে যে দাবিসমূহের ইঙ্গিত রয়েছে তার প্রথম দুটি দাবি ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ভাষণের গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

৬. টিএসসি অডিটরিয়ামে Stop Genocide প্রামাণ্য চিত্রটি দেখে তানজিনার মনে করুণ আকুতির পাখিরা বাসা বাঁধে। এ প্রামাণ্য চিত্রটিতে তানজিনা দেখেছিল যে, এক রাতে একটি অঞ্চলের নিরীহ মানুষের ওপর পাষণ্ড কুকুরের ন্যায় ঐ অঞ্চলের শাসক শ্রেণির বাহিনী চালিয়েছিল এক ঘৃণ্যতম গণহত্যা। যা পৃথিবীর সকল গণহত্যাকে ম্লান করে দিয়েছিল।তবে উক্ত রাতে ঐ অঞ্চলের এক মহান নেতা ঐ অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল, যা তানজিনার ভগ্ন হৃদয়ে একটু শান্তির ছায়া বয়ে এনে দিয়েছিল।

ক. ইয়াহিয়া খান ‘আইন কাঠামো আদেশ’ (Legal Frame Work Order) জারি করেন কত সালে?

খ. অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোন রাতের গণহত্যার সাথে সামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকে তানজিনার শেষোক্ত অনুভূতিটুকু পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মূল্যায়ন কর।

৭. সাকিব টেপরেকর্ডারে শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণ শুনছিল। হঠাৎ তার চাচা তার কাছে এসে বললেন, এ ভাষণ শুনেই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চের ভাষণের পর আমরা সকল ছাত্রসহ অন্যান্য সকল শ্রেণির মানুষ মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা পেয়েছিলাম।

ক. মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী কে ছিলেন?

খ. মুক্তিযুদ্ধকে গণযুদ্ধ বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

গ. মুক্তিযুদ্ধে সাকিবের চাচার ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “৭ই মার্চের ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা ছিল”- সাকিবের চাচার এ উক্তির সাথে তুমি কি একমত? বিশ্লেষণ কর।

৮. নীলিমা যতবার বঙ্গবন্ধুর সেই অমর ভাষণটি শোনে ততবার তার মনোবল আরও বেশি দৃঢ় হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর দৃঢ়তা ও দেশপ্রেম নিয়ে এ অজেয় ভাষণটি প্রদান করেছিলেন। এ ভাষণটি ছিল অমর একটি ভাষণ, যা পৃথিবীর ইতিহাসে আজও অম্লান হয়ে আছে।

ক. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কোন দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে?

খ. ‘অপারেশন সার্চলাইট’ কী? ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের ভাষণটি কীভাবে আমাদের ‘স্বাধীনতা যুদ্ধকে’ ‘গণযুদ্ধে’ পরিণত করে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের ভাষণটি কেন আজও পৃথিবীর ইতিহাসে অম্লান হয়ে আছে? বিশ্লেষণ কর।

৯. রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা ও নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের হাতে ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা হস্তান্তরের টালবাহানার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্সে এক ঐতিহাসিক জনসভায় ভাষণ দেন। তার এ ভাষণই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে।

ক. রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান নাম কী?

খ. ১৯৭১ সালের ২ ও ৩ মার্চ আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকেছিল কেন?

গ. ৭ মার্চের ভাষণের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্লেষণ কর।

১০. শিক্ষক মনির সাহেব শ্রেণিতে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করছিলেন। শিক্ষার্থীদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এ সরকারের সুদক্ষ পরিচালনার ফলে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

ক. অপারেশন সার্চলাইট এর নীলনকশা কারা তৈরি করেন?

খ. মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারের গঠন কাঠামো বর্ণনা কর।

ঘ. তুমি কি মনে কর, উক্ত সরকারের সুদক্ষ পরিচালনার ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

১১. ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলিল তৈরির জন্য ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। ন্যাপের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত উক্ত কমিটির সদ্বস্য ছিলেন। এই কমিটি মাত্র দশ মাসে এ দলিলটি বাংলাদেশকে উপহার দিতে সক্ষম হয়।

ক. বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে কে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন?

খ. ‘জাতীয় শিশু নীতি-২০১১’ এর ব্যাখ্যা দাও।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দলিলটির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

ঘ. উক্ত দলিলে বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে- বিশ্লেষণ কর? স্বাধীন বাংলাদেশ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন

স্বাধীন বাংলাদেশ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন- যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো, অর্থশূন্য কোষাগার, স্বজন হারানোর বেদনা ও হাহাকার নিয়ে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু সরকারের যাত্রা। এ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধান প্রণয়ন করে তাতে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতিফলন ঘটায়। এ সরকার শিক্ষা, শিল্প, খাদ্য, অর্থনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং মিত্রবাহিনীকে ফেরত পাঠানোসহ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে।

ক. স্বাধীনতার ঘোষণা কখন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়?

খ. স্বাধীনতা যুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা বর্ণনা কর।

গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সংবিধানের পটভূমি ও বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে যে ভূমিকা রেখেছিল তা বিশ্লেষণ কর।

 উত্তরঃ-

ক) ২০১১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়।

খ) সাধারণ মানুষকে যুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।মুক্তিযুদ্ধের মূল শক্তি ছিল সাধারণ জনগণ। তাই যুদ্ধে তাদের নৈতিক ও মানসিক শক্তি ধরে রাখতে এবং সাহস জোগাতে বুদ্ধিজীবীরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান। আবার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করা, গান-কবিতা রচনা ও পাঠ প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেন। যুদ্ধের সময় তাদের বিভিন্ন বক্তৃতা, রচনা, গান, কবিতা | রণক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের আরও দুর্দমনীয় করে তুলেছে।

গ) উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সংবিধানটি হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধান।সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পরিচালনার মূল হাতিয়ার হিসেবে ১৯৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। এ সংবিধানে বাঙালির আশা- আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সংবিধানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য, আদর্শ ও লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। তিনি ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ নামে একটি আদেশ জারি করেন। ১০ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে খসড়া সংবিধান আকারে পেশ করা হয়, যা ৪ নভেম্বর গৃহীত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন তা কার্যকর হয়।১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশ সংবিধান ছিল লিখিত এবং দুষ্পরিবর্তনীয়। এ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে গ্রহণ করা হয়। মানুষের মৌলিক প্রয়োজন, মৌলিক অধিকারের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করে এ সংবিধান। এ সংবিধানে বাংলাদেশকে একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এবং জনগণের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করা হয়।

ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত বঙ্গবন্ধু সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার প্রায় শূন্য অবস্থা থেকে দেশ পুনর্গঠন শুরু করেছিলেন। যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের চারদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ, রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য, রাস্তাঘাট, কলকারখানা সব বিধ্বস্ত। এ অবস্থায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে একটি শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড় করাতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন করে।এছাড়া দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সমৃদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধু সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গঠন, পরিত্যক্ত কারখানাসমূহ জাতীয়করণ এবং প্রাথমিক শিক্ষা সরকারিকরণসহ একটি নতুন শিক্ষা কমিটি গঠন করে। তাছাড়া এ সরকার যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে রিলিফ, রেশনিং প্রথা চালু করে এবং দেশে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তন করে, যা দ্বিতীয় বিপ্লব নামে পরিচিতি পায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার মাত্র দশ মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান জাতিকে উপহার দেয়। শিক্ষা, শিল্প, খাদ্য, অর্থনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সকলের সাথে বন্ধুত্বের নীতিতে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে। এছাড়াও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মজুতদার, কালোবাজারি প্রভৃতি অশুভ শক্তিকে শক্ত হাতে দমন করেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

প্রশ্ন- স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শিল্প-বাণিজ্য, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি মজবুত করেছে। সরকারি বিভিন্ন নীতি ও কৃষক শ্রমিকসহ জনগণের শিক্ষার প্রসার, শিশু-মৃত্যু হ্রাস ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে বলে মত প্রকাশ করেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন।

ক. বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম কে পাঠ করেন?
খ. মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়েছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশ আর কোন কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশ সম্পর্কে ড. অমর্ত্য সেনের মতামতকে মূল্যায়নবকর।

 উত্তরঃ-

ক) চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ. হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেন।

খ) মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা প্রদান ও যুদ্ধাবস্থায় দেশ পরিচালনার জন্যই মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়েছিল।১৯৭০-৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করা ছিল এ সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়া যুদ্ধকালীন দেশের শাসনব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনা করাও এ সরকারের উদ্দেশ্য ছিল।

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত দারিদ্র্য হ্রাস করা ছাড়াও বাংলাদেশ আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।সরকারি বিভিন্ন নীতি ও কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের সম্মিলিত চেষ্টায় বাংলাদেশে গত চল্লিশ বছরে দারিদ্র্যের হার ত্রিশ শতাংশে নেমে এসেছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত এ বিষয়টি ছাড়া বাংলাদেশ সরকার আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে সরকার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি যেমন-কাজের বিনিময়ে খাদ্য, ভিজিএফ, ভিজিডি, টিআর প্রভৃতি পরিচালনা করছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার প্রায় ২০ লক্ষ টন চাল দুঃস্থ, নিরন্ন, প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের সরবরাহ করেছে। এছাড়া পরিবেশ ও দুর্যোগ মোকাবিলা বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম ও পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে সরকার ইতোমধ্যে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছে। শিশুদের সুরক্ষা ও তাদের জীবন বিকাশে সরকার ২০১১ সালে ‘জাতীয় শিশু নীতি-২০১১’ প্রণয়ন করেছে। জবরদস্তিমূলক ভারী ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার এ নীতিতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া মাতৃভাষা বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা পেয়েছে, যা আমাদের দেশ ও জনগণের জন্য বড় অর্জন।

ঘ) বাংলাদেশ সম্পর্কে ড. অমর্ত্য সেনের মতামত যথার্থ।শিক্ষার প্রসার, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে বলে মত প্রকাশ করেছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন। বাংলাদেশ এ তিনটি ক্ষেত্রে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করেছে।গত চার দশকে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ১৮৫ থেকে কমে ৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার হার পাকিস্তান আমলের ১৭ ভাগ থেকে বেড়ে ৬৫ ভাগে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় ‘শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণয়নের ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে বর্তমানে চালু হওয়া সৃজনশীল পদ্ধতির মূল্যায়ন ব্যবস্থা, শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রভৃতি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় পাশের হার বেড়েছে, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমেছে। শ্রেণিতে নারী শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বেড়েছে। এছাড়া একীভূত শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম সফলতা পেয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্যও সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। যেমন- মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান, দুঃস্থ নারীদের সহায়তা প্রকল্প, নারী শিক্ষা বিস্তারে উপবৃত্তি প্রদান ইত্যাদি। এছাড়া নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে ২০১০ সালে প্রণীত হয়েছে ‘পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন।’ নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ আইনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।ড. অমর্ত্য সেন উদ্দীপকে শিক্ষা, শিশুমৃত্যু হার হ্রাস ও নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের বিশেষ অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেছেন। উল্লিখিত তিনটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে তার এ মতামত যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়।

দান সংগঠন সমিতি কেন গঠিত হয়?