সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সামাজিক সচেতনতা-ব্যাখ্যা করো

উদ্দীপকঃ-

=> আরিফুর রহমান একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী। তিনি মনে করেন মানুষের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক অগ্রগতি ও সার্বিক উন্নয়নে বিজ্ঞান সম্মত একটি পেশা সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে থাকে। এর মাধ্যমেই সকল সামাজিক সমস্যার প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি বিক্রমপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, বেকারত্ব, জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ ও দারিদ্র্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

 

প্রশ্ন-

ক. কোন বিপ্লবের ফলস্বরূপ বিশ্বব্যাপী শহরায়ন ও নগরায়ণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে?

খ. সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সামাজিক সচেতনতা-ব্যাখ্যা করো।

গ. আরিফুর রহমানের বক্তব্যে কোন পেশার ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. তুমি কি মনে কর সামাজিক অগ্রগতি ও সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরিফুর রহমানের বক্তব্য যথার্থ? বিশ্লেষণ করো।

 

প্রশ্নের উত্তরঃ-

ক) শিল্প বিপ্লবের ফলস্বরূপ বিশ্বব্যাপী শহরায়ন ও নগরায়ণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

খ) সামাজিক সচেতনতা সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।

সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মানুষের অজ্ঞতা, নিরক্ষরতা, অশিক্ষা, সচেতনতার অভাব সামাজিক উন্নয়নে বড় বাধা। সরকারের বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়। কিন্তু জনগণ অসচেতন হলে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাপক সমস্যা হয়। তাই, সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সামাজিক সচেতনতা।

 

গ) আরিফুর রহমানের বক্তব্যে সমাজকর্ম পেশার ইঙ্গিত রয়েছে।

বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর সাহায্যকারী পেশা হিসেবে স্বীকৃত। আধুনিক সমাজের বিভিন্ন জটিল আর্থ-মনো- সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানে সমাজকর্মের প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। সমাজকর্ম সমাজ ও মানুষের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। উদ্দীপকেও এ পেশার অনুরূপ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।উদ্দীপকের আরিফুরের মতে, সামগ্রিকভাবে মানুষের দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক অগ্রগতি ও সার্বিক উন্নয়নে বিজ্ঞানসম্মত একটি পেশা সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে থাকে। পেশাটির মাধ্যমে সকল সামাজিক সমস্যার প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। আলোচ্য এই পেশাটি সমাজকর্মের সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ। সমাজকর্মের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সংজ্ঞা অনুযায়ী সমাজকর্ম হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর এমন একটি সাহায্যকারী পেশা যা ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির বিভিন্ন সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান ও উন্নয়নে এমনভাবে সহায়তা করে যাতে তারা নিজেদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম হয়। এই সংজ্ঞাতে উল্লিখিত বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের বিষয়টি উদ্দীপকে উল্লিখিত তথ্যের সাথে মিলে যায়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে | আরিফুর রহমান সমাজকর্ম পেশার পরিচয়ই তুলে ধরেছেন।

 

ঘ) সামাজিক অগ্রগতি ও সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরিফুর রহমান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কিছু সামাজিক সমস্যাকে দায়ী করেছেন, যা যৌক্তিক। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন একটি রাষ্ট্রকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যায়। তবে এর কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অতিরিক্ত জনসংখ্যা প্রভৃতি সমস্যা দূর করা উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এই সমস্যাগুলো সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করে।আরিফুর বেকারত্ব, জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ ও দারিদ্র্যকে আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে অন্যতম বাধা বলে মনে করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি মূল সমস্যাগুলোই চিহ্নিত করেছেন। কারণ এই সমস্যা তিনটি থেকে সমাজে আরও অনেক ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয়। এর ফলে সকল ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়। যেমন- জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ একটি দেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। কোনো দেশের ধারণক্ষমতার চেয়ে জনসংখ্যা বেশি হয়ে গেলে সামাজিক নৈরাজ্যসহ নানা ধরনের সমস্যা বেড়ে চলে। আর বেকারত্ব, দারিদ্র্য প্রভৃতির কারণে মাদকাসক্তি, অপরাধ, কিশোর-অপরাধ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ আরও বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হয়। আর এ সকল সমস্যা উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে কেবল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এমন নয়, এর ফলে সার্বিকভাবে আর্থ-সামাজিক অবস্থার অবনমনও ঘটে। জনাব আরিফ এজন্যই তার বক্তব্যে এ বিষয়টি চিহ্নিত করেছেন।

পরিশেষে বলা যায়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আলোচ্য সমস্যাগুলো সমাধানের কোনো বিকল্প নেই।