সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কী?

উদ্দীপকঃ-

=> বাবা-মার অতি আদর আর খারাপ লোকদের প্ররোচনায় মরণ নেশা মাদকের দিকে পা বাড়ায় রাখালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের একমাত্র পুত্র আরিশ। সে ছোটখাট চুরি, ছিনতাই এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল। চেয়ারম্যান সাহেব বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে তাকে ভর্তি করান। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সমাজকর্মী নীলিমা আক্তার আরিশের মনোভাব পর্যবেক্ষণ করে। সে তার সাথে বন্ধুর মতো মেলামেশা করে তাকে সুস্থ করে তোলেন। নীলিমা সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা ও পদ্ধতি প্রয়োগ করে নেশার জগত থেকে আরিশকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে।

প্রশ্ন-

ক. সমাজকল্যাণের সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কোনটি?

খ. সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কী?

গ. সমাজকর্মী নীলিমার কাজে সমাজকর্মের কোন দিকটি প্রস্ফুটিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে- বিশ্লেষণ করো।

 প্রশ্নের উত্তরঃ-

ক) সমাজকল্যাণের সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো সমাজকর্ম।

খ) বর্তমান জটিল ও পরম্পর সম্পর্কযুক্ত বহুমুখী আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধান এবং সামাজিক উন্নতি ও কল্যাণের জন্য সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন জটিল সমস্যার প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজন বিশেষ জ্ঞান, দক্ষতা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন সমাজকর্মী। পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন সমাজকর্মী ছাড়া বর্তমান সমাজের জটিল সমস্যার সমাধান আশা করা যায় না। তাই পেশাগত সমাজকর্মী তৈরির মাধ্যমে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

 

গ) সমাজকর্মী নীলিমার কাজে সমাজকর্মের প্রকৃতিগত দিকটি প্রস্ফুটিত হয়েছে।

সমাজকর্ম আধুনিক বিশ্বের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সাহায্যকারী পেশা। বিভিন্ন জটিল আর্থ-সামাজিক সমস্যার বাস্তবমূখী সমাধান কৌশল উদ্ভাবন করে সমস্যার মূলোৎপাটন এর প্রধান কাজ। উদ্দীপকে নীলিমার কাজে সমাজকর্মের এ স্বতন্ত্র দিকটি প্রতিভাত হয়ে উঠেছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, মাদকাসক্ত এবং অপরাধপ্রবণ আরিশকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নীলিমা যেভাবে কাজ করেছে তা সমাজকর্মের প্রকৃতিকে স্পষ্ট করে তোলে। সে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কলা এবং বিজ্ঞানের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছে। অর্থাৎ সে আরিশের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং তার সাথে বন্ধুর মতো মিলেমিশে কলার বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখেছে। অন্যদিকে, পরিবার, বন্ধুবান্ধব-এর সহায়তা গ্রহণ সমাজকর্মের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে নির্দেশ করে। পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে নীলিমা আরিশের সমস্যা তথা সামাজিক সমস্যার সমাধানে সক্ষম হয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে সমাজকর্ম কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে নীলিমার প্রচেষ্টায় সে বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত মাদকাসক্তি সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণে সমাজকর্ম একটি পৃথক পেশা হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। সমাজকর্ম সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে না। মানসিক সমর্থন দিয়ে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্যের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। উদ্দীপকে এ বিষয়টি লক্ষণীয়।সমস্যা সমাধানে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি যাতে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে সেজন্য সমাজকর্ম প্রচেষ্টা চালায়। মাদকাসক্ত আরিশকে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন করে মানসিক সমর্থনের মাধ্যমে তাকে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন দানের চেষ্টা করেছে সমাজকর্মী নীলিমা। এক্ষেত্রে সে পারিবারিক সদস্যদের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়েছে, যা সমাজকর্মের অনন্য সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য। সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম ব্যক্তিগত, পারিবারিক, দলীয় ও সমষ্টিগত দিকগুলো বিবেচনা করে প্রয়োজন ও সমস্যাকে সামনে রেখে কৌশল গ্রহণ করে। তাছাড়া সমাজকর্ম নিজস্ব পদ্ধতি ও অন্যান্য বিজ্ঞানের জ্ঞানের সহায়তায় একটি কার্যকর সমাধান কৌশল বের করার চেষ্টা করে। সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্যগত এ দিকটিও উদ্দীপকে লক্ষণীয়। সেবাকর্মের জন্য দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি মাথায় রেখে সমাজকর্মী মাদকাসক্ত আরিশের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে যা সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায় যে, আলোচ্য উদ্দীপকটিতে সামাজিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলোই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।