সমাজকর্ম কী ও সমাজকর্ম পেশার লক্ষ্য কী?

উদ্দীপকঃ-

=> জনাব রেজাউল করিম একটি বেসরকারি সংস্থায় সেবা প্রদান করেন। সংস্থাটি বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের মনো-সামাজিক সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে। রেজাউল করিম সমস্যাগ্রস্তকে তার সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করে এমনভাবে সমস্যা সমাধান করে থাকে যাতে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি নিজেই নিজের সমস্যার মোকাবিলা করতে পারে।

ক. সমাজকর্ম কী?

খ. সমাজকর্ম পেশার লক্ষ্য কী?

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত জনাব রেজাউল করিমের পেশার বৈশিষ্ট্যগুলো কেমন? বিস্তারিত আলোচনা কর।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত জনাব রেজাউল করিমের পেশার প্রয়োজনীয়তা আছে কি? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

প্রশ্নের উত্তর:-

ক) সমাজকর্ম হচ্ছে সমস্যা সমাধানের আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক ও সেবামূলক প্রক্রিয়া।

খ) সমাজকর্ম পেশায় লক্ষ্য হলো সমাজজীবনের জটিল সমস্যা দূর করে কাঙ্ক্ষিত ও গঠনমূলক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করা।

সমাজকর্ম সমাজের সব মানুষের ব্যক্তিগত, দলীয় ও সমষ্টিগত সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। এছাড়া মানুষের সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ সাধন করে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে সমাজকর্ম বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। জনগণের মধ্যে তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাজকর্ম কাজ করে।

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব রেজাউল করিমের পেশাটি হচ্ছে সমাজকর্ম।

সমাজকর্ম আধুনিক বিশ্বে একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর সাহায্যকারী পেশা হিসেবে স্বীকৃত। স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য সমাজকর্মকে অন্যান্য পেশা থেকে আলাদা সত্তা দান করেছে।সমাজকর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা নির্ভর সেবাকর্ম অর্থাৎ সেবাদান করার ক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে অবশ্যই সমাজকর্মের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। সমাজকর্ম পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাসী। এজন্য সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী উভয়ের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। সমাজকর্ম বিভিন্ন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেবাকর্ম পরিচালনা করে থাকে। এ লক্ষ্যে সমাজকর্ম প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়ন এ তিনটি ভূমিকায় সেবাদান করে থাকে। সমাজকর্ম পেশার নিজস্ব কিছু মূল্যবোধ ও | ব্যবহারিক নীতিমালা রয়েছে। যেগুলো প্রত্যেক সমাজকর্মীকে মেনে চলতে হয়। আধুনিক সমাজকর্ম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেবাদান ও কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ সেবাদান বা সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সমাজকর্ম তার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করে থাকে। সমাজকর্ম অনুশীলন সমাজকর্মীর সুনির্দিষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে বহু বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করতে হয়। উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব রেজাউল করিম যে বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন সেটি বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের মনো-সামাজিক সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন। তারা সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে সহায়তা করেন যাতে সে নিজেই তার সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয়ে ওঠে। সংস্থাটির এসব বৈশিষ্ট্য সমাজকর্ম পেশাকেই নির্দেশ করে।

ঘ) জনাব রেজাউল করিমের পেশাটি হচ্ছে সমাজকর্ম আধুনিক সমাজের নানা জটিল সমস্যার সমাধান এবং সমাজের সার্বিক কল্যাণে সমাজকর্ম পেশার প্রয়োজনীয়তা আছে।

সমাজকর্ম সমাজের সব শ্রেণির মানুষের ব্যক্তিগত, দলীয় ও সমষ্টি সমস্যাসহ নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের প্রচেষ্টা চালায়। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম পেশা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, প্রক্রিয়া ও কৌশল উদ্ভাবন করে সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধান করতে সচেষ্ট হয়। এছাড়া সমাজকর্ম সকল স্তরের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য চাহিদাভিত্তিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে। সমাজকর্ম মানুষের চাহিদা, প্রয়োজন ও জীবন মানের উন্নয়ন সাপেক্ষে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। সুষ্ঠু সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা ছাড়া সামাজিক জীবনের সার্বিক কল্যাণ অসম্ভব। সমাজকর্ম সমাজ বা রাষ্ট্রের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বাস্তব ভিত্তিক সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন করে। সমাজকর্ম সমাজে বিরাজমান সমস্যাগুলো দূর করে কাঙ্ক্ষিত ও পরিকল্পিত পরিবর্তনের পাশাপাশি সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্তই হলো সামাজিক সচেতনতা। মানুষ যদি সচেতন থাকে তবে পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে জানতে পারে। সমাজকর্ম মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সমস্যামুক্ত সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সব মানুষেরই স্বনির্ভরতা অর্জন অত্যাবশ্যক। এ লক্ষ্যে সমাজকর্ম নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্যের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণকে স্বনির্ভর করতে সাহায্য করে।

পরিশেষে বলা যায়, সমাজের সার্বিক কল্যাণের জন্য সমাজকর্ম পেশার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

উদ্দীপকঃ-

=> রত্না রাজশাহী বিদ্যালয়ের এমনটি একটি বিষয় নিয়ে পড়ছে যা মানবীয় সম্পর্ক বিষয়ক বৈজ্ঞানিক ও জ্ঞান ও দক্ষতা নির্ভর একটি পেশা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। পেশাটি বয়সে নবীন। পেশাটি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে, মানব সম্পদ উন্নয়নে সামাজিক সমস্যার সমাধানে, জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে ব্যবহার হয়ে থাকে। বর্তমানে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই পেশার প্রয়োজনীয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রশ্ন-

 ক. সমাজকর্মের সবেচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞাটি কে প্রদান করেছেন?

খ. সমাজকর্মের ২টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখপূর্বক সংক্ষেপে আলোচনা কর।

গ. উদ্দীপকের রত্না কোন বিষয়টি নিয়ে পড়ছে তার স্বরূপ ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত লাইনটি ব্যাখ্যা কর।

প্রশ্নের উত্তর:-

ক) সমাজকর্মের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন ওয়াল্টার এ ফ্রিডল্যান্ডার।

খ) সমাজকর্মের দুইটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সামাজিক ভূমিকার উন্নয়ন এবং জনকল্যাণ।আর্থ-সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিকসহ বহুমুখী সমস্যার কারণে মানুষ নিজ নিজ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। সমাজকর্ম বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে তার উন্নয়ন সাধন করে। নানা পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগে সমাজকর্ম মূলত জনকল্যাণে কাজ করে। আর্তপীড়িতের সহায়তা চিকিৎসা সেবা, অপরাধী সেবা, মাদকাসক্তি সেবা সমাজকর্মের অন্যতম উদ্দেশ্য হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

গ) উদ্দীপকের রত্না সমাজকর্ম নিয়ে পড়াশোনা করছে।সমাজকর্মের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মানুষের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতা পুনরুদ্ধার, উন্নয়ন এবং সংরক্ষণে সাহায্য করা। সমাজকর্ম প্রতিটি মানুষকে এমনভাবে সাহায্য করে যাতে তারা ব্যক্তিগত, দলগত ও সমষ্টিগতভাবে সকল ধরনের কল্যাণের অধিকারী হতে পারে। দারিদ্র্য বিমোচন, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে সকলকে সহায়তা করার মাধ্যমে ভূমিকা পালন ক্ষমতা উন্নয়নে সমাজকর্ম সাহায্য করে। যার ফলে পরিবর্তনশীল সামাজিক অবস্থার সাথে সমাজের সকল মানুষের সামঞ্জস্য বিধান ঘটে। এ উদ্দেশ্যেরই প্রতিফলন উদ্দীপকে লক্ষণীয়।উদ্দীপকের রত্নার পাঠ্যবিষয়টির প্রয়োজনীয়তা বর্তমান বিশ্বে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবর্তনশীল সামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানের পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে মানুষকে সক্ষম করে তোলার পরিবেশ সৃষ্টি করাই এর লক্ষ্য, যা সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতিফলন। এছাড়াও সমাজকর্মের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তি ও পরিবেশের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় সহায়তা করা। সার্বিকভাবে সমাজকর্ম উদ্দেশ্যগতভাবে সমাজজীবনের জটিল সমস্যা দূর করে পরিকল্পিত উপায়ে কাঙ্ক্ষিত ও গঠনমূলক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করে যা উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ) বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমাজকর্ম বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সমাজকর্ম মূলত সমস্যা সমাধানের বিজ্ঞান। আধুনিক সমাজের জটিল ও বহুমুখী সমস্যা সম্পর্কে জানা, বোঝা এবং সেগুলোর সমাধান, প্রতিরোধ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমাজকর্মের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মানুষের চাহিদা অসীম কিন্তু চাহিদার তুলনায় সম্পদ সীমিত। এক্ষেত্রে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানবীয় সকল প্রকার সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে সমাজকর্মের জ্ঞান বিশেষভাবে উপযোগী।বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন কুপ্রথা, কুসংস্কার, এগুলোর কারণ, প্রকৃতি এবং সমাধান কৌশল সম্পর্কে সমাজকর্ম আমাদের ধারণা দেয়। এছাড়া বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আত্মকর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন, ক্ষুদ্রঋণের কার্যকর ব্যবহার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার, অপরাধ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োগ কার্যকর ফল বয়ে আনে। এছাড়া দিবাযত্ন কেন্দ্র, বেবিহোম, পরিবারকল্যাণ, নারীকল্যাণ প্রভৃতি কর্মসূচিগুলো সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য সমাজকর্মের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, আধুনিক সভ্যতার বিকাশ ও ধারাবাহিকতায় সমাজকর্ম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তাই সমাজ ও মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বাংলাদেশে সমাজকর্মের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।