|

বাংলাদেশের গার্লস ক্যাডেট কলেজ কয়টি অবস্থান ও ভর্তি প্রক্রিয়া

বাংলাদেশের গার্লস ক্যাডেট কলেজ কয়টি অবস্থান ও ভর্তি প্রক্রিয়া

বাংলাদেশের গার্লস ক্যাডেট কলেজ কয়টি অবস্থান ও ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রায়ই অনেকে গুগলে সার্চ করেন। কিন্তু ভালো তথ্য কোথাও খুঁজে পাননা তাদের জন্য এই কন্টেন্ট। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘ক্যাডেট কলেজ’ যেন অনন্য নাম। ক্যাডেট কলেজগুলি প্রকৃতপক্ষে সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এনসিটিবি নির্দেশিত কারিকুলাম অনুসারে উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানের সাথে সাথে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে সেনাবাহিনীতে যোগদানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার কারণে ক্যাডেট কলেজ বাংলাদেশের গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আলাদা।

 

বাংলাদেশে মোট ১২ টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে যার মধ্যে ৩ টি ক্যাডেট কলেজ মেয়েদের জন্য। বাংলাদেশের গার্লস ক্যাডেট কলেজ তিনটি হলো: 

  • জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেট,
  • ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ এবং 
  • ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ।

বাংলাদেশের গার্লস ক্যাডেট কলেজগুলি নারী শিক্ষার্থীদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ একাডেমিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে যা তাদের শারীরিক, নৈতিক ও সামাজিক বিকাশকে উন্নত করে। এই শিক্ষা পরবর্তীতে সুশৃঙ্খল, নিবেদিত ও আত্মত্যাগী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের নেতৃত্বদানের ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করে।

আজকের লেখায় আমরা জানতে চলেছি বাংলাদেশের গার্লস ক্যাডেট কলেজ কয়টি অবস্থান ও ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে। কলেজের তালিকার সাথে সাথে থাকছে কলেজগুলির অবস্থান, গঠন বৈশিষ্ট্য এবং প্রবেশ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত। পাশাপাশি এই লেখায় আরো থাকছে বাংলাদেশের গার্লস ক্যাডেট কলেজগুলোতে ভর্তির প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয়, কীভাবে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া উচিত এবং ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা।  

বাংলাদেশের মেয়েদের ক্যাডেট কলেজের তালিকা

১. জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ

অবস্থান: জয়পুরহাট।

প্রতিষ্ঠা সাল: ২০০৬ সালে জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। 

আয়তন: ৫৭ একর জায়গার নিয়ে অবস্থিত।

প্রবেশ প্রক্রিয়া: লিখিত পরীক্ষা,মৌখিক পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

২. ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ

অবস্থান: ময়মনসিংহ

প্রতিষ্ঠা সাল: ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম গার্লস ক্যাডেট কলেজ হিসেবে ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট  কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠা সাল: ২৩ একর জায়গার ওপর অবস্থিত।

প্রবেশ প্রক্রিয়া: লিখিত পরীক্ষা,মৌখিক পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

৩. ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ

অবস্থান: ফেনী

প্রতিষ্ঠা সাল: ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

আয়তন: কলেজটি ৪৯.৫ একর জায়গার  ওপর অবস্থিত।

 প্রবেশ প্রক্রিয়া: লিখিত পরীক্ষা,মৌখিক পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

মেয়েদের ক্যাডেট কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি

 ভর্তির প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা:

১. প্রার্থীকে অবশ্যই ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে কারণ ক্যাডেট কলেজে ভর্তি শুরু হয় সপ্তম শ্রেণিতে।

২. প্রার্থীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

৩. শারীরিকভাবে সুস্থ ও ফিট থাকতে হবে।

৪. প্রার্থীর বয়স ভর্তি যে বছর হতে চায় সে বছরের পহেলা জানুয়ারিতে এগার থেকে সাড়ে তেরো বছরের হতে হবে।

৫. প্রার্থীর উচ্চতা ন্যুনতম ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি হতে হবে।

 মেয়েদের ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার ধারণা:

১. বছরে একবার ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়

২. বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা এই চারটি বিষয়ের ওপর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত মোট ৩০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এর মধ্যে গণিতে ১০০, ইংরেজিতে ১০০, বাংলায় ৬০ ও সাধারণ জ্ঞানে ৪০ নম্বর। *কলেজ কর্তৃপক্ষ চাইলে এই নম্বরে পরিবর্তন আনতে পারেন।

৩. লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়।

৪. ইংরেজি ও বাংলা দুই মাধ্যমেই পরীক্ষা দেয়া যাবে তবে আবেদনের সময়েই উল্লেখ কর দিতে হবে কোন মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে চায়। 

মেয়েদের ক্যাডেট কলেজ প্রস্তুতি ও পরীক্ষার পদক্ষেপ

ক্যাডেট কলেজগুলির ভিন্নধর্মী শিক্ষাব্যবস্থার কারণে এখানে ভর্তি পরীক্ষাতে প্রতিযোগিতাও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় একটু আলাদা হয়ে থাকে।এখানে মেধার সাথে সাথে শারীরিক যোগ্যতারও একটি ব্যাপার থেকে থাকে। তাই গার্লস ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হতে চাইলে একজন নারী শিক্ষার্থীর প্রস্তুতি ও পদক্ষেপগুলো হওয়া চাই ভিন্নধর্মী। ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নেয়া যায় এবং পদক্ষেপগুলো যেমন হওয়া উচিত:

১. ক্লাস সিক্সের শুরু থেকেই নিয়মিত এবং মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতে হবে।পাশাপাশি ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী  নিজেকে একটু একটু প্রস্তুত করতে হবে।

২. বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষার ব্যাকরণেই ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

৩. গণিতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও বিশ্লেষণের অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে।

৪. সাধারণ জ্ঞানে ভালো করার জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে।

৫. একটি স্বাস্থ্যকর এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ  জীবনব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।

৬. বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমব নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশের গার্লস ক্যাডেট কলেজ তালিকা নিয়ে শেষ কথা 

ক্যাডেট কলেজগুলি শুধু গুণগত একাডেমিক শিক্ষা আর মানসম্মত আবাসন সুবিধা প্রদান করে না বরং একজন শিক্ষার্থীকে কঠোর নিয়মতান্ত্রিক সামরিক পরিবেশে একজন সুযোগ্য নাগরিক ও নেতৃত্বদানকারী হিসেবে গড়ে তুলে। প্রতি বছর হাজারো শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন থাকে ক্যাডেট কলেজের একটি আসন। প্রতি বছর ভালো ফলাফলের শিরোনামে থাকে ক্যাডেট কলেজগুলো। তাই আজকের আর্টিকেলে বাংলাদেশের গার্লস ক্যাডেট কলেজ কয়টি অবস্থান ও ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলার চেষ্টা করেছি।

মনে রাখতে হবে যে ক্যাডেট কলেজ মেধায়,যোগ্যতায়,সাহসে আর আত্মবিশ্বাসে একজন অলরাউন্ডার চায়। 

তাই কোনো নারী শিক্ষার্থী যদি বাংলাদেশের যেকোনো একটি গার্লস ক্যাডেট কলেজে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে চায় তবে তাকে একাধারে হতে হবে মেধাবী, সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, নির্ভিক ও পরিশ্রমী। এসবের সমন্বয় তাকে কর তুলবে সফলতার যোগ্য।