বর্তমানে বাংলাদেশে গবাদি পশুর খাদ্যের অবস্থা

বর্তমানে বাংলাদেশে গবাদি পশুর খাদ্যের অবস্থা

বাংলাদেশে গবাদি পশুর খাদ্যের উৎস (Source of cattle feed in Bangladesh)।

গবাদি পশুর জীবনধারনের জন্য খাদ্য আবশ্যক। যেসমস্ত বস্তু খেলে প্রাণির ক্ষুধা নিবারণ, ক্ষয়পূরণ, তাপ ও শক্তি উৎপাদন ও রোগ প্রতিরোধ সহ অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পাদন হয় তাকেই খাদ্য বলে। গবাদি পশু প্রতিপালনে পাঁচটি প্রধান বিষয় হচ্ছে খাদ্য ও পুষ্টি, জাত, রোগ প্রতিরোধ, বাসস্থান ও ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাতকরণ। গবাদি পশুর খাদ্য প্রধাণত দুই ধরনের, যথা- আঁশযুক্ত ও দানাদার। আঁশযুক্ত খাদ্য গবাদিপশুর পুষ্টির মূল উৎস হিসেবে কাজ করে এবং দানাদার সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

আঁশযুক্ত খাদ্যের উৎসগুলো-

> শস্যের উপজাত (Crop residues)

> অনাবাদকৃত বিভিন্ন ঘাস (Road side Grasses)

> আবাদকৃত ঘাস (Fodder crops)

> চারণভূমির ঘাস (Pasture grass)।

শস্যের উপজাত: উৎপাদিত শস্য মাড়াইয়ের পর আঁশযুক্ত উপজাত গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন ধান, গম, ওট ইত্যাদির খড়; ধান, গম, ভূট্টা ইত্যাদির কুড়া।

অনাবাদকৃত ঘাস: রাস্তার পাশে, অনাবাদি জমিতে, ছোট ছোট পাহাড়ের ঢালে, শস্য ক্ষেতের আইলে ইত্যাদি হতে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস যেমন- বার্সা, দূর্বা।

আবাদকৃত ঘাসঃ যে সমস্ত ঘস আবাদ কৌশল ব্যবহার করে উৎপাদিত হয় তাকে আবাদকৃত ঘাস বা ফডার ক্রপ বলে। যেমন- নেপিয়ার, ভুট্টা, পারা ইত্যাদি।

চারণভূমির ঘাস: কোরো নির্দিষ্ট প্রজাতির অথবা মিশ্র প্রজাতির ঘাস স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে কোনো জমিতে প্রাকৃতিকভাবে অথবা বৈজ্ঞানিক কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপন্ন করা হয় তখন ঐ জমিকে চারণভূমি এবং উৎপাদিত ঘাসকে চারণভূমির ঘাস বলে। যেমন- প্যাঙ্গোলা। বাংলাদেশে সিরাজগঞ্জের বাথান এলাকাকে চারণভূমি আখ্যায়িত করা যায়।

বর্তমানে বাংলাদেশে গবাদি পশুর খাদ্যের অবস্থা

দানাদার খাদ্যের উৎস-

শর্করা: শস্যদানা, ভূষি বা কুড়া জাতীয়।

আমিষের উৎসঃ খৈল জাতীয়, ফিস মিল।

খনিজের উৎস: হাঁড়ের গুড়া, ঝিনুক বা চুনাপাথর পাউডার।

 

 

গবাদি পশুর খাদ্যের উপকরণ (Ingredients of cattle feed)-

 

গবাদি পশুর খাদ্য বিস্তৃত উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হতে পাওে যা পশুদেও নির্দিষ্ট চাহিদা যেমন তাদের বয়স, ওজন, জাত এবং উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার এর উপর ভিত্তি কওে নির্বাচন করা হয়। গবাদি পশুর খাদ্যে পাওয়া কিছু সাধারণ উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ-

১. ভুট্টাঃ কার্বোহাইড্রেট এর একটি প্রধান উৎস যা গবাদি পশুকে শক্তি প্রদান করে।

২. সয়াবিন মিলঃ এটি একটি উচ্চ- প্রোটিনযুক্ত উপাদান যা গবাদি পশুর পেশী বৃদ্ধি এবং বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে ব্যবহৃত হয়।

৩. খড়ঃ এটি প্রোটিন, ফাইবার এবং খনিজ এর উৎস যা হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে।

৪. গমের ভুষিঃ গমের প্রক্রিয়াকরণের পর প্রাপ্ত একটি উপজাত যা উচ্চ ফাইবার এবং শক্তি সরবরাহ করে এবং হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে।

৫. বার্লিঃ কার্বোহাইড্রেট এর আরেকটি উৎস যা গবাদি পশুকে শক্তি জোগায়।

৬. ওটসঃ একটি শস্যদানা যা ফাইবার সমৃদ্ধ যা সহজেই পরিপাক হয়।

৭. ঝুলাগুড়ঃ একটি মিষ্টি উপাদান যা গবাদি পশুর খাদ্যে যুক্ত করা হয় স্বাদ বৃদ্ধির জন্য।

৮. তুলাবীজ মিল: তুলার বীজ প্রক্রিয়াকরণের পর প্রাপ্ত একটি উপজাত যা প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং এটি পেশীর বৃদ্ধি ও বিকাশে সহয়তা করে।

৯. ফিসমিলঃ একটি উচ্চ-প্রোটিন সমৃদ্ধ উপাদান যা গবাদি পশুর পেশির বৃদ্ধি ও বিকাশে সহয়তা করে।

১০. চুনাপাথরঃ ক্যালসিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১১. লবণঃ সোডিয়াম এবং ক্লোরাইডের একটি উৎস যা ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই উপাদানগুলোর নির্দিষ্ট সংমিশ্রণ এবং অনুপাত গবাদি পশুর নির্দিষ্ট চাহিদা এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে এই উপাদানগুলোর গুণমান প্রাণিদের স্বাস্থ্য এবং উৎপাদনশীলতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।

গবাদি পশুর খাদ্যের পুষ্টিগুণ (Nutritive value of cattle feed)-

গবাদির পশুর খাদ্যের পুষ্টির মান তার গঠনের উপর নির্ভর করে। গবাদি পশুর খাদ্যের পুষ্টিগুলো তাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং মানসম্পন্ন মাংস বা দুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। গবাদি পশুর খাদ্যে পাওয়া কিছু মূল পুষ্টি এবং তাদের ভূমিকাগুলোর আলোচনা করা হলো-

১. প্রোটিন: প্রোটিন পশুর পেশী বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও দুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। সয়াবিন মিল, তুলাজাতীয় খাদ্য এবং ফিশমিল হলো প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস যেগুলো অ্যামিনো অ্যাসিডের ভারসাম্য রক্ষা করে দেহের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ও বিকাশ সাধন করে।

২. শর্করা: কার্বোহাইড্রেট গবাদি পশুর শক্তি সরবরাহ কওে, যা পশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কর্ণ, বার্লি এবং ওটস ইত্যাদি গবাদি পশুর খাদ্যে শর্করা বিদ্যমান।

৩. ফাইবারঃ গবাদি পশুর পরিপাক ঠিক ভাবে বজায় রাখার জন্য ফাইবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। আলফা আলফা খড়, গমের ভূষি এবং বিট পাল্প ইত্যাদিতে আঁশ থাকে।

৪. ভিটামিন ও খনিজ পদার্থঃ গবাদি পশুর সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থ্যতার জন্য প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ প্রয়োজন। এগুলো পরিপূরক আকারে গবাদি পশুর খাদ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে হয়। সবুজ ঘাস, চুনাপাথর ইত্যাদিতে ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে।

গবাদিপশুর খাদ্যের জন্য নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তাগুলো গবাদি পশুর বয়স, ওজন, জাত এবং উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই পশুচিকিৎসক বা পশু পুষ্টিবিদদের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

 

 ফডারের পুষ্টিমান কী?

ফডার হলো উদ্ভিদ উপাদান যা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে, ফডার শক্তি, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজের একটি ভালো উৎস। যাইহোক, মাটির গুণমান, জলবায়ু এবং উদ্ভিদের প্রজাতির ভিন্নতার কারণে ফডারের পুষ্টিমান পরিবর্তিত হতে পারে।ফডারের শক্তির পরিমান সাধারণত পরিপাকযোগ্য শক্তি (DE) এবং বিপাকযোগ্য শক্তি (ME) এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিমাপ করা হয়। এই মানগুলো নির্দেশ করে যে, পশু ফডার থেকে কত শক্তি আহরণ করতে পারে এবং বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করতে পারে।ফডারে রয়েছে প্রোটিন যা পশুর পেশি এবং টিস্যু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রোটিনের হজম ক্ষমতার উপর নির্ভর করে ফডারের প্রোটিনের গুণমান পরিবর্তিত হতে পারে। ফডার ফাইবারেরও একটি ভালো উৎস যা প্রাণির স্বাস্থ্যকর হজম ক্রিয়া বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফডারের ফাইবারকে “ক্রুড ফাইবার” (CF) বা নিউট্রাল ডিটাজেন্ট ফাইবার” (NDF) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে।পরিশেষে, ফডারে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এবং খনিজ থাকতে পারে যা গবাদি পশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উদাহারণস্বরূপ, সবুজ, ফডারু হলো ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ই’ এর একটি ভালো উৎস, যেখানে সাইলেজে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম বেশি পাওয়া যায়।সামগ্রিকভাবে, খামারীদের ‘জন্য ফডার একটি পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়, কারণ এটি পশুর স্বাস্থ্য, বৃদ্ধির হার এবং উৎপাদন স্তরকে প্রভাবিত করতে পারে।

 

পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ফডারের নাম-

১. আলফা-আলফা;

২. নেপিয়ার;

৩. বাজরা:

৪. পারা:

৫. জার্মান;

৬. ইপিল ইপিল;

৭. সিগনাল:

৮. কাউপি;

৯. ভুট্টা;

১০. মাসকলাই

১১. খেসারি;

১২. সরগম;

১৩. গিনি:

১৪. জাম্বো:

এগুলো পশুদের খাওয়ানোর জন্য চাষ করা হয়ে থাকে।

দান সংগঠন সমিতি কেন গঠিত হয়?