প্রাবন্ধিক কেন শরাফতের বাড়ির মেয়েদের কূপমণ্ডুক বলেছেন? ব্যাখ্যা কর।

প্রশ্ন- প্রাবন্ধিক কেন শরাফতের বাড়ির মেয়েদের কূপমণ্ডুক বলেছেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ- শরাফতের বাড়ির মেয়েদের জীবনযাপন দেখে প্রাবন্ধিক তাদের কূপমণ্ডুক বলেছেন।প্রাবন্ধিক একবার জামালপুরে তাঁর আত্মীয়ের এক বন্ধুর বাড়ি। বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই বন্ধুর বাড়ির স্ত্রীলোকদের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। তারা আচরণের দিক থেকে শান্তশিষ্ট ও মিষ্টভাষিণী হলেও নিজেদের জীবন সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা কখনই বাড়ির বাইরে যান না। আর এটিই তাদের বংশগৌরব। এমনকি তাদের মেয়েদের বাড়ি এবং আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি বলতে একই স্থানের এপাশ আর ওপাশের ঘর। কিন্তু এমনটা হলেও তারা বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। নিজেদের এই বন্দিজীবন নিয়ে তাদের মনে কোনো আক্ষেপ নেই। শরাফতের বাড়ির মেয়েদের এই জীবনবিমুখ আচরণের কারণেই প্রাবন্ধিক তাদের কূপমণ্ডুক বলেছেন।

 

প্রশ্ন- ‘ইহাই তাঁহাদের বংশগৌরব’- কী? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ- শরাফতের বাড়ির স্ত্রীলোকদের বাইরে না যাওয়া প্রসঙ্গে লোচ্য মন্তব্যটি করা হয়েছে।বিন্ধিক একবার জামালপুরে তাঁর আত্মীয়ের এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে সেই বন্ধুর বাড়ির স্ত্রীলোকদের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। আচরণ ও কথায় অত্যন্ত মিষ্ট ও মনোমুগ্ধকর হলেও তাদের একটি বিষয়ে প্রাবন্ধিক অত্যন্ত অবাক হন। প্রাবন্ধিক সেই স্ত্রীলোকদের যখন তাঁর বাসায় বেড়াতে যাওয়ার অনুরোধ করেন, তখন তাদের মধ্য থেকে একজন জানান যে, তারা কখনই বাড়ি থেকে বের হন না। এটিই তাদের বংশগৌরব। এমনকি তারা কোনোদিন কোনো যানবাহনে পর্যন্ত আরোহণ করেননি। একজন মানুষ জন্ম হওয়ার পর থেকে কখনই বাড়ির বাইরে যায়নি, এমন বিষয় প্রাবন্ধিকের কাছে অদ্ভুত মনে হয়।

 

প্রশ্ন- ‘আমাদের সওয়ারীর দরকার হয় না কেন, তাহা এখন বুঝিলে?’- বুঝিয়ে লেখ।

উত্তরঃ- প্রাবন্ধিকের আত্মীয়ের এক বন্ধুর বাড়ির মহিলাদের জীবনযাপন প্রকাশ পেয়েছে আলোচ্য উক্তিতে।প্রাবন্ধিক জামালপুরে আত্মীয়ের এক বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। সেই বাড়ির স্ত্রীলোকেরা কখনো বাড়ির বাইরে যান না। এমনকি তারা কোনো যানবাহনে পর্যন্ত আরোহণ করেননি। প্রাবন্ধিক অবাক হয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে সেই বাড়ির গৃহকর্তার বোন জমিলা প্রাবন্ধিককে জানান, এ পাড়ায় কেবল তাদেরই গোষ্ঠীর বাড়ি পাশাপাশি রয়েছে। একথা বলে তিনি প্রাবন্ধিককে পাশের একটি ঘরে নিয়ে যান এবং বলেন সেটি তার মেয়ের বাড়ি। তারপর আর একটি অপ্রশস্ত গলির মধ্য দিয়ে ঘুরে ফিরে নিয়ে গিয়ে অনেক ঘর দেখান। এসময় তিনি প্রাবন্ধিককে বলেন, এক প্রান্তে তার নিজের বাড়ি এবং অন্য প্রান্তে তার ভাইয়ের বাড়ি। যেহেতু তাদের সব আত্মীয়স্বজনের বাড়ি পাশাপাশি, এ কারণেই তাদের সওয়ারির প্রয়োজন হয় না। আলোচ্য উক্তিতে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।

 

প্রশ্ন- ‘তাঁহাদের অভাবে বড় আমলা বা নায়েবটি বাড়ির মালিক’- ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ- নারীদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে সমাজে তাদের অবস্থানের কথা প্রকাশ করতে উক্তিটি করা হয়েছে।’গৃহ’ প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে ‘মহম্মদীয় আইন’ অনুসারে মেয়েরা পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হয়ে থাকে। এমনকি কখনো কখনো বাড়ির মালিকও হয় অনেকে। কিন্তু এরপরেও বাড়ির প্রকৃত কর্তা কিন্তু সেই নারী হয় না। প্রকৃত কর্তা হয় সেই নারীর স্বামী, পুত্র, জামাতা অথবা দেবর। আর যদি তারা কেউ না থাকে তাহলে বড় কোনো আমলা বা নায়েবই হয় সেই বাড়ির মালিক। প্রকৃতপক্ষে ‘মহম্মদীয় আইন’ অনুযায়ী মালিক হওয়ার কথা সেই নারীর যে কিনা ঐ সম্পত্তির উত্তরাধিকার। কিন্তু তা না হয়ে বিষয়টি বিবর্তিত হয়ে যা দাঁড়ায় সে প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।

 

প্রশ্ন- কপালে আগুন লাগার কথা কেন বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ- সমাজে নারীর চারপাশ থেকে কোণঠাসা হওয়া বোঝাতে কপালে আগুন লাগার কথা বলা হয়েছে।মানুষের জীবনে যখন সমস্যা আসে তখন সব জায়গা থেকেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। হয়তো কারও বাড়িতে আগুন লেগেছে, সেখান থেকে বাঁচার জন্য সে বনে গেছে। এবার বনেও আগুন লাগল, তাহলে আর কোথায় যাওয়া যাবে। তখন মনে হয় যেন কপালেই আগুন লেগেছে, যার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। মূলত নারীর জীবন সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। বিধবা হওয়ার পরে স্বামীগৃহে স্ত্রীর জায়গা হয় না। তারপর সে পিতা, ভাই বা দেবরের আশ্রয়ে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানেও সঠিক আশ্রয় বা শান্তি সে পায় না। তখন নিজের কপালকে দোষ দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। নারীজীবনের এই দুর্গতিকে কপালে আগুন লাগার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

 

প্রশ্ন- সকলেরই গৃহ আছে, নাই কেবল আমাদের- বুঝিয়ে লেখ।

উত্তরঃ- নারীদের আশ্রয়হীনতা ও অসহায়ত্ব বোঝাতে উল্লিখিত উক্তিটি করা হয়েছে।এ পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষই নিজের আশ্রয় তৈরি করে নেয়। অর্থাৎ প্রত্যেকেরই গৃহ আছে। জীবজন্তু, পশুপাখি সবারই গৃহ আছে। কিন্তু সমাজের অসহায় ও বঞ্চিত নারীদের কোনো গৃহ নেই। কারণ তারা সবসময় কারও না কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। তাদের সবসময়ই অন্যের অধীন হয়ে থাকতে হয়। যার ফলে যথার্থ গৃহসুখ বা গৃহ-আনন্দ উপভোগ তারা কখনই করতে পারে না। কারও বাবা, কারও স্বামী, কারও আবার ভাই বা দেবর তাদের নিজেদের নিয়মে গৃহ এবং তাদের পরিচালনা করতে থাকে। এজন্য পরিপূর্ণ গৃহের স্বাদ এই নারীরা কখনই পায় না। প্রাবন্ধিক অসহায় ও বঞ্চিত নারীদের গৃহসুখ সম্পর্কে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।