পঞ্চদৈত্য ও সামাজিক নীতি কী?

Table of Contents

উদ্দীপকঃ-

=> মাদকাসন্তি একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। বাংলাদেশে এর ব্যাপক প্রকোপ লক্ষণীয়। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সবক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর প্রেক্ষিতে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ক. সমাজকর্ম কী ধরনের পেশা?

খ. পঞ্চদৈত্য বলতে কী বোঝ?

গ. একজন মাদকাসন্ত ব্যক্তি সুষ্ঠু সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম হয় না-ব্যাখ্যা করো।

ঘ. সমাজকর্মের ত্রিবিধ ভূমিকা মাদকাসন্ত ব্যক্তিদের উন্নত জীবনমান বিধানে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে- বিশ্লেষণ করো।

 

 প্রশ্নের উত্তর:-

ক) সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর একটি সাহায্যকারী পেশা।

খ) পঞ্চদৈত্য বলতে ১৯৪২ সালে পেশকৃত বিভারিজ রিপোর্টে উল্লিখিত পাঁচটি সমস্যা- অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, মলিনতা ও অলসতাকে বোঝায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধজনিত আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা মোকাবিলার লক্ষ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ স্যার উইলিয়াম বিভারিজ একটি সামাজিক নিরাপত্তা রিপোর্ট পেশ করেন। এই রিপোর্টে তিনি পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করেন। তৎকালীন দারিদ্র্যপীড়িত ইংল্যান্ডের সমাজজীবনকে এই পাঁচটি সমস্যা অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে রেখেছিল। এই সমস্যাগুলোই পঞ্চদৈত্য নামে পরিচিতি পায়।

 

গ) একজন মাদকাসন্ত ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হওয়ার কারণে সুষ্ঠু সামাজিক ভূমিকা পালন করতে পারে না।নিয়মিত গ্রহণের ফলে ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে মাদকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে তার শরীরে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, স্মৃতিশক্তি লোপ, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি নানা রোগের উপসর্গ দেখা যায়। এছাড়া দীর্ঘদিন মাদক গ্রহণের ফলে ব্যক্তি স্নায়ুবিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। যা তার কর্মক্ষমতা হ্রাস করে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার পরিবার ও সমাজ। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মাদকাসন্ত হয়ে পড়লে সে পরিবার আর্থ- সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এছাড়া একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি সামাজিক রীতি মেনে চলতে পারে না। উদ্দীপকে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সবক্ষেত্রে মাদকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণেই মাদকাসন্ত ব্যক্তি সুষ্ঠুভাবে তার সামাজিক ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়।

 

ঘ) সমাজকর্মের ত্রিবিধ ভূমিকা মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে- বক্তব্যটি সম্পূর্ণ সঠিক।

ত্রিবিধ ভূমিকা বলতে একজন সমাজকর্মীর প্রতিকারমূলক, প্রতিরোধমূলক এবং উন্নয়নমূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াকে বোঝায়। সাহায্যকারী এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পেশা হিসেবে সমাজকর্ম তিনটি দৃষ্টিভঙ্গিতে সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালায়। প্রথমত প্রতিকারমূলক অর্থাৎ সমস্যার উৎপত্তি বা কারণ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে সমস্যা পুনরায় সৃষ্টি হতে না পারে। অন্যদিকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হলো সমস্যাকে সরাসরি মোকাবিলা করা এবং সে অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা। আর উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা হলো পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো। মাদকাসক্তি ব্যক্তিদের উন্নত জীবনমান বিধানে এ ভূমিকা একটি কার্যকর পদক্ষেপ।মাদকাসক্ত সমস্যা প্রতিকারে পরিবারের ভূমিকা অন্যতম। এক্ষেত্রে একজন সমাজকর্মী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়া মাদকাসক্ত সমস্যা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে একজন সমাজকর্মী জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারে। এজন্য বিভিন্ন সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনে মাদকবিরোধী অনুষ্ঠান প্রচার, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও পথ নাটক ইত্যাদি মাধ্যমে জনগণকে মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতন করে তোলা যায়। মাদকাসক্তি সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সংশোধনের জন্য হাসপাতালে বা সংশোধাগারে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির আচরণ সংশোধনের চেষ্টা করা হয়। উদ্দীপকে মাদকাসক্ত সমস্যার ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে বিভিন্ন মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথাও উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সমাজকর্মের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, সমাজ থেকে মাদকাসক্তি সমস্যা দূর করতে সমাজকর্মের ত্রিবিধ ভূমিকা অপরিহার্য।

 

উদ্দীপকঃ-

=> সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দারিদ্র্য-হ্রাসকরণে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এক্ষেত্রে সরকারী বিভিন্ন নীতি, পরিকল্পনা কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গবেষণা পরিচালনাসহ দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

ক. প্রেক্ষিত পরিকল্পনা কত বছর মেয়াদী?

খ. সামাজিক নীতি কী?

গ. উদ্দীপকের দারিদ্র্য হ্রাসকরণে একজন সমাজকর্মী কীভাবে সাহায্য করতে পারেন? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকের দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীর বহুমুখী ভূমিকা সহায়ক ভূমিকা পালন করে -বিশ্লেষণ করো।

 

 প্রশ্নের উত্তর:-

ক) প্রেক্ষিত পরিকল্পনা মেয়াদ ১০ থেকে ২০ বছর হতে পারে।

খ) সামাজিক নীতি (Social Policy) হলো সেসব প্রতিষ্ঠিত আইন, প্রশাসনিক বিধান ও সংস্থা পরিচালনার মূলনীতি, কার্যপ্রক্রিয়া ও কার্যসম্পাদনের উপায় যা জনগণের সামাজিক কল্যাণকে প্রভাবিত করে। সরকার বা এর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান জনগণের সেবা ও উপার্জনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির জন্য যে কর্মপন্থা গ্রহণ করে সেগুলোকে সামাজিক নীতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলোর মূল উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের সর্বাধিক আর্থ-সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিরসনে সামাজিক নীতিগুলো আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমন- শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্যনীতি, জনসংখ্যানীতি ইত্যাদি।

গ) উদ্দীপকের দারিদ্র্য হ্রাসকরণে একজন সমাজকর্মী তার পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সাহায্য করতে পারেন। দারিদ্র্য একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এটি সমাজে আরো নানা সমস্যা সৃষ্টির পেছনে দায়ী। এ কারণে দারিদ্র্য হ্রাস করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। উদ্দীপকে দারিদ্র্য হ্রাসকরণে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা বলা হয়েছে।

এক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দারিদ্র্য হ্রাস করার ক্ষেত্রে একজন সমাজকর্মীর ভূমিকাও তাৎপর্যপূর্ণ। এক্ষেত্রে একজন সমাজকর্মী কৃষির উন্নয়ন এবং শিল্পের বিকাশ ঘটানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। অধিক জনসংখ্যা আমাদের দেশের দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রেখে দারিদ্র্য হ্রাস করার জন্য সমাজকর্মী সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাথে কাজ করবেন। দারিদ্র্য হ্রাসকরণের অন্যতম উপায় হলো দেশের জনগণকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলা। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আত্মনির্ভরশীল হতে সাধায্য করবেন। এছাড়াও অবহেলিত; দরিদ্র নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একজন সমাজকর্মী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তাই বলা যায়, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে একজন সমাজকর্মী দারিদ্রদ্র্য হ্রাসকরণে ভূমিকা রাখবেন।

 

ঘ) দারিদ্র্য দূরীকরণে সমাজকর্মীর বহুমুখী পদক্ষেপ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

দারিদ্র্য সমস্যা মোকাবিলা ছাড়া একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হয় না। এ জন্য প্রয়োজন যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ ও তার সঠিক বাস্তবায়ন। এক্ষেত্রেই দারিদ্র্য দূরীকরণে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমাজকর্মী ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে যেসব উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে সমাজকর্মী সে সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলেন। কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা প্রদান করেন। সমাজকর্মীরা দারিদ্র্যের কারণ, ধরন ও প্রতিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন। এর ফলে দারিদ্র্য দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। দারিদ্র্যের অন্যতম মূল কারণ হলো অশিক্ষা। তাই নিরক্ষর ও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে সমাজকর্মী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা, পরিবার পরিকল্পনা সুযোগ-সুবিধা এবং পর্যাপ্ত সেবা কার্যক্রমের বিস্তারের ক্ষেত্রে সমাজকর্মী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করেন। দরিদ্র পরিবারের মহিলাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সমাজকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে গৃহীত নীতি ও পরিকল্পনাসমূহ যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সমাজকর্মী সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন। উদ্দীপকে দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারি নীতি ও পরিকল্পনার গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দারিদ্র্য দূরীকরণে গবেষণা পরিচালনাসহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এসকল কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে একজন সমাজকর্মী তার পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে পারেন। সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজকর্মী দারিদ্র্য দূরীকরণে বহুমুখী ভূমিকা পালন করেন।