তুলা গাছের উপর পোকার আক্রমণ, রোগের লক্ষণ ও দমন ব্যবস্থা

তুলা গাছের উপর পোকার আক্রমণ, রোগের লক্ষণ ও দমন ব্যবস্থাঃ-

 

জ্যাসিড পোকাঃ-

তুলা গাছের বয়স যখন ২ থেকে ৩ সপ্তাহ হয় তখন থেকে জ্যাসিড বা শোষক পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এ মারাত্মক পোকার আকৃতি ছোট, দেখতে অনেকটা মাছির মতো। এটি সবুজ অথবা ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে। এ পোকা পাতার রস চুষে খায়। এতে পাতার কিনারা কুঁকড়ে যায় ও আস্তে আস্তে তামাটে রং ধারণ করে। প্রাথমিক অবস্থায় এ পোকা দমন করা না হলে ফসলের ভীষণ ক্ষতি হয়ে থাকে এমনকি আদৌ কোন ফলন নাও হতে পারে।

দমন ব্যবস্থাঃ-

১. তুলার রোগ প্রতিরোধী জাত (যেমন সিবি-৪) চাষ করা।

২. আলোর ফাঁদ ব্যবহার করা।

৩. হাত জাল ব্যবহার করা।

৪. তুলা ক্ষেতের আশেপাশে মেস্তা পাট আবাদ করা উচিত নয়।

৫. আগাম তুলা বপন করা যেতে পারে।

৬. অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করা।

 

বোল-ওয়ার্ম (Ballworm):-

এর ক্ষতির লক্ষণঃ-

বোল-ওয়ার্ম বা গুটি পোকা তুলা ফসলের সবচেয়ে বড় শত্রু। তুলা গাছের বয়স যখন ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ হয় তখন এ পোকার ক্রীড়া গাছের ডগা কুঁড়ি, ফুল এবং কচি বোল ছিদ্র করে দেয়। এতে গাছের ডগা ঢলে পড়ে এবং আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়। পরে কুঁড়ি, ফুল এবং বোল ঝরে যায়। এর ফলে তুলার ফলন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।

এই পোকার দমন ব্যবস্থাঃ-

১. জমি চাষ দিয়ে রোদে শুকাতে হবে। এতে শুককীট মারা যায় ও পাখি খায়।

২. আক্রান্ত ডগা, কুঁড়ি, ফুল বা বোল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

৩. আশেপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখতে হবে।

৪. মেস্তা, ঢেঁড়স, ভুট্টা প্রভৃতি তুলার জমির আশেপাশে বপন করা যাবে না।

৫. কীড়া সংগ্রহ করে মারতে হবে।

৬. অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

জাব পোকাঃ-

এর লক্ষণঃ-

১. তুলা গাছের জীবনকালের যে কোন পর্যায়ে এ পোকার আক্রমণ হতে পারে।

২. এই পোকা কাণ্ড ও পাতার রস চুষে খায়।

৩. এটির জন্য পাতা কুকড়ে যায় ও বৃদ্ধি বন্ধ হয়।

৪. পাতা বিবর্ণ হয় ও ফলন কমে।

এর দমন ব্যবস্থাঃ-

১. আগাম বপন করা ও পোকা প্রতিরোধী জাত চাষ করা।

২. ডোরে হাই ছিটালে দমন হয়।

৩. লেডিবার্ড বিটল পোকা চাষ করেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৪. অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করা।

লাল গান্ধি পোকা (Red bug):-

এই পোকার ক্ষতির লক্ষণঃ-

১. পূর্ণ বয়স্ক পোকা ও কীড়া গাছের পাতা, মূল হতে রস চুষে খায়।

২. ছত্রাক রোগ ছড়িয়ে গুটি আক্রান্ত করে।

৩. বীজ তুলার রঙ হলুদ হয়। বীজ নষ্ট হয়।

দমন ব্যবস্থাঃ-

১. ডিমের গাদা সংগ্রহ করে নষ্ট করা।

২. কীড়া মেরে ফেলা।

৩. ডালাপালা পুঁতে পাখি বসতে দেয়া।

৪. অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করা।

৫. তুলা গাছ ঝাঁকুনি দিয়ে পোকা তাড়িয়ে দেয়া।

 

বিভিন্ন পোকার আক্রমণে তুলার রোগ ও দমন ব্যবস্থাঃ

 

তুলার বিভিন্ন রোগঃ-

তুলা বিভিন্ন ধরনের রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। যেমনঃ- পাতার কোনাচে দাগ রোগ, কনোজ রোগ, গোড়া পচা রোগ, ঢলে পড়া রোগ, পাতা ঝলসানো, শিকড় গিট রোগ ইত্যাদি।

 

ক) পাতার কোণাচে দাগ রোগ (Angular leaf spot) :-

রোগের কারণ:- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে হয়।

এর লক্ষণ:-

১. পাতায় ছোট ছোট পানি ভেজার মত দাগ পড়ে।

২ পড়া দাগ বড় ও একত্র হয়ে বড় কোনাচে হয়ে যায়।

৩. পাতা মারা যায় ও ঝরে পড়ে।

৪.পাতার বোঁটা ও শিরায় দাগ পড়ে।

৫. ফসলের উপর গোলাকার আঁকাবাঁকা দাগ হয়।

দমন পদ্ধতিঃ-

১. রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে।

২.বীজ শোধন করে বীজ বপন করা।

৩.আক্রান্ত অংশ ছিঁড়ে পড়ে ফেলতে হবে।

৪. রোগ-ব্যাধিমুক্ত ফসল উৎপাদন করা।