কবি নিজেকে “অভিশাপ রথের সারথি” বলে অভিহিত করেছেন কেন? ব্যাখ্যা দাও?

উদ্দীপকঃ-

=> যাকে অপদার্থ, অকর্মণ্য বলে উপহাস করা হচ্ছে, তাকে যদি কেউ সাহস দেয়, এগিয়ে যাবার পরামর্শ এবং সহযোগিতার হাত বাড়ায়, তবে সেই মানুষটির মানসিক ও আত্মিক বিবর্তন ঘটবে। এতে অলস পরিশ্রমী হতে পারে, অপ্রতিভ সপ্রতিভ হবে, ভীরু সাহসী হবে, মূর্খ বিদ্বান হবে, দুর্বল বলবান হতে পারে। এর অন্যতম কারণ, সেই মানুষটির অন্তর্নিহিত সত্যের বিকাশ।

ক. কুর্নিশ শব্দের অর্থ কী?

খ. কবি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন কেন?

গ. উদ্দীপকের ভাবনা ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সঙ্গে কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

ঘ. “আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে”- উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিচার কর।

 

প্রশ্নের উত্তর:-

 

ক) ‘কুর্নিশ’ শব্দের অর্থ অভিবাদন।

 

খ) সমাজের অনিয়ম ভেঙে ফেলতে প্রাবন্ধিকের যে অবস্থান তার প্রেক্ষিতে কবি নিজেকে ‘অভিশাপ-রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন।সমাজের প্রচলিত, পুরনো নিয়মকে ভেঙে নতুনকে প্রতিষ্ঠা করা সহজ কাজ নয়। এতে প্রতিনিয়ত সমাজরক্ষকদের অত্যাচার- নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়, অভিশাপ পেতে হয়। এসব জেনেও নজরুল তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সব অন্যায়, অবিচার আর অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন এবং নিজেই রথচালকের আসনে বসে “অভিশাপ-রথের সারথি” হয়েছেন।

সারকথা: তিনি সমাজের সকল অনিয়ম ভাঙতে চান বলে নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি; বলে অভিহিত করেছেন।

 

গ) উদ্দীপকের ভাবনা ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সঙ্গে সত্যের পথে চলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছানোর ভাবটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সকলের অন্তরেই এমন কিছু আছে যেটা মিথ্যা সইতে পারে না। তা নিজেরই হোক আর অন্যেরই হোক। কেউ যদি অন্তরে মিথ্যা নিয়ে এবং ফাঁকি দিয়ে কাজে নামে তবে ঐ কাজেও মস্ত ফাঁকি থেকে যায়। আর এই ফাঁকি নিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছনো যায় না।উদ্দীপকের লেখক দেখিয়েছেন যে, কাউকে উপহাস না করে সাহস দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে মানুষের মানসিক ও আত্মিক বিবর্তন ঘটানো যায়। আর মানসিক ও আত্মিক বিবর্তন ঘটলে মানুষ যেকোনো অসাধ্যকে সাধন করা যায়। কেননা তার অন্তরের মধ্যে সত্যের বিকাশ লুকায়িত থাকে। উদ্দীপকের এই ভাবনাটি ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের লেখকের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। লেখক বলেছেন কেউ যদি সত্যকে একবার চিনতে পারে তাহলে তার মধ্যে আর মিথ্যার ভয় থাকবে না। তখনই প্রাণের সঠিক ডাক শুনতে পাবেন এবং কাঙ্ঘিত লক্ষে পৌঁছাতে পারবেন। উদ্দীপকের লেখক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের মধ্যে এই দিক থেকে সামঞ্জস্য রয়েছে।

সারকথা: উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধ উভয় জায়গায় সত্য পথে চলার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।

 

ঘ) “আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে”- উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ।

মানুষের আত্মশক্তিই শ্রেষ্ঠ শক্তি। যে ব্যক্তি আপন শক্তিকে, আপন সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে তাকে আর অন্য কারও উপর নির্ভর করতে হয় না। আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তিকে জগতে আর কাউকে পারোয়া করতে হয় না।”আমার পথ” প্রবন্ধে লেখক আত্মনির্ভশীল হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। যার প্রথম শর্তই হলো নিজের সত্যকে জানা এবং তা প্রকাশ করা। সুস্পষ্টভাবে নিজেকে না জানলে আর সত্যকে প্রকাশ করতে না পারলে পরনির্ভরশীলতা তৈরি হয়। তাই লেখক প্রয়োজনে দাম্ভিক হতে চান। কারণ সত্যের দন্ড যার মধ্যে আছে তার পক্ষেই কেবল অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। উদ্দীপকেও সত্যের শক্তির উপর নির্ভরতা উপস্থাপিত হয়েছে। শত আঘাত-বেদনার মধ্য দিয়ে মানুষ নিজেকে জানে, নিজের সত্যকে আবিষ্কার করে। আর এভাবেই নিজের মধ্যে আসে আত্মনির্ভরতা।একমাত্র সঠিক পথে ব্যক্তিকে চালিত করে। তাই আপন সত্যের শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার মাধ্যমে আত্মনির্ভর হওয়া সম্ভব। এই আত্মনির্ভরতাই উদ্দীপক এবং আলোচ্য প্রবন্ধের সারকথা। এ দিক্ বিচারে বলা যায়, ‘আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে’- মন্তব্যটি যথার্থ।

সারকথা: অর্থাৎ আত্মাকে চিনলে নিজেকে চেনা যায় ।আর নিজেকে চিনলে আসে আত্মনির্ভরতা।