আল কুরআনের পরিচয় ও কুরআন কীভাবে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ?

উদ্দীপকঃ-

=> দৃশ্যকল্প-১: মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ রচিত “Issues in Islamic Economics” গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তাঁর মৃত্যুর পর বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়, ইসলামিক পাবলিকেশন্স বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ১৯৮৩ সালে এটিকে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে।

দৃশ্যকল্প-২: কলেজ ছাত্র টগর ও যুহাইর দুই বন্ধু। টগর প্রতিদিন সকালে একটি ঐশী গ্রন্থের কিছু অংশ পাঠ করে, যার প্রতিটি বর্ণের বিনিময় সে পুণ্য প্রত্যাশা করে। অন্যদিকে বন্ধু যুহাইর পুণ্য ও অধিক কল্যাণের প্রত্যাশায় অনুবাদ ও ব্যাখ্যাসহ গ্রন্থটি প্রতিদিন অধ্যয়ন করে।

আল কুরআনের পরিচয় ও কুরআন কীভাবে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ?

প্রশ্ন-

ক. আল কুরআন এর পরিচয় লেখ।

খ. কুরআন কীভাবে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ? ব্যাখ্যা কর।

গ. “Issues in Islamic Economics” গ্রন্থের বিষয়ে ইসলামিক পাবলিকেশন্স এর ভূমিকার সাথে কুরআন সংশ্লিষ্ট কোন ঘটনার মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. যুহাইরের প্রত্যাশাটি কতটা যৌক্তিক? টগর ও যুহাইরের কর্মটি চিহ্নিতপূর্বক বিশ্লেষণ কর।

 

প্রশ্নের উত্তর:-

ক) মানবজাতির হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত সর্বশেষ ঐশীগ্রন্থ হলো আল কুরআন।

খ) স্বকীয় উপস্থাপনা ও আলোচ্য বিষয়ের বৈচিত্রের কারণে কুরআন সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ।

আল-কুরআন আল্লাহর কালাম। এর রচনাশৈলী ও বিষয়বিন্যাস স্বতন্ত্র। এর প্রকাশরীতি, ব্যঞ্জনা, অভিব্যক্তি ও আবেদন অনুপম। এর ভাষা অনন্য। এ গ্রন্থ বিষয়ভিত্তিক ধ্যান-ধারণায় রচিত নয়। স্বকীয় উপস্থাপনা ও বিষয়বৈচিত্র্যের কারণে কুরআন অনবদ্য বিশিষ্টতা পেয়েছে। আল-কুরআন সর্বজনীন ও সর্বকালীন এক চিরন্তন সত্য মহাগ্রন্থ। এ গ্রন্থের সংশয়হীনতা ও অভ্রান্ত নির্দেশনা এতটাই সুনিশ্চিত ও অকাট্য যে, তা সব কালের ও সব দেশের মানুষের জন্য প্রযোজ্য। তাছাড়া পবিত্র কুরআনের ভাষাচয়ন লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এটা সম্পূর্ণ পদ্য কিংবা পুরোপুরি গদ্য নয়। বরং এ দুয়ের সংমিশ্রণে নাজিল এক অভূতপূর্ব গ্রন্থ- যা এ গ্রন্থটির উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করে।

 

গ) “Issues in Islamic Economics” গ্রন্থের বিষয়ে পাবলিকেশন্স এর ভূমিকার সাথে কুরআন সংকলনের ঘটনার মিল পাওয়া যায়।

আল-কুরআন মহান আল্লাহর পবিত্র কালাম। এর ভাষাশৈলী, শিল্পসৌন্দর্য সবই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত। মহানবি (স.) এর জীবদ্দশায় কুরআন সংকলিত হয়নি। তাঁর ইন্তেকালের পর ওহি লেখকদের সহযোগিতায় মুসলিম জাহানের খলিফারা পুস্তক আকারে কুরআন সংকলন করেন। উদ্দীপকে এরই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। উদ্দীপকের মাওলানা আকরাম খাঁ রচিত “Issues in Islamic Economics” গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তাঁর মৃত্যুর পর গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের ক্ষেত্রেও অনুরূপ লক্ষণীয়।

মহানবি (স)-এর সময়ে আল-কুরআন মুখস্থ করা ও লেখনীর মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু সে সময় তা একত্রে গ্রন্থাবন্ধ করা হয়নি। বরং তাঁর তত্ত্বাবধানে লিপিবদ্ধ টুকরোগুলো নানাজনের কাছে সংরক্ষিত ছিল। হযরত আবু বকর (রা) সর্বপ্রথম কুরআন সংকলনের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীসময়ে হযরত উসমান (রা)-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আল-কুরআন নির্ভুলভাবে সংকলিত হয়। কেননা তাঁর খেলাফতকালে কুরআন তিলাওয়াত নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। ফলে মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। হযরত উসমান (রা) এ অবস্থার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি উম্মুল মু’মিনিন হযরত হাফসা (রা)-এর কাছে সংরক্ষিত পবিত্র কুরআনের মূলকপি সংগ্রহ করেন। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা)কে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে দেন। এ কমিটি হযরত হাফসা (রা) থেকে সংগৃহীত কপির আলোকে আরও ৭টি কপি তৈরি করেন এবং তা মুসলিম সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন। ফলে সারা বিশ্বে অভিন্ন রীতিতে কুরআন তিলাওয়াত আরম্ভ হয়। এজন্য হযরত উসমান (রা)কে ‘জামিউল কুরআন’ বলা হয়। বিশ্বে বর্তমানে প্রচলিত কপিগুলোও মাসহাফে উসমানির প্রতিলিপি।

 

ঘ) অধিক কল্যাণের প্রত্যাশায় যুহাইরের অনুবাদ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন অধ্যয়ন অত্যন্ত যৌক্তিক।

কুরআন অধ্যয়ন করাকে ইসলামি পরিভাষায় কুরআন তিলাওয়াত বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে, যথাযথভাবে কুরআন তিলাওয়াত করার দ্বারা মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারে। শুদ্ধ ও সুন্দররূপে কুরআন তিলাওয়াত করলে এবং এর মর্যাদা বুঝে সে অনুযায়ী আমল করলে মানুষ প্রভূত সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়। উদ্দীপকে যুহাইরের প্রত্যাশায় এটাই প্রতিফলিত হয়েছে।উদ্দীপকের যুহাইর অধিক পুণ্য ও কল্যাণলাভের প্রত্যাশায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যার প্রতি গুরুত্ব দেয়। অপরদিকে তার বন্ধু টগর অনুবাদ ও ব্যাখ্যা ছাড়া কুরআন অধ্যয়ন করে। টগর ও যুহাইর দুজনই কুরআন অধ্যয়নের ফলে পুণ্য ও কল্যাণ লাভ করবে। কেননা কুরআন তিলাওয়াত নফল ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। নবি করিম (স) বলেন, ‘কুরআন তিলাওয়াত বা অধ্যয়ন সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। (বায়হাকি)। তদুপরি কুরআন বুঝে অধ্যয়ন করার ফজিলত সাধারণভাবে তিলাওয়াতের চেয়ে অনেক বেশি। রাসুল (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে, তা মুখস্থ করে এবং হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম জানে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’। (সুনানে তিরমিযি)।

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, টগর ও যুহাইর দুজনই কুরআন অধ্যয়ন করার জন্য পুণ্য লাভ করবে। তবে যুহাইর ব্যাখ্যাসহ অধ্যয়নের ফলে টগরের চেয়ে বেশি পুণ্য ও কল্যাণ লাভ করবে।