আলাউদ্দীন খলজীর দাক্ষিণাত্য অভিযানের উদ্দেশ্য কী ছিল?

Table of Contents

উদ্দীপকঃ-

রাজা শামসের সিংহাসনে আরোহণ করে সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা, উন্নতর শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং শূন্য অর্থভাণ্ডার পূরণের উদ্দেশ্যে কতিপয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শুভ উদ্দেশ্য ও আদর্শ থাকা সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যবশত তার এসব পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

ক. ইবনে বতুতা কে ছিলেন?

খ. আলাউদ্দীন খলজীর দাক্ষিণাত্য অভিযানের উদ্দেশ্য কী ছিল?

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শাসকের পরিকল্পনার সাথে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের কোন কোন পরিকল্পনার মিল আছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত পরিকল্পনাসমূহের ব্যর্থতার কারণ পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ-

ক) ইবনে বতুতা ছিলেন মরক্কোর পর্যটক।

ক সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ছিলেন একজন সাম্রাজ্যবাদী শাসক। ফলে তিনি তার রাজ্য সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে দাক্ষিণাত্যে অভিযান প্রেরণ করেন। এ ছাড়া অগণিত ধন-রত্নও সুলতানকে দাক্ষিণাত্য বিজয়ে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে। সর্বোপরি সুলতান আলাউদ্দিন খলজি তার উচ্চাভিলাষ পূরণ করার মানসে দাক্ষিণাত্যে অভিযান প্রেরণ করেছিলেন।

 

গ) উদ্দীপকে বর্ণিত রাজা শামসেরের পরিকল্পনার সাথে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা ও উন্নততর শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দিল্লিতে রাজধানী স্থাপন ও দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির সাদৃশ্য রয়েছে।উদ্দীপকে উল্লিখিত রাজা শামসের সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা, উন্নতর শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং শূন্য অর্থভাণ্ডার পূরণের উদ্দেশ্যে কতিপয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলকও এমন প্রেক্ষাপটে কিছু উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। রাজধানী স্থানান্তর ও দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি এমনই দুটি পরিকল্পনা। সহজতর নজরদারি, বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহতকরণ ও ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মুহাম্মদ বিন তুঘলক দিল্লি থেকে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন। পরবর্তীকালে রাজধানীর নাম রাখেন দৌলতাবাদ। কিন্তু তার এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। রাজভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি দোয়াবে কর বৃদ্ধি করেন। কারণ দোয়াব ছিল দিল্লি সালতানাতের সর্বাপেক্ষা উর্বর ভূমি। গঙ্গা-যমুনার মধ্যবর্তী এ ভূভাগে পানির অভাব না থাকায় এখানে শস্যের ফলন সর্বদা ভালো হতো। দিল্লির সুলতানরা সুযোগ বুঝে সর্বদা দোয়াবে কর বৃদ্ধি করতেন। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি দোয়াবে উৎপন্ন শস্যের শতকরা ৫০ ভাগ বা অর্ধেক কর ধার্য করেন। ঐতিহাসিকদের মতে, এতেও দোয়াবের রায়তদের কোনো অসুবিধা হতো না, কারণ দোয়াব সত্যিই উর্বর ছিল। তবে তুঘলকের এ পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়। অতিরিক্ত করদানে কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে আর্থিক ক্লেশ বৃদ্ধি এবং সংকট সৃষ্টি হয়। এর ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিকল্পনারই প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

 

ঘ) উক্ত পরিকল্পনাগুলো বলতে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের গৃহীত পরিকল্পনাসমূহকে বোঝায়। নানা কারণে পরিকল্পনাগুলো ব্যর্থ হয়। মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তর পরিকল্পনাকে অনেকে এক স্বৈরাচারী শাসকের নির্বুদ্ধিতাপ্রসূত নিষ্ফল কাজ এবং কেউ কেউ “অসাবধানী পরিকল্পনা” বলে অভিহিত করেছেন। লেনপুলের মতে, “দৌলতাবাদ ছিল ভ্রান্তপথে পরিচালিত উদ্যমের কীর্তিস্তম্ভ।” সুলতানের রাজধানী স্থানান্তরের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল মহৎ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং সাম্রাজ্যের জন্য মঙ্গলকর। কিন্তু সুলতানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদ্ধতি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। তিনি যদি কেবল তার দরবার ও প্রশাসনিক দপ্তর স্থানান্তর করে ক্ষান্ত হতেন, তবে সুলতানের পরিকল্পনাটি সংগত ও বাস্তবে পরিণত হতো। কিন্তু তা না করায় মহৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়া সত্ত্বেও পরিকল্পনাটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।মুহাম্মদ বিন তুঘলকের দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির পরিকল্পনাটি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। আর ঠিক এ সময়ে বর্ধিত হারে রাজস্ব আরোপের ফলে কৃষকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা বিদ্রোহ করে এবং অনেকে নিজ খামারের শস্য পুড়িয়ে ফেলে ও কৃষিকাজ ত্যাগ করে বনে-জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। জীবন- ধারণের প্রয়োজনে অনেকে দস্যুতার পথ বেছে নেয়। ঐতিহাসিক বারানির মতে, ‘কৃষকদের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়।’ তিনি বলেন, সুলতানের উৎপীড়নে রায়তরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। সুলতান দোয়াবে বিভীষিকা ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। ফলে সুলতানের কর বৃদ্ধির পরিকল্পনাটিও ব্যর্থ হয়।পরিশেষে বলা যায় যে, মুহম্মদ বিন তুঘলকের অদূরদর্শিতার কারণে তার গৃহীত পদক্ষেপসমূহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল।

 

উদ্দীপকঃ-

এলিনা খান জাতীয় উন্নয়নের জন্য নারীদের ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ্য করেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে নারীর ঐতিহ্য শীর্ষক এক সভায় বক্তব্যদানকালে নারীর ক্ষমতার কিছু অতীত স্মৃতি তুলে ধরেন, যার একাংশ হলো- একজন শাসকের অপসারণের পর ১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে মহীয়সী এক নারী তার দেশের সিংহাসনে আরোহণ করেন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি তার পূর্ববর্তী শাসকের কুশাসনজনিত বিশৃঙ্খলা দূরীকরণে আত্মনিয়োগ করেন।

ক. দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

খ. ইলতুৎমিশ রাজ্যজয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন বুঝিয়ে- লেখো।

গ. উদ্দীপকের মহীয়সী নারীর বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত সাধিত হয়েছিল- ব্যাখ্যা করো।

ঘ. ভারতবর্ষে এ ধরনের একজন নারীর চরিত্রে বিভিন্ন গুণাবলির অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছিল- মূল্যায়ন করো।

 

 উত্তরঃ-

ক) দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সুলতান ইলতুৎমিশ।

খ) রাজ্যজয়ের ক্ষেত্রে সুলতান ইলতুৎমিশ ছিলেন অসীম সাহসের অধিকারী।ইলতুৎমিশ দাস কুতুবউদ্দিন আইবেকের অধীনে থাকা অবস্থায় ধনুর্বিদ্যা ও সামরিকবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। আরাম শাহকে পরাজিত করে তিনি সিংহাসনে আসেন। দিল্লির মুসলিম সাম্রাজ্যে রাজপুত শক্তির প্রভাব সব সময়ই ছিল। কিন্তু তিনি তাদের প্রতিহত করে রাজ্য জয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি রণথম্ভোর, মান্দাওয়ার, গোয়ালিয়র, ভিলসা দুর্গ ও উজ্জয়িনী দখল করেন। এভাবে তিনি সাহসিকতার সাথে রাজ্যজয়ে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন।

গ) উদ্দীপকে বর্ণিত মহীয়সী নারীর সাথে পাঠ্যবইয়ের সুলতান রাজিয়ার সাদৃশ্য রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সুলতান রাজিয়া রুকনউদ্দিন ফিরোজকে অপসারণের পর ১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুলতান রাজিয়া ক্ষমতায় আরোহণ করার সাথে সাথে একটি গোলযোগপূর্ণ প্রশাসন লাভ করেন। তিনি তার পূর্ববর্তী শাসকের কুশাসনজনিত বিশৃঙ্খলা দূরীকরণে আত্মনিয়োগ করেন। উদ্দীপকেও এ দিকটির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।সুলতান রাজিয়ার ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজতন্ত্র ও অভিজাতদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের প্রথম সূচনা হয়। সুলতান রাজিয়া পুরুষের পোশাক পরিধান করতেন। এজন্য অনেকে তাকে ধর্মবিরোধী বলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। কারামাতিয়া ও মুলাহিদ সম্প্রদায়ের লোকজনও তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। পাঞ্জাবের শাসনকর্তা কবির খান সর্বপ্রথম রাজিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। উজির মুহাম্মদ জুনাইদি ও বদায়ুন, লাহোর, বাংলা হান্সি এবং মুলতানের শাসনকর্তাগণ সুলতান হিসেবে রাজিয়ার মনোনয়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন এবং ষড়যন্ত্র করেন। তারা রাজিয়ার পতনের জন্য বিভিন্ন দিক থেকে একযোগে দিল্লি আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। সুলতান রাজিয়া একজন নারী হওয়ায় গোঁড়া মুসলমানরা তাকে শাসক হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। এ কারণে তারা সুলতান রাজিয়ার বিরুদ্ধাচরণ করে। এভাবে সুলতান রাজিয়া নানা চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন।

ঘ) উদ্দীপকের উক্ত নারীর মতো ভারতবর্ষের সুলতান রাজিয়ার চরিত্রে বিভিন্ন গুণাবলির অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছিল।ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম শাসনের ইতিহাসে সুলতান রাজিয়াই একমাত্র মহিলা যিনি দিল্লি সিংহাসনে আরোহণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে নারী হয়েও তিনি অসাধারণ প্রশাসনিক দক্ষতা, কূটনৈতিক প্রজ্ঞা এবং রাজকীয় অনন্য গুণাবলির পরিচয় দিয়েছিলেন। সুলতান রাজিয়া সিংহাসন আরোহণ করে উত্তরাধিকারসূত্রে বিশৃঙ্খল ও গোলযোগপূর্ণ প্রশাসন লাভ করেন। তুর্কি অভিজাতগণ শুরুতেই সুলতান রাজিয়াকে সিংহাসনচ্যুত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের বুদ্ধিমত্তা, কৌশলী চিন্তা-চেতনা, সাহসিকতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে প্রথম ধাক্কা সামলিয়ে ওঠেন। তিনি ন্যায়বিচারক, দক্ষ প্রশাসক, সুনিপুণ মানসিক ব্যক্তিত্ব ও বিদ্যোৎসাহী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি বেশ কয়েকটি যুদ্ধে নিজে নেতৃত্বদান করেন। বস্তুত সুলতান রাজিয়া একজন শাসক হিসেবে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার গুণাবলি ও যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। সুলতান রাজিয়া সাহিত্যিক ও বিদ্বানদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তিনি বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও চমৎকার ভঙ্গিসহ পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতে পারতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি নারী হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে রাজার প্রয়োজনীয় গুণাবলি থাকা সত্ত্বেও পুরুষের চিরাচরিত ধারণা অনুযায়ী, তার ঐসব গুণ ছিল মূল্যহীন। পরিশেষে বলা যায়, সুলতান রাজিয়া ভারতের ১ম মুসলিম নারী শাসক হিসেবে ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদার স্থান দখল করে আছেন।

উদ্দীপকঃ-

মধ্যযুগে বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে বাংলা সাহিত্য বেশ সমৃদ্ধি লাভ করে। তার শাসনামলে কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারতের বাংলা অনুবাদ করেন। তার একজন কর্মকর্তা যশরাজ খান কিছু বৈষ্ণব পদ রচনা করেন। তাছাড়া গৌড়ের ছোট সোনা মসজিদ আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে নির্মিত স্থাপত্যকর্মের অনন্য নিদর্শন। পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর।

ক. দিল্লি সালতানাতের গোড়াপত্তন করেছিলেন কে?

খ. সুলতান ইলতুৎমিশকে দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় কেন?

গ. সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের সাথে তোমার পঠিত সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকটিতে সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবকের কৃতিত্বের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

 

উত্তরঃ-

ক) সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক দিল্লি সালতানাতের গোড়াপত্তন করেছিলেন।

খ) সংকটময় মুহূর্তে সুলতান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে দিল্লি সালতানাতকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করায় সুলতান ইলতুৎমিশকে দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের মৃত্যুর (১২১০ খ্রি.) পর দিল্লি সালতানাতের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। কারণ তার পরবর্তী সুলতান আরাম শাহের অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও অক্ষমতার কারণে দিল্লি সালতানাত গভীর সংকটের মুখে পড়ে। তার দুর্বল শাসনের সুযোগে বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠে। এ সময় ক্ষমতা গ্রহণ করে (১২১১ খ্রি.) সুলতান ইলতুৎমিশ দায়িত্ব নিয়ে এসব বিদ্রোহ দমন করে দিল্লি সালতানাতের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেছেন। এ কারণেই তিনি দিল্লি সালতানাতের সত্যিকারের প্রতিষ্ঠাতা।

 

গ) সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের সাথে সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হলো তারা দুজনেই ছিলেন শিল্প- সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক।শিল্প-সংস্কৃতি মানুষের শিল্প মননের প্রতিনিধিত্ব করে। ইতিহাসে অনেক শাসককেই দেখা গেছে, শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে তারা নিজেদের মন-মানসিকতার বিকাশ ঘটিয়েছেন। উদ্দীপকে উল্লিখিত আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এবং পাঠ্যবইয়ে আলোচিত সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক এমনই দুজন প্রখ্যাত শাসক। শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে তারা দুজনেই ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন।উদ্দীপক থেকে জানা যায়, বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে সাহিত্য বেশ সমৃদ্ধি লাভ করে। কারণ তিনি সাহিত্যের প্রসারে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। তার আমলে মহাভারতের বাংলা অনুবাদ এবং কিছু বৈষ্ণব পদ রচিত হয়েছিল। তাছাড়া তিনি ছোট সোনা মসজিদ নির্মাণ করে স্থাপত্য শিল্পে অবদান রেখেছেন। অন্যদিকে, সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন শিক্ষা ও শিল্প-সংস্কৃতির অনুরাগী একজন শাসক। তার কাছ থেকে বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্তদের মধ্যে ঐতিহাসিক ও গ্রন্থাকার ফখরই মুদাব্বির ও কবি হাসান নিযামীর নাম উল্লেখযোগ্য। স্থাপত্য শিল্পেও তিনি বিশেষ অনুরাগী ছিলেনকুতুবমিনার নামের বিজয় স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ তিনিই সূচনা করেছিলেন। সুতরাং, শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের সাথে তার সুস্পষ্ট সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত চরিত্রের মাধ্যমে সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের কৃতিত্বের একটি মাত্র দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ কারণে উদ্দীপকটিতে সুলতানের কৃতিত্বের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি।সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের কৃতিত্ব মূল্যায়নে চারটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, তিনি দিল্লি সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা। দ্বিতীয়ত, তিনি একজন দক্ষ সেনানায়ক। তৃতীয়ত, তিনি একজন শ্রেষ্ঠ শাসক এবং চতুর্থত, তিনি ছিলেন শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। এ চারটি বিষয়ের মধ্যে উদ্দীপকে কেবল শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার দিকটিই পরিলক্ষিত হয়।সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের মাধ্যমেই ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লি সালতানাতের গোড়াপত্তন হয়েছিল। মুহাম্মদ ঘুরীর মৃত্যুর পর তিনি গজনির কর্তৃত্ব থেকে মুসলিম অধিকৃত ভারতবর্ষকে মুক্ত করে দিল্লি সালতানাতের ভিত্তি রচনা করেন। তিনি একজন সফল সেনানায়ক হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর যোগ্য সহচর হয়েছিলেন। শাসনক্ষমতা গ্রহণের পরে তিনি শাসক হিসেবেও সফলতার পরিচয় দিয়েছিলেন। সালতানাতের নিরাপত্তা বিধান, অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং প্রজাকল্যাণ নিশ্চিতকরণে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। উদ্দীপকে সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের কৃতিত্বের এই দিকগুলোর কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি।উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ কেবল কুতুবউদ্দিন আইবেকের কৃতিত্বের আংশিক চিত্র মাত্র। তাই উদ্দীপকটি সুলতানের কৃতিত্বের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে না।

আলাউদ্দীন খলজীর দাক্ষিণাত্য অভিযানের উদ্দেশ্য কী ছিল?

উদ্দীপকঃ-

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে, জনাব মিরন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নির্ধারণ, করে দেন। এ তালিকায় সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১১০ টাকা প্রতি লিটারের দাম: কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখা যায় সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য দ্রব্যের দাম অনেক বেশি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে। দোকানদাররা এর জন্য যোগানের স্বল্পতা মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি গুদামের অভাব ও অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরাতাকে দায়ী করেন।

ক. মুহাম্মদ বিন তুঘলকের স্মৃতিরক্ষার্থে ফিরোজশাহের গড়ে তোলা শহরটির নাম কী?

খ. বলবনের মোঙ্গলনীতি কী ছিল?

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মেয়র মিরন সাহেবের দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে তোমার পঠিত কোন শাসকের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যাখ্যা কার্যকর করতে মেয়র মিরন কী কী পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে তুমি মনে কর? পাঠ্যবইয়ের আলোকে মতামত দাও।

 

প্রশ্নের উত্তরঃ-

ক) মুহাম্মদ বিন তুঘলকের স্মৃতিরক্ষার্থে গড়ে তোলা শহরটির নাম জৈনপুর।

 

খ) মোঙ্গলদের প্রতিহত করার জন্য সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত নীতিই মোঙ্গল নীতি নামে পরিচিত।মোঙ্গলদের আক্রমণ প্রতিহত করতে বলবন সেনাবাহিনী পুনর্গঠন এবং তাদেরকে সামরিক সরঞ্জামে সুসজ্জিত করেন। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সুলতান নতুন, দুর্গ নির্মাণ এবং পুরাতন দুর্গগুলো পুনর্নির্মাণ করেন। মোঙ্গলদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখার উদ্দেশ্যে তিনি সর্বদা রাজধানীতে অবস্থান করতেন। মূলত বলবন নতুন রাজ্য বিজয়ে উৎসাহিত না হয়ে রাজ্যে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং সাম্রাজ্যকে শঙ্কামুক্ত রাখতে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহতের জন্য বেশি সচেষ্ট ছিলেন।

 উদ্দীপকঃ-

পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্যগুলোর মধ্যে চীনের প্রাচীর বিশেষ স্থান দখল করে আছে। প্রাচীনকালে মঙ্গোলিয়ার যাযাবর দস্যুরা চীনের বিভিন্ন অংশে আক্রমণ করতো এবং লুটতরাজ চালাতো। ফলে দস্যুদের হাত থেকে চীনকে রক্ষা করার জন্য সম্রাট কিং সি হুয়াং এ প্রাচীর নির্মাণ করেন। পাশাপাশি সীমান্তের দুর্গগুলো সংস্কার করে দক্ষ সামরিক নেতাদের সেখানে নিয়োগ করেন। এভাবে সম্রাট সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চীনকে বৈদেশিক শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেন।

ক. কার নামে কুতুবমিনারের নামকরণ করা হয়?

খ. সুলতান ইলতুৎমিশকে দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সম্রাটের গৃহীত পদক্ষেপের সাথে তোমার পঠিত কোন শাসকের পদক্ষেপের সামঞ্জস্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উক্ত শাসক কীভাবে তার সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ-

ক) প্রখ্যাত সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকীর নামানুসারে কুতুবমিনারের নামকরণ করা হয়।

 

খ) সংকটময় মুহূর্তে সুলতান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে দিল্লি সালতানাতকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করায় সুলতান ইলতুৎমিশকে দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের মৃত্যুর (১২১০ খ্রি.) পর দিল্লি সালতানাতের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। কারণ তার পরবর্তী সুলতান আরাম শাহের অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও অক্ষমতার কারণে দিল্লি সালতানাত গভীর সংকটের মুখে পড়ে। তার দুর্বল শাসনের সুযোগে বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠে। এ সময় ক্ষমতা গ্রহণ করে(১২১১ খ্রি.) সুলতান ইলতুৎমিশ দায়িত্ব নিয়ে এসব বিদ্রোহ দমন করে দিল্লি সালতানাতের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেছেন। এ কারণেই তিনি দিল্লি সালতানাতের সত্যিকারের প্রতিষ্ঠাতা।

 

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত সম্রাটের গৃহীত পদক্ষেপের সাথে আমার পঠিত সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের পদক্ষেপের সামঞ্জস্য রয়েছে। গিয়াসউদ্দিন বলবন দিল্লি সালতানাতের শ্রেষ্ঠ শাসকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। বলবনের রাজত্বকালে মোঙ্গলগণ বারবার ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে হামলা পরিচালনা করে সুলতানকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলত। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যকে বিপদমুক্ত করার সাথে সাথে সুলতান মোঙ্গলদের আক্রমণ হতে সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নীতি গ্রহণ করেন, যা মোঙ্গল নীতি নামে পরিচিত। যেটি উদ্দীপকে বর্ণিত সম্রাটের গৃহীত পদক্ষেপের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।উদ্দীপকে দেখা যায়, প্রাচীনকালে মঙ্গোলিয়ার যাযাবর দস্যুরা চীনের বিভিন্ন অংশে আক্রমণ করতো এবং লুটতরাজ চালাতো। ফলে দস্যুদের হাত থেকে চীনকে রক্ষা করার জন্য সম্রাট কিং সি হুয়াং চীনের প্রাচীর নির্মাণ করেন এবং সীমান্ত দুর্গগুলো সংস্কার করে সেখানে দক্ষ সামরিক নেতাদের নিয়োগ দেন। অনুরূপভাবে মোঙ্গলরা উত্তরপশ্চিম সীমান্ত পথে ভারত বারবার আক্রমণ করত। মোঙ্গলদের আক্রমণ প্রতিহতকরণ ও তাদের দমন করার জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন প্রথমে একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গঠনের স্বার্থে বৃদ্ধ সৈনিকদেরকে ক্রমান্বয়ে ছাঁটাই করেন। তাদেরকে উন্নত ধরনের অস্ত্রশস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত করেন। সামরিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সুলতান নতুন দুর্গ নির্মাণ এবং পুরাতন দুর্গগুলো পুনর্নির্মাণ করেন। সুলতান মুলতান সীমান্তবর্তী প্রদেশ গঠন করে সুদক্ষ শাসনকর্তাদের ওপর সেগুলোর শাসনভার অর্পণ করেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের সম্রাটের গৃহীত পদক্ষেপের সাথে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত পদক্ষেপগুলোরই মিল পাওয়া যায়।

 

ঘ) উক্ত শাসক অর্থাৎ সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন সামরিক বাহিনীর সংস্কার ও কঠোর নীতির মাধ্যমে সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন।দিল্লি সালতানাতের সুদৃঢ়ীকরণে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন ভারতবর্ষ তথা ইসলামের ইতিহাসে এক নবদিগন্তের সূচনা করেন। সামান্য ক্রীতদাস হিসেবে জীবন শুরু করে যারা স্বীয় মেধা ও দক্ষতা বলে ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছেন বলবন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি দিল্লি সালতানাতকে সুদৃঢ় করার নিমিত্তে রক্তপাত ও কঠোর নীতি গ্রহণ করেন। উদ্দীপকেও এ শাসকের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। একটি শক্তিশালী ও সুদক্ষ সেনাবাহিনী গঠন করে দিল্লি সালতানাতের কর্তৃত্ব ও মর্যাদা সুদৃঢ় করার জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন বিদ্রোহীদের কঠোর হস্তে দমন করেন। তিনি মেওয়াটবাসীদের বিদ্রোহ, দোয়াবের বিদ্রোহ ও উপজাতিদের বিদ্রোহ দমন করেন এবং চল্লিশ চক্রের বিলোপ সাধন করেন। তিনি তার সুসজ্জিত সামরিক বাহিনীর দ্বারা ভারতবর্ষকে মোঙ্গল আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন। তার সময়ে দিল্লি নগরী মুসলিম কৃষ্টির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। তিনি তুর্কি সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান করে তাকে নবজীবন দান করেন; সালতানাতের গৌরব পুনরুদ্ধার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন; সাম্রাজ্যের সর্বত্র অব্যাহত শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপন করে সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথ উন্মুক্ত করেন এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তকে মোঙ্গল হামলা থেকে নিরাপত্তা বিধানকল্পে এক নতুন নীতির প্রবর্তন করেন। এসব দিক পর্যালোচনা করলে বলবনকে ‘সালতানাতের প্রকৃত সংরক্ষণকারী’ হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে।উপর্যুক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন দিল্লি সালতানাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন।

উদ্দীপকঃ-

একটি পাঁচ টাকা কয়েন গলিয়ে ২টি চা চামচ তৈরি করে তা দশ টাকায় বিক্রি করার ফলে হঠাৎ করে ‘ক’ দেশে ধাতব মুদ্রার অভাব দেখা দেয়। অভাব মোকাবিলায় সরকার উর্বর দক্ষিণ অঞ্চলের কর বৃদ্ধি করে। ওদিকে ব্যবসায়ীরা মুদ্রার অভাবে সিলযুক্ত কাগজের স্লিপ ব্যবহার করতে থাকে; কিন্তু অসাধু ব্যক্তিরা এসব জাল করে দেশের অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

ক. কারাচিল কোথায় অবস্থিত?

খ. মুহাম্মদ বিন তুঘলককে ‘বৈপরীত্যের সংমিশ্রণ’ কেন বলা হয়েছে?

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত উর্বর দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ভারতে কোন অঞ্চলের তুলনা করা যায়? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মুদ্রা ব্যবস্থার মতোই মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ‘প্রতীকী তাম্রমুদ্রা’ পরিকল্পনাটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়- উক্তিটি মূল্যায়ন করো?

প্রশ্নের উত্তরঃ-

ক) কারাচিল হিন্দুস্থান ও চীনের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত।

খ) ভালো-মন্দের সংমিশ্রণে মুহাম্মদ বিন তুঘলক মধ্যযুগীয় বিশ্বের এক বিস্ময়কর সৃষ্টি ছিলেন বলে তাকে বৈপরীত্যের সংমিশ্রণ বলা হয়। মুহাম্মদ বিন তুঘলকের মধ্যে পাণ্ডিত্য, মানসিক উৎকর্ষ, উন্নত রুচিবোধ, উচ্চ নৈতিক আদর্শ, সমদর্শিতা, ধর্মপরায়ণতা, ন্যায়নিষ্ঠা, দানশীলতা প্রভৃতি গুণাবলির সমাবেশ ঘটেছিল। অন্যদিকে আবেগপ্রবণতা, অস্থিরতা, একগুঁয়েমি, অপরিণামদর্শিতা, রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা ইত্যাদি দোষ-ত্রুটিও তার চরিত্রকে স্নান করেছিল। তাই তাকে বিপরীত বৈশিষ্ট্যাবলির সংমিশ্রণ অর্থাৎ ‘বৈপরীত্যের সংমিশ্রণ’ বলে অভিহিত করা হয়।

 

উদ্দীপকঃ-

মুহাম্মদ তকি ক্রীতদাস থেকে শাসক হয়েছিলেন। এরপর থেকে তার দেশে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজবংশ দীর্ঘ সময় ধরে শাসন করে। তাদের শাসনকালে নানা উত্থান-পতন ঘটে। কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি ছিল না। প্রতিজন শাসকের মৃত্যুর পর ষড়যন্ত্রকারী অমাত্যবর্গ রাজপরিবারের একাধিক সদস্যকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে সমর্থন দান করে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হতেন।

ক. সৈয়দ বংশের প্রথম শাসকের নাম কী?

খ. লোদি বংশের শাসকদের মধ্যে সিকান্দর লোদি ছিলেন শ্রেষ্ঠ সুলতান- ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে যে ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে, তা তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে- ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত কারণগুলো ছাড়াও দিল্লি সালতানাত পতনের আরও কারণ আছে- মতামতের সপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তরঃ-

ক) সৈয়দ বংশের প্রথম শাসকের নাম খিজির খান।

খ) লোদি বংশের শাসকদের মধ্যে সিকান্দার লোদি ছিলেন শ্রেষ্ঠ সুলতান। বাহলুল লোদির মৃত্যুর পর ১৪৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তার পুত্র ‘নিজাম খান’ সিকান্দার শাহ উপাধি গ্রহণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। ২৯ বছর সগৌরবে রাজত্ব করার পর ১৫১৭ সালে তিনি আগ্রাতে পরলোকগমন করেন। সিকান্দার লোদি দৃঢ়চেতা ও ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। তিনি কখনো মদ্যপান করতেন না। প্রতি বছর সাম্রাজ্যের গরিব ও দুস্থদের তালিকা করে তাদের ৬ মাসের রেশন দানের ব্যবস্থা করেন। তিনি ১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দে আগ্রা নগরীর গোড়াপত্তন করে। দিল্লি হতে প্রশাসনিক দপ্তর সেখানে স্থানান্তরিত করেন। তিনি ত্রিহূত, বিহার প্রভৃতি অঞ্চল জয় করে সাম্রাজ্যের সীমা বৃদ্ধি করেন। তাই তাকে লোদি বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান বলা হয়।

 

গ) উদ্দীপকে দিল্লি সালতানাতের পতনের জন্য দায়ী সুলতানদের স্বৈরশাসনের কারণটি প্রতিফলিত হয়েছে।একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরশাসন ছিল দিল্লি সালতানাত যুগের শাসকদের প্রধান শাসননীতি। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, একনায়কতন্ত্র জনগণের জন্য সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনে না। তাই এর বিরুদ্ধে সব সময়ই বিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে। দিল্লি সালতানাতের পতন এবং উদ্দীপকের মুহাম্মদ তকির ক্ষেত্রেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। অনেক বছর ধরে একটি রাজবংশ একনায়কতন্ত্রের নীতিতে শাসন করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের কাছে রাজবংশটির পতন ঘটে। অনুরূপ ফলাফল ঘটেছিল দিল্লি সালাতানাতের ক্ষেত্রেও। দিল্লি সালতানাত ছিল ব্যক্তিনির্ভর একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসন। এতে সমগ্র ক্ষমতার উৎস ছিলেন স্বয়ং সুলতান। সুলতানের নিজস্ব ক্ষমতার ওপর সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতা নির্ভরশীল ছিল। রূঢ় হলেও সত্য যে দিল্লি সালতানাতের তিনশ বছরে সুলতান ইলতুৎমিশ, গিয়াসউদ্দিন বলবন, আলাউদ্দিন খলজি এবং মুহাম্মদ বিন তুঘলক ছাড়া প্রায় সকল শাসকই অযোগ্য ছিলেন। ব্যক্তিনির্ভর একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এসব দুর্বল ও অযোগ্য সুলতানদের আমলে সর্বত্র বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে উদ্দীপকের রাজবংশের ন্যায় দিল্লি সালতানাতের পতনও অনিবার্য হয়ে পড়ে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আলোচ্য দুটি প্রেক্ষাপটেই পতনের কারণ হিসেবে স্বৈরশাসন ক্রিয়াশীল।

ঘ) উদ্দীপকে দিল্লি সালতানাতের পতনের কারণ হিসেবে শাসকদের স্বৈরশাসনের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে, যা সালতানাত পতনের একমাত্র কারণ নয়। ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আইবেকের মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দিল্লি সালতানাতের উত্থান ঘটেছিল। ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে বাবরের সাথে ইব্রাহিম লোদির পানিপথের যুদ্ধের মাধ্যমে এ সালতানাতের পতন ঘটে এবং মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, একটি রাজবংশ মাত্র ১০০ বছর শৌর্যবীর্যে টিকে থাকতে পারে। এরপর অনিবার্যভাবে তার পতন ঘটবে। তাই মামলুক, খলজি, তুঘলক, সৈয়দ ও লোদি রাজবংশ স্বাভাবিকভাবে তাদের স্থিতিকাল অতিক্রম করায় তাদের পতন ঘটেছে। এছাড়া দিল্লি সালতানাত যুগে ইলতুৎমিশ, গিয়াসউদ্দিন বলবন, আলাউদ্দিন খলজি ছাড়া আর কোনো যোগ্য শাসক কেন্দ্রীয় শাসনকাঠামো সুদৃঢ় করতে পারেননি। সাম্রাজ্যের সীমা বৃদ্ধির ফলে এতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা খুব কঠিন ছিল। একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র দিল্লি সালতানাত পতনের আরেকটি কারণ। দিল্লি সালতানাত ছিল সামরিক শক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, জনসাধারণের স্বাভাবিক আনুগত্য বা জাতীয়তাবোধের ওপর নয়। তাই সালতানাতের নিরাপত্তার ব্যাপারে জনগণের কোনো আগ্রহ ছিল না। অধিকাংশ সুলতান ধর্মান্ধতা ও সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচয় দিয়েছিলেন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিমগণ সর্বদাই সালতানাতের ধ্বংস কামনা করত। বাহ্যিক কিছু কারণ যেমন- মোঙ্গল আক্রমণ, তৈমুর লঙের আক্রমণ ও বাবরের আক্রমণের ফলে দিল্লি সালতানাতের পতনের পথ সুগম হয়। এভাবেই বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে দিল্লি সালতানাতের পতন ত্বরান্বিত হয়।

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব লেখ?