|

সেরা ১০টি ফ্রিল্যান্সিং সাইট

১০টি ফ্রিল্যান্সিং সাইটের নাম

আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো সেরা ১০টি ফ্রিল্যান্সিং সাইট সম্পর্কে।বর্তমানে বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে আকর্ষণীয় একটি আয়ের মাধ্যম হয়ে উঠেছে ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো।  অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশ পুরো বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির মতে, দেশে সক্রিয় ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা দেড় থেকে দুই লাখ।

সংখ্যা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জনপ্রিয়তা কেমন। স্বাধীনতা ও নিজের সুবিধামতো কাজ বাছাই করার সুযোগ থাকায় দিনদিন এই সেক্টরে তরুণদের আসার প্রবণতা বাড়ছেই।

এর সাথে সাথে ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফরম তথা ফ্রিল্যান্সিং সাইট এর সংখ্যাও বাড়ছে। সের মধ্যে সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট কোনটা? কোনটায় আপনার কাজ করা উচিৎ? আসুন এক নজরে দেখে নিই সেরা ১০ টি ফ্রিল্যান্সিং সাইট।

১. আপওয়ার্ক
২. ফাইভার
৩. ফ্রিল্যান্সার
৪. ৯৯ডিজাইনস
৫. পিপল পার আওয়ার
৬. ফ্লেক্সজবস
৭. টপট্যাল
৮. গুরু
৯. ডিজাইনহিল
১০. আপস্ট্যাক

চলুন এবার আমাদের বাছাইকৃত সেরা ১০ ফ্রিল্যান্সিং সাইট সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেই!

সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট কি কি?

১. আপওয়ার্ক

বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সার ও ক্লায়েন্টদের একত্রিত করে আপওয়ার্ক। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস জগতে আপওয়ার্ক সবচেয়ে বড় নাম। আপওয়ার্কের আঠারো মিলিয়নেরও বেশি নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার এবং পাঁচ মিলিয়ন নিবন্ধিত ক্লায়েন্ট রয়েছে। বার্ষিক ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের প্রায় তিন মিলিয়ন জব পোস্ট করা হয়, যা আপওয়ার্ককে বিশ্বের বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সার মার্কেটপ্লেসে পরিণত করেছে।

আপওয়ার্কের নিয়ম হচ্ছে, ক্লায়েন্ট জব পোস্ট করে এবং ফ্রিল্যান্সার জবের জন্য আবেদন করে। একাধিক ফ্রিল্যান্সার একই জবের জন্য আবেদন করলে ক্লায়েন্ট তাদের মধ্য থেকে পছন্দমতো একজনকে বাছাই করে নেয়।

২. ফাইভার

কম টাকায় কাজ করানোর জন্য ফাইভার বিখ্যাত। তাই ফাইভার বিগিনার অর্থাৎ যারা একদম নতুন কাজ শুরু করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম হতে পারে।

ফ্রিল্যান্সাররা এই সাইটে নিজেদের প্রোফাইলে বিভিন্ন সেবা অফার করতে পারেন। একই সাথে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত এবং বিভিন্ন দামের প্যাকেজ অফার করতে পারেন। আপনার কাজ ভালো হলে শুধু ফাইভার থেকেই ভালো অঙ্কের টাকা আয় করা সম্ভব।

যেসব ক্লায়েন্ট কম খরচে ভালো মানের কাজ করাতে চান তাদের জন্যও ফাইভার একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম।

৩. ফ্রিল্যান্সার

ফ্রিল্যান্সার ডট কম হল আরেকটি ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইট যেখানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন পেশাদার ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা অর্জন করা ফ্রিল্যান্সার থাকার কারণে ক্লায়েন্টরা সহজেই যেকোনো ধরনের কাজের জন্য ফ্রিল্যান্সার খুঁজে পেতে পারেন।

বিস্তারিত তথ্য ও যোগ্যতা দিয়ে কেউ চাইলে ফ্রিল্যান্সার কিংবা ক্লায়েন্ট হিসেবে সাইন আপ করতে পারেন। এই সাইটে এছাড়াও বিভিন্ন ডিজাইন বা ভিজুয়াল কাজের জন্য কনটেস্ট বা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই প্রতিযোগিতাগুলো থেকে ফ্রিল্যান্সাররা অর্থ আয়ের পাশাপাশি প্রোফাইলে রিভিউ অর্জন করতে পারেন।

প্রতিটি ফ্রিল্যান্সার একটি কাজ শেষ করার পরে সম্পূর্ণ অর্থ পাবেন। তবে সার্ভিস চার্জ হিসেবে মোট উপার্জনের ১০% নিয়ে নিবে ফ্রিল্যান্সার ডট কম। বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্স সাইটের মতো, আপনি টাকা উত্তোলনের জন্য পেপ্যাল ​​ব্যবহার করতে পারেন।

 ৪. ৯৯ডিজাইনস

৯৯ ডিজাইনস হলো ডিজাইনার ও ভিজুয়ালাইজারদের জন্য বিশেষায়িত সাইট। এর প্রধান সুবিধা হচ্ছে শুধু ডিজাইনারকেন্দ্রিক হওয়ায় ডিজাইনাররা সুনির্দিষ্ট ধরনের কাজ সহজেই পেয়ে যান।

লোগো ডিজাইন, কার্ড ডিজাইন, ব্র্যান্ডিং তৈরি করা, বইয়ের প্রচ্ছদ তৈরি করা কিংবা অন্য যেকোনো ধরনের ডিজাইনের কাজের জন্য এই সাইটটি বিখ্যাত। আপনি একজন মননশীল ও সৃষ্টিশীল ডিজাইনার হয়ে থাকলে আপনার জন্য এই সাইটটি খুব উপযোগী।

ক্লায়েন্টরা দুইটি পদ্ধতিতে এই সাইটে ডিজাইনার হায়ার করতে পারেন। প্রথমত সাধারণ জব পোস্টের মতো পোস্ট করে এবং দ্বিতীয়ত ৯৯ ডিজাইনস’কে টাকা দিলে আপনার কাজের জন্য যথাযোগ্য ফ্রিল্যান্সার তারা খুঁজে দিবে।

ডিজাইনাররা এখানে ফ্রিতে অ্যাকাউন্ট খুলে কনটেস্টে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এই সাইটে প্রায় একশত রকমের ডিজাইনের কাজ আছে, তাই আপনার দক্ষতা অনুসারে সহজেই কাজ পেতে পারেন।

 ৫. পিপল পার আওয়ার

এই সাইটেও অনেক ধরনের কাজ রয়েছে। প্রায় তিন মিলিয়ন ফ্রিল্যান্সার ও এক মিলিয়ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এই সাইটটি কাজ করা ও কাজ করানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে। প্রায় সকল ধরনের কাজই এই সাইটে করা যায়। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও থেকে শুরু করে ওয়েব ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং , ভয়েসওভার, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি কাজের জন্য এই সাইটটি বহুল ব্যবহৃত।

এই সাইটের বিশেষ ফিচার হচ্ছে “প্রজেক্ট স্ট্রিমস” যা এই সাইটকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। এই ফিচারের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট ও ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের আলাদা আলাদা কাজের আপডেট ও ফাইল শেয়ারিংয়ের কাজ সহজেই ব্যবস্থাপনা করতে পারেন।

৬. ফ্লেক্সজবস

পার্ট টাইম ও ফুল টাইম বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স জবের জন্য এই সাইট বিশেষায়িত। কনটেন্ট রাইটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং, ট্রান্সক্রিপশন- ইত্যাদি জবের জন্য এই সাইট বিখ্যাত। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের কাজ এই সাইটে রয়েছে।

সাইটে পোস্ট করা প্রত্যেকটি কাজই বৈধ- তা নিশ্চিত করে ফ্লেক্সজবস। অর্থাৎ এই সাইট থেকে আপনি কোনোভাবে প্রতারণার শিকার হবেন না।

এই সাইতে সাইন আপ করতে ফ্রিল্যান্সারদের সাপ্তাহিক একটি নির্দিষ্ট সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হয়। বর্তমানে এই সাবস্ক্রিপশন ফি এর পরিমাণ ৬.৯৫ ডলার। এই সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে একজন ফ্রিল্যান্সার আনলিমিটেড জবে অ্যাপ্লাই করার সুযোগসহ আরো বেশ কিছু সুবিধা পান।

৭. টপট্যাল

টপট্যাল অধিকতর দক্ষতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের সমন্বয়ে গঠিত সাইট। এই সাইটের মাধ্যমে অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা বড় বড় কোম্পানির সাথে যুক্ত হন। টপট্যালে ওয়েব ডিজাইনার, ওয়েব ডেভেলপার, কনসালট্যান্ট প্রভৃতি ক্যাটাগরির ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা বেশি।

পাঁচ ধাপের বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একজন ফ্রিল্যান্সারকে এই প্ল্যাটফরমের সদস্য হতে হয়। এর প্রথমেই আছে ব্যাপক পরিসরে ইংরেজির দক্ষতার পরীক্ষা। এই বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাত্র ৩% লোক এই প্ল্যাটফরমের সদস্য হতে পারে।

সমস্ত ধাপ অতিক্রম করার পরে, আপনি মটোরোলা এবং এয়ারবিএনবি’র মতো শীর্ষস্থানীয় ক্লায়েন্ট এবং কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন চাকরির পোস্টিংগুলোতে অ্যাক্সেস পাবেন। যাইহোক, পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া কয়েক মাস পর্যন্ত আটকে থাকবে।

৮. গুরু

গুরু প্ল্যাটফরমে কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দক্ষতার পেশাদারদের হাআর করতে পারেন। এর মধ্যে প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রোডাক্ট ম্যানেজার ইত্যাদি পেশা প্রধান।

এই সাইটটিতে জব পোস্ট খোঁজা, এবং ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। সাইন আপ করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফ্রিল্যান্সার প্রোফাইল তৈরি করে কাজ শুরু করা যায়। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সিস্টেমই আপনাকে উপযুক্ত কাজ দেখাবে।

৯. ডিজাইনহিল

ডিজাইনহিল অনেকটা ৯৯ ডিজাইনসের মতোই। এটা এমন একটা মার্কেটপ্লেস যেখানে ডিজাইনার ও আর্টিস্টরা চমৎকার সব কাজ করার মাধ্যমে টাকা আয় করে থাকেন।

লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ব্রশিউর ডিজাইন সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ এই সাইটে রয়েছে। সাইন আপ করলেই একজন ফ্রিল্যান্সার ডিজাইন সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ ও কনটেস্টে অংশ নেওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। এই সাইটটি পোর্টফোলিও তৈরি এবং ক্লায়েন্টের সাথে দীর্ঘমেয়াদি পেশাদার সম্পর্ক গড়ার জন্য চমৎকার একটি মাধ্যম হতে পারে।

ডিজাইনহিলের আরেকটি চমৎকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি শুধু ক্লায়েন্টের থেকেই টাকা নেয়। তাই কাজ করার পরে পুরো টাকাটাই ফ্রিল্যান্সার পেয়ে থাকেন। পেপ্যাল এবং পেওনিয়ারের মাধ্যমে এই সাইটের টাকা উত্তোলন করা যায়।

১০. আপস্ট্যাক

আপস্ট্যাক মেধাবী ফ্রিল্যান্সারকে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যুক্ত করার কাজ করে থাকে। সারা বিশ্বব্যাপী ডেভেলপারদের মধ্য থেকে ট্যালেন্টেড ডেভেলপারদেরকে আপস্ট্যাক তাদের প্ল্যাটফর্মে জায়গা দেয়।

জাভা, পাইথন, আইওএস এবং পিএইচপি ডেভেলপারদের মধ্য থেকে সবচেয়ে মেধাবী ফ্রিল্যান্সাররা এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করার সুযোগ পায়।

মাইক্রোসফট, লেগো ইত্যাদি বড় বড় কোম্পানির সাথেও তারা কাজ করে থাকে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ধরন ও আকারের ওপর ভিত্তি করে আপস্ট্যাক ডেভেলপার সরবরাহ করে থাকে।

শেষকথা

আমাদের প্রদত্ত এই তালিকায় সেরা ১০ টি ফ্রিল্যান্সিং সাইট নিয়ে আলোচনা করেছি। এর বাইরেও অনেক ফ্রিল্যান্সিং সাইট আছে যা থেকে সহজেই অনলাইনে আয় করা সম্ভব। সুবিধা ও দক্ষতা অনুযায়ী প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করলে সহজেই ফ্রিল্যান্সিং করে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ ১০ হাজার টাকা বাজেটের সেরা ৫ স্মার্টফোন।