মাঙ্কি পক্স কি? মাঙ্কি পক্সের লক্ষণ সমূহ জেনে নিন

মাঙ্কি পক্স কি? মাঙ্কি পক্সের লক্ষণ সমূহ জেনে নিন

বিশ্বব্যাপী গত প্রায় দুই বছরব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর পরে সম্প্রতি নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে মাঙ্কি পক্স। আমেরিকা, ইউরোপ ও পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হয়েছে। এই মাঙ্কি পক্স আসলে কি? এর লক্ষণগুলো কি কি? এই ব্যাপারগুলো জেনে রাখা দরকারি।

মাঙ্কি পক্স কি?

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঙ্কি পক্স গুটি বসন্তের মতোই একটি রোগ। যদিও মাঙ্কি পক্স গুটি বসন্তের তুলনায় অনেক বেশি বিরল। ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম এই রোগটি দেখা গেলেও মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালে এই রোগ সংক্রমিত হয়। ইঁদুর, কাঠবিড়ালি কিংবা এই জাতীয় প্রাণির কামড় থেকে এই রোগ ছড়ায়। গুটি বসন্তের মত সমগোত্রীয় ভাইরাস থেকেই মাঙ্কি পক্স সংক্রমিত হয়।

মাঙ্কি পক্স কিভাবে ছড়ায়?

মাঙ্কিপক্স একটি ছোঁয়াচে রোগ। স্পর্শ, কফ, থুথু কিংবা যৌন সংসর্গের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তিতে ছড়াতে পারে এই ভাইরাস। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক কিংবা নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহারে এই ভাইরাস সুস্থ ব্যক্তির দেহে সংক্রমিত হতে পারে।

করোনা ভাইরাস শ্বাস-প্রশ্বাস কিংবা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ালেও মাঙ্কি পক্সের বেলায় এমনটি ঘটে না। তাই মাঙ্কি পক্স সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

মাঙ্কি পক্সের লক্ষণ কি কি?

মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণ ফ্লু’র মতোই। কেউ মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত হওয়ার পরে দুই সপ্তাহের মধ্যে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কেউ এই ভাইরাসের সংস্পর্শে এলে বা সংক্রমিত হলে এটার একটা দীর্ঘ সময় সুপ্তাবস্থা বজায় থাকে। শরীরে প্রবেশের পরে ভাইরাসটি দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে প্রথমে আক্রমণ করে। এরপরে অতিরিক্ত জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা এবং ক্লান্তি দেখা যায়।

এরপরে হাতে, পায়ে, মুখমণ্ডল এবং এমনকি কখনও কখনও জননাঙ্গে র‍্যাশ ওঠে। এই র‍্যাশ পরবর্তীতে পুঁজভর্তি লাল ফোস্কার সৃষ্টি করে। এই ফোস্কাগুলো বেশ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে। এই অসুস্থতা প্রায় ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। যেহেতু এটি একটি ছোঁয়াচে ও সংক্রামক রোগ, তাই এই সময়ে যাতে অন্যদের সংস্পর্শে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসা কি?

আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে মাঙ্কিপক্সের কোনো প্রমাণিত নিরপদ চিকিৎসা নেই। অনেক চিকিৎসকের মতে, গুটি বসন্তের টিকা মাঙ্কি পক্সের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকরী। তবে এটি ব্যবহারের নজির কম। আশার কথা হচ্ছে অধিকাংশ লোকই কোনো চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন।

মাঙ্কিপক্সের ঝুঁকিতে কারা?

মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে জীবিত অথবা মৃত বন্যপ্রাণির সংস্পর্শে আসা, বন্যপ্রাণির মাংস ভক্ষণ করা কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসা। বাচ্চা, তরুণ এবং কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

মাঙ্কি পক্স থেকে বাঁচতে করণীয় কী?

মাঙ্কি পক্স আমেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু দেশে দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশে এখনও মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণের ব্যাপারে শোনা যায় নি। তাও সাবধানতা অবলম্বনের জন্য বন্যপ্রাণির সংস্পর্শে যাওয়া কিংবা বন্যপ্রাণির মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

করোনা ভাইরাসের জন্য অবলম্বন করা সাবধানতাগুলো যেমন হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া, অসুস্থ হলে ঘরে অবস্থান করা- ইত্যাদি পন্থা অবলম্বন মাঙ্কি পক্সের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারে।

শেষকথা

মানুষের মধ্য থেকে করোনার ভয় এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ আরেক বিভীষিকার নাম। তবে আশার কথা হচ্ছে, মাঙ্কি পক্স ভাইরাস করোনা ভাইরাসের মত অত বিপজ্জনক নয়। মৃত্যু কিংবা সংক্রমণের হার করোনার তুলনায় অনেক কম। মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হলে মাত্র ১ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ মারা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ এইচ ও) এর স্মল পক্স বিভাগের প্রধান ডাক্তার রোজামুন্ড লুইজের ভাষ্যমতে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই রোগ ব্যাপকহারে ছড়ানোর সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই এই নিয়ে অযথা আতঙ্ক করা বা ভীতি ছড়ানোর কিছু নেই।

 

আরও পড়ুনঃ সেরা ১০টি ফ্রিল্যান্সিং সাইট।