|

ব্রেস্ট ক্যান্সার কি এবং কেন হয় জেনে নিন বিস্তারিত তথ্য

ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার কি বা কেন হয় এটা সবাই জানে৷ কারণ প্রতি বছর বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় ১৫০০০ মানুষ। মারা যায় ৭৫০০ জন। কিন্তু একটু সচেতন হলেই কমে যেত মৃত্যূহার। ক্যান্সার হওয়ার পর দ্রুত শনাক্ত করতে পারলে স্তন ক্যান্সার থেকে মুক্তির সম্ভাবনা থাকে ৮৯.৯ ভাগ। তারপরও বাংলাদেশে এত মানুষ মারা যাচ্ছে কেন? কীভাবে আমরা ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি? ক্যান্সার হয়ে গেলে কীভাবে বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারি? চলুন দেখে আসি।

ব্রেস্ট ক্যান্সার কাকে বলে?

ক্যান্সার হল একটি কোষে জেনেটিক মিউটেশনের ফলে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন। কোষে থাকা BRCA 1-2 জিনের মিউটেশনের ফলে হয় অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন। এর ফলে প্রথমে টিউমার তৈরী হয়। সব ধরনের টিউমার ক্ষতিকর না হলেও, কিছু কিছু টিউমার রূপ নিতে পারে ক্যান্সারে। স্তনে যখন এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন হয়, তখন একে বলা হয় স্তন ক্যান্সার।

WHO এর তথ্যমতে প্রতি বছর কেবল যুক্তরাষ্ট্রে স্তন ক্যান্সার ধরা পরে ৪১০০০ মানুষের। নারীর তুলনায় পুরুষের স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা কিছুটা কম থাকলেও প্রতি ১০০০ জন পুরুষে ১ জনের এ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিজ্ঞানের অভুতপূর্ব উন্নতির ফলে গত ২০ বছরে স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুহার কমে এক তৃতীয়াংশ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ শরীরের ওজন কমানোর উপায়

ব্রেস্ট ক্যান্সার কাদের হয়?

স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা সব মানুষেরই আছে। তারপরও কিছু মানুষ কিছুটা বেশি ঝুকিতে থাকেন। যেসব মহিলাদের বয়স ৪০ এর বেশি তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ৮০ ভাগই ৪০ এর বেশি বয়ষ্ক। আর ৪০ বছরের কম বয়ষ্ক রোগীর সংখ্যা মাত্র ৫ ভাগ। তবে একেবারে শৈশবেও স্তন ক্যান্সার হতে পারে। টার্নের, উটাহ নামক জায়গায় পাওয়া গিয়েছিল সবচেয়ে কম বয়ষ্ক স্তন ক্যান্সার রোগী। তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। ক্যান্সার ধরা পরে ২০১৫ সালে।

যাদের আগে থেকেই স্তনরোগের ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাদের পরিবারে কারো স্তন ক্যান্সার হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রেও ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি বেশি। কিছু কিছু জিনিস ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। যেমন এলকোহল আর ধুমপান। ৫ বছরের বেশি সময় ধরে ইস্ট্রোজেন কিংবা প্রোজেস্টেরণ জাতীয় হরমোনীয় ঔষধ সেবনেও ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার এর লক্ষণ কি কি?

ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্ত একজন রোগীর মধ্যে একাধিক লক্ষন থাকতে পারে, আবার অনেকের মাঝে বেশ কিছু লক্ষন নাও থাকতে পারে। লক্ষনগুলো হলঃ

১. স্তনে ঘামাচিরর মত ফুসকুরি, চাকা বা পিন্ডাকৃতির দাগ দেখা যায়।

২. স্তনের চামড়া কুচকে যায়।

৩. স্তনে চুলকানী ।

৪. বোটার আকৃতি পরিবর্তন হওয়া, বাকা, অসমান হয়ে যায় কিংবা ভেতরের দিকে ঢুকে যেতে পারে।

৫. চামড়ার রং পরিবর্তীত হয়ে লালচে হয়ে যায়।

৬. বাহুমূলেও চাকা বা পিন্ড দেখা যায়।

৭. স্তন দিয়ে তরল পদার্থ বের হওয়া। এছাড়া রক্তও বের হতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন আপনার ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে কিনা?

ক্যান্সার যাদের ধরা পড়ে নি, তারা তিন ভাবে ক্যান্সার হয়েছে কিনা যাচাই করতে পারেন। ক্যান্সারের এ পরীক্ষাকে বলা হয় স্ক্রিনিং।

মেমোগ্রাম করে

মেমোগ্রাম আসলে স্তনের এক্সরে। এক্সরে রিপোর্ট থেকে বোঝা যায় ক্যান্সার হয়েছে কিনা। যাদের বয়স ৩৫ এর বেশি, তাদের প্রতি বছর  অন্তত একবার ম্যামোগ্রাম করে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া ভাল। বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্যান্সার ধরা পরে একেবারে শেষ স্টেজে গিয়ে। অথচ প্রতি বছর ম্যামোগ্রাম করলে খুব সহজেই বেশিরভাগ ক্যান্সার দ্রুত দূর করা যেত।

সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন

উপর্যুক্ত জ্ঞান না থাকলে নিজে নিজে পরীক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। অন্তত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তার ম্যামোগ্রাম, আল্ট্রাসাউন্ড, এম আর আই, পি আই টি, বায়পসি এসবের মধ্যে সুবিধাজনক পরীক্ষার পর আপনার ক্যান্সার আছে কিনা তা জানাতে পারবেন।

ব্রেস্ট ক্যান্সার কত প্রকার

স্তন ক্যান্সারকে অনেকভাগে ভাগ করা যায়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলঃ

DCIS(Ductal carcinoma in situ):

এই ধরনের স্তন ক্যান্সার খুব একটা আক্রমণাত্বক নয়। স্তন নালীতেই সীমাবদ্ধ থাকে। পাশের টিস্যূতে ছড়ায় না। অনেক সময় একে স্টেজ-০ ক্যান্সারও বলা হয়। এই ধরনের ক্যান্সার হলে ক্যান্সার শনাক্তের ১০ বছর পর রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৯৮%।

LCIS (Lobular carcinoma in situ):

এই ধরনের ক্যান্সার হয় দুধ উৎপাদক গ্রন্থিতে। সাধারণত পাশের টিস্যূতে ছড়ায় না। স্তনে বায়োপসি করলে এই ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়। প্রতি ১০০ জন রোগের ক্ষেত্রে মাত্র ২০ জনের এই LCIS জটিল ধরনের ক্যান্সারে রূপ নেয়।

IDC (Invasive ductal carcinoma):

এই ক্যান্সার হয় স্তননালী আর পাশের টিস্যুতে। প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে এই ক্যান্সার খুব সহজেই নিরাময় করা যায়। স্তন ক্যান্সার রোগীদের শতকরা ৭০ জনই এই ক্যান্সারে আক্রান্ত। তবে এই ক্যান্সার হেলাফেলা করলে পাশের টিস্যু আর আশেপাশের অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আরও পড়ুনঃ বাসে বমি হলে কি করণীয়

ব্রেস্ট ক্যান্সার এর চিকিৎসা কি?

কেমোথেরাপি দিয়ে বেশিরভাগ সময় ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়। এই কেমো থেরাপি দিলে বর্ধনশীল কোষের ক্ষতি হয় বলে চুল পড়ে যায়, শরীর দূর্বল হলে যায়। রেডিয়েশন থেরাপি দিয়েও স্তন ক্যান্সার দূর করা সম্ভব। রোগের ধরন বুঝে ডাক্তার সার্জারি করার পরামর্শও দিতে পারেন। সার্জারির, লাম্পেকটমি প্রক্রিয়ায় শুধু টিউমার অপসারন করা হয়, আর মাস্টেকটমিতে পুরো স্তন অপসারণ করা হয়। এছাড়াও সেন্টিনেল নোড বায়োপসি, অক্সিলারি নোড বিচ্ছেদকরনের মত সার্জারি করা হয়ে থাকে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সচেতনতা। ধুমপান, মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা, প্রতিদিন ব্যায়াম করাও ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।