কিভাবে ভালো ল্যাপটপ চিনব জেনে নিন বিস্তারিত

বর্তমান যুগে কম্পিউটার একটি অবিচ্ছিদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কম্পিউটার দিয়ে যেমন আমরা দ্রুত কাজ করতে পারি তেমনি সহজেই কাজ সমাধান করতে পারি। কম্পিউটারের বহুমূখী গুণের সাথে যোগ হয়েছে বহন সুবিধা। নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমি ল্যাপটপের কথা বলছি। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মানুষ ব্যাক্তিগত কাজেও ল্যাপটপ ব্যবহার শুরু করেছে। অনেকেই জানতে চায় ১৫ হাজার টাকার মধ্যে ল্যাপটপ কোনটা ভালো হবে? হয়তো আপনি একটি ল্যাপটপ কেনার কথা ভাবছেন। ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায় নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল। অনুগ্রহ করে পুরো পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

২০২২ সালে কিভাবে ভালো ল্যাপটপ চিনব

ল্যাপটপ কেনার সময় কোন বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল। আমরা সাধারণত ল্যাপটপ কেনার সময় দ্বিধায় পড়ে যাই যে কোন ল্যাপটপ কিনব, বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ল্যাপটপ কোনটি বা কোন ল্যাপটপ ভালো হবে। আপনার যদি ল্যাপটপ সম্পর্কে ভালো কোন জ্ঞান না থাকে তবে আপনি ল্যাপটপ কেনার সময় ঠকতে পারেন।

একটা নতুন ল্যাপটপ কেনার আগে যে বিষয় গুলি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সেগুলি নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

  • ব্র্যান্ড
  • প্রসেসর
  • র‌্যাম
  • হার্ড ডিস্ক
  • জেনারেশন
  • অপারেশন
  • ডিসপ্লে ও গ্রাফিক্স
  • সাইজ ও ওজন
  • ব্যাটারী
  • ক্যামেরা

কোন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কিনব

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা করে ল্যাপটপ তৈরি করছে। তাই বর্তমান সময়ে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের ল্যাপটপ কিনতে পাওয়া যায়। জনপ্রিয় কিছু কোম্পানী Asus, Dell, HP, Acer, Lenovo, Xiaomi ইত্যাদি। আপনি যদি ভালো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে আপনাকে দেখতে হবে যে কোন সংস্থার ল্যাপটপ নতুন ফিচার ও দামের মধ্য়ে আসছে। সেই সাথে তাদের বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ যেকোন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কিনলে হবেনা।
মোটামোটি মানের ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ নিতে চাইলে নিতে পারেন ডেল, এইচপি, লেনেভো কিংবা এসার। এই ব্র্যান্ডগুলোর ল্যাপটপের পারফর্মেন্স খুবই ভালো। তবে এই ল্যাপটপগুলোর প্রাইস নির্ভর করে কনফিগারেশনের উপর। কনফিগারেশন ভালো হলে দামও বেশি হবে।

আরও পড়ুনঃ স্মার্টফোন হ্যাং এবং স্লো হলে সমাধানের ১০ টি উপায়

কি ধরণের প্রসেসর বা সিপিইউ ভালো

একটি প্রসেসর হলো একটি কম্পিউটারের মূল অংশ। এটিকে ল্যাপটপ এর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি হার্ডওয়্যার হিসেবে ধরা হয়। ল্যাপটপ কেনার সময় অবশ্যই প্রসেসর নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়ে। সাধারণত কম্পিউটার প্রসেসর এর ক্ষেত্রে মার্কেটে দুই ধরনের কোম্পানি সবচাইতে জনপ্রিয়। একটি হচ্ছে AMD এবং অন্যটি হচ্ছে Intel কোম্পানি। ইনটেল প্রসেসরের তুলনায় এএমডি প্রসেসরের দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। তবে আপনি চেষ্টা করবেন এএমডি প্রসেসরের ল্যাপটপ কেনার জন্য। কারণ এটার পারফরম্যান্স অনেক ভালো হয়। মনে রাখতে হবে Intel এর প্রসেসর তুলনামূলক ভাবে অন্য সকল প্রসেসর এর চাইতে কম শক্তি অপচয় করে। আপনি কি ২০২২ সালে ল্যাপটপ কেনার কথা ভাবছেন? তাহলে এই প্রসেসরের বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই আরও ভালো ভাবে জানতে হবে।

কেমন র‌্যাম ভালো হবে

ল্যাপটপ কেনার সময় র‌্যামকে গুরুত্ব দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। ল্যাপটপে স্মুথ পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য অবশ্যই ৪ জিবি অথবা তার থেকে বেশি র‌্যামের ল্যাপটপ কিনতে হবে। র‌্যাম যত বেশি হবে কাজ করে ততো বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। তবে ল্যাপটপে ভিডিও এডিট বা গেম খেলার মতো ভারী কাজগুলো করতে হলে ৮ জিবি বা ১৬ জিবি র‌্যাম ব্যবহার করতে হবে। ভালো মানের র‌্যাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে র‌্যামের বাস স্পিড এবং ডিডিআর (Double Data Rate) এর বিষয়ে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

হার্ডডিস্ক কোনটা নেবো

ল্যাপটপ কেনার সময় বেশি হার্ডড্রাইভ দেখে কেনা উচিত। কারণ তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ছোট বা কম স্পেসের হার্ডডিস্ক সহজেই পূর্ণ হয়ে যায়। ভালো মানের কোন কোন মুভি ৩/৪ জিবি জায়গা নেয়। তাই বেশি স্পেসের একটি হার্ডডিস্ক নিয়ে নিন যাতে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণের জন্য জায়গার অভাবে ভুগতে না হয়। সাধারণ হার্ডডিস্ক গুলো পুরনো হলে স্লো হয়ে যায়। ভালো পারফরম্যান্সের জন্য হার্ডডিস্ক বা হার্ডড্রাইভের বদলে এসএসডি স্টোরেজ নিতে পারেন। এসএসডি হার্ডডিস্ক গুলো ব্যবহারে মানুষ এখন বেশি ঝুঁকে পড়েছে। কারণ এতে উইন্ডোজ দিলে তুলনামূলক ভাবে ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যায়।

ভালো জেনারেশন কোনটা

ভালো ল্যাপটপ মানেই হলো আপডেট কোন জেনারেশন এর ল্যাপটপ। জেনারেশন না জেনে ল্যাপটপ কেনা ঠিক হবেনা। কারণ লেটেস্ট জেনারেশন মানেই হলো আপডেট ল্যাপটপ। ল্যাপটপ কেনার সময় এটি কোন জেনারেশনের সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ জেনারেশনের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। আর ল্যাপটপ কেনার সময় ৭ম জেনারেশনের নিচে কিনবেন না।

আরও পড়ুনঃ কিভাবে মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখা যায়?

কি ধরণের অপারেটিং সিস্টেম

অপারেটিং সিস্টেম বাছাই করার সময় অবশ্যই উইন্ডোজ নিতে হবে। কারণ আমরা সব সময় উইন্ডোজ ব্যবহার করি বলে আমরা এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এটা ব্যবহার করা এবং যাবতীয় ইনস্টল সহজ। তুলনামূলকভাবে ওএস এবং অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমে সফটওয়্যার ইনস্টল করা অনেক কঠিন। তাই ল্যাপটপ কেনার সময় যদি আপনার কাছে উইন্ডোজ ভালো লাগে তবে সেটি নিবেন। অথবা যে অপারেটিং সিস্টেম আপনার বেশি সুবিধাজনক মনে হয় সেটি ইনস্টল করুন।

ডিসপ্লে কোয়ালিটি কত হবে

ডিসপ্লে দেখে ল্যাপটপ কিনতে হবে অবশ্যই। কারণ পুরোটা সময় আপনি ল্যাপটপের ডিসপ্লের দিকে তাকিয়েই কাজ করতে হবে। তাই ডিসপ্লের রেজুলেশন এবং ব্রাইটনেস ঠিক আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে। ডিসপ্লের জন্য বিশেষজ্ঞরা সাধারণত ১০৮০পি রিকমেন্ড করে। কারণ এটা ফুল এইচডি ডিসপ্লে। এই রেজুলেশনের ডিসপ্লে না নিতে পারলে সেক্ষেত্রে অব্যশই অন্তত এইচডি বা ৭২০পি রেজুলেশনের ল্যাপটপ নিবেন।

ল্যাপটপের আকার ও ওজন

সাইজের ব্যাপারটা সাধারণত কাজের ধরণের উপর নির্ভর করে। আপনি কি ধরণের কাজ করবেন সেই কাজের ধরণ অনুযায়ী ল্যাপটপের সাইজ ঠিক করা উচিত। যেমন আপনি যদি ভিডিও এডিটিং করতে চান তবে আপনাকে বড় ডিসপ্লে বা বড় সাইজের ল্যাপটপ নিতে হবে। ইদানীং সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে স্লিম সাইজের ল্যাপটপগুলো। এগুলো ওজনেও বেশ পাতলা হয়। পাতলা ল্যাপটপ মানুষের প্রথম পছন্দ। স্ক্রিনের সাইজের উপর ওজন নির্ভর করে। ১৩ থেকে ১৪ ইঞ্চি ল্যাপটপ বহন এবং ব্যবহারের জন্য পারফেক্ট। এর ওজন সাধারণত ২ কেজির নিচে হয়ে থাকে। তবে কেউ কেউ ১৫ ইঞ্চি ডিসপ্লের ল্যাপটপ রিকমেন্ড করে।

ভালো মানের ল্যাপটপ ব্যাটারি

ল্যাপটপ কেনার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে ব্যাটারি ব্যাকআপ। বিদ্যুৎ ছাড়া ল্যাপটপ চালানো যায় বিধায় এর চাহিদা এত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ল্যাপটপ কিনে যদি চার্জ বেশি ব্যাকআপ না দেয় তবে কিনে কোন লাভ নেই। কারণ ল্যাপটপ বহনের কারণেই মূলতই কেনা হয়। ল্যাপটপ যে সব সময় বাড়িতে বা নির্দিষ্ট এক জায়গায় ব্যবহার করা হবে তা তো নয়। অনেক সময় বাহিরে গিয়ে কোন কোচিং, ক্লাস বা জার্নি করতে হয়। এই সময় যাতে ল্যাপটপের সাহায্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা যায় তাই ব্যাটারির গুরুত্ব অনেক বেশি। ভালো ব্যাটারি চেনার জন্য এটার গায়ের রেটিং দেখে ল্যাপটপের ব্যাটারি কেনা উচিত। যদি ব্যাটারীর গায়ে 44Wh বা 50Wh লেখা থাকে তবে সেগুলো বেশি সময় ধরে চার্জ় সংরক্ষণ করতে পারে। এই রকম ব্যাটারির ল্যাপটপ গুলো সাধারণত ৬/৭ ঘন্টা ব্যাকআপ দেয়।

ক্যামেরা

বর্তমানে ল্যাপটপ কিনতে আরও একটি ডিভাইসের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয়। সেটি হচ্ছে ল্যাপটপের ক্যামেরা। বর্তমানে এর গুরুত্ব বাড়ছে। কারণ করোনা মহামারীর কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত বন্ধ থাকায় অনলাইনে ক্লাস বা মিটিং হয়। একারণে ক্যামেরার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আগে যদিও এর চাহিদা এতো বেশি ছিলনা। কাজেই এখন ল্যাপটপ কেনার সময় এর ক্যামেরা ঠিক আছে কিনা এবং কত রেজুলেশনের তা ভালোভাবে দেখে নিন।

শেষ কথা

ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায় সম্পর্কে পোস্টটি পড়ে কতটা বুঝতে পারলেন তা কমেন্ট করে জানাবেন। এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলেই একটি ভালো ল্যাপটপ চেনা যায়। এর বাহিরে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য থাকলেও সেগুলো এতো বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। আপনার কাছে কোন ব্রান্ডের ল্যাপটপ ভালো লাগে সেটি কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সেই ব্র্যান্ড নিয়ে একটা রিভিউ লেখার চেষ্টা করব।