কাজখুঁজি মার্কেটপ্লেস থেকে আয় করুন ঘরে বসে

অনলাইনে আয় করার জন্য মানুষ এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। করোনার কারণে অসংখ্য মানুষ চাকুরী হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে এবং অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় থেমে নেই। বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধার কারণে মানুষ এখন ফ্রিল্যান্সিং-এ ঝুকে পড়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় যেকোন দেশেই এখন ফ্রিল্যান্সার একটি জনপ্রিয় পেশা। কাজখুঁজি মার্কেটেপ্লেস থেকে কিভাবে আয় করা যায় তা জেনে নিনঃ

অনেকেই প্রশ্ন করেন কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা যায়? আবার অনেকে প্রশ্ন করে বাংলাদেশের বেস্ট ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কোনটি? এই সব প্রশ্নের উত্তর আজকে আমাদের “কাজখুঁজি মার্কেটেপ্লেস থেকে কিভাবে আয় করা যায়?” এই পোস্টে পাবেন। অনুগ্রহ করে সময় নিয়ে পুরো পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

টপ মার্কেট প্লেসগুলোর মধ্যে ফাইভার, আপওয়ার্ক, টপটাল, গুরু, পিপলপারআওয়ার, ফ্রিল্যান্সার, বিল্যান্সার ইত্যাদি থাকলেও বাংলাদেশে বর্তমানে জায়গা করে নিয়েছে কাজখুঁজি। এই মার্কেটপ্লেসটি সম্প্রতি লঞ্চ করলেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে নির্মাতার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং এই ওয়েবসাইটের ইউজার ইন্টারফেস। তাছাড়া এখানে ফ্রিল্যান্সার এবং এমপ্লয়্যার উভয়েই কাজ করে বেশ সুবিধা পায়।

কাজখুঁজি কি?

কাজখুঁজি একটি বাংলাদেশী মার্কেটপ্লেস। বাংলাদেশের মানুষদের উদ্দেশ্য করে এই মার্কেটপ্লেসটি তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বেকারত্ব দূর করার জন্য এবং একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন একটি মার্কেটপ্লেস যেখানে লক্ষ লক্ষ তরুন তাদের স্কিল দিয়ে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করবে। এমন একটি স্বপ্ন থেকেই তৈরি করা কাজখুঁজি ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। এটি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় হওয়ায় দিন দিন এর ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ অনেকেই কাজ জানলেও বা তাদের স্কিল ঠিক থাকলেও ইংরেজি না পারার কারণে কাজ পায়না। কারণ যেকোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে গেলে যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ।

আপনি যদি বায়ারকে বোঝাতে না পারেন যে আপনি তাকে কাজটি করে দিতে পারবেন তাহলে তো আর আপনাকে কাজ দিবেনা। কাজখুঁজি প্লাটফর্মের বায়ার বাংলাদেশী বিধায় আপনাকে বোঝাতে তেমন সমস্যা হবেনা। এখানে কাজ করে আপনি আপনার স্কিল ডেভেলপ করতে পারবেন এবং সেই সাথে আপনার ফ্রীল্যান্সিং এর জড়তা ও ভয় দুই-ই দুর হবে। এই সব সুবিধার কারণে  ইতিমধ্যে এখানে অসংখ্য প্রোফাইল তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ প্রোফাইলই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তৈরি করা। যারা ফাইভার বা আপওয়ার্ক এর মতো বড় মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ করতে ভয় পান বা বেগিনার হিসেবে কাজ শুরু করতে চান তাদের জন্য বেস্ট একটা মার্কেটপ্লেস।

এখানে ফ্রিল্যান্সার এবং এমপ্লয়ার এই দুই মোডেই আপনি প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন। প্রোফাইল তৈরি করার পর আপনার স্কিল অনুসারে একটা গিগ বানিয়ে পাবলিশ করবেন। ভিজিটর বা এমপ্লয়ার যখন তাদের কাজ করানোর জন্য ফ্রীল্যান্সার খুঁজবে তখন আপনার গিগ ভিজিট করে আপনাকে কাজের অর্ডার দেবে। আপনি নির্দিষ্টি সময়ের মধ্যে তাদের কাজ সম্পন্ন করে দিতে পারলে এর বিনিময়ে আপনি আপনার পারিশ্রমিক পাবেন। এক কথায় এটা নতুনদের জন্য অনেক ধরণের সুবিধা দিচ্ছে যেটা অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে নেই।

 

কি কি ক্যাটাগরি আছে

কাজখুঁজি সম্প্রতি চালু হলেও অনেকগুলো ক্যাটাগরিতে আপনি গিগ পাবলিশ করতে পারবেন। কাজখুঁজি-র বেস্ট ক্যাটাগরির মধ্যে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং, গুগল অ্যাডসেন্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন উল্লেখযোগ্য। কাজ করার জন্য প্রথমে আপনি আপনার স্কিল ঠিক করুন কোনটি দিয়ে শুরু করবেন।

ফ্রীল্যান্সার হিসেবে কিভাবে কাজ করে

ফ্রীল্যান্সার হিসেবে কাজ করার জন্য প্রথমে আপনাকে এখানে ক্লিক করে কাজখুঁজি ওয়েবসোইটে একটি অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে। এখান থেকে ফ্রীল্যান্সার সিলেক্ট করে রেজিস্ট্রেশন করার পর আপনার প্রোফাইল সম্পূর্ণ করতে হবে। তবে আপনার নাম, ঠিকানাসহ অন্যান্য তথ্য অবশ্যই এনআইডি কার্ড অনুসারে দিবেন। কোন প্রকার ভুয়া তথ্য দেয়া যাবেনা। আপনার স্কিল, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রোফাইল পিকচার সহ অন্যান্য তথ্যগুলি পূরণ করুন। যাতে আপনার প্রোফাইল শতভাগ হয়। এরপর আপনি আপনার স্কিল অনুসারে এক বা একাধিক গিগ পাবলিশ করবেন।

ধরুন আপনি গুগল অ্যাডসেন্স-এ এক্সপার্ট। তাহলে গুগল অ্যাডসেন্স এর জন্য একটি গিগ তৈরি করবেন। এখানে গুগল অ্যাডসেন্স সম্পর্কিত সুন্দর একটি ছবি দিবেন (অবশ্যই কপিরাইট মুক্ত ছবি), আপনার সার্ভিসের শিরোনাম, কি কি সার্ভিস দিচ্ছেন? সার্ভিসের মূল্য, কোন রিভিশন আছে কিনা এই বিষয়গুলো সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। যাতে বায়ার গিগ দেখে বুঝতে পারে এটা তার জন্য পারফেক্ট। তারপর বায়ারের সাথে কন্টাক্ট করে কাজ শুরু করবেন। কাজখুঁজি-র সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আগে বায়ারের সাথে চ্যাট করে কাজ শুরু করা যায়।

আপনার ড্যাশ বোর্ডে দেখতে পাবেন টোটাল চলমান প্রোজেক্ট, টোটাল শেষকৃত প্রোজেক্ট, টোটাল শেষকৃত সার্ভিস, টোটাল চলমান সার্ভিস, টোটাল বাতিলকৃত সার্ভিস, টোটাল বিক্রয়কৃত সার্ভিস ইত্যাদি। অর্থাৎ সহজেই ড্যাশবোর্ড থেকে জানতে পারবেন কতগুলো কাজ করেছেন, কতগুলো কাজ পেন্ডিং আছে এবং আপনার উপার্জিত টাকার পরিমাণ।

এমপ্লয়ার হিসেবে কিভাবে কাজ করে

আপনি চাইলে সহজেই কাজখুঁজি-তে কাজের পোস্ট দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারেন। এর জন্য আপনার প্রোফাইল ফ্রীল্যান্সার থেকে এমপ্লয়ারে সুইচ করতে হবে। এরপর বামপাশের মেনু বাটন থেকে ফ্রীল্যান্সার ক্লিক করে ফ্রীল্যান্সারদের লিস্ট দেখতে পাবেন। আপনার সুবিধা মতো ফ্রীল্যান্সার বাছাই করার জন্য অ্যাপ্লাই ফিল্টার ক্লিক করে কিওয়ার্ড, ঘন্টা রেট, স্কিল, লোকেশন ইত্যাদি দিয়ে খুঁজে নিতে পারেন। ফিল্টার করলে সেই অনুসারে আপনি ফ্রীল্যান্সারের একটি তালিকা দেখতে পারবেন। এখানে তাদের রিভিউ, রেটিং, লোকেশন, গিগ ইত্যাদি দেখতে পাবেন। বিস্তারিত দেখার জন্য তাদের প্রোফাইল ভিজিট করতে হবে। কাজখুঁজিতে সবাই বাংলাদেশী ফ্রীল্যান্সার বিধায় আপনি প্রথমে চ্যাটিং করে কাজ দিতে পারেন। আপনি এখানে আপনার পছন্দমতো টাকার পরিমাণ দিয়ে কাজ করাতে পারবেন। আপনি কত টাকার বিনিময়ে কি ধরণের কাজ করাতে চান তা সরাসরি উল্লেখ করতে পারবেন। এটা অনেক বড় একটা সুবিধা।

কাজখুঁজি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম

আপনি যদি ফ্রীল্যান্সিং না করেন তবুও আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেও টাকা ইনকাম করতে পারবেন। কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে টাকা ইনকাম করা যায় তা সবাই জানে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য ড্যাশবোর্ড থেকে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম-এ ক্লিক করে মার্কেটিং থেকে অ্যাফিলিয়েট লিংক-এ ক্লিক করতে হবে। এখানে দেখতে পাবেন আপনার ট্রাকিং কোড এবং অ্যাফিলিয়েট লিংক। এই অ্যাফিলিয়েট লিংক কপি করে আপনার ওয়েবসাইট, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া সহ অন্যান্য জায়গায় প্রোমোট করত হবে। তবে কাজখুঁজি-তে অ্যাফিলিয়েট সিস্টেম কিছুটা ভিন্ন এবং সহজ। কারণ এখানে অ্যাফিলিয়েট এর জন্য  ২ ধরণের র‌্যাংক রয়েছে। একটি হচ্ছে বেসিক লেভেল এবং অন্যটি হচ্ছে প্রো লেভেল।

 বেসিক লেভেল

আপনি যদি বেসিক লেভেলে থাকেন তবে প্রতি রেজিস্ট্রেশনের জন্য আপনি ০.২৫৳ বোনাস পাবেন। অর্থাৎ কেউ যদি আপনার রেফার লিঙ্কের মাধ্যমে কাজখুঁজি-তে শুধু রেজিস্ট্রেশন করে তাহলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে উক্ত বোনাস পাবেন। আর যদি কোন সফল সার্ভিস ক্রয় হয় তাহলে পাবেন ২.৫৳। অর্থাৎ আপনি যাকে রেফার করবেন সে যদি রেজিস্ট্রেশন করার পর কোন সার্ভিস ক্রয় করে তাহলে আপনি এর বিনিময়ে ২.৫৳ পাবেন।

প্রো লেভেল

বেসিক লেভেল এবং প্রো লেভেলের সিস্টেম প্রায় একই। শুধু বোনাসের পরিমাণ ভিন্ন। আপনি যদি প্রো লেভেলে থাকেন তবে প্রতি রেজিস্ট্রেশনের জন্য পাবেন ০.৫০৳ বোনাস। আর যদি আপনার রেফারের মাধ্যমে কোন সফল সার্ভিস ক্রয় করে তবে আপনি পাবেন ৫৳।

প্রো লেভেল এর যোগ্যতা

প্রো লেভেল অর্জন করার জন্য আপনাকে নিয়মিত কাজ করতে হবে। অর্থাৎ ১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা উপার্জন করতে হবে। এবং সর্বনিম্ন ৫০ জনকে রেফার করে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। সহজ কথায় আপনার রেফারের মাধ্যমে ৫০+ ব্যবহারকারী হতে হবে।

পেমেন্ট সিস্টেম

কাজখুঁজি যেহেতু বাংলাদেশী সাইট কাজেই পেমেন্ট নিয়ে কোন চিন্তা করার দরকার পড়েনা। পেআউট করার জন্য ড্যাশবোর্ডে ক্লিক করে পেআউট বাটনে ক্লিক করুন। এখানে ক্লিক করার পর পেমেন্ট গেটওয়ে সিলেক্ট করুন। এখানে পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে মোবাইল ব্যাংকিং সিলেক্ট করুন। তারপর আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে আপনি যত টাকা তুলতে চান সেই টাকার পরিমাণ লিখুন। এবার পেআউট ক্লিক করুন। কাজখুঁজি-র সর্বনিম্ন উইথড্র বা পেআউট ২৫০৳। ১০০০ টাকার নিচে বিকাশ পেআউট করলে ৫৳ এক্সট্রা চার্জ কাটা হবে।

ইতি কথা

এই ছিল কাজখুঁজি নিয়ে আমার প্রথম আর্টিকেল। আমার সাধ্যমতো বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক সুবিধা রয়েছে এবং আরও নতুন নতুন সার্ভিস এবং অফার যোগ হচ্ছে। এই লেখা সম্পর্কে কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেননা। এগিয়ে যাক বাংলাদেশ, এগিয়ে যাক কাজখুঁজি।

আরও পড়ুনঃ ২০২২ সালের বেস্ট ১০টি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সাইট