মোবাইলের চার্জ ধরে রাখার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

সময়ের সাথে সাথে আপনার মোবাইল স্লো হয়ে যেতে পারে এবং ব্যাটারির আয়ুও খারাপ হতে পারে। মোবাইলের চার্জ ধরে রাখার উপায় গুলো নিয়ে এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি।  যে মোবাইলটি এক সময় সপ্তাহে একবার মাত্র চার্জ করতে হয়েছিল, দুর্ভাগ্যবশত এটি এখন সকাল বিকাল চার্জ দিতে হয়। আমরা ভালো ভাবে জানিনা কিভাবে মোবাইলের ব্যাটারীর চার্জ ধরে রাখা যায়? মোবাইলের চার্জ ধরে রাখার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিনঃ

কোন প্রয়োজনে বা কাজের সময় যদি ফোনের চার্জ না থাকে তাহলে যে কতটা খারাপ লাগে তা শুধু ভুক্তভোগীরাই বোঝে। দ্রুত ইন্টারনেট, হাই রেজুলেশন স্ক্রিন এবং 4K-এ ভিডিও রেকর্ডিং বেশি ব্যাটারি ব্যবহার করে। নতুন মোবাইল ফোনে প্রায়শই এত বেশি স্টোরেজ স্পেস থাকে যে আপনাকে সেগুলি খালি করতে হয়না। তবে দিন যায় আর মোবাইল ফোনে অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাড়তে থাকায় এটি ব্যবহার করা ধীর হয়ে যায়। তবে সমস্যা যাই হোক না কেন এর জন্য কিছু সহজ সমাধান আছে। 

মোবাইলে চার্জ থাকেনা কেন?

কিভাবে মোবাইলের চার্জ আগের থেকে বেশি সময় স্থায়ী থাকবে বা মোবাইলে চার্জ থাকেনা কেন এটা অনেকেই জানেনা। অনেকে বিভিন্ন টেকনিশিয়ানের সাথে কথা বলে পরামর্শ নেয় আবার অনেকেই মোবাইলের চার্জ থাকেনা কেন এটা নিয়ে গুগলে আর্টিকেল খুঁজে। আজকের আর্টিকেলে আপনি একটি ভাল টিপস এবং কৌশল পাবেন, যেগুলো মেনে চললে মোবাইলের ব্যাটারীর ব্যাকআপ দীর্ঘস্থায়ী করা যায়। কৌশলগুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

সমস্ত অ্যাপ ক্লিন রাখুন

ইদানিং স্মার্ট ফোনগুলোর ব্যবহার আরও বাড়ছে এবং ল্যাপটপের মতো হয়ে উঠছে। যেখান থেকে আপনি ছোট কম্পিউটারের কাজ করতে পারেন৷ মোবাইলগুলি সময়ের সাথে সাথে ধীর হয়ে যাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে একটি হল যে সংরক্ষিত তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ঠিক একটি নিয়মিত কম্পিউটারের মতো। আপনার মোবাইল ফোনে ইনস্টল করা অ্যাপগুলিতে যান এবং দেখুন কোন অ্যাপগুলো ব্যবহার করা লাগেনা। সেখান থেকে অব্যবহৃত অ্যাপ গুলিকে আনইনস্টল করুন। কারণ অব্যবহৃত অ্যাপগুলোর কারণেও অনেক সময় চার্জ বেশি খরচ হয়।

অপ্রয়োজনীয় ছবি এবং ভিডিও মুছুন

মোবাইল ফোন সব সময় আমাদের হাতে থাকায় আমরা কোন দৃশ্য ভালো লাগলে ছবি উঠাই। অথবা কোন অনুষ্ঠানে গেলে চেষ্টা করি সেই অনুষ্ঠান ভিডিও করার। এই রকম ঘটনা কিন্তু নতুন নয়। এখন আরও আমরা আগের চেয়ে বেশি ছবি তুলি এবং ভিডিও রেকর্ড করি। আমরা অনেক সময় পাঁচ বা ছয়টি ছবি তুলি কিন্তু তার মধ্যে একটি ব্যবহার করি। বাকি ছবি গুলো কিন্তু মোবাইলে থেকেই যায়। কাজেই আপনি নিয়মিত আপনার ফোনের গ্যালারী ব্রাউজ করুন এবং আপনার অপ্রয়োজনীয় ছবি ডিলিট করুন। আরেকটি ভাল পদক্ষেপ হল মোবাইলটিকে একটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করে সম্পূর্ণ ব্যাকআপ করা এবং ব্যাকআপের পর মোবাইলের ফাইল কমিয়ে দেয়া।

আরও পড়ুনঃ স্মার্টফোন হ্যাং এবং স্লো হলে সমাধানের ১০ টি উপায় 

ফোন আপডেট রাখুন

আপনার মোবাইল ফোন আপডেট করার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। অনেক লোক বিভিন্ন প্রকার লেনদেনের কাজ করতে তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাই তাদের মোবাইল ফোনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকতে পারে। যাতে কোন তথ্য চুরি না হয় বা সমস্যা না হয় এই জন্য এগুলোর সফটওয়্যার আপডেট করা হয়। কারণ গ্রাহকের নিরাপত্তাই বিক্রেতার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়ই ফোন কোম্পানীগুলো তাদের সফটওয়্যার আপডেট করে থাকে যা নিরাপত্তা দুর্বলতা, সফ্টওয়্যার বাগগুলি ঠিক করে এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করে। বেশিরভাগ মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে একটি করে নতুন আপডেট তৈরি করে এবং একটি নতুন আপডেট বের হলে আপনার ফোন আপনাকে অবহিত করে।

এছাড়াও মনে রাখবেন যে আপনার ফোনে ইনস্টল করা অ্যাপগুলিরও আপডেট হয়। এই ধরনের আপডেট সাধারণত প্রতি দুই সপ্তাহে আসে। আপনার সেটিংসের উপর নির্ভর করে কিছু আপডেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল করা হয়। যদি অটোম্যাটিক আপডেট না হয় তবে ম্যানুয়ালি আপডেট করতে হবে

ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথ বন্ধ রাখা

ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথ উভয়ের কারণেই ব্যাটারীর চার্জ কমতে পারে। যদি মোবাইল কোনো কিছুর সাথে সংযুক্ত না থাকে বা আপনার যদি প্রয়োজন না হয় তবে অবশ্যই এগুলো বন্ধ রাখবেন। কারণ এগুলো চালু থাকলে দ্রুত চার্জ শেষ হয়। তাই ব্যবহার না করলে এগুলো বন্ধ রাখুন।

ফোনের ব্রাইটনেস কম রাখা

ব্যাটারীর চার্জ সঞ্চয় করার আরেকটি উপায় হল স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সীমিত করা। বেশি আলো বা আপনি যখন রোদে বের হন তখন উজ্জ্বলতা সর্বোচ্চ পর্যন্ত বাড়াতে হবে। যাইহোক, আপনি যখন বাড়ির ভিতরে থাকেন বা সরাসরি সূর্যের আলোতে না থাকেন, তখন উজ্জ্বলতা কমানো ভালো। যদি বেশি ব্রাইটনেস দরকার না হয় বা কম ব্রাইটনেস কোন সমস্যা না হয় তবে কমিয়ে রাখাই ভালো। এখনকার বেশিরভাগ মোবাইলে স্ক্রিনের উপরে একটি সেন্সর থাকে যা পরিবেষ্টিত আলো সনাক্ত করে যাতে উজ্জ্বলতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করা যায়। অর্থাৎ অটোমেটিকভাবে আলো থাকলে ব্রাইটনেস বাড়বে এবং অন্ধকার থাকলে কমবে। কাজেই ফোনের ব্রাইটনেস অটো করে রাখুন।

পাওয়ার সেভ মোড চালু রাখা

আজকাল অনেক মোবাইলে বিভিন্ন ধরণের পাওয়ার সেভিং মোড রয়েছে। এটি অপ্রয়োজনীয় কাজ এবং অ্যাপগুলিকে বন্ধ করে দেয়। যেগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে না বা যেগুলি স্ক্রীন বন্ধ থাকলে রিফ্রেশ করার চেষ্টা করছে সেগুলিকে অফ রাখে। প্রায়শই পাওয়ার সাশ্রয়ের বিভিন্ন লেভেল থাকে এবং যদি আপনার ব্যাটারি ফুরিয়ে যায় তবে সর্বোচ্চ চার্জ সঞ্চয় করার চেষ্টা করে।

ফোন চার্জ করার সেরা উপায়

পূর্বে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল যে ফোনের ব্যাটারি ১২-২৪ ঘন্টা চার্জে লাগিয়ে রাখতে হবে। এখন এই নিয়ম আর চলেনা। কারণ আগের ব্যাটারী আর এখনকার ব্যাটারীর মধ্যে অনেক পার্থক্য। যখন মোবাইলে চার্জ করবেন তখন চেষ্টা করবেন ফুল চার্জ করার। চার্জ ফুল না হলে বাদ দেয়া বা আবার ২/৪ ঘন্টা পর চার্জ দেয়া এভাবে ব্যাটারী নষ্ট হয়।

শেষ কথা

আজকাল এই নিয়ম আর চলেনা। এটি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কাজ করে। কারণ বর্তমানে বেশিরভাগ মোবাইলে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি থাকে যা পুরানো ব্যাটারির তুলনায় অনেক বেশি নমনীয়। কাজেই কোন চার্জিং রুটিন ভুল করা যাবেনা। কিন্তু ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব। ব্যাটারির লাইফ চার্জের সংখ্যার উপর নির্ভর করে। আপনি যতবার ফোনটি ডিসচার্জ করতে দেবেন এবং তারপরে ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ করতে দেবেন, ব্যাটারির ক্ষমতা তত দ্রুত নষ্ট হবে। ব্যাটারি যতটা সম্ভব দীর্ঘস্থায়ী রাখার জন্য ব্যাটারির চার্জ ২০%-৮০% রাখা ভাল৷ এইভাবে চার্জিং চক্র হ্রাস করা হয়। এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার কোন মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।