জেনে নিন প্রিপেইড মিটারের প্রয়োজনীয় কোড

প্রিপেইড মিটার বর্তমানে বাংলাদেশে নতুন এক দিগন্তের যাত্রা করেছে। বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সারাদেশে প্রিপেইড মিটার স্থাপণের কাজ শুরু করলেও এখনও শেষ হয়নি। তবে পিডিবি, পল্লী, ডিপিডিসি, ডেস্কো, নেস্কো সহ সবাই কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় প্রিপেইড মিটার দেয়া হয়েছে। অনেকেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনা এবং অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এ কারণে সরকার ডিজিটাল সিস্টেম চালু করে। এর ফলে ব্যবহারকারীগণ সব সময় তার নিজের মতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারছে। শুধু তাই  নয় অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার অনেকাংশে কমেছে। কারণ কারও মিটার থেকে গোপনে অন্য কেউ ব্যবহার করলে তা সহজেই বোঝা যাবে মিটার কোড ডায়াল করে। এই কারণে আমাদের প্রিপেইড মিটারের প্রয়োজনীয় কোড নম্বর গুলো খুব জরুরী। জেনে নিন প্রিপেইড মিটারের প্রয়োজনীয় কোড।

পূর্বে যেমন মাস শেষে কত বিল আসবে এই নিয়ে একটা দুঃশ্চিন্তা ছিল এখন তা আর নেই। কারণ মানুষ এখন তার নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা রিচার্জ করে। শুধু তাই নয় আগেই টাকা রিচার্জ করতে হয় বলে তারা এখন যথেষ্ট মিতব্যয়ী। যেমনটি অনেক আগেই দেশ তাদের থেকে আশা করেছিল। যদিও অনেকে মনে করেন প্রিপেইড মিটারে টাকা বেশি কাটে তবে এটা কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিজেই বুঝতে পারবেন।

এখন আপনি কোন মাসে কত ইউনিট এবং কত টাকা খরচ করেছেন তা জানতে পারবেন। আজ আমি এই আর্টিকেলে প্রিপেইড মিটারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কোড নম্বর সম্পর্কে আলোচনা করব। প্রিপেইড মিটার এমন এক মিটার যা সিম কার্ডের মতো টাকা রিচার্জ করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। মিটারের টাকা শেষ হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়। তবে সিম কার্ডের মতো প্রিপেইড মিটারেও ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নেয়া যায়।

 

প্রিপেইড বা ডিজিটাল মিটার

প্রিপেইড বা ডিজিটাল মিটার ২ ধরণের হয়। একটি স্মার্ট মিটার এবং আরেকটি কীপ্যাড মিটার। স্মার্ট মিটারে রিচার্জ করার ক্ষেত্রে স্মার্ট কার্ড মিটারে প্রবেশ করাতে হয়। কীপ্যাড মিটারে রিচার্জ করতে কোন ভেন্ডর বা দোকান থেকে প্রথমে মিটার নম্বরে টাকা রিচার্জ করলে ২০ সংখ্যার টোকেন দেয়। এই টোকেন নম্বর মিটারের কীপ্যাড এর বাটন চেপে ডায়াল করতে হয়। যদি রিচার্জ সাকসেস হয় তাহলে মিটারের ডিসপ্লেতে গুড লেখা আসে। ভেন্ডর বা দোকান থেকে রিচার্জ না করে রকেট/বিকাশ ইত্যাদির মাধ্যমের রিচার্জ করা যায়।

আরও পড়ুনঃ মোবাইলের চার্জ ধরে রাখার উপায়

মিটার ভাড়া

প্রিপেইড মিটার ভাড়া প্রতি মাসে ৪০ টাকা এবং মাসে মাত্র এক বার। “একটি প্রিপেইড মিটার ক্রয় করা গ্রাহকের সম্ভব না বিধায় প্রতি মাসে ভাড়া দিতে হয়। কাজেই প্রিপেইড মিটার নষ্ট হলে রিপেয়ার এর জন্য কোন ফি নেই। ফ্রিতে সম্পূর্ণ নতুন প্রিপেইড মিটার দেয়া হবে।” (আলিনুর শিকদার, উপসহকারী প্রৌকশলী, বিডিসি)

ভ্যাট

সব সময় ভ্যাট ৫%। যখন মিটারে টাকা রিচার্জ করা হয় তখন সঙ্গে সঙ্গে মিটার ভাড়া, ভ্যাট, ডিমান্ড চার্জ কেটে নেয়া হয়। ৫০০ টাকা রিচার্জ করলে ২৫ টাকা ভ্যাট কাটা হয়। যত বার মিটারে টাকা রিচার্জ করা হবে তত বার ৫% ভ্যাট কাটা হবে।

ডিমান্ড চার্জ

প্রতি মাসে মাত্র একবার ডিমান্ড চার্জ নেয়। প্রতি কিলোওয়াট সংযুক্ত মিটারের জন্য ১৫ টাকা। ২ কিলোওয়াট ৩০ টাকা। অধিকাংশ প্রিপেইড মিটার ২ কিলোওয়াটের হয়।

রিবেট

রিবেট এক ধরণের প্রণোদনা। বাংলাদেশ সরকার জনগণকে ডিজিটাল মিটার ব্যবহারের কারণে ১% রিবেট বা প্রণোদনা বোনাস দেয়। যত বার রিচার্জ করা হবে তত বার ১% করে রিবেট অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

হিসাব

যদি একজন ব্যক্তি তার মিটারে মাসে একবার ১০০০ টাকা রিচার্জ করে তাহলে সে মিটারে পাবে-

মোট টাকা-(ভ্যাট ৫%+ডিমান্ড চার্জ ৩০ টাকা+মিটার রেন্ট ৪০ টাকা)+রিবেট ১%

=১০০০-(৫০+৩০+৪০)+১০ টাকা

=১০০০-১২০+১০ টাকা

=৮৯০ টাকা।

উক্ত ব্যক্তি যদি ঐ মাসে আরও একবার রিচার্জ করে তাহলে সে মিটারে পাবে ৯৫০ টাকা।

আরও পড়ুনঃ স্মার্টফোন হ্যাং এবং স্লো হলে সমাধানের ১০ টি উপায়

প্রিপেইড মিটারের প্রয়োজনীয় কোড

রিচার্জসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কোড নম্বর এবং এগুলোর কাজ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-

00—ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স গ্রহণ

800—এযাবৎ ব্যবহৃত ইউনিট

801—ব্যালেন্স চেক

802—বর্তমান তারিখ

803—বর্তমান সময়

804—মিটার নম্বর

806—মিটার বিচ্ছিন্নের কারণ

808—বর্তমান লোড

810—ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স স্ট্যাটাস

811—ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স অ্যাক্টিভ

812—অ্যালার্ম বন্ধ

814—চলতি মাসে ব্যবহৃত ইউনিট

815—সর্বশেষ রিচার্জের তারিখ

816—সর্বশেষ রিচার্জের সময়

817—সর্বশেষ রিচার্জের পরিমাণ

830—সর্বশেষ রিচার্জের টোকেন নম্বর

869—সংযুক্ত সর্বোচ্চ লোড (২ হতে পারে)

868—মিটার অন/অফ

886—বর্তমান চলমান রেট

887—বর্তমান চলমান স্পেপ ট্যারিফ টাকা

889—বর্তমান টোকেনের সিকোয়েন্স নম্বর

922—চলতি মাসে ব্যবহৃত টাকা

923—পূর্বের মাসে ব্যবহৃত টাকা

924—তার পূর্বের মাসে ব্যবহৃত টাকা

925—926—927————– এভাবে গত ৬ মাসের ব্যবহৃত টাকার পরিমাণ জানা যায়।

পাঠক, আর্টিকেলে আপনাকে বোঝানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। কোন মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।