কোষ্ঠকাঠিন্য কি? কেন হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়-২০২২

কোষ্ঠকাঠিন্য কি, কেন হয় এবং প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন এই পোস্টে। কোষ্ঠকাঠিন্য বর্তমানে একটি অতিপরিচিত একটি রোগ। এই রোগে ভোগে নাই এমন মানুষ হয়তো খুব কমই আছে। কিন্তু অনেকেই জানেনা এর নাম কোষ্ঠকাঠিন্য। অনেকেই প্রশ্ন করে কোষ্ঠকাঠিন্য কি? কোষ্ঠকাঠিন্য কাকে বলে? কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়? এটি একটি যন্ত্রণাদায়ক এবং বিরক্তিকর রোগ। হয়তো অনেকে মলত্যাগে কষ্টের কথা ভেবে টয়লেটে যেতে ভয় পায়। শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। টয়লেটে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরও যদি মলত্যাগ না হয় তবে কি যে বিরক্ত লাগে সেটা শুধু ভুক্তভোগীরাই বোঝে। এই রকম পরিস্থিতির জন্য অস্বস্তিতে ভুগতে হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে এটা একটা দীর্ঘ মেয়াদী রোগ হয়ে যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য কি?

এক সপ্তাহে যদি তিনবার বা তার কম সংখ্যক বার মলত্যাগ হয় অথবা মলের পরিমাণ কম অথবা অস্বাভাবিক ধরণের শক্ত বা শুকনো এবং অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করলেও মলত্যাগ হয়না তখন তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে

কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়?

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে সাধারণত মল বা বর্জ্য পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে খুব ধীরে চলে যায়। মল সঠিকভাবে মলদ্বার থেকে বের হতে পারে না বিধায় মল শুষ্ক ও শক্ত হয়। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য হবার কারণ অনেক থাকলেও আমরা এখানে কমন বা পরিচিত কিছু কারণ তুলে ধরবো। এতে করে সহজে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য সম্বন্ধে সচেতন থাকতে পারবেন। এটা জানার পর আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় সম্পর্কে জানব।

আরও পড়ুনঃ শরীরের ওজন কমানোর উপায় জেনে নিন।

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ গুলো নিম্নরূপ-

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশজাতীয় খাবার না খাওয়া।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা ।
  • ব্যায়াম না করা বা শারিরীক কোন পরিশ্রম না করা।
  • হঠাৎ করে খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করা।
  • নিয়মিত টয়লেট না করে থাকা
  • কিছু কিছু ওষুধ যেমন আয়রন বা ক্যালসিয়াম বড়ি ইত্যাদি খাওয়া বা নিয়মিত কিছু ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া।
  • টিউমার, আই বি ডি বা হার্নিয়া জাতীয় রোগ থাকলে।
  • ল্যাক্সাটিভ এর ব্যবহার বেশি পরিমাণে করা।

এছাড়াও কিছু শারিরীক জটিলতা যেমন- পাকস্থলীর টিউমার বা হরমোনের তারতম্য ইত্যাদি কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলো কী কী?

কোষ্ঠকাঠিন্যের উপসর্গ হলো:

  • মল অনেক শক্ত, শুকনো এবং গুটি গুটি।
  • মল ত্যাগের সময় মলদ্বারে অনেক ব্যাথা পাওয়া যায় এবং মলত্যাগ করতে অসুবিধা হয়।
  • প্রতিবার মল ত্যাগ করতে স্ট্রেন করা।
  • মলত্যাগ নিয়মিত হয়না এবং স্বাভাবিকের চেয়ে কম।
  • মলত্যাগের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ও চাপ প্রয়োগ করতে হয়।
  • ক্ষুধামান্দ্য এবং বমি বমি ভাব।
  • পেট ফুলে যাওয়ার মতো বোধ।
  • পেটে ব্যথা এবং ক্র্যাম্পিং।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় কি?

কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের উপায় হিসেবে নিচের টিপস গুলো মেনে চলুন।

  • প্রতিদিন আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার হিসেবে শাকসবজি, বিভিন্ন প্রকার ফল যেমন পেঁপে এবং বেল, গোটা শস্য খেতে হবে।
  • দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
  • সহজভাবে বসে বা সুবিধাজনক পজিশনে বসে মলত্যাগ করা।
  • নিয়মিত পায়খানা করা এবং মল চেপে রাখার অভ্যাস করা পরিত্যাগ করা।
  • শারিরীক ব্যায়াম করা এবং হাঁটাচলা করা।
  • ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধানে বেশ উপকারী।
  • ভাজাপোড়া খাবার, চকলেট, চিপস, আয়রন ক্যাপসুল, কাঁচাকলা, প্রচুর চিনিযুক্ত কেক, পেস্ট্রি কেক ইত্যাদি খাবার কম খাওয়া।

ব্রেস্ট ক্যান্সার কি এবং কেন হয়

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে কি কি জটিলতা সৃষ্টি হয়?

কোষ্ঠকাঠিন্য যদি দীর্ঘ দিন ধেরে থাকে তবে সেখান থেকে অনেক ধরণের রোগ হতে পারে। এই রোগ গুলো আরও বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি কি জটিলতা হতে পারে বা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে কি রোগ হতে পারে তা নিম্নে লেখা হলোঃ

ফিসার

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলত্যাগের সময় মলদ্বারে ফেটে গিয়ে ক্ষত বা ঘাঁ এর মতো হয়। এই ক্ষত বা ঘাঁয়ের কারণে অনেক সময় মলের সাথে সামান্য রক্তও যেতে পারে। মলদ্বারে জ্বালাপোড়া হতে পারে এবং আস্তে আস্তে পায়ুপথ সরু হয়ে আসে। বেশি দিন স্থায়ী হলে অস্ত্রপাচারের দরকার হয়।

অর্শ বা পাইলস

চিকিৎসকের ভাষায় পাইলসকে হেমোরয়েড এবং বাংলায় অর্শ্ব রোগ বলা হয়। পাইলস আস্তে আস্তে বড় হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে। অনেক সময় পাইলসের কারণে ব্যাথা না পাওয়া গেলেও রক্তপাত হতে পারে।

ফিস্টুলা

সজহ কথায় মলদ্বারে ফিসটুলা হলো একটি ঘা। এই ঘায়ের একটি মুখ পায়ুপথের ভেতরে থাকে এবং অন্যটি বাইরে থাকে। ফিসটুলা তৈরি হওয়ার মূল কারণ মলদ্বারের গ্রন্থিতে পূঁজ সৃষ্টি হওয়া। পায়ূ এবং মলাশয়ের মধ্যকার নালীকে মলদ্বারের নালী বলে। এখানে মলদ্বারের অনেকগুলি গ্রন্থি রয়েছে এবং এগুলোতে সংক্রমণ হলে তা পূঁজ গঠনের কারণ হয়।

এছাড়াও ইন্টেসটাইনাল অবস্ট্রাকশন, রেক্টাল প্রোলাপস, অরুচি, ক্ষুধামন্দা, পেটব্যথা বা ফাঁপার মতো জটিলতা সৃষ্টি হয়।

শেষ কথা

কোন রোগকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। নিয়মিত শরীরচর্চা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনেকাংশে রেহাই পাওয়া যায়। সোজাকথা এধরনের রোগ মুক্তির জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি, অনিয়মিত মলত্যাগের বদভ্যাস ত্যাগ করে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হবে। এই আর্টিকেল সম্পর্কে কাও কোন মতামত থাকলে অনুগ্রহ করে কমেন্ট করে জানাবেন।

আরও তথ্য জানতে গুগলের সহায়তা নিতে পারেন।